![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ আমিই দি হাবলু । আর আমার মত যারা তাদের জীবনে একটাই কথা সেটা হল: be the হাবলু to rule the world
কয়েক বছর আগের কথা। সাল ২০১৪। এপ্রিল। সেমিস্টার শেষ। সেমিস্টার ব্রেক শুরু হয়েছে অথচ বাড়ি যায় নি। একগাদা পিডিএফ, গল্পের বই, মুভি, সিরিজ নিয়ে বসে আছি। অথচ কিছুই দেখা হচ্ছে না। সারাদিন ফেসবুকে স্ক্রল ডাউন করতে করতে দিন কেটে যায় । রাত্রে দুইটা খবুজ রুটি ডিম পোচ এবং বুটের ডাল দিয়ে হৃদয় নামক একটা ছেলের আল সালাদিয়া হোটেল থেকে খেয়ে আর তপনের দোকান থেকে রঙ চা খেয়ে রাত ৩-৪ টা পর্যন্ত আবার সেই স্ক্রল করে দিন গুলো কাটাচ্ছিলাম । বাসায় যে যাব তার ইচ্ছা যে করছিল না সেটা নয় তবে সেমিস্টার ব্রেক মোটামুটি ৬২ দিনের । এত তাড়াতাড়ি বাসায় যেয়ে বেশি দিন ভদ্র হয়ে থাকতে পারব না। তাই বিশাল বড় একটা প্রোজেক্ট করছি বলে বাসা থেকে কিছু টাকা নিয়ে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে দিন কাটাচ্ছি ।
ফ্রেন্ড সার্কেল এবং আমার মত কয়েকজন হলের পোলাপাইনের সবারই এমন অবস্থা । হঠাৎ জহিরের মাথায় একটা পোকা ঢুকল । যে চল শ্রীমঙ্গল বেড়াইতে যাই । জহিরের নাকি পরিচিত উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা আছে । রেস্টহাউজে ফ্রি থাকাখাওয়া যাবে এবং সেইসাথে হামহাম এবং হাবিজাবি কতগুলো বনবাদাড় এবং জঙ্গল আছে সেগুলো দেখাযাবে সেই সাথে যদি এডভেঞ্চার হয় আর কি । তো কেমন খরচ হবে । জহির বলল ভাগ্যভালো মানে ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দিয়ে রাজি করানো গেলে শুধু যাওয়া আসা খরচ অর্থাৎ মাত্র ১০০০ টাকা নাহলে ৫০০০ টাকা নিয়ে রেডি থাকতে বলা হয়েছে । ঠিক আছে কোন সমস্যা নাই । বাসা থেকে মোটামুটি ৭০০০ টাকা হাপিস করেছি । আমি ৭০০০ টাকা নিয়ে রেডি আছি ।
তো যাই হোক যেটা শুনলাম ভাগ্য আমাদের ভয়াবহ ভালো । ট্রেন টিকেট টাও আমাদের করা লাগছে না । বলতে গেলে কোন খরচ ই হচ্ছে না। আনন্দে লাফাইতে লাফাইতে পা ভাঙার যোগাড় । যথা সময় জহির চারটা ট্রেন টিকেট কাটল । কারণ আমরা ছিলাম চার জন । আমি ( হাবলু), জহির, মাহিনুল এবং রাকিব । তো শুক্রবার সকালে ট্রেন । কমলাপুর থেকে আমি এবং আমার হলমেট মাহিনুল উঠলাম । রাকিব আর জহির উঠবে এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে ।
জীবনে প্রথম ট্রেন ভ্রমণ । ভালোই লাগছে। ভোরে ঊঠেছি। ট্রেনে তখনো অনেক সিট খালি । এয়ারপোর্ট থেকে মাহিনুল এবং জহির উঠল। তারপর আমাদের এই দলের যাত্রা শুরু হল । কিছুক্ষণ এ গল্প, ও গল্প, বৈশ্বিক রাজনীতি এবং ব্যবসায়ীক আইডিয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে করতে আমি বাদে বাকি সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। আমি হাবলু জীবনের প্রথম ট্রেন জার্নি উপভোগের ঠেলায় আমি জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য লাগলাম । কি সুন্দর করে চোখের সামনে থেকে দৃশ্যপটগুলো পরিবর্তিত হচ্ছে । ট্রেন থামলেও গাড়ির মত ঝাকি দিয়ে থামে না। কি সুন্দর মোলায়েম ভাবে থামে। যাই হোক দুপুর ১২ টার দিকে শ্রীমঙ্গল পৌছালাম। নেমে স্টেশনের পাশে অবস্থিত দোকান থেকে সিঙ্গারা খেলাম। জহির ফোন করে ঐ রেস্ট হাউজের ম্যনেজার কে গাড়ি নিয়ে আসতে বলল । সিঙ্গারা খেয়ে দেয়ে উঠে দাড়াতে দাড়াতে ম্যানেজার গাড়ি নিয়ে হাজির হল । টয়োটা নোহাহ । স্টেশন থেকে রেস্টহাউজ মোটামুটি ৩০ মিনিটের দুরত্ব।
