![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাজারো লেখকের ভিড়ে আমি এক ক্ষুদ্র,অতি-নগণ্য,হে প্রভু দাও-গো শক্তি,হতে পারি যেন তাদের তুল্য।
মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছেতো!আগে কেমন একটা পিচ্চি পিচ্চি ভাব ছিলো।এখন তার ছিঁটে ফোঁটাও তার মধ্যে দেখা যাচ্ছেনা।বরং
আগের চেয়ে সুন্দরী আরো স্মার্ট হয়ে গেছে।কিন্তু মুখটা আজও সেই
ভীষণ মায়া মায়া।
'
.
সময় দুপুর ১টা ২৫ মিনিট।ভার্সিটি থেকে বের হয়ে সোজা ফোটপাত
ধরে হাটা শুরু করলাম।জ্যামের মধ্যে দুপুরের তীব্র গরমে রিক্সায়
বসে সিদ্ধ হওয়ার চাইতে হেটে যাওয়াই উত্তম মনে করলাম।কতদূর
যেতে না যেতেই কেউ একজন হাঁফীজ বলে ডাক দিলো।আমি
পিছন ফিরে তাকালাম,কিন্তু ঢাকা শহরের চিপা গলির মানুষের
জ্যামের মধ্যে কে ডাকলো সেটা বুঝতে পারলামনা।তাই আবারো
হাটার মধ্যে মনযোগ দিলাম।কিন্তু কয়েক পা সামনে বাড়াতেই
আবারো সেই কন্ঠস্বর আমার কর্ণ কুহুরে এসে প্রবেশ করলো।
.
এবার সামনে না গিয়ে থমকে দাড়ালাম।কে ডাকছে সেটা দেখার
চেষ্টা করলাম।ভাল করে তাকিয়ে দেখি দূর থেকে ১৪-১৫ বছরের
একটা ছেলে আমাকে নাম ধরে ডাকতেছে।সাথে নেকাব দিয়ে মুখ
ঢাকা একটা মেয়ে।আমি কৌতূহল বশত আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা
একটা আম গাছের নিচে আশ্রয় গ্রহন করলাম।কিছুক্ষণ পর হাপাতে
হাপাতে ছেলে আর মেয়েটা আমার সামনে এসে দাড়ালো।চেহারা
দেখেই বুঝা যাচ্ছে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে দুজনের অবস্থা কাহিল হয়ে
গেছে।মেয়েটার নিস্বাস এখনো দ্রুত উঠা নামা করছে।
'
.
-কেমন আছো?
'
আমি মেয়েটির দিকে এখনো তাকিয়ে আছি,মুখ দেখে চিনার চেষ্টা করছি।কিন্তু কারো সাথে মিলাতে পারছিনা
'
.
-চিনতে পারছোনা?
'
.
এবার মেয়েটির ঠোটের নিচে কালো তিলটা দেখে বড় ধরনের একটা
শকড খেলাম..আরে এটাতো নুপূর।উত্তর দিতে যাবো...সেই মুহুর্তে
নুপূর আবার প্রশ্ন করে বসলো।
'
.
-আরে আমি নুপূর..এখন চিনতে পারছো?
'
.
-হুম..ঠোটের নিচে কালো তিল দেখে চিনেছি
'
.
-তাই নাকি?
'
.
-হুম..এত সুন্দর তিল নুপূর ছাড়া আর কারো থাকতে পারেনা।
'
.
-হইছে..আর প্রশংসা করতে হবেনা..কেমন আছো?
'
.
-ভাল আছি..আমাকে তুমি চিনলে কিভাবে?
'
.
-কিছুদিন আগে একজনের কাছে তোমার ছবি দেখেছিলাম,আর
আজকে তোমাকে রাস্তায় দেখলাম।ঢাকা কবে এসেছো?
'
.
-এইতো ২ মাস হবে এসেছি
'
.
-কোথায় থাকো?
'
.
-গেন্ডারিয়া...তুমি?
'
.
-ধূপখোলা...আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দাও
.
নাম্বার আদান প্রদান করে ওর সাথে আর কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে
আবার বাসার দিকে হাটা শুর করলাম।
||
আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে আমার পরিচয় হয় নুপূরের সাথে।
আমি আর নুপূর একি স্কুল এমনকি ক্লাসে পড়তাম।খুবই চঞ্চল
প্রকৃতির মেয়ে ছিল নুপূর।দেখতে দেখতে নুপূরের সাথে খুব ভাল
বন্ধুত্ব হয়ে যায় আমার।নুপূর একটু খিটখিটে স্বভাবের ছিল,তাই
ওকে খেপাতে বেশ মজা লাগতো।খুব সুন্দর গান গাইতে পারতো
নুপূর।আমিও কিছুটা গেয়ে নিতাম।দুজন মিলে স্কুলটাকে মাতিয়ে
রেখেছিলাম।কিছুদিনের মধ্যে আমাদেরকে এক নামে চিনতে
লাগলো সকলে।যে কোন অনুষ্ঠান আমাদের ছাড়া অপূর্ণ।আমরা
এক সাথে বসে গান তুলতাম।মাঝে মাঝে লক্ষ করতাম নুপূর আমার
দিকে মুগ্ধ নজরে তাকিয়ে আছে।আরে বাবা!সামনে কি ভূত বসে
আছে নাকি গাধাটা আমার প্রেমে পড়া শুরু করলো।যাই হোক,
সামনে যা থাকতো ওটা দিয়ে মাথায় একটা বারি দিয়ে বলতাম,
কি দেখছো?ও একটু হেসে বলতো কিছুনা।হাসিতে এত কৃপনতা ছিল কেন নুপূরের?
