নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রশিদের এই সন্তান বিক্রির বিষয়টি আমাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তুলতো। এখনো মাঝে মধ্যে ভাবিত হই আমি....

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১০

দীঘির পাড়ের বাঁকা তালগাছটার গোড়ায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে রশিদ। একপ্রকার হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে উর্ধ্বাকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে সে। পড়নে মলিন একটা পলেস্টার লুঙ্গি। আর গায়ে চিতাই পড়া স্যান্ডো গেঞ্জি।

পাড়ের আম আর জারুল পাতার ফাঁক গলে তেরছা রোদ দীঘির কালো জলের উপর এসে পড়ছে।

রশিদ ঘাড় কাৎ কারে সেই রোদের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ সারাদিন বাড়ির বাইর হয়নি সে। অনেকটা ঘরের ভেতর শুয়ে বসেই কাটিয়ে দিয়েছে। যতই বিকেল ঘনিয়ে আসছে, বুকের ভেতরটা কেমন যেন হা হা কার করে উঠছে। আজ বিকেলেই তার সাত মাস বয়সি চতুর্থ সন্তান কাসেমকে নিতে আসবেন জেলা সদরের শফিক উদ্দিন নামের একজন। ২০ হাজার টাকায় কাসেমকে শফিক উদ্দিনের কাছে বেচে দিয়েছে সে। দশ হাজার টাকায় সমিতির ঋণ পরিশোধ করবে, আর বাকি দশ হাজারে একটা পুরনো রিক্সা কিনবে।
জলের উপর ভেসে থাকা রোদের উপর একদলা থুথু ছুড়ে মারলো রশিদ। মুহূর্তেই কি একটা পোনা মাছ মাথা জাগিয়ে গপ করে গিলে ফেলল তা । রশিদ চেয়ে চেয়ে দেখলো।

এমন সময় রশিদের স্ত্রী হাজেরা চিৎকার করে উঠলো। কাসেম চকির উপর থেকে মাটিতে পড়ে গেছে। চিৎকার করে কাঁদছে কাসেম। তার গগণবিদারি কান্না শেল হয়ে বিঁধছে রশিদের বুকে।

রশিদের একবার মনে হলো দৌড়ে ছুটে গিয়ে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কয়েকটি চুম খাবে। শেষবারের মতো একটু ভালো করে আদর করবে। ছেলের গায়ের ঘ্রাণ নিবে। কিন্তু গেল না সে। মায়ার বাঁধন কাটাতে চায়। শেষে না ছেলেকে বেচার ইচ্ছেটাই মরে যায় মায়ার বাঁধনে আটকা পড়ে!

চিৎ হয়ে শুয়ে আছে রশিদ। দীঘির পারের বাঁকানো তালগাছটার উপর সটান হয়ে শুয়ে আছে সে। কাসেমের চিৎকার ভেসে আসছে তার কানে। ভেসে আসছে হাজেরার চিৎকারও, "লোকটা একটা ডাকাইত। জম ডাকাইত। পোলাডায় কানতাছে হুইনাও একটু আইলো না। আইজ শেষ দিন পোলাডারে একটু আদরও করলো না...।"

দু'চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে রশিদের....। বাঁধ ভাঙা জল। বহু কষ্টে সে উপরের পাটি দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে।......

বিদ্র: রশিদের এই সন্তান বিক্রির বিষয়টি আমাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তুলতো। এখনো মাঝে মধ্যে ভাবিত হই আমি....














মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.