নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প: আমাদের ঈদ

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:০২

ঈদ মুবারক। আমি জানি না আপনাদের ঈদ কেমন কেটেছে। হয়তো ভালো। হয়তো বা না। কিন্তু আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ঈদ করেছি, তাদের অনেকের ঈদ-ই ছিল দারুণ উপভোগ্য ও আনন্দময়।

আজ সকালে মা ফোন দিয়েছেলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলেন, "কেমন আছিস বাবা?"

মায়ের কান্না আমাকে মোটেও আবেগঘন করে তুলতে পারে নি। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললাম, "ভালো আছি মা। এখানে আমারা অনেকেই আছি। পুরো হলভর্তি ছেলে-পেলে। আমরা সবাই মিলে বেশ আনন্দ করছি। তোমরা কেমন আছ মা?"

মা কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, "আমরা ভালো আছি। কি খাইছস বাবা?"

উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বললাম, "রুমের হিটারে মাংস দিয়ে ভুনা খিচুরি পাক হইছে। সবাই মিলে একসাথে খাইছি। সেমাইও রান্না হইছে। রাতে রাজ হাঁস রান্না হবে। আমাদের সাথে একজন আছে, খুব ভালো রাঁধতে পারে। আমি বেশ ভালো আছি মা। তোমরা কোন চিন্তা কইরো না।"

তারপর ফোন কেটে দিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে রাখলাম। ছোট্ট একটা নি:শ্বাস ছেড়ে বোতলের মুখটা খুলে ঢক ঢক করে আধা বোতল পানি খেলাম। খিদায় পেট জ্বলছে। হিটারে ভাত বসিয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে ছিলাম। কুয়াশার মতো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি বেশ ভালোই লাগছিল। ঘণ্টা দেড়েক পর রুমে এসে দেখি, ভাত পুরো ডেকসির সাথে লেগে গেছে। পোড়া পোড়া গন্ধমাখা ভাত খেতে খারাপ লাগছিল না। তারপরও কেন জানি পেট ভরে নি। খাবার-দাবারের প্রতি আমার কখনই তেমন কোন আকর্ষণ ছিল না। তারপরও ভাতটা পুড়ে যাওয়াতে মনটা বেশ খারাপ লাগছিল।

মাকে যা বলেছি, পুরোটাই মিথ্যা। হলভর্তি নয়, পুরো হলজুড়ে আমরা গোটা পনেরক ছেলে রয়েছি। প্রত্যেকের বুকেই চাপা রয়েছে নানা ওজনের কষ্টের পাথর। ভুনা খিচুরি আর সেমাইর কথাটাও ছিল মিথ্যা। আমার মতো অন্যরা মিথ্যা বলছে কিনা জানি না। হয়তো বলছে। হয়তো বা না।
মাকে বলেছি, ঈদের পরপরই আমার একটা চাকরির পরীক্ষা আছে। মাস্টার্স শেষ করার আগেই যদি আমার একটা চাকরি হয়ে যায়, তবে আর আমাদের কোন কষ্ট থাকবে না। তাই এবার ঈদে আমার বাড়ি যাওয়া হবে না।

এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না আমার। ফার্মগেটের একমাত্র টিউশনিটা গত মাসে চলে গেছে। ছাত্রের বাবার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। তাই আপাতত টিউটর রাখবেন না তারা। তারপর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একে ওকে ধরছি। সবাই বলছে, বছরের মাঝামাঝি সময় নতুন করে কেউ টিউটর নিচ্ছে না। তবুও আশা ছাড়ছি না। হয়তো আগামী মাসে কিংবা তার পরের মাসে একটা টিউশনি জুটে যাবে।

বাড়িতে যেতে হলে মোটামুটি মানের হলেও মায়ের জন্য একটা শাড়ি। বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি। একটা লুঙ্গি। আর ছোট বোনটার জন্য একটা থ্রি-পিছ কিনতে হবে আমাকে। সেই টাকা কই? বর্তমানে আমার সম্বল দুইটা একশত টাকার নোট। আগামী কয়েক দিন এ দুইশ টাকা দিয়ে চলতে হবে। ভাংতি আরো বিশ ত্রিশ টাকা অবশ্য আছে। তারপর আবার ধার করতে হবে। এ যাবত আঠারো শ টাকার মতো ধার করা হয়ে গেছে। যার সবই করেছি ছোট ভাইদের কাছ থেকে। বলেছি, টিউশনি পেলেই শোধ করে দিবো।

আজকে সারাটা দিন পুকুর পাড়ে বসে আর রুমে শুয়ে শুয়ে সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ে কেটেছে আমার। ঈদের দিন হিসেবে একেবারে মন্দ কাটে নি। প্রায় ঘণ্টা খানেক বালিশ চাপা দিয়ে কান্না-কাটিও করলাম। সে থেকে চোখ দুটো খানিকটা ফুলে আছে। নিতুর কথা খুব মনে পড়ছিল। আমার ছোটবোন। পাগলিটা নিশ্চয়ই কাঁদছে আমার জন্য!

মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছু সময় নাড়াচাড়া করলাম। কিন্তু অন করতে ইচ্ছে করলো না।

নাহ আর ভালো লাগছে না। এখন রাত চারটার মতো বাজে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে খুব। ঝুম বৃষ্টি। চোখ দুটোতে রাজ্যের ক্লান্তি। কিন্তু ঘুমাবো না। হাঁটতে হাঁটতে ভিসি চত্ত্বরে যাবো। তারপর টি এস সি হয়ে পুরো ক্যাম্পাসে একটা চক্কর দিবো। যাই বের হই। এক্ষুণি বের হতে হবে আমাকে। ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দই আলাদা......


(উৎসর্গ: জহরুল হক হলে একাকী ঈদ উদযাপন করা শিক্ষার্থীদের)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:৩৪

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: মিলে স্ত্রী-সন্ত্রানদের বলা কথার সাথে।।

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:২২

হাইপারসনিক বলেছেন: এবারও কেটে গেলে একটি সাধারণ ঈদ !সকল অসাধারণরাই করতে পারে সাধারণ ঈদ
ধন্যবাদ

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:২০

হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.