'
.
-এই তোমার মুখে কি কোন সমস্যা আছে?
'
.
-কেন কি হয়েছে?
'
.
-না..যেভাবে হাসলা..মনে হল বেশি হাসলে বোধহয় তোমার দাঁত গুলো খুলে পড়ে যাবে!!
'
.
-কেন?তোমার মত হি..হি..হি..করে হাসবো নাকি?যাতে আশে পাশে যারা আছে সবাই তাকিয়ে দেখে।
.
এভাবেই হাসি খুশিতে চলছিলো আমাদের দিনকাল।দেখতে নুপূর
অনেক সুন্দর ছিলো..ও যতটা না সুন্দর ছিলো..তার থেকে বেশি
সুন্দর দেখাতো ওর ঠোটের নিচে কালো তিলটার জন্য।যখনি আমি
তিলটা নিয়ে ওর প্রসংশা করতাম..ও খুব লজ্জা পেতো।
.
অনেক ছেলে ওর আশে পাশে ঘুর ঘুর করতো।কিন্তু নুপূর যেন ওদের
দেখতোই না এমন ভাব নিয়ে থাকতো।কিরে কেউ আছে নাকি?
থাকলে বলে দাও না হলে ওদের মধ্যে থেকে কাউকে ঠিক করে
দেই? ও হেসে বলতো..অন্য কারো দরকার নেই,তুমি আছোনা?
তোমাকে বিয়ে করবো।আরে থামো থামো!!!তোমাকে কে বলছে যে
আমি তোমার মত গাধীকে বিয়ে করবো?দুনিয়াতে কি তোমার চেয়ে
ভাল আর কোন মেয়ে নেই।
'
.
নুপূর যতবার আমাকে ভালবাসে এই জিনিসটা বুঝাতে চেষ্টা
করতো..ততবারই আমি হেসে খেলে উড়িয়ে দিতাম।কখনো ওকে
আমার ভালবাসাটা বুঝতে দিতামনা।কিন্তু যখন ভাবলাম আমার
ভালবাসাটা প্রকাশ করে দেই তখনি আমার জীবন থেকে হারিয়ে
গেল নুপূর।নুপূর ফ্যামিলির সাথে একেবারে ঢাকায় চলে
আসলো।সেদিন নুপূর অনেক কেদেছিলো আমাকে জড়িয়ে ধরে..
কিন্তু একটিবারের জন্যও বলেনি আমাকে ভালবাসে।আমিও
আমার ভালবাসাকে মাটির নিচে চাপা দিয়ে ওকে বিদায় করে
দিলাম।হারিয়ে গেল আমার ভালবাসা জন্মের আগেই।
'
.
নুপূর চলে আসার পর ওকে হারিয়ে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলাম।
কিন্তু সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে গেল আমার জীবন
ধারা।ব্যস্ত হয়ে গেলাম পড়া শুনা নিয়ে।তবুও মাঝে মাঝে কোথাও
একটু আধটু গান গাইলে নুপূরের কথা মনে পড়তো...কিন্তু মনে
কোন দাগ কাটতোনা।একটা সময় একেবারে ভুলে গেলাম নুপূরের
কথা।আজ যখন নুপূরকে দেখলাম..আবার সেই পুরুনো ভালবাসা
জেগে উঠলো।অবশ্য আজ যখন নুপূরের চোঁখে চোঁখ রেখে কথা
বলেছি..ওর প্রতিটা কথায় আগের সেই মুগ্ধতা খুজে পেয়েছি।
বুঝেছি নুপূর আজও আমাকে ভালবাসে।
||
বালিশের নিচে রাখা মোবাইলটা কেপে কেপে উঠছে।বৃষ্টি ভেজা
সকালের অলস ঘুমের আড়াম টুকু ছেড়ে নড়তেও মন চাইছেনা।
কিন্তু মোবাইলের নৃত্যটা তো থামানো দরকার।ফোনের দিকে চেয়ে
দেখি নুপূরের কল..সাথে সাথে ধরলাম
'
.
-হ্যালো....
'
.
-এখনো ঘুমাচ্ছো?
'
.
-না..সাম্পান চালাই,মাঝ দরিয়াতে আছি..কাটা কম্পাস হারায়া
ফেলছি..দিক খুজে পাইতাছিনা।
'
.
-কাটা কম্পাস দিয়ে কি দিক নির্নয় করে উজবুক?
'
.
-আমিতো হর হামেশাই করি
'
.
-তোমার মত গাধারাই করে
'
.
