![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- এই, কোথায় তুমি?
- এইতো, রান্না ঘরে।
- কী করছ?
- কী আবার করবো, রান্না ঘরে কী কেউ ঘুমায়? রান্না করছি।
- কী রান্না করছ?
- কাঁচা কলা আর মিষ্টি কুমড়া।
- কী! আজকে না আমাদের বিয়ে বার্ষিকী? এই দিনে তুমি আমাকে এমন অখাদ্য খাওয়াবে?
- বেশি কথা না বলে এখন ওঠো! আর কাঁচা কলা রান্না করছি সত্য, তবে আরও একটা জিনিস ও আছে। যদি খেতে চাও, তাহলে একটুস খানি দেয়া যাবে!
- কী?
- গরুর মাংস!
- কী! গরুর মাংস রান্না করছ আর বলছ একটুস খানি দেয়া যাবে?
- হুম!
- এত্ত লক্ষ্মী কেন তুমি?
- হইছে, এখন ভাগো, আগে রান্না শেষ করি।
- হুম, ভাগছি! শোনো, আমি একটু বাহিরে যাবো, তোমার রান্না শেষ হওয়ার আগেই চলে আসবো। যাই?
- হুম, যাও! আর শোনো, আশার সময় একটু পান নিয়ে আসবা, প্লিজ! শুধু আজকের জন্য।
একটু ভাব নিয়ে বললাম-
- দেখি, পারলে আনবো।
- প্লিজ!
- আচ্ছা, দেখি।
- না আনলে তোমার খবর আছে। গরুর মাংসের বদলে কাঁচা কলা খাওয়াবো।
- আচ্ছা... দেখা যাবে।
নিজের সাথে নিজে কথাগুলো বলা শেষ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।
রোদটা আজকে একটু বেশি চড়া মনে হচ্ছে। গায়ে না মেখে আপন মনে হাটা শুরু করলাম। বাসার কাছেই সকাল-বিকাল হাটার একটা জায়গা আছে। এখন সেখানে যাবো। দুটো পাগল থাকে সেখানে। শহরের কোথাও ঠাই না পেয়ে হাটার জায়গায় আস্তানা গেড়েছে। আমি সেখানে প্রায়-ই যাই। ওদের কাণ্ড দেখি। আকৃতিতে মানুষ কিন্তু এদের কাজ গুলো কেমন অগোছালো, হিসেব ছাড়া। কোন চিন্তা নেই, কোন নিয়ম নেই- কখনো একা একা কথা বলছে, আবার কখনো মাটিতে আঁকিবুঁকি করছে। কোনো বাঁধা-ধরা জীবনের দায় নেই। আচ্ছা, মানুষ পাগল হলে কি নিজে বুঝতে পারে?
বসে বসে ওদের কাণ্ড দেখছি আর অতীতের কথা মনে করার চেষ্টা করছি, ইদানীং কেন যেন চট করে সব মনে পড়ে না। আজ আবার প্রথম থেকে মনে করার চেষ্টা করে দেখি সফল হই কি না!
আমি হাফিজ, বাবা মায়ের কথা কিছু মনে পড়ছে না। দুটো ভাগ্নে ছিলো, অনেক বেশি ভালবাসতাম আর ওরাও আমাকে দেখলেই খুশিতে আটখানা হয়ে যেতো। আমার কয়টা যেন বোন ছিলো! সেজো আপু আর বড় আপু। মেজো আপু নামেও একজন মনে হয় ছিলো। কী সুন্দর নাম! সেজো আপু, মেজো আপু, বড় আপু! মুক্তা নামেও একজন কেউ ছিলো। শুধু নামটাই মনে আছে। আর একটা মানুষ ছিলো- আমার বউ!
বউটা ছিলো অনেক সুন্দর, অনেক অনেক সুন্দর! অনেক লক্ষ্মী। আমাকে খুব খুব আদর করত, আমিও করতাম। মনে আছে, আমাদের প্রথম বিয়ে বার্ষিকীতে ও আমