নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামা আমারে একটা আম দিবেন?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩১

"মামা একটা কতা কইলে রাগ করবেন না তো?"



প্যাডেল মারতে মারতে হঠাৎ আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসি হাসি মুখ করে কথাটা বললেন অহিদুল মিঞা।

খানিকটা হকচকিয়ে গেলাম আমি। রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে।

প্রায় মিনিট চল্লিশেক হলো তার রিক্সায় উঠেছি। পথি মধ্যে মিনিট দশেকের মতো একটা ফলের দোকানের সামনে ব্যয় হয়েছে।



জবাব না দিয়ে খানিক ভেবে নিলাম- রাগ করার মতো কি এমন বলতে পারেন অহিদুল মিঞা। হয়তো বলবেন, দশ মিনিট লেট করছেন দশটা টাকা বাড়াইয়া দিয়েন। এ ছাড়া রাগ করার মতো বলার তো কিছুই নেই।



"আচছা বলেন কি বলতে চান? তবে দশ মিনিট লেট করছি তার জন্য আপনি না চাইলেও দশ টাকা বাড়াইয়া দিবো। আপনার টেনশানের কোনো কারন নাই, ঠিক মতো চালান।"



" না মামা, টাকার কতা না"

"তো?"

"শরমের কতা"

"শরমের কথা! কি শরমের কথা?"



" মামা আমারে একটা আম দিবেন? আমনে রে ফলের দোকান তে আম কিনতে দেখলাম। আমার ছোডো একটা পোলা আছে আইজ কয়দিন ধইরা খালি আম খাইতে চায়।"



বলেই জোরে জোরে প্যাডেল মারতে লাগলেন অহিদুল মিঞা। মনে হলো পারলে রিক্সাটাকে বাতাসে ভাসিয়ে নিয়ে যান তিনি।

বুঝতে পারলাম, কথাটা বলার পর ভীষণ শরম লাগছে তার। সেই শরম কাটাতেই এভাবে উম্মাদের মতো প্যাডেল মারছেন।



"আরে কি করছেন! আস্তে চালান, হাড়-গোড় সব এক হয়ে যাবে তো!"



কে শুনে কার কথা!

প্যাডেল মেরেই চলছেন অহিদুল মিঞা। ছোট ছোট খানা-খন্দে পড়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে তার তিন চাকার গাড়িটি। কেঁপে উঠছে আমার দেহ-মন।



বুকের গভীর থেকে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে সোডিয়ামের হলুদ আভায় মিলিয়ে গেল।



এই পৃথিবী সত্যিই বড় রহস্যময়.............



.....রিক্সাটা বাসার সামনে চলে আসার পর দেখলাম, অহিদুল মিয়ার চোখে মুখে কেমন যেন একটা লাজুকতার ভাব খেলা করছে।



কাঁধের গামছাটা দিয়ে অযথাই তিনি রিক্সার হাতল বেল ইত্যাদি মুছতে লাগলেন। আমার চোখের দিকে একদমই তাকাচ্ছেন না।



অন্যান্য ব্যাগগুলো নামিয়ে রেখে "আম" এর ব্যাগটি অহিদুল মিঞার হাতে দিয়ে বললাম, নিন এ প্যাকেটা রাখুন, বাসায় নিয়ে আপনার ছেলেকে খাওয়াবেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আপনিও খাবেন।



"কন কি মামা, এতগুলান আম?"

"মাত্র চার কেজি, বাসায় নিয়ে যান গিয়ে ছেলেকে খাওয়ান।"

"না মামা আমনের বাসায় নিয়া যান, আমার আম লাগবো না।"

"আমি কাল কিনে নিবো আবার। আপনি নিন তো।"

"ছি ছি মামা এইডা কি কন?"

"না নিলে আমি কিন্তু রাগ করবো। প্লিজ প্যাকেটটা হাতে নিন।"



অহিদুল মিঞা কেঁদে ফেললেন। গামছা দিয়ে চোখ মুছে বিড় বিড় করে কি যেন বললেন।

অনেক ইতস্ত করে আমের প্যাকেটটা হাতে নিলেন।



আমি বহু জোড় করে ভাড়ার টাকাটা পকেটে গুজে দিলাম তার। সাথে আমার একখান কার্ড দিয়ে বললাম, যদি কখনও আপনার ছেলে আম খেতে চায় তবে আমাকে ফোন দিবেন।



অহিদুল মিঞার চোখের জল থুতনি অবধি নেমে এসেছে।



আমার চোখ জোড়াও জ্বালা করে উঠলো। দারুণ এক সুখকর অনুভূতি খেলা করে গেল পুরো দেহে.....



......এই পৃথিবী সত্যিই বড় আনন্দম































মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪১

বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: দিতেন একটা আম। করতেন একখান কামের কাম।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৭

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: হুম দিয়েছি....কামের কাম হয়েছে কিনা জানি না।

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এই লজ্জাটা না থেকে বেলাজ,বেহায়া হওয়াটাতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্।ভাল লাগা।।

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:১৯

ভিটামিন সি বলেছেন: আপনি ওই লোকেরে একটা আম দিলাইন না কেরে? কয় টাকা একটা আমের দাম??

এমনিতেই লিখেছি। আমি জানি আপনি একটা আম ওই লোকেরে দিয়েছেন। যদি না দিতেন তাহলে এখানে তা লিখতেন না।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৮

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: হুম দেয়া হয়েছে....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.