-কি বললা?
'
.
-না..কিছুনা..তোমার বাসার নিচে দাড়ায়া আছি..এসে নিয়ে যাবা
নাকি আমি একাই চলে আসবো?
'
.
-তুমি থাকো...আমি আসছি
.
ফোনটা রেখেই কোনমতে শার্টটা গায়ে দিয়ে এক দৌড়ে বাসার নিচে
গেলাম।গিয়ে দেখি নুপূর দাড়িয়ে আছে।শুভ্র রঙের শাড়িতে
নুপূরকে আজকে ডানা কাটা পরীর মত লাগছিলো।মনে হল
আকাশ থেকে বুঝি মাত্র নেমে এল।
'
.
-এই যে..আর কতক্ষন হাবলার মত তাকিয়ে থাকবে?
'
.
-ও..সরী...চলো বাসায় চলো
.
নুপূরকে নিয়ে বাসায় গেলাম।নুপূর এমন ভাবে বাসাটা দেখতে
লাগলো..মনে হচ্ছে পাত্রের বাড়ি ঘর দেখতে এসেছে।কিছুক্ষণ পর নুপূর বলল..
'
.
-বাসায় কেউ নেই?
'
.
-না..খালাম্মা বাজারে গেছে আর খালু অফিসে গেছে
'
.
-ও..তুমিতো দেখি এখনো ফ্রেশ হওনি,তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে
আসো আমি তোমার জন্য কফি বানাচ্ছি।
'
.
-তুমি কফি খাওয়াবে আমাকে?(অবাক হয়ে)
'
.
-কেন..আমি বানিয়ে দিলে খাবেনা?
'
.
-না..সেটা না,তুমি বিষ দিলেও আমি খেয়ে নিবো
'
.
-হইছে!!এখন যাও..তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো।
.
তারপর আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে আসলাম আর নুপূর কফি
বানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি নুপূর কফি হাতে নিয়ে
বাসার বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।আমি জয়েন
করলাম নুপূরের সাথে।
||
দুজন বসে চুপচাপ কফি খাচ্ছি...কেউ কোন কথা বলছিনা।আসলে
কি বলে শুরু করবো সেটাই বুঝতে পারছিনা।অবশেষে দেখি নুপূরই
শুরু করলো.....
'
.
-আচ্ছা হাঁফীজ..তোমার স্কুল লাইফের মজার মজার স্বৃতি গুলো
এখনো মনে আছে?
'
-হুম..তোমার সাথে কাটানো স্বৃতি গুলো আমি কখনোই ভুলতে
পারবোনা।আচ্ছা তুমি কি এখনো গান গাও?
'
.
-না...ছেড়ে দিয়েছি
'
.
-কেন?
'
.
-তোমার মত কাউকে খুজে পাইনি বলে!!
'
.
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো..উত্তর দিবে?
'
.
-হুম..বল কি জানতে চাও
'
.
-তুমি কি আমাকে ভালবাস?
'
.
-হুম..তখনো বেসেছিলাম এখনো বাসি।তবে তুমি কখনো আমার
ভালবাসাটা বুঝতে পারোনি।হয়তো কখনো পারবেওনা।
.
কথাটা বলার সময় নুপূরের চোঁখের দিকে লক্ষ করলাম বিন্দু বিন্দু
জল চিকমিক করছে।হয়তো আর কিছু বললে সেটা বিন্দু থেকে
অবসর গ্রহন করে সোনামীতে যোগদান করবে।আর আমি সেটা
সহ্য করতে পারবোনা কখনো।
.
নুপূর তুমি কি দেখতে পাও!!তোমার কথা ভেবে আমার বুকের ভিতর
বয়ে চলা ভালবাসার নীল স্রোতধারা?তোমার কথা ভেবে আমার
দিন শুরু হয় আর শেষ হয় তোমার কথা ভেবে!!আর দিনের হিসেব
করছি কেন?এখানে তো দিন নেই রাত নেই।এখানে সময় নেই,সীমা
নেই।আছে শুধু অসীমের মাঝে ছুটে চলা।সেই অসীমের দৃষ্টি সীমায়
আমার চোঁখের দৃষ্টির মাঝে জেগে থাকো তুমি।বিশ্বাস কর নুপূর
-আমি তোমাকে তখনো ভালবাসতাম এখনো ভালবাসি।একটু
ভালবাসার সুযোগ দিবে আমায়?
'
.
চোঁখ বন্ধ করে বাংলা ফিল্মের মুখস্থ করা ডায়লগ এক নিশ্বাসে বলে
ফেললাম।একবারও চোঁখ খুলিনি..
'
.
চোঁখ খুলে দেখি সামনে দাড়ানো মেয়েটার চোঁখ থেকে মহা কালের
প্রবাল স্রোতের মত পানি গড়িয়ে পড়ছে।আর দেরি করলাম না...
এক ঝটকায় বুকের বাহুতে আবদ্ধ করে নিলাম নুপূরকে।নুপূরের
মত মেয়ের ভালবাসাকে ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার আমার নেই।
©somewhere in net ltd.