![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....
সোবহান সাহেবের মনে হচ্ছে একটু পরেই তিনি মারা যাবেন। আজ তিন মাস হলো স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে আছেন। বয়স কিছুটা হয়েছে, তবে যাওয়ার বয়স হয়নি। আরও কিছুটা কাল থাকার খুব ইচ্ছা হচ্ছে তার। তার চেয়েও ঢের বেশি বয়স নিয়ে দিব্বি হেসে খেলে সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে আছেন, তার বাড়ির সিকিউরিটি ইউনুস মিয়া।
মাঝে মাঝে ভাবেন, সোবহান সাহেব। অতিরিক্ত ভোগই আজ তার জীবনে নামিয়ে এনেছে এ দুর্ভোগ। দারিদ্র্যে মানুষ মরে না। মানুষ মরে অতিরিক্ত ভোগে। কোনো রকম হিসাব নিকাশ ছাড়া ভোগ বিলাসিতাই তার কাল হয়েছে।
অতি আশ্চর্যের বিষয়। সোবহান সাহেব মরতে বসেছেন, অথচ এ নিয়ে ছেলে সন্তান স্ত্রী কারওই কোনো উদ্বেগ নেই। উৎকণ্ঠা নেই। বিশাল বাড়িতে সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই সন্ধ্যায়ও টিভি চলছে। সিনেমা চলছে। গল্পগুজ হচ্ছে। আড্ডা চলছে। ভালোমন্দ রান্না চলছে। সবই তার কানে যাচ্ছে। বিছানায় পড়ে আছেন ঠিকই। কান তো আর বিছানায় পড়ে নেই!
তার এইভাবে পড়ে পড়ে বেঁচে থাকাটা যেন কারওই পছন্দ হচ্ছে না। তাকে আর প্রয়োজন নেই তাদের। জীবনের সমস্ত দেনা-পাওনা চুকে গেছে। এই যে তিনি চলে যাচ্ছেন, তাতে কারওই কোনো অসুবিধা নেই। বাড়ির জায়গায় বাড়ি। গাড়ির জায়গায় গাড়ি। ব্যাংক ব্যালেন্স সবই তো রইলো।
সোবহান সাহেবের মনে হতে লাগলো, একটা সময় এই পৃথিবীতে কেউ কারও নয়। সবাই কেমন যেন পর হয়ে যায়। একটা গান মনে পড়ে গেল তার- আপন আপন করিস যারে, সে তো আপন নয়.......। বার্ধক্যের আগেই অথর্ব হয়ে পড়ে আছেন বেচারা।
দুই পুত্রবধু শিক্ষিতা সুন্দরী এবং আধুনিক। বেশ বড় ঘরের মেয়ে। ছেলেদের এককালে বড় ঘর দেখে বিয়ে করিয়েছিলেন। আজ তারা ভদ্রতার খাতিরে সেজেগুজে দিনে একবার দুবার রুমে আসে, যেন হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ারস এ কোনো নিকটাত্মীয় রুগি দেখতে আসে। সব কিছুই কেমন যেন ভাসা ভাসা আর উড়ু উড়ু। কোনো কিছুতেই প্রাণ নাই।
কেউ কেউ বলাবলি করছে, এভাবে পড়ে পড়ে কষ্ট না পেয়ে চলে গেলেই ভালো হতো। যত তাড়াতাড়ি যাবে, ততই কষ্ট কম হবে। তার বেঁচে থাকার কষ্ট নিয়ে সবাই কতো বিচলিত এই সংসারে।
সোবহান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে মাঝে মাঝে। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন একসময়। কতো অন্যায় আর অবৈধভাবে এই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অথচ আজ সবাই তার যাবার প্রহর গুনছে বসে বসে। তার বেঁচে থাকার কষ্টটা লাগছে সবার বুকে।.......কার জন্য কাদের জন্য তিনি এই আলিশান বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স গড়ে তুলেছেন?? কার জন্য??..... কিছুই ভেবে পান না আজ তিনি।
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫০
শিপন মোল্লা বলেছেন: চলমান জীবনের চরম সত্য কিছু কথা খুব সাধারন করেই বলেছেন । যথার্থই হয়েছে লিখাটার হেডিং ।
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২১
ঢাকাবাসী বলেছেন: কঠিন সত্য বটে!
৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
আমিনুর রহমান বলেছেন:
বাস্তবতা !
৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮
তুষার কাব্য বলেছেন: নির্মম সত্য...
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৩৫
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: দিন শেষে হয়ত অনুসুচনারা এভাবেই ছুঁয়ে যায়