![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....
১৪ই অক্টোবর ১৯৫৪। কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন কবি। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তাঁর কাদা-মাটি গড়া শরীরখানা দলিত হয়ে গিয়েছিল....। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠ, উরু এবং পাঁজরের হাড়...।
মানসিকভাবে কাবু বিপর্যস্থ আর জীবনস্পৃহা শূন্য জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল। ছুটে আসেন আরও অনেকেই। কবিকে নিয়ে ছুটে যান 'শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে'র দিকে। সেখানে ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহ প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান কবিকে সুস্থ করে তুলতে। হাসপাতালের বারান্দায় ভীড় জমে যায় অনেক তরুণ কবি ও কবি ভক্তদের....। কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাসও এগিয়ে আসেন। যেভাবেই হওক কবিকে সুস্থ করে তুলতে হবে। বাঁচিয়ে তুলতে হবে কবিকে....। পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ও কবিকে দেখতে গিয়েছিলেন। আহত কবির সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
চিকিৎসার উন্নতি কিছুই হয়নি.........।
অবস্থা ক্রমশঃ জটিল হতে থাকে। একসময় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে জাগতিক নিঃসহায়তা কে অতিক্রম করে চলে গেলেন কবি। কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে প্রচারবিমুখ বিবরবাসী এক কবির মৃত্যু হয়......।
দিনটি ছিল ২২শে অক্টোবর ১৯৫৪। রাত ১১টা ৩৫ মিনিট। হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন চিকিৎসক আর সেবিকার দল। কাঁদছিলেন কবিভক্তরা। কাঁদছিল কলাকাতার আকাশ বাতাস জল আর মাটি। অঝোর ধারায় কাঁদছিল সব.....।
"সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি ; কবি - কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিনত্মা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা রয়েছে, এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু সকলকে সাহায্য করতে পারে না ; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিনত্মার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় ; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়। ”
- জীবনান্দ দাশ (কবিতার কাথা)
©somewhere in net ltd.