নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তা সত্যিই মুক্তা। দেখেই প্রাণটা ভরে গেল।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৩৬

"ঐ তুই কই রে?"

"আমি বাসায় দাদি"

"বাসায় কী করস?"

"কম্পিউটারে মুভি দেখতাছি।"

" কী বলছিস এইসব, দুই দিন পর না তোর পরীক্ষা"

"পড়তে ভালো লাগছে না দাদি।"

"দাদু না ভালো, পড়তে বস। আর শোন, তোকে একজন দেখতে চাচ্ছে, তোর লেখার বেশ ভক্ত।"

"আমাকে দেখতে চাচ্ছে, আমার লেখার ভক্ত, কে বলো তো?"

"আমার বাড়িঅলার মেয়ে, আমি ওকে কথা দিছি তোকে নিয়ে আসবো- তুই কবে আসবি বল?"

মেয়ে ভক্তের কথা শুনে ভেতরটা চিলিক মাইরা উঠল।

"কখন গেলে সুবিধা হয় বলো তো?"

"সময় থাকলে আজ সন্ধ্যার দিকে আয়। চিইনা আসতে পারবি তো?"

"হুম পারবো। ঠিক আছে, আজই আসবো। তুমি কথা দিছ, তা তো রাখতেই হয়। আর শুন, তোমার কী খাইতে ইচ্ছা করে বলো তো?"

" আমার কিছুই খাইতে ভাল্লাগে না, বেশি টাকা পয়সা নষ্ট করিস না, পারলে কয়টা আঙুর নিয়া আসিস।"



আমার গাড়ি-চালক সালাম ঠিক ঠাক মতো কল্যাণপুরে একেবারে দাদির বাসার সামনে নিয়েই আমাকে নামিয়ে দিল।

আমাকে রিসিভ করার জন্য দাদি গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি গাড়ি হতে নামতেই 'দাদু ভাই আমার' বলে পরম মমতায় আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, চল ভিতরে চল।

"তুমি এইখানে এই খুপড়ির ভিতরে থাক কি কইরা দাদি?"

"আর বলিস না, এই খানে ওরা সবাই আমার দেখা-শুনা করে, আমাকে অনেক ভালোবাসে রে।"

দাদি তার বাড়িঅলার মেয়েকে আনতে চলে গেলেন। আমি দাদির বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

দাদির মাঝ-বয়সের সাদা-কালো বহু পুরনো একটা ছবি দেয়ালের এক পাশে ঝুলে আছে।

আমি পলকহীন চোখে বেশ কিছু সময় সেই ছবির দিকে তাকিয়ে রইলাম।

কিছু সময় পর দাদি আমার ভক্ত পাঠিকাকে নিয়ে হাজির। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, "ওর নাম মুক্তা।"

মুক্তা সত্যিই মুক্তা। দেখেই প্রাণটা ভরে গেল।

মুক্তা এক পলক আমার চোখের দিকে তাকিয়েই দৃষ্টি নামিয়ে নিল। লজ্জায় মরে যাচ্ছে সে।

"আমার লেখা তোমার ভালো লাগে?"

সে মাথা উপর নিচ করল- জ্বি।

"কোন ক্লাসে পড় তুমি?"

"ক্লাস টেইন-এ।"

"গুড, ঠিক মতো লেখা পড়া করবে।"

দাদি মুক্তার হাতে ফলের প্যাকেটগুলো দিয়ে বললেন, যা, ধুয়ে কেটে-কুটে নিয়ে আয়।

মুক্তা কয়েকটি প্লেটে অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে কয়েক প্রকারের ফল আমার সামনে নিয়ে এলো।

একটু পর এলো মুক্তার মা। তার পর আরও কয়েকজন। একের পর এক গল্প চলছে।

.....সেদিন ফিরতে রাত দশটা হলো। বিদায় বেলায় দাদি আমার মাথা মুখমণ্ডল-এ পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মুক্তা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। দাদি আমাকে গাড়ি অবধি এগিয়ে দিয়ে গেলেন।



একদিন লেকচার থিয়েটারের সামনে দাদির সাথে দেখা। আমাকে ধমকের সুরে বললেন, তুই কই থাকিস বল তো, তোকে ফোন দিলেই বিজি পাই। শুন, তোর জন্য একটা কলম এনেছি, তোর আগামী লেখাটা এই কলম দিয়ে লিখবি।

আমি হাত বাড়িয়ে দাদির দেয়া কলমটি হাতে নিলাম। পকেট থেকে টাকা বের করে বললাম, "নাও, দাম রাখো।"

"মারবো এক চড়, এটা তোকে আমি গিফট দিয়েছি। তোর পরবর্তী লেখা আমার এই কলম দিয়ে লিখবি।"

-প্রতিদিন ক্যাম্পাসে গেলে একবারের জন্য হলেও দাদির সাথে দেখা হতো আমার। হয়, দাদি আমাকে ফোন দিতেন, নয় তো আমি ফোন দিতাম তাকে। বলতেন- তোকে না দেখলে ভালো লাগে না রে দাদু। তুই যত কষ্টই হোক ক্যাম্পাসে এলে আমার সাথে একটু দেখা করে যাইস। তোদের নিয়েই তো আমি বেঁচে আছি রে দাদু। তোরা না থাকলে আরও অনেক আগেই চলে যেতাম। তোরা ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার তো আর কেউই নেই।

দাদির চোখে জল চলে এসেছে। এসেছে আমার চোখেও...........



হায় কলম দাদি, প্রিয় কলম দাদি আমার, এই পৃথিবীতে যে ক'জন মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও স্নেহে সিক্ত হয়েছি, আপনি তাদের একজন। দোয়া করি পরপারে শান্তিতে থাকুন। ভালো থাকুন। আমরা আপনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে যাবো চিরকাল।.......

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.