নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞানের আলোয় খুঁজি সপ্নের দ্বার, আগামী দিন সুধু সম্ভবনার......

হাবিব শরীফ

হাবিব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সারপ্রাইজ

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪২

অনেক কাঠখোট পুড়িয়ে মফস্বল শহরের কলেজটাতে আমি রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করলাম। এই কলেজেই আমি উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স, মাস্টার্স শেষ করলাম এবং সর্বশেষে এই কলেজের মাধ্যমে আমার শিক্ষকতা জীবন শুরু হলো। অবশ্য মাঝে মাঝে বদলি হওয়া নিয়ে আমাকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। তার পর তল্পিতল্পা নিয়ে অন্য কোন শহরের কলেজে চলে যেতে হয়। কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা উপরের মহলে তদবীর করে আবার এখানে বদলি হয়ে চলে আসি। এভাবেই চলতে লাগলো আমার জীবন।

এবার আমাকে বদলি করা হলো খাখড়াছড়ির একটা কলেজে। আগের মত যথা সময়ে চলে গেলাম খাখড়াছড়িতে কিন্তু একমাস যেতে না যেতেই আমার কাছে চিঠি এলো আমার পদোন্নতি হয়েছে আমার সেই কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় আমাকে সেখানে বিভাগীয় প্রধান করা হলো। এবারে এটার জন্য অবশ্য আমার কোন তদবীর করা লাগেনি। পরদিন খুশি মনে চলে গেলাম আমার প্রিয় সেই কলেজটাতে আমাকে সবাই বিশাল সংবর্ধনা দিয়ে বরন করে নিলো। প্রভাষক থেকে বিভাগীয় প্রধান মাঝখানে কেটে গেলো প্রায় দশ বছর। কলেজটা আর আগের মত নেই অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে আগের মত টিনের চালের ক্লাসরুম নেই এখন সব উচুঁ উচুঁ দালান। এরপর কলেজের সেই কৃষ্ণচুড়া গাছটাও আর নেই সেটা কেটে সেখানে বিশাল ভবন তৈরী করা হয়েছে।

বিভাগীয় প্রধান হওয়ার সুবাধে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি কার্যক্রম এর কমিটিতে আমাকে আহব্বায়ক করা হয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কলেজেই থাকা লাগে ব্যাস্ততার সাথে যাচ্ছে পুরো সময়টা। আজকে যারা ভর্তির জন্য সিলেক্ট হয়েছে তাদের একে একে সাক্ষাৎকার নিচ্ছি। তেমনি একটা মেয়ে আসলো এবং তার নাম বললো আমি ভালো করে তার দিকে তাকালাম যখন বাবা ও মায়ের নাম জিজ্ঞেস করলাম খুবই অবাক হলাম। কলেজে থেকে কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসলাম আমার রুমের বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে মনে পড়তে থাকলো সেই বিশ বছর আগের কথা গুলা। নিলুর কথা তার সাথে বন্ধুত্বের কথা অতঃপর বন্ধু থেকে প্রণয় দুজনে এক ছাদের নিচে থাকার সংকল্প, নিলুটা ছিলো খুবই আবেগী, কিছু একটা বললে অল্পতে কষ্ট পেয়ে যেত তারপর চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হতো, আর আমি তখন তার কান্না থামাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়তাম। আমার জন্মদিনে নিলুর দেয়া সারপ্রাইজ গুলা ছিলো মনে রাখার মত। একবার করলো কি, বিশাল আকারের কেক নিয়ে আমার মেসে হাজির। আমি কি করবো কিছুই বুঝতেছিনা আমার মত মেসের অন্যরাও খুব অবাক হলো। নিলু এই রকম অদ্ভুত সারপ্রাইজ সামাল দিতে আমাকে খুব বেগ পেতে হতো। হঠাৎ করে আমি করলাম কি তাকে নিলু বলে ডাকা বন্ধ করে দিলাম ডাকতে থাকলাম তুলির মা বলে তুলি নামটা আমার খুব প্রিয় ছিলো তাই তাকে বললাম আমাদের মেয়ে হলে তার নাম রাখবো তুলি আর তুমি হবা তুলির মা।
নিলু তখন হেসে বললো ছেলে হলে কিন্তু তানবীর রাখবো, তখন থেকে আমি হলাম তানবীরের বাপ আর ও তুলির মা।

আজ বিশ বছর হয়ে গেলো নিলুর সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই এই বিশ বছরে একবারের জন্যও দেখা হয়নি আমাদের। পরিবারে দিকে তাকিয়ে নিজেদের ভালোবাসাকে কবর দিয়ে দিলাম এক ছাদের নিচে দুজনের আর থাকা হলো না। শেষবার নিলুর সাথে দেখা হয়েছিলো তার হলুদের দিন দুপুরে সে আমার হাত ধরে সেদিন পালিয়ো যেতে বলছিলো কিন্তু আমি পারিনি পালাতে কাপুরুষের মত তাকে ফিরিয়ে দিয়ছি নিলু খুব কান্না করছিলো সেদিন, আমিও খুব কাঁদলাম কিন্তু পুরুষদের কান্না কেউ দেখে না। এই বিশ বছর ধরে তার কোন খোঁজ নিলাম না কোন মূখেই বা নিবো আমি যে তার কাছে অপরাধী,নিলুও আমার কোন খোঁজ নেইনি, বিশ বছরে একটা জন্মদিনেও আমাকে কোন সারপ্রাইজ দেয়নি। প্রতিটা জন্মদিনে আমি অপেক্ষায় থাকতাম তার সারপ্রাইজ এর। আমার প্রতি তার হয়তো অনেক রাগ তাই কোন ধরনের যোগাযোগ করেনি।

কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমান করে দিয়ে বিশ বছর পর আমার জন্মদিনে নিলু আমাকে ঠিকই সারপ্রাইজ করে দিলো সারপ্রাইজটা হয়তো কাকতালীয় কিন্তু আমার প্রতি ভালোবাসাটা তো আর কাকতালীয় না। কারন আজকে কলেজে ঐ মেয়েটার নাম ছিলো তুলি আর তার মা হচ্ছে নিলু মেয়েটা দেখতেও একদম নিলুর মত হয়েছে, কলেজ থেকে ফেরার সময় মেয়েটার কথা শুনতে পেলাম।
- আম্মু চলো আমার ভর্তি শেষ।
ফিরে তাকাতেই নিলুকে দেখলাম নিলুর এখন আগের থেকে অনেক বয়স বেড়েছে কিন্তু চিনতে আমার একটুও অসুবিধে হয়নি। নিলু তার মেয়ে তুলিকে নিয়ে নিয়ে চলে গেলো। আস্তে আস্তে দুজনই আমার চোখের আড়াল হয়ে গেলো......।

হঠাৎ আমার ছেলে তানবীরের ডাকে আগের স্মৃতি থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম।

- বাবা! এসো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে কেক কাটতে হবে তো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.