নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অতি সাধারণ এক মহা-মানব

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন

হাজারো লেখকের ভিড়ে আমি এক ক্ষুদ্র,অতি-নগণ্য,হে প্রভু দাও-গো শক্তি,হতে পারি যেন তাদের তুল্য।

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিস্তব্ধ রাতে ভয়ংকর আর্তনাদ

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৮


তিথীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে চতুর্থ বারের মত
বিছানায় শুয়ে শুয়ে শাহরুখ খানের চেন্নাই এক্সপ্রেস
ফুল মুভিটা দেখে ফেললাম।
অফিস থেকে বাসায় এসেছি সন্ধা ৭টায়।অন্যান্য দিন
আরো অনেক লেট করে আসি।আজ একটু কুইক
চলে আসলাম।অনেক কাজ করতে হবে আজকে।
.
রাত ১০টা ছুই ছুই করছে।বাসার কলিংবেলটা বেজে
উঠলো।আমি খুব দ্রুত গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।
দরজা খুলার সাথে সাথেই একটা পারফিউমের গন্ধ
এসে নাকের ভিতর প্রবেশ করলো।পারফিউমের এই
গন্ধটা আমার খুব পরিচিত,কিন্তু আজকে খুবই
অপরিচিত লাগলো।কেমন যেন একটা মাধকতার
ছোয়া লেগে আছে এই গন্ধে।যা আমার খুবই অপরিচিত।
.
আমাদের দাম্পত্য জীবনের অলরেডি হাফ যুগ মানে
৬ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে।কিন্তু এখনকার তিথী আর
আগের তিথীর মধ্যে বিস্তর ফারাক।দুজনের মধ্যে
আজ আকাশ পাতাল প্রার্থক্য।মনে হয় দুজনে দুই
মেরুর মধ্যে বসবাস করছি।
.
আজকাল তিথী অনেক রাত করে বাসায় ফেরে।
আমাকে না জানিয়েই যখন ইচ্ছে তখন বাসা থেকে
বের হয়ে যায়।জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় বাসায়
একা থাকতে খুব বোরিং লাগে তাই বান্ধবীর বাসায়
আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম।আমি শুধু শুনে যাই,কিছু
বলিনা।কারন ও যখন আমার দিকে তাকিয়ে এসব
কথা বলে তখন আমি ওর চোঁখে অপরাধের ছায়া
দেখতে পাই।দেখতে পাই নিজের কৃত অপরাধ
লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা।
.
ঘড়ির দিকে তাকালাম,রাত ১১টা বাজে।ঢাকা শহরে
এখনো খুব একটা রাত নয়।সন্ধ্যা রাতই বলা চলে।
রাস্তা থেকে বাস ট্রাক ইত্যাদির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
আমি বিছানা থেকে চট-জলদি উঠে পড়ে বাথরুম
সারলাম।ফ্রেস হয়ে শুবার রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
.
রুমে এসে অবাক হয়ে গেলাম।অনেকদিন পর সেই
তিথীকে দেখতে পেলাম।যে তিথী আজ বিলুপ্ত প্রায়
প্রাণীর মত বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
নয়নাভিরাম ভঙিমায় বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আমার
অপেক্ষা মোহিনী বালা।নাচের মুদ্রার ভঙিতে কোমর
বাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তিথী।ডান হাতে
ধুমায়িত চাঁ।যা ঘুমানোর পূর্বে আমার একান্ত কাম্য।
.
আমি তিথীর মুখোমুখি হই,কি ব্যাপার,খুব রং লাগছে
মনে হয়?ঘটনাটা কি বলতো দেখি?
তিথী হাসি মুখে উত্তর দেয়,কই কি হয়েছে?এই নাও
তোমার চাঁ।আমি চা নিতে নিতে বলি,এই চা কি ঘুম
দূর করার না ঘুমাবার চা?
তোমার যেমন খুশি,চাইলে ঘুমাতেও পারো,ইচ্ছে হলে
স্বজাগ থাকতেও পারো।
.
আমি গভীর ভাবে ওর দিকে লক্ষ করলাম।আজকে
ওকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।জানালা দিয়ে আসা
হালকা বাতাস ওর চুল গুলোকে বার বার নাড়া দিয়ে
চলে যাচ্ছে।ডিম লাইটের আবছা নিয়ন আলোতে
ট্রয়ের বিখ্যাত সুন্দরী হেলেনা যেন ওর রূপের প্রতি
ঈর্ষান্বিত হচ্ছে।কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে এক
অন্যকিছু।অন্যরা যা দেখতে পাচ্ছেনা আমার চোঁখে
বারবার সেটাই ভেসে উঠছে।এক অন্য রকম প্রতিমা।
.
আস্তে আস্তে ওর রূপের মাদকতা আমাকে স্পর্শ
করতে শুরু করলো।হারিয়ে যেতে লাগলাম ওর
রূপের অতল গহব্বরে।কিছুক্ষনের মধ্যে একজন
পুরুষ তার প্রেয়সীর সাথে মেতে উঠলো ভালবাসাময়
এক আদীম খেলায়।
.
তিথীর মুখটা হঠাৎ এত সুন্দর লাগছে কেন?
কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম যেন ভোরের সতেজ দুব্রা
ঘাসের উপর ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু।মাথায় এলো
মেলো চুলের কিছুটা কপালের ঘামের সাথে লেপ্টে
রয়েছে।মুখে অমৃতের হাসি নিয়ে রক্ত শূণ্য চিকন
ঠোট হালকা ফাক হয়ে রয়েছে।তার মধ্য দিয়ে শ্বেত
পাথরের মত সাদা দাঁতের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।
মোহনীয় একটা দৃশ্য।তিথী এখন ঘুমাচ্ছে।শান্তির ঘুম
এই কিছুক্ষন আগে আমি ওকে খুন করেছি।খুব
ঠান্ডা মাথায় খুন।
.
প্রথমে অবশ্য ও বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।কিন্তু পরে আর তা করেনি।পরম সুখে শুয়ে থাকা তিথীর
মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দম বন্ধ করে মারতে
চেয়েছিলাম।কিন্তু মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মারলে ওর
সুন্দর মুখটা দেখব কিভাবে।মৃত্যু যন্ত্রণায় ওর সুন্দর
মুখটা কেমন দেখায় সেটা দেখব বলে বালিশ চাপা
দিয়ে মারার পরিকল্পনাটা বাদ দিয়ে গলা টিপে মারার
সিদ্ধান্ত নিলাম।এতে করে অন্তত দুজন দুজনার
মুখটা তো দেখতে পাব।গলা টিপে ধরার সাথে সাথে
ও চমকে উঠেছিল।দাপাদাপি করতে লাগল,নিস্বাসের
জন্য মুখ হা হয়ে গিয়েছিল।হাতের চাপ বাড়িয়ে
দেওয়ার সাথে সাথে ওর চোখ কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে
আসার জোগাড় হল।মুখের চামড়া কুঁচকে বিকৃত
হয়ে গেল।ঠোট দুটি লোভনীয় ভাবে নড়াচড়া শুরু
করল হয়ত কিছু বলার জন্যে।নিজেকে ধরে রাখতে
পারলাম না পরম ভালোবেসে চুমু খেলাম।ধীরে ধীরে
ওর শরীর অসার হয়ে আসতে লাগল।চোখের মনি
ঘোলা হয়ে গেল।হাহ........
.
চলে যাচ্ছে আমার তিথী।তারপর শান্ত হয়ে গেল ও।
মৃত্যুর ঠিক আগ মুহুর্তে ওর মুখটা দেখে মায়া হল আমার।
'
.
বাড়ির সামনে অসংখ্য মানুষের ভীড়।প্রচন্ড রকমের
কোলাহল।পুলিশের দুটো গাড়ি এসে ঘটনাস্থলে
পৌছেছে কিছুক্ষণ আগে।ঘরের ভিতর থেকে লক
লাগানো।কিছুক্ষন চেষ্টা করার পর দরজা ভেঙে
পুলিশ ভিতরে প্রবেশ করলো।বরাবরের মত আমার
প্রেয়সী তিথীর গায়ে লাগানো পারফিউমের বাসি হয়ে
যাওয়া ঘ্রাণ পুলিশের নাকে এসে প্রবেশ করলো।
.
কিন্তু এই ঘ্রাণে পুলিশ মুগ্ধ হলোনা।উল্টো তাদের
সকলের নাকে রুমাল চেপে ধরলো।বিছানার উপর
চিৎ হয়ে একটা মানুষ পড়ে আছে।শরীর থেকে গন্ধ
বেরুচ্ছে।বেশ কিছু পিপড়া মানুষটার শরীরে ঘুরা
ফিরা করছে।মুখটা শুকিয়ে গেছে,কিন্তু তার সেই
মোহনীয় রূপটা আজও বলে দিচ্ছে এই রূপ দিয়ে সে
যে কোন মানুষকে মানুষ থেকে অমানুষ বানাবার
ক্ষমতা রাখে।
.
আরেকটা মানুষ ঝুলে আছে ফ্যানের সাথে।খুব শান্ত
চেহাড়া।দেখে বুঝার কোন উপায় নেই এই মানুষটা
নিস্তব্দ রাতের অন্ধকারে তার প্রেয়সীকে গলা টিপে
হত্যা করে নিজে ঝুলে যেতে পারে ফ্যানের সাথে।
'
.
পরিশিষ্টঃসকাল বেলা হোটেলে নাস্তা করতে গেছি।
নাস্তা করার পর দোকান থেকে টুকরো একটা কাগজ
হাতে নিলাম হাত মুছার জন্য।হাত মুছার কাগজটার
দিকে লক্ষ করে দেখলাম সেখানে লেখা________
'
স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করার পর আত্বহত্যা করলো
স্বামী।দুদিন পর লাশ উদ্ধার।
.
শুধু মাত্র এটুকুই লেখা।তারপর আর নেই।কাগজটা
ছিড়ে ফেলা হয়েছে।অনেক খুজেও কাগজের বাকি
অংশ পাইনি।হয়তো অন্য কেউ হাত মুছার কাজে
ব্যবহার করে ফেলেছে।জানতে পারিনি আসল সত্য।
'
.
তাই গল্পটার রহস্য রহস্যই থেকে গেল।আমাদের এই
ছোট্র জীবনে এমন অনেক গল্প আছে যা থেকে
আমরা কিছুই শিখতে পারিনা,কিন্তু এমন অনেক গল্প
আছে যা পূর্ণ নয়।কিন্তু অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়
আমাদেরকে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯

রঙ্গীন ঘুড়ি বলেছেন: বাহ । ভাল লেগেছে।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন বলেছেন: ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগলো।ধন্যবাদ

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৪

সাহসী সন্তান বলেছেন: শিরোনাম দেখে ভাবছিলাম বোধহয় এটা কবিতাই হবে? কিন্তু এসে দেখলাম গল্প! তবে মোটামুটি ভালই লেগেছে! পরিশিষ্টটা সব থেকে সুন্দর হয়েছে! আপনার লেখার হাত বেশ ভাল! লিখতে থাকুন এভাবেই!

শুভ কামনা রইলো!

বাই দ্যা ওয়ে, গল্পটাকি মোবাইল থেকে লিখছিলেন?

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩০

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন বলেছেন: জ্বী ভাইয়া,মোবাইল দিয়ে লেখা,সামু ব্লগের লেখকদের
গল্প পড়াটা আমার দৈনিক নেশা।ঘন্টার পর ঘন্টা
সামু ব্লগে কাটিয়ে দিতাম।অনেক ইচ্ছে করতো
যদি আপনাদের মত আমিও এই
ব্লগে লিখতে পারতাম!!কিন্তু কিভাবে
একাউন্ট খুলে জানা ছিলনা।একদিন
একদিন এক বড় ভাই বললো,তুই যেহেতু
সারাক্ষণ সামুতে পড়ে থাকিস,দে একটা
একাউন্ট খুলে দেই।ওনাদের লেখাও পড়
আর তুই নিজেও লেখার চেষ্টা কর।
তারপর থেকে আপনাদের গল্প পড়ে
টুকটাক লেখার অভ্যাস করছি।
ধন্যবাদ উৎসাহ দেওয়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.