নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার পেটের ভিতরে কোঁত করিয়া ডাক মারিল!

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩

"ভাই, পোলার নাম কি রাখছেন?" "ভাতিজা, তোমার পোলার নাম কী রাখছ?" "ঐ ব্যাটা জুয়েইল্লা তোর পোলার নাম কী রাখছস?"

এমন প্রশ্নের জবাবে জগতের যে কোনো বাবা সহাস্য বদনে ছেলের নামটা বলিয়া দাঁত কেলানো একখান হাসি বিলাইয়া দিবেন।

কিন্তু এই দুনিয়ায় এই অধমই কেবল ব্যতিক্রম, যাহার কাছে কেউ তাহার ছেলের নাম জিজ্ঞসা করিলে- গলা, কলিজা এবং অন্তরাত্মা শুকাইয়া চৌচির হইয়া যায়।



কারণ?



১। ছেলের জন্মের পূর্বে তাহার দাদি (আমার মা) আমাকে সাবধান করিয়া দিয়া বলিয়াছেন- 'খবরদার, তোরা কিন্তু নাম-টাম নিয়া কোনো কথা কবি না, তোর আব্বা নাম রাখবো।'

২। আব্বা ছেলের নাম রাখিবার ভার ন্যস্ত করিলেন ছেলের বড় আম্মার (মানে আমার দাদি) উপর।

৩। ছেলের বড় আম্মা তাঁহার পুতির নাম রাখিলেন। তাঁহার রাখা নামই আমার আব্বার মনে ধরিলো- তিনি ঢাকা হইতে বড় সাইজের এক পিছ খাসি কিনিয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চড়াই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। গ্রাম হইতে আকিকা দিয়া সেই নাম সহিহ করিয়া ঢাকায় আসিয়া হুশিয়ার করিয়া দিয়া বলিলেন,'এই নামই বলবত থাকবে!'

তবে কাহারও কাহারও আব্বার আকিকা দেয়া নাম মনে ধরিলো না।

৪। ছেলের মা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়া "বাচ্চাদের সুন্দর নাম" নামক বই খুঁজিয়া একটা নাম বাহির করিল। সেই নামও কাহারও পছন্দ হইলো, কাহারও হইলো না। আমার দাদি নাম শুনিলেই ব্যাঙ্গ করিয়া হাসিয়া উড়াইয়া দিয়া বলেন, 'কলি কালের পোলাপাইন, কি নাম রাখছস তোরা; শুনলেই হাসি আসে। হাসির সাথে কাশিও আসে।'

৫। ছেলের নানা-নানি ইহা হইতে বাদ যাইবেন কেন, তাঁহারাও কোন এক রাজা-বাদশার সাথে মিলাইয়া নাম একখান বাহির করিলেন বটে।

৬। ছেলের বড় মামা বলিলেন-'তোদের কারও নামই ভাল্লাগে না, কী-সব নাম রাখছস তোরা যত্তসব' বলিয়া তিনিও খুঁজিয়া খাঁজিয়া একখান 'ইসলামিক' নাম বাহির করিলেন।

৭। আমার বড় ফুফু নাক ছিঁটকাইয়া বলিলেন, তাঁর দাদা (আমার বড় আব্বা) ছিলেন বহুত নামি-দামি লোক, তল্লাটের নাম করা মাতাব্বর! তাই আমার পোলার নাম তাহার বড় দাদার নাম অনুসারেই হইবেক। বড় ফুফুর ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা ছেলেকে সেই নামেই ডাকিতে আরম্ভ করিলো।

৮। আমার বাবা সব কিছু অতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করিতে শুরু করিলেন যে, আমি ছেলেকে কী নামে ডাকিয়া থাকি। দু' চার বার আমার মা'কে ডাকিয়া জিজ্ঞাসাও করিলেন- আমি কাহার নাম গ্রহণ করিয়াছি।

মা আমাকে ডাকিয়া আবার সাবধান করিলেন।

৯। দেখিতে দেখিতে কোরবানির ঈদ চলিয়া আসিল। এইবার ছেলের নামে কোরবানি দেবার পালা। গরু জবাইর পূর্ব মুহূর্তে হুজুর ছেলের নাম জানিতে চাইলেন। আব্বা আমার দিকে তাকাইয়া বলিলেন, 'হুজুরের কাছে নাতির নাম ক।'

আমি ঢোক গিলিলাম। কেননা আমার দাদি ছেলের যেই নাম রাখিয়াছেন, তাহার অংশ 'দুই খান'। প্রথম অংশ বলিয়া দ্বিতীয় অংশ নিয়া কনফিউজড হইয়া গেলাম যে, দ্বিতীয় অংশ কি- হাসান, হোসেন নাকি আহম্মেদ! একেকজনের মুখে আমি একেক রকম শুনিয়াছি।

