নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাবিবুর রহমান জুয়েল

হাবিবুর রহমান জুয়েল

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....

হাবিবুর রহমান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"তুই বেশি কথা বলোস। বেয়াদবি করস। থাপড়াইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু একদম। খোল তাড়াতাড়ি...."

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১৬

"খালুজান এইডা কী করতাছেন? আমার এইসব ভাল্লাগে না।"

"আরে এ্ই তো একটু। মাত্রই তো পাঁচ মিনিট। পাঁচ মিনিট একটু সহ্য করলে, কি এমন ক্ষতি হইবো তোর।"

"খালুজান আমার এইসব ভাল্লাগে না। আমি পারি না। আমার অনেক কষ্ট হয়। গেন্না লাগে।"

"আরে কি যে কস, গেন্না লাগার কি আছে? আমার তো গেন্না লাগে না। তাড়া তাড়ি কর, একটু....আগামী মাসের তে তোর বেতন দুইশ বাড়াইয়া দিমু নি। নে নে তাড়াতাড়ি খোল..."

"বেতন বাড়াইয়া দেওন লাগতো না। আমি আর আফনাগো বাসায় থাকুম না। খালাম্মার কাছে সব কইয়া দিমু।"

"কি কইয়া দিবি?"

"আফনার এইসব। প্রায়ই বাসা খালি পাইলে আফনে আমার লগে জোর করেন।"

"তুই বেশি কথা বলোস। বেয়াদবি করস। থাপড়াইয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু একদম। খোল তাড়াতাড়ি...."

মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে আমেনা। তার চোখ টলমল করে উঠে। তার ১২ বছরের ক্ষুদ্র একটি দেহের পক্ষে অত বড় পাঠার মতো দেহের ভার বহন করাটা বেশ কষ্টের। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। গৃহকর্তা আমেনার হাত ধরে হেঁচকা টানে বিছানার উপর ফেলে দেয়।

আধা ঘণ্টা সময় চলে যায়। আমেনা যন্ত্রনায় কোঁকাতে থাকে। কাঁপতে থাকে। খানিকটা রক্তাক্তও হয় সে। খালুজান ছেড়ে যাবার পর বাথরুমে গিয়ে মেঝের উপর পা ফেলে কলটা ছেড়ে দিয়ে ঘণ্টা খানেকের মতো বসে থাকে। বসে বসে নীরবে নি:শব্দে কাঁদতে থাকে।

গরীব হয়ে জন্মানোটা কি সত্যিই পাপ!

সন্ধ্যার পর পর "গৃহকর্ত্রী বাসায় ফিরেন। আমেনার শরীর ভালো না। সমস্ত গা ব্যথা হয়ে আছে। খালুজান যেদিন তার সাথে এসব করে তার পর কয়েক দিন তার শরীরের ব্যথা যায় না। এসবের পর খালুজান একটা ট্যাবলেট (ওয়ান টাইম পিল) হাতে দিয়ে খেতে বলেন। ট্যাবলেট টি খাওয়ার পর তার মাথা গুলায় কয়েকদিন। কাজ কাম ভালো লাগে না। সারাক্ষণ ঝিম ঝিম করে শরীরটা।

"কিরে নবাব জাদি এই সন্ধ্যায় শুয়ে আছস ক্যান? কাজ-কাম কেডা করবো তোর বাপ? লাত্থি মাইরা নিচে ফালায়া দিমু।" বলে পা দিয়ে আমেনার পাছায় ধাক্কা মারেন গৃহকর্তী।

"উঁ" বলে ধরপর করে বিছানা ছেড়ে ওঠে আমেনা। তার নিচের ঠোঁটটি ফুলে কালচে হয়ে আছে।

"যা এক পাতিল গরম পানি বসা। আর তোর খালুর জন্য রুটি বানা। রাতে সে রুটি খাবে।"

"জ্বি যাই তাছি।" বলে আমেনা চুলায় গরম পানি বসায়। আটা সিদ্ধ করে রুটি বেলে তাওয়ায় দেয়। তার মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। রান্না ঘরে পিড়ির উপর বসে খানিকটা জিরিয়ে নিচ্ছে।

চুলা থেকে রুটি পোড়া গন্ধ আসছে। গৃহকর্তী দৌড়ে ছুটে এসেছেন। আমেনার চুলের মুঠিতে ধরে দুই তিনটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, "ঐ ফকিন্নির বাচ্চা। রুটি পোড়তাছে দেখস না? বইসা বইসা কোন ভাতারের কথা ভাবছ?"

"খালাম্মা আমার শরীলডা ভালা না। খালি ঘুম পায়।"

"দাঁড়া ছুটাইতাছি তোর ঘুম।" বলে তাওয়ার পাশে রাখা গরম খুন্তিটি নিয়ে আমেনার হাতে চেপে ধরলেন গৃহকর্তী।

"ওরে মাগো বাবা গো, মা..... মাগো..." বলে আকাশ বাতাসা কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠে আমেনা। তার চিৎকার চার দেয়ালের মাঝে আটকা পড়ে যায়। তারপর মগে করে আধা মগ গরম পানি আমেনার গায়ে ঢেলে দেয়া হয়।

আমেনা অজ্ঞান হয়ে যায়।

উপরের গল্পটি পুরো কাল্পনিক। কাল্পনিক হলেও বছরের পর বছর এমনটিই হয়ে আসতে দেখছি আমরা। কেন হচ্ছে এসব? কী করে পারি আমরা?

আজ একটি খবরে দেখলাম, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী শহরে বিবি আমেনা নামের ১২ বছরের এক শিশু গৃহকর্মীর শরীরে গরম পানি ঢেলে ও গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। শিশুটির দুই পা ও ডান হাতে গরম কিছু দিয়ে ছ্যাঁকা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া গলার নিচ থেকে বুকের দিকে ঝলসানো।

আহা রে মানুষ! আহারে মানবিকতা! গরীব হয়ে জন্মানোটা কি সত্যিই পাপ?
গৃহকর্তা সাইফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নিনুবা বেগম তার ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছেন বলে শিশুটি জানিয়েছে। শিশুটি অভিযোগ করেছে, সাইফুল তাকে ‘যৌন নির্যাতন’ করেছেন। তাছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে তার ওপর সাইফুলের স্ত্রী নির্যাতন করতেন।

প্রায়ই হাতে ও পায়ে রান্নাঘরের খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকা দেন গৃহকর্ত্রী নিনুবা। তারপর লবণ-পানি গরম করে শরীরে ঢেলে দেন। তারপর নির্যাতনের পর স্বামী-স্ত্রী মিলে তাকে শৌচাগারে দুই দিন আটকে রাখেন। সেখানে সে টেপের পানি খেয়ে বেঁচে ছিল।

আহারে নির্মমতা! আহারে নিষ্ঠুরতা!! এই পাষণ্ডদ্বয়ের কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি...।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.