নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অতি সাধারণ এক মহা-মানব

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন

হাজারো লেখকের ভিড়ে আমি এক ক্ষুদ্র,অতি-নগণ্য,হে প্রভু দাও-গো শক্তি,হতে পারি যেন তাদের তুল্য।

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি স্বপ্নময় সন্ধার গল্প

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:১৬

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে,সূর্য ডুবে গেলেও এখনো
পুরোপুরি অন্ধকারে ডুবে যায়নি ঢাকার আকাশ।
রাস্তার পাশের সোডিয়াম লাইট গুলো জ্বলে
উঠেছে একটু আগেই।
.
গেন্ডারিয়া দয়াগন্জের ব্যাস্ত রাস্তায় একের পর
এক গাড়ি চলছে।ফুটপাত ধরে কয়েক গুচ্ছ
কদম ফুল হাতে নিয়ে দয়াগন্জ মোড়ের দিকে
এগিয়ে যাচ্ছে রাতুল।
.
আজ ভোর রাতে ঘুম ভেঙেছে রাতুলের।গতকাল
দেখে এসেছিল কদম গাছের ফুল গুলো প্রায়
ফুটে গেছে।ভোরে তাই সবার আগে উঠে কদম
গাছ তলায় যায় রাতুল।প্রায় ৩০টার মত কদম
ফুল বাসায় নিয়ে আসে রাতুল।তারপর ফুল গুলো
হালকা পানিতে ভিজিয়ে স্কুলের দিকে রওয়ানা দেয় রাতুল।
.
রাতুল আর তার মা দুজনে থাকে গেন্ডারিয়া
বস্তিতে।রাতুল এবার ৫ম শ্রেণীর ছাত্র।মা
সারাদিন কাজ করে যা আয়-রোজগার করে
তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে যায় দুজনের।
.
কয়েকদিন যাবত রাতুলের মা খুব অসুস্থ।তাই
রাতুল স্কুল ছুটির পর মায়ের ঔষধ কেনার জন্য
কদম ফুল বিক্রি করে।
.
প্রতিদিনের মত আজও স্কুল ছুটির পর কদম
ফুল গুলো নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পরে রাতুল।
সবগুলো ফুল প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে।কয়েকটা
ফুল মাত্র বাকি আছে বিক্রির।এদিকে সন্ধ্যাও
হয়ে গেছে।ফুল গুলো বিক্রি করে যা টাকা পেয়েছে
সেগুলো ঔষধ কেনার জন্য পর্যাপ্ত নয়।
.
প্রায় ১ ঘন্টা দয়াগন্জ সিগনালে দাড়িয়ে একটা
ফুলও বিক্রি করতে পারেনি রাতুল।অনেক গুলো
গাড়ির পেছনে দৌড়েছে,কিন্তু কেউ ফুল কিনেনি।
রাতুলের মায়ের জন্য চিন্তা হতে লাগলো।সন্ধ্যা
গড়িয়ে রাত নেমে গেছে।বাকি ফুল গুলো বিক্রি
করতে না পারলে মায়ের জন্য ঔষধ কিনবে
কিভাবে?চিন্তায় অস্থির হতে লাগলো রাতুল।
.
এর মধ্যে আবার সিগনাল পড়েছে।একটা সাদা
গাড়ি থেমে আছে,কালো কাচ।এই ধরনের গাড়ি
রাতুলের খুব খারাপ লাগে।বোঝা যায়না ভিতরে
কেউ আছে কি না,খালি কেমন একটা ঠান্ডা
বাতাশ বের হয় গাড়ির কাচ নামালে।রাতুল পায়ে
পায়ে গাড়ির কাছে আসে।তারপর পেছনের কাচে
নাক প্রায় চেপে ধরে ভেতরে তাকানোর চেষ্টা
করে।বলে ফুল নিবেন?কদম ফুল?
.
গাড়ির কালো কাচটা নেমে আসে আস্তে করে।
ভেতর থেকে ঐ ঠান্ডা বাতাশটাও বের হয়ে
আসে।রাতুল একটু চোঁখ কুচকে ভেতরে তাকায়,
আর তখনই...........
.
হঠাৎ রাতুলের মনে হল ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে!
রাতুল হা হয়ে গেল!গাড়ির ভিতর থেকে যে
মানুষটি ওর দিকে তাকিয়ে আছে,সে আর কেউ
নয়,মাশরাফী বিন মর্তূজা।রাতুলকে জিজ্ঞেস
করে,'কদম ফুল'কত করে?
.
রাতুলের মুখ থেকে কোন কথাই বের হচ্ছেনা।
খালি বলল,আপনে,আপনে,আপনে.......
.
মাশরাফী হেসে বলে,হ্যা আমিই।এখন বল ফুল কত করে?
.
রাতুল যেন একটু থই পায়।ফুল গুলো বের করে
বলে,আপনের জন্য সবগুলো ১০টাকা।
.
মাশরাফী হেসে ফেলে হঠাৎ।গুনে দেখে ৭টা
ফুল আছে গোছায়।তারপর মাশরাফী বলল,
তাহলে একটা ফুলের দাম কত করে পড়লো?
.
রাতুলের মাথায় যেন বাঁজ পড়লো!!
'
৭টা ফুলের দাম ১০টাকা হলে ১টার দাম কত?
রাতুলের মাথা বনবন করতে থাকে।স্কুলের
আপাতো ভাগ শিখিয়েছে,এটা পারবেনা কেন?
.
চোখের সামনে মাশরাফী বিন মুর্তজা হাসি মুখে
তাকিয়ে আছে।রাতুল হিসেব করে যাচ্ছে সাত
এক্কে সাত।বাকি রইলো ৩টাকা।মানে ৩০০
পয়সা বলে কিছুক্ষণ ভাবে।তারপর বলে,এক টাকা বিয়াল্লিশ পয়সা।
.
মাশরাফী হেসে ফেলে।বলে,বাহ,তুমিতো অংকে
খুব ভাল!স্কুলে যাও?
'
রাতুল মাথা নেড়ে বলে,হ যাই।এক আপা আমাগো
অংক পড়ায়।
.
মাশরাফী বলে আমাকে সব গুলো ফুল দাও,আর টাকাটা রাখো।
.
সিগনালে ততক্ষনে সবুজ বাতী জ্বলে উঠেছে।
রাতুল মাশরাফীর হাত থেকে টাকাটা নেয়।
মাশরাফী বলে,ভাল করে লেখা পড়া করবা,
তাইলে অনেক বড় হতে পারবা,বুঝছো?
.
রাতুল মাথা নাড়ে,আর কি বলবে বুঝে উঠতে
পারেনা,কাচ উঠিয়ে গাড়িটা চলে যায়।
রাতুল টাকা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকে।তারপর
হুশ হতেই টাকার দিকে তাকায় রাতুল।
রাতুলের হাতে ১০০ টাকার ৫টা নোট সিগনালের
সবুজ আলোয় জ্বলজল করছে।
.
আকাশে কাল মেঘেরা সাদা কাঁশফুলের সাথে
এক হয়ে লুকুচূরি খেলছে।রাস্তার পাশের সোডিয়াম লাইটের মৃদু আলোতে ফুটপাত দিয়ে ডাক্তারের দোকানের দিকে দৌড়ে যেতে থাকে রাতুল।মুখে রাজ্য জয়ের আনন্দ খেলা করছে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে মাশরাফীর মতো একদিন অনেক বড় হবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮

গেম চেঞ্জার বলেছেন: বেশ ভাল! কিন্তু এভাবে লাইনগুলো ছোট ছোট কেন??

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন বলেছেন: ফোন দিয়ে লেখা তো তাই,ধন্যবাদ

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এটা কি সত্য ঘটনা? ভালো লেগেছে!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

হাঁফীজ আনোয়ার হোসাইন বলেছেন: না ভাই,কাল্পনীক।ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.