আমি আমতা আমতা করিয়া মাথা চুলকাইতে লাগিলাম। গলা শুকাইয়া আসিয়াছে।

'আমি একটু উপর থেইকা আসি' বলিয়া দৌড়াইয়া সিড়ি বাহিয়া উপরে উঠিয়া দাদির রুমের দিকে ছুটিলাম। নামের দ্বিতীয় অংশ জানিবার প্রয়োজন।

বিধি-বাম, দাদি নাক ডাকিয়া ঘুমাইতেছেন। আমার মতো বাসার অন্য সবাইও নামের দ্বিতীয় অংশ নিয়া কনফিউজড। তাই কেহ বলিয়া রিস্ক লইতে চাহেন না।

আমি দৌড়ে নিচে আসিয়া বলিলাম, ' ....... হাসান।'

আব্বা বলিলেন, 'না না ........ আহম্মেদ ......... আহম্মেদ।'

ঘাম দিয়া জ্বর সারিল। সাথে সাথে সায় দিয়া বলিলাম, 'জ্বি জ্বি .......আহম্মেদ ........ আহম্মেদ।'

......................................................................

সাত/আট মাস পরের ঘটনা।

কোন এক হুজুর আমার মামাতো বোনের ছেলের নাম পাল্টাইতে বলিয়া দিল।

বিটলা মামাতো বোন তাহার ছেলের নাম পাল্টাইয়া আমার বউ আমার ছেলের যে নাম রাখিয়াছে সেই নাম রাখিয়া দিল।

সে ঘটনা জানিতে পারিয়া বউ কাঁদো কাঁদো গলায় আমাকে উদ্দেশ করিয়া বলিল, ' দেখছো, কারবারডা দেখছ, অরা আমার পোলার নামে নাম রাখছে। আমি আমার পোলার নাম পাল্টাইয়া ফালামু।'

আমি বিলম্ব না করিয়া সায় দিয়া বলিলাম, ' হ অরা এইডা কী কাম করলো, এইডা কোনো কাম হইল! তুমি দেরি না কইরা পোলার নাম পাল্টাইয়া ফালাও।'

বউ হাত ধরিয়া আদুরে গলায় বলিল, 'এইবার তুমি একটা নাম রাখো না। সুন্দর আধুনিক একটা নাম।'

আমার পেটের ভিতরে কোঁত করিয়া ডাক মারিল। হাসিয়া বলিলাম, ' তোমার রাখা নাম অনেক সুন্দর হয়, তুমিই রাখো না সুন্দর একটা নাম। আধুনিক দেইখা রাখবা কিন্তু।' শেষের অংশটা একটু জোর দিয়া বলিলাম।

সে পুনরায় 'বাচ্চাদের সুন্দর নাম' নামক বই নিয়া বসিয়া গেল।

আনন্দের সংবাদ হইলো, এখন পর্যন্ত কোনো নাম খুঁজিয়া পায় নাই!

...................................................

আমি ছেলেকে কী বলিয়া ডাকি এইবার শুনুন-

বাবা, সোনা বাবা, বাবু, মনা, লক্ষ্মী বাবা, খোকা মানিক, লুলু বাবা, নক্কুন বাবা.........এরকম বহুত শব্দ রহিয়াছে।



সুতরাং অনেকেই লক্ষ করিবেন, কেহ আমার কাছে পোলার নাম জানিতে চাহিলে, আমি সূক্ষ্ম কৌশলে তাহা এড়াই যাইবার চেষ্টা করিয়া থাকি। দয়া করিয়া আমার কাছে আমার পোলার নাম জানিতে চাহিয়া আমাকে মহা-বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না ফালাইবার জন্য সকলের কাছে হাত পা এক সঙ্গে জরো করিয়া মিনতি করিতেছি।

আশা করি অধমের মিনতি খানা রাখিবেন।

আর একটি কথা,

'নামে কি-বা আসে যায়'- আসল তো হইল 'কাম' মানে 'কাজ'- এই কথাটি আমার পরিবারে কাউকেই বুঝাইতে পারি নাই। আশা করি আপনারা বুঝিবেন। কেননা- রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর কিংবা কাজী নজরুল ইসলাম বা হাবিবুর রহমান জুয়েল নাম গুলো কি খুবই সুন্দর?...........



হা...হা....হা.........



































মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯

ব্লগার ইমরান বলেছেন: ছেলের কি নাম ?
:P

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬

রিমন রনবীর বলেছেন: ছেলের নাম কি রাখছে? শাজাহান না জাহাঙ্গীর?? নাকি ছাত্তার,মোখলেস,গনি,আলমগীর,সুলতান,রাজা,সেকান্দার?? ;)
:P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.