রেস্টহাউজে যেয়ে গোসল করে ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ খাবার দেওয়া হল। সবজি, রুইমাছের ঝোল, মুরগী রোস্ট সবশেষে কাপ দই । এই গুলো সাটিয়ে বসতে বসতে চা চলে এল । অসাধারণ সেই চা । খাওয়াদাওয়া পর্ব সেরে আমরা মোটামুটি হাল্কা পাতলা রেস্ট নিলাম । তারপর রেস্টহাউজের চারপাশে ঘুরতে বের হলাম । সর্বপ্রথম যে জিনিস টা আবিষ্কার করলাম সেটা হল যায়গাটা অসম্ভব নিস্তব্ধ। নিস্তব্ধতায় কানে তালা লেগে গেল। আর রেস্ট হাউজটা চা বাগানের মধ্যে । আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই । কোন মানুষজন নেই । বিকাল হব হব ভাব । মাঝে মাঝে কান পাতলে দুই একটা পাখির ডাক শোনা যায় । অনেক গাছপালা দেখে মন ভালো হয়ে গেলেও অতি নিস্তব্ধতায় কেমন জানি করতে লাগল।
আমরা যখন আশেপাশের দেখতে বের হয়েছিলাম তখন ম্যানেজার আমাদের সাথে একটা লোক দিলেন । গাইড হিসেবে । আমরা হাটছি। কেউ ছবি তুলছে বিভিন্ন পোজ দিয়ে । এইভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি একটা সরু মাটির পথ ধরে । এক সময় আমরা চা বাগানের শেষ সীমানায় আসলাম । যেখানে ওই চা বাগান টা শেষ সেখানে শুরু হয়েছে একটা ঢিবি টাইপের। অত্যন্ত ঘন গাছপালাতে ভরা । তখন ভরা বিকাল। আকাশের রঙ কমলা হয়েছে । অদ্ভুত সুন্দর ছিল আকাশ টা । তবে ঢিবিটা ছিল সন্ধ্যার মত অন্ধকার । দেখেই ঘাড়ে বেয়ার গ্রিলস এর ভুত চেপে বসল । আমি উঠতে যাওয়ার আগেই দেখি মাহিনুল ঢিবির মাথায় বসে দাত কেলাচ্ছে । আর আমাদের সাথে যে গাইড ভাইটি ছিল সে চিৎকার করে "নামেন তাড়াতাড়ি" টাইপের শব্দ করছে । কিন্তু কে শোনে কার কথা । আমরা বাকি তিনজন উঠে গেলাম । বিভিন্ন অংভঙ্গি করে ছবি তুললাম। কিন্তু বেচারা গাইড ভাইটি ঢিবির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। এক চুল ও নরছে না । এবং ঐখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে,"তাড়াতাড়ি নামেন বিপদ হবে"
জহির বলল,"কিসের বিপদ, মামা ?"
"অনেক সাপ আছে"
কাজ হল এই কথায় । আমরা প্রতিযোগীতা করে কে কার আগে পারে এই ভিত্তি তে নামা শুরু করলাম । নেমে গাইড কে বললাম," তা আগে বলবেন নাহ ?"
"আগে বলার তো সময় পাই নি, সাহেব। তবে কাজ টা ভালো হয় নি। বিপদ হতে পারত"
বিপদ যখন হয় নাই আলহামদুলিল্লাহ বলে আমরা ফেরত যেতে শুরু করলাম। ফিরতে ফিরতে মোটামুটি সন্ধ্যা । আলো একটু আছে । মোবাইলের টর্চ ফেলে সরু পথ ধরে ফিরে আসলাম । কোন আকাবাকা পথ না । সোজা পথ । ফিরেই গাইড ম্যানেজারকে নালিশ করে দিল যে আমরা ঢিবিতে ঊঠেছি । ম্যানেজার এইটা শুনে আরেকটু হলে ফিট হয়ে যেতেন । সে চিন্তিত ভাবে জিজ্ঞেস করল আপনারা কেন গেছিলেন, যাওয়া ঠিক হয় নি । ওইখানে যে কন এক স্থানীয় চা শ্রমিকের ছেলে কি দেখে ভয় পেয়ে জ্বর বাধিয়েছিল তারপর মারা যায় । তার আগে ভরদুপুরে ওইখানে যেয়ে এক শ্রমিক প্রকৃতির ডাকে বড় কাজে সাড়া দিতে যেয়ে নাকি বন্য কুকুর দেখে ভয় পেয়েছিল পরে সেও নাকি মারা যায় ।
জহির বলল,"কিন্তু আমরা তো কিছুই দেখি নি। আপনি হুদাই ভয় পাচ্ছেন । আর একটু চা দিয়েন আমাদের"
ম্যানেজার বাবুর্চিকে চা বানাতে বলতে গেল । আর এদিকে আমরা সারাদিনের তোলা ছবি দেখতে লাগলাম । রাকিব একটা নোটবুক এনেছিল । কার্ড রিডারে করে সেগুলো নিতে লাগল । মাহিনুল একটা মডেম এনেছিল । অনেক কষ্টে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। ৩জি না। ২জি। এসময় চা এল । সাথে বিস্কিট এবং মুড়ি চানাচুর মাখা । আহা !!!!! জীভে পানি জমে গেল । হামলে পড়লাম সবাই । দেখতে দেখতে খাওয়া শেষ হল । এসি ছেড়ে গল্প করতে থাকলাম । জহির তখন একটা সময়োপোযোগী কাজ করল সেটা হল সে তাস বের করল তার ব্যাগ থেকে । আমরা তো আনন্দে দিশেহারা হয়ে গেলাম । আমি যতই আনন্দ করি আমার দৌড় ছিল কলব্রিজ পর্যন্ত । অনলাইনে ২৯ গুতিয়েছিলাম কয়েকদিন কিন্তু বুঝি নাই । কিন্তু এই নিঝুম চাবাগানের মাঝে সময় কাটাতে হলে তাস খেলা ছাড়া আর কোন গতি নেই । কোন মতে খেলতে থাকলাম । তারপর ক্লাসের বিভিন্ন ছেলে-মেয়ে নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম আমরা । আলোচনা গড়াইতে লাগল । গড়াইতে গড়াইতে আসল ভুতের টপিকে । কে কবে ভুত নিজের চোখে দেখেছে । কার চাচাতো ভাইয়ের বন্ধুর মামা ভুতের খপ্পরে পড়ে ফিট হয়ে গেছিল টাইপের আলোচনা করতে করতে ম্যানেজার ভুতের মত দরজায় নক দিল টক টক করে । আমরা চমকে উঠলাম ।
"আপনাদের রাতের খাবার দেওয়া হয়েছে।"
আমরা তো সব কিছু বাদ দিয়ে ছুটলাম ডাইনিং এ । দেখি মজাদার সব খাবার দাবার । সবজী, মুরগী, পাতলা ডাল, সবশেষে পায়েশ। খেয়ে দেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে আবারো চা । চা খাওয়া আমার তখনো শেষ হয় নি । পেটে মোচড় দিয়ে উঠল । প্রকৃত আমাকে অত্যন্ত ব্যগ্র ভাবে ডাকছে । দৌড়ে চলেগেলাম বাথরুমে । বাথরুম ছিল রুমের সাথে এটাচড। টাইলস দেওয়া। কোমোড আছে । বাথটাবও আছে । বিশাল বড় বাথরুম । মোটামুটি ফুটবলও খেলা যাবে। আরাম করে কোমোডে বসে কাজ করতেছি । জীবন কে নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য প্লান করতেছি । ঘাড়ে তখন "হুম" করে একটা নিশ্বাঃস পড়ল হঠাৎ। প্রাকৃতিক কাজ বন্ধ হয়ে গেল ভয়ে । কোনমতে কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করে উঠে গেলাম কোমোড থেকে । বেসিনে হাত ধুতে ধুতে আয়নায় চোখ পড়ল । আয়নায় বাথরুমের জানালা টা দেখা যায় । জানালার ওপাশে রাতের ঘন অন্ধকার । দেখেই আত্মা শুকিয়ে গেল । তাড়াতাড়ি বাহির হয়ে পোলাপাইনের সাথে বসে গল্প করার জন্য বসে পড়লাম । আমি যে ঘেমে গেছি সেটা সবার চোখে পড়ল । জহির বলল," বাথরুমে যাইয়া আকাম কর ?" আমি কইলাম,"মামা, হাগার সময় ঘাড়ে কেডায় নিঃশ্বাস ফেলছে"
জহির বলল,"ম্যানেজারের কথায় তোমার কি বিচি কান্ধে উঠছে ? হালার পো"
"মামা, আমার জায়গায় থাকলে তোমারো বিচি কান্ধে উঠত"
"হইছে, এখন থাম"
কার্ড খেলা আবার শুরু হলেও আমার মনটা অনেক ভারি ছিল । ভালো করে খেলতে পারি নাই । কোন কিছু তে মন দিতে পারি না। যেহেতু কালকে হাম হাম যাব এহেতু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে হল । গরমকাল হলেও শ্রীমঙ্গলে রাতে ঠান্ডা পড়ে । লেপ গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয় । বাথরুমের ঘটনায় যথেষ্ট ভয়ে ছিলাম । দুই খাটে আমরা চারজন শুলাম । অন্যরা লাইট বন্ধ করতে চাইলেও ভয়ে হোক অথবা ঘূটঘুইটা অন্ধকার হোক চেচিয়ে লাইট অন করে রাখতে বললাম । সবাই আমারে গালি দিতে দিতে শুয়ে পড়ল । আমি এদিকে আয়তুল কুরসি পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল ছিল না।
(চলবে)
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৪২
দি হাবলু বলেছেন: নিজের জীবনের ভাই
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৪৪
দি হাবলু বলেছেন: শুধু নাম গুলো পরিবর্তন করেছি
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৩৬
রিফাত হোসেন বলেছেন: নিজের জীবনের না গল্পের ?