নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুষ বনাম হনুমানের বিষ্টা..........

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬

.......দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ কোনো এক সরকারি কর্মকর্তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আমি।



আমার হাতে ফাইল আর পকেটে ঘুষের টাকা।



কর্মকর্তার পিয়ন ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন না আমায়। কারন, স্যার 'জোহরের নামাজ' আদায় করছেন। এই সময় বিরক্ত করা নিষেধ।



পিয়নের কথা বিশ্বাস হলো না আমার- একজন জাত ঘুষখোর আর যাই করুক, অন্তত নামজ পড়তে পারে না। তাই, অবিশ্বাসি মন নিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে চোখ রাখলাম আমি।

ঘটনা সত্য, ছার নামাজ পড়ছেন। তার মাথায় ধবধবে সাদা টুপি। অত্যন্ত মনযোগের সহিত নামাজ পড়ছেন তিনি।

দরজার ফাঁকে চোখ লাগিয়ে রেখেছি আমি। এই শালাকে টাকা দেই নি বলে তিন দিন ধরে আমার ফাইলটি স্বাক্ষরিত হয় নি।



পিয়ন পিছন থেকে টেনে ধরে বললেন," আরে কি করতাছেন কি করতাছেন, ছার দেকলে মাইন করবো, ছার অত্যাদিক পরেজগার মানুস। এইবার হ্জ্ব কইরা আইছেন। এক ওয়াক্ত নামাজও কাজা করেন না। আসেন এই দিক সইরা আসেন।"



আমি হাসলাম।

আমার হাসি দেখে পিয়ন সাহেব তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন, " আরে মিয়া হাসতাছেন ক্যান? আমি কি হাসির কিছু কইছি? যত্তসব ছাগ-পাগল। কইত্তে আইয়েন আপনে রা?"

পিয়ন সাহেবের ধমক খেয়ে হাসি বন্ধ হয়ে গেল আমার।

অনুনয় করে বললাম, "ছারের নামাজ পড়া বোধ হয় শেষ, ছারকে একটু বলেন আমি আসছি।"

" আপনে কি মন্ত্রী মিনিস্টার?"

"আরে নাহ, তা হবো কেন? আমাকে দেখে তাই মনে হয় নাকি?"

"তাইলে এত অস্তির হইছেন ক্যান, নামাজ শেষে ছার খাইবো তারপর হালকা বিশ্রাম নিবো- এর মইধ্যে কোনো কথা নাই। যান ঘুইরা ঘাইরা আসেন।"

"ভাই দেখেন না একটু, আপনি চাইলেই হয়।"



উপায় না দেখে পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে পিয়ন সাহেবের হাতে দিলাম।

মনে হলো রোবটের সুইচ দেয়া হয়েছে।

পিয়ন সাহেব সোজা ছারের রুমে ঢুকে অনুমতি নিয়ে এলেন।



আমি ভিতরে ঢুকে ফাইলটা টেবিলের উপর রাখলাম। কর্মকর্তা আমার দিকে না তাকিয়ে ফাইল নেড়ে-ছেড়ে বললেন, "দোয়া-খায়ের আনছেন?"



দোয়া-খায়েরের তরজমা বুঝতে না পেরে আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম।

কর্মকর্তা ধমক দিয়ে বললেন, " আরে মিয়া চান্দের দেশে জন্ম নি আমনার, দোয়া-খায়ের বুঝেন না?"

"জি না, আসলে আমি বুঝতে পারছি না।"

" আরে মিয়া টাকা-পয়সা নিয়া আসছেন কি-না তাই কন।"

"জি আনছি।" বলে পকেট থেকে কথিত দোয়া-খায়ের বের করে কর্মকর্তার হতে দিলাম।

দীর্ঘ জার্নি শেষে আমার ফাইলখানা স্বাক্ষরিত হলো।



কর্মকর্তার রুম থেকে বের হবার সময় মন চাচ্ছিল, পিছন ফিরে শালাকে কানের নিছে কইষা দুই বন মাইরা বলি, আরে গর্দভ আমার জন্ম চান্দের দেশে না- আর তুই যেটাকে দোয়া-খায়ের বলিস, ঐটা দোয়া-খায়ের না, ঐটা হনুমানের বিষ্টা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১

িটউব লাইট বলেছেন: ঘুষ জিনিসটা কি বুঝতাম না। অনেক ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ায় পেনশনের ফাইল পাশ করানুর সময় ওই নামটার সাথে পরিচয়। আমি ও আমার বড় ভাই একদিন কোন এক সরকারী অফিসের বারান্দায় বসে কেদেছি। বড় ভাই এর চোখে জলদেখে আমার চোখদিয়ে জল ঝরেছে। আজও ওইদিনের কথা মনে হলে চোখ জলে টলমল করে।

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৩

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ভাই, টিউব লাইট....সম বেদনা রইল।

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২০

আিম এক যাযাবর বলেছেন: "ঐটা দোয়া-খায়ের না, ঐটা হনুমানের বিষ্টা।" ভাল বলেছেন।

৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭

সরকার আলী বলেছেন: আপনিও তো মিয়া আচ্ছা লোক দেখি !!!
যখন দেখলেন নামাযের পর করা দোয়ায় ছার (না কি নচ্ছার?) কোন খায়ের পেলেন না, তখন আপনার উচিৎ ছিল ছার দোয়ায় মশগুল থাকাবস্থায়ই দান-খয়রাত হাতে তুলে দেয়া।



এক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আবেদন করলেন, আমার জন্য দোয়া করে দিন, আমি যাতে ‘মকবুলুদ্দোয়া’ (যার দোয়া কবুল হয়) হতে পারি। আমি যে দোয়াই করব, তাই যেন কবুল হয়ে যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সা’দ! নিজের খাবারকে হালাল ও পবিত্র করে নাও, তাহলেই ‘মুস্তাজাবুতদাওয়াত’ হয়ে যাবে। আর সে সত্তার কসম করে বলছি, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ—বান্দা যখন নিজের পেটে হারাম লোকমা ঢোকায়, তখন চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার কোনো আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। আর যার শরীর হারাম মাল দিয়ে গঠিত, তার শরীর জাহান্নামেরই উপযুক্ত।—বায়হাকি


আমাদের ক্ষমা করো প্রভু।

৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০

ঢাকাবাসী বলেছেন: এদেশে ঘুষ খায়না এমন সরকারী মানুষ গত পন্চাশ বছরে পাইনি। তবে অনেক কম ছিল এখন ১০০%।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.