নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"জিরো ডিগ্রি" একটি সুন্দর গল্পের অপমৃত্যু......

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৫৬

পরপর কয়েকটি বাংলা সিনেমা দেখে ফেললাম গত কয়েক মাসে। আশার কথা হলো যে, সমালোচনা যতই থাক কিছু কিছু সিনেমা অবশেষে দর্শকদের হলঘরে টানতে সক্ষম হচ্ছে।

সর্বশেষ দেখলাম "জিরো ডিগ্রি"।

অনিমেষ আইচের উপর আস্থা থেকেই ছবিটি দেখা। বর্তমান সময়ের তরুণ নাট্য নির্মাতাদের মধ্যে অনিমেষ আইচ উল্লেখযোগ্য একজন। নাটক নির্মাণে তাঁর মুন্সিআনার কথা দর্শক মাত্রই জ্ঞাত।

অসাধরণ একটি গল্প দিয়ে শুরু হয়েছিল "জিরো ডিগ্রি"

ছবির শুরুতে ব্যস্ত মাহফুজকে আমরা দেখি কর্মব্যস্ততার দরুণ তিনি নিজের স্ত্রী ও পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না। স্ত্রী রুহি ফোন দিলে এক মিনিটও কথা বলাস ফুরসত মিলে না তার। একটা মিনিট কথা বলার জন্য রুহির সেই কি আকুতি।... গল্পটা যেন মিলে যাচ্ছিল নিজের জীবনের সাথে। একসময় অনলাইনে রুহির সাথে পরিচয় হয় সিঙ্গাপুরে বসবাসরত এক যুবকের। সংসার সন্তান সব ফেলে একদিন সিঙ্গাপুরে পারি জমায় রুহি। অসাধারণ একটি সাইকোলোজিক্যাল ট্রিটমেন্ট।

অপর দিকে জয়া আহসান এর বাবার গল্পটিও তুলে আনা হয় দারুণ মুন্সিআনার সাথে। আমার লেখা "আজি এ বসন্ত"র বুবলির চরিত্রটি এত সুন্দর আর নিখুঁতভাবে তুলে আনবেন অনিমেষ ভাবতেই পারি নি। তবে কি জিরো ডিগ্রি নির্মাণের আগে "আজি এ বসন্তে" পড়ে ছিলেন অনিমেষ! একদম হুবুহু মিল। হয়তো বা পড়ে থাকবেন। বুবলির মাকে যেভাবে গলাটিপে হত্যা করেছিলেন তার বাবা....ঠিক একই কারণে তারিক আনাম জয়ার মাকে একইভাবে হত্যা করেন।... অসাধারণ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ আর টান টান উত্তেজনাময় কাহিনী দারুণ জমে ওঠেছে।

দর্শকদের মাঝে পিন পতন নীরবতা। এ জায়গাটিতে অনিমেষ সফল। ভণ্ডকবির চরিত্রটিও দারুণ হয়েছে। ভালো লেগেছে টেলিসামাদের চরিত্রটিও। অল্পসময়ের জন্য হলেও সুন্দর অভিনয় করেছেন জাত এই অভিনেতা।

....থুতনির নিচে হাত দিয়ে যখন খুব মনযোগসহকারে দেখছিলাম, ঠিক তখনই গল্পের সুতো ছেড়ে দিলেন অনিমেষ। একটা সময় এসে খেই হারিয়ে ফেললেন তিনি। আকাশ সমান উচ্চতা থেকে একটা সময় এসে গল্প, সুতো ছিড়ে যাওয়া গুড্ডির মতো পাক খেতে খেতে ডোবার নর্দমায় মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।

হতে পারে এটি তাঁর বড় কাজের অভিজ্ঞতার অভাব।

রাতের বেলা বোরখা পরে বড় সাইজের ছুরি হাতে জয়া আহসান ব্যস্ত কাঁচা বাজারে একজনকে খুন করার জন্য তাড়া করছেন। বাজারের বাকি লোকদের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই, সবাই নিজেদের মতো বাজার সদাই করছেন। কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না কিংবা আটকাবার চেষ্টা করছেন না।

জয়া লোকটিকে খুন করলেন। লোকজন চারপাশে জমা হয়ে হাসি হাসি মুখ করে মোবাইলে সেটির ভিডিও করতে লাগল। খুন শেষে জয়া স্বাভাবিকভাবে ভিড় থেকে বের হয়ে গেলেন। লোকজন সরে জায়গাও দিল। আবার কোথা থেকে হুট করে মাহফুজ এসে তাকে বাইকে তুলে নিয়ে যায় তার আস্তানায়...। এরকম একটি ছবিতে যা শুধু যে অস্বাভাবিক লেগেছে তা নয়। দর্শকদের আকাশ থেকে একেবারে হেঁচকা টান মেরে মাটিতে নামিয়ে এনেছে।

বস্তুত এখান থেকেই জিরো ডিগ্রির কাহিনীর পতন শুরু হয়। যা সুন্দর একটি গল্পকে একসময় অপমৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়।

গল্পে ইরেশ যাকের এর চরিত্রটি কেন আনা হয়েছে বোধগম্য নয়। যে খুনের রহস্য হলভর্তি দর্শকসহ সবাই জানে, সেই খুনের রহস্য উদঘাটনে তার পুরো টিমের ঘাম ঝরানোটা দর্শকদের কাছে এক ধরনের কৌতুকই মনে হয়েছে। তাই তো দর্শকগণ হাসা হাসি করতে শুরু করে দিলেন। খুব আফসোস হতে লাগলো... এত সুন্দর করে গল্পটিকে তুলে এনে মাঝপথে এসে এভাবে আছাড় মারলেন অনিমেষ!...

ছবিতে থ্রিল আনার চেষ্টা করে ছিলেন অনিমেষ। কিন্তু তাতে সফল হন নি তিনি। কেন না একটা জায়গায় এসে সুতো টেনে ধরে রাখতে পারেন নি। ফলে হাল ছেড়ে দেন।

ছবির প্রথমার্ধে গল্প বলার ভঙ্গি ছিল chronological মানে একজনের গল্প একদম প্রথম থেকেই শুরু করা। আর দ্বিতীয়ার্ধে ছিল প্যারালাল মানে কয়েকটি গল্প পাশাপাশি বর্ণনা করা।

দ্বিতীয়ার্ধে এসে গল্পের গতি একেবারেই পড়ে গেছে।

মাহফুজের অভিনয়ও কেমন যেন অভিনয় অভিনয় মনে হয়েছে। নাটকের হিরোদের এই সমস্যা। সিনেমায় এলে একটা সময় তাঁরা আর পেরে ওঠেন না। চরিত্রের সাথে মিলিয়ে ভয়েস ডেলিভারি দিতে পারেন না। আরেফিন শুভর অ্গ্নি ছবি দেখেও এমনটিই মনে হয়েছে। ভয়েস ডেলিভারিই তাঁদের মূল দুর্বলতা। তাঁরা যখন রেগে কথা বলেন, তখন এক ধরনের ন্যাকামো মনে হয়.... ভয়েসের মাধ্যমে অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় না।

সিনেমা আর নাটক এক জিনিস নয়। এখানে মানান সই ভয়েস আর লুক অতি গুরুত্বপূর্ণ।

ছবিতে লোকেশন আর ক্যামেরার কাজ প্রশংসার যোগ্য। সেদিকে তেমন ঘাটতি দেখা যায় নি। প্রথম থেকে শেষ অবধি জয়া ও রুহি সুন্দর অভিনয় করেছেন।

.....যা্ই হওক গতবাঁধা কাহিনী থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন ধারার একটি গল্প নিয়ে সুন্দর একটি সূচনা করেছেন অনিমেষ। সেটাই বা কম কিসের!! শুরুটা তো কেবল হলো......

যারা এখনও হলে গিয়ে ছবিটি দেখেন নি তাদেরকে দেখার অনুরোধ রইলো।

আর হ্যাঁ, অনিমেষের পরবর্তী ছবি দেখার অপেক্ষায় থাকবো.....আশা করি পরবর্তি ছবিতে তিনি নতুন কোনও চমক নিয়ে হাজির হবেন... এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দারুণ উপভোগ্য এক ছবি হবে সেটি......









মন্তব্য ২১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৫০

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: একদম সত্যিকারের বিশ্লেষণ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ...

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩

আল কাফি বলেছেন: খুব সুন্দর রিভিউ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই....

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮

বিদগ্ধ বলেছেন: রিভিউ করার স্টাইলটি ভালো লেগেছে।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ...

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩

সালমান মাহফুজ বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০১

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই...

৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪২

ব্লগার আয়নাল ভাই ইতি বলেছেন: জিরো ডিগ্রির কাহিনীর পতন শুরু হয়। যা সুন্দর একটি গল্পকে একসময় অপমৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৩

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: জ্বি ঠিক বলেছেন... ধন্যবাদ

৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

মঙ্গলগ্রহের মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন: মাহফুজের সাবলীলতার অভাব ছিলো একটু বেশীই ।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৩

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: আমারও তাই মনে হয়েছে...

৭| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৫

মঙ্গলগ্রহের মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন: মাহফুজের সাবলীলতার অভাব ছিলো একটু বেশীই ।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৪

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: আমারও কোনও কোনও জায়গায় তাই মনে হয়েছে

৮| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০৫

মৌসুমী মালা বলেছেন: ভালোলাগলো আপনার চমত্কার উপস্থাপনা । খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন ত্রুটি গুলো। ছবি টি না দেখলেও বেশ উপভোগ করলাম আপনার লেখা থেকে। লেখক বা পরিচালক
দর্শক হতে পারলে এই সমস্যা গুলো সমাধান করতে পারেন। whatever its non of my business and they're 100&#xsm;art than me . Thanks Jewel .

৯| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০৮

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যেরর জন্য হলে গিয়ে ছবিটি দেখার আমন্ত্রন রইলো

১০| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১০

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: আমি সবাইকে হলে গিয়ে ছিবিটি দেখার অনুরোধ করবো....একেবারে ফেলে দেবার মতো ছবি নয় জিরো ডিগ্রি

১১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১৩

মারুফা নাসরীন মিলি বলেছেন: যে সিনেমায় গল্পের অপমৃত্যূ হয়েছে সেটা আবার সবাইকে দেখতে বলাটা বোধগম্য হলোনা।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:০১

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: আমি চাই হলঘরে গিয়ে দর্শকগণ ছবি দেখুক, এবং ভালোমন্দ দিকগুলো তুলে ধরুক। আলোচনা সমালোচনা করুক।

১২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:২৪

মহান অতন্দ্র বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ, লেখার ঢং টা ভাল লেগেছে।

২৩ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১৭

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ মহান অতন্দ্র..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.