নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে দুঃখ কতো লুকিয়ে থাকে কেউ তো জানে না....
সন্ধ্যার পর থেকে থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। রাত বারোটার দিকে এসে কিছু সময়ের জন্য থেমে গিয়েছিল। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়া। সারাদিনের খাটা খাটুনিতে শরীরটা বেশ ক্লান্ত বোধ হচ্ছিল মোহম্মদ আলীর। ক্লান্ত শরীর নিয়ে কারওয়ানবাজারে সড়কদ্বীপের পাশে নিশ্চিন্তে নিজের ভ্যানের উপর একটা পলিথিন মুড়ো দিয়ে শুয়ে পড়লেন তিনি।
শরীরটা আলগোস্তে ছেড়ে দিল তার। স্বল্প সময়ের ভেতরই নাক-ডাকা গভীর ঘুমে হারিয়ে গেলেন।
পাশ দিয়ে বড় বড় কভার্ডভ্যান, লরি, প্রাইভেটকার শাঁ শাঁ বেগে ছুটে চলছে। তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার। শরীর জুড়ে রাজ্যের ক্লান্তি আর দুচোখ জুড়ে ভারী ঘুম আর ঘুম।
সড়কদ্বীপের উপর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাঘের ভাস্কর্যটির পাশে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমের রাজ্যে বসবাস করতে লাগলেন মোহাম্মদ আলী। হারিয়ে গেলেন স্বপ্নের রাজ্যে......। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখতে লাগলেন, তার আট বছরের মেয়ে কুলসুম সামনে দুহাত বাড়িয়ে তাকে ডাকছে- বাবা বাবা কবে বাড়িত আইবা তুমি? তোমারে দেখবার মন চায় বাবা। বাড়িত আসো বাবা বাড়িত আসো....। দশ বছরের ছেলে সোহাগ বলছে- বাবা আমার লাইগা সুন্দর দেইখা একটা স্কুলব্যাগ আনবা এইবার। গতবার তুমি কইছিলা, এইবার আমার লাইগা স্কুলব্যাগ আনবা।...... এক বছরের কোলের মেয়েটি দু'হাত ছুড়ে চিৎকার করে কাঁদছে তার কোলে আসবে বলে।
স্বপ্নের ভেতরই এই সব কিছু দেখছেন তিনি। ছেলের জন্য একটা সুন্দর স্কুল ব্যাগ কিনেছেন। মেয়ের জন্য মাথার একজোড়া প্রজাপতি ক্লিপ কিনেছেন। রাবার ব্যান্ড কিনেছেন একজোড়া। আর কোলের মেয়েটার জন্য লাল টুকটুকে একটা নিমা কিনেছেন।
তারপর... তারপর সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। ঘাটে এসে এখনো লঞ্চ ভিড়ে নি। একটু পরই আসবে। ঐ তো আসছে। হুইসাল বাজছে। হ্যা হ্যা ঐ তো আসছে। পোঁওওওওও....... লঞ্চের হুইসাল ভেসে আসছে স্পষ্ট।
এমন সময় কে যেন একজন তাকে ধাক্কা দিল সজোরে। ধাক্কাটা তিনি সামলাতে পারলেন না।...
রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাঘের ভাস্কর্যটি মোহাম্মদ আলীর উপর ভেঙ্গে পড়লো। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা তার সজীব দেহখানা মুহূর্তেই নিথর থেতলে যাওয়া প্রাণহীন স্বপ্নহীন দেহতে রূপান্তরিত হয়ে গেল।
স্বপ্নের ভেতর থাকতে থাকতেই চির স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে গেলেন একজন বাবা। একজন স্বামী। একজন সন্তান।
হয়তো ভুল করে একটি বারের জন্যও মোহাম্মদ আলীর মনে আসে নি, এই প্রাণহীন ভাস্কর্যটিই তার প্রাণ ঘাতকে রূপ নিতে পারে কোন এক সময়! একটি বারের জন্যও হয়তো মনে আসে নি তার, আজ রাতের ঘুমই তার জীবনের শেষ ঘুম। এই নিদ্রাই তার শেষ নিদ্রা...।
গরীব হয়ে জন্মানোটা একটা অভিশাপই বটে। প্রকৃতিও চায় না দিনের ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঠিকানাহীন কোন গরীব ভ্যানচালক একটু শান্তিতে ঘুমাক। প্রকৃতির বিচারের রায়ও চিরকাল এদের বিরুদ্ধেই যায়।
আচ্ছা, কেউ কি একটু ক্ষতিয়ে দেখবেন কী কারণে ভেংগে পড়লো এই ভাস্কর্যটি? এটি কি শুধুই নিচক একটি দুর্ঘটনা? না কি দুর্বল অবকাঠােমা জনিত নির্মাণ ত্রুটির কারণেই এভাবে এত দ্রুত এটি ভেঙে পড়লো, এবং প্রাণ নিল একজন নিরিহ স্বপ্নের ঘোরে থাকা মানুষের?
ভাস্কর্যটির স্থায়িত্বের জন্য পায়ে যে পরিমাণ রড-সিমেন্ট দেয়ার দরকার ছিল, সে পরিমান রড কিংবা সিমেন্ট কি দেয়া হয়ে ছিল?
হয়তো হয়ে ছিল। হয়তো দুর্ভাগ্যই ছিল ভ্যানচালক মোহাম্মদ আলীর। হয়তো তার মৃত্যুর জন্য সে নিজেই দায়ী....
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৫২
হাবিবুর রহমান জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই গেম চেঞ্জার
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪২
গেম চেঞ্জার বলেছেন: ভাল লিখছেন । তবে আমি উনারে নিয়া লিখছি দুপুরে Click This Link