নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের ভাষার জন্য যাঁরা দিয়ে গেছে প্রাণ...

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৬

(১) শহীদ আব্দুস সালামঃ

ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে(বর্তমানে সালাম নগর) ১৯২৫ সালে তাঁর জন্ম।

কর্মজীবনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের 'পিয়ন' হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নিলে ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে আবদুস সালাম গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল ১৯৫২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


(২) শহীদ আবুল বরকতঃ

মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে তাঁর জন্ম। সেখানকার় তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে মেট্রিক এবং বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আই.এ পাস করেন তিনি।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালে মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন।.... তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ গুলি চালালে হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল বরকত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত আটটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

(৩) শহীদ রফিক উদ্দিনঃ :

১৯৫২ সালে শহীদ রফিকের বয়স হয়েছিল ২৬ বছর। তাঁর পিতা আবদুল লতিফ ছিলেন ব্যবসায়ী। কলকাতায় ব্যবসা করতেন তিনি। রফিকউদ্দিনের শৈশবের পড়ালেখা শুরু কলকাতার ‘মিত্র ইনস্টিটিউটে’। এরপরে মানিকগঞ্জের ‘বায়রা স্কুলে’। সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে ছিল তাঁদের বাড়ি। '৪৭ এর দেশভাগের পর রফিকউদ্দিনের পিতা ঢাকায় চলে আসেন। বায়রা স্কুল থেকে ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। তারপর মানিকগঞ্জ'র "দেবেন্দ্রনাথ কলেজে" বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন।

১৯৫২ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন।

পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ব্যারাকে আশ্রয় নেওয়ার সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন রফিক। গুলিতে তাঁর মাথার খুলি উড়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তখনই মারা যান তিনি। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল। ছয় সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ এনাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন......। তাদের মাঝে ডাঃ মশাররফুর রহমান খান রফিকের গুলিতে ছিটকে পড়া মগজ হাতে করে নিয়ে যান।

প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুল্লাহর উপস্থিতিতে তাঁর জানাজা পড়ান আজিমপুর মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুল গফুর। সংগোপনে, আত্মীয়-স্বজনের অজ্ঞাতে আজিমপুর কবরস্থানের অসংরক্ষিত এলাকায় দাফন করা হয় শহীদ রফিকের মরদেহ।



(৪)শহীদ আবদুল জব্বারঃ

১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত শাশুড়িকে নিয়ে ঢাকায় আসেন আব্দুল জব্বার।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। ছাত্ররা ধরাধরি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।


(৫)শহীদ শফিউর রহমানঃ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার কোন্নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ঢাকার পোস্ট এন্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। কলকাতা গভর্ণমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ হতে আই.কম পাস করে শফিউর রহমান চব্বিশ পরগণা সিভিল সাপ্লাই অফিসে কেরানির চাকরি গ্রহণ করেন।

দেশ বিভাগের পর পিতার সঙ্গে ঢাকায় এসে ঢাকা হাইকোর্টে হিসাব রক্ষণ শাখায় কেরানি পদে যোগ দেন।

১৯৫২‌-র ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে।...... আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার সফল না হওয়ায় ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


**ভাষাশহীদদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শহীদের নাম অহিউল্লাহ। পিতার নাম হাবিবুর রহমান, পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। ২২ ফেব্রুয়ারি নওয়াবপুর রোডের মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে মারা যান তিনি। তার লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।**


**ভাষা আন্দোলনের উপর কিছু রেফারেন্স বই**
১। সোনালী আকাশ, রূপালী বাতাস – এম আর আখতার মুকুল।
২। কোলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবি ও বাংলার মুসলিম সমাজ – এম আর আখতার মুকুল
৩। পুর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি – বদরুদ্দিন উমর
৪। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস – বশীর আল হেলাল
৫। আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর – আবুল মনসুর আহমদ
৬। রাজনীতি ১৯৪৫ – ১৯৭৫ – অলি আহাদ
৭। History of East Pakistan politics – Kamruddin Ahmed
৮। ভাষা আন্দোলন – ড. আব্দুল হান্নান।

৯। Talukder Maniruzzaman, The Bangladesh Revolution and its Aftermath, Bangladesh Books International Ltd., Dhaka, Bangladesh, 1980

১০। ভাষা আন্দোলন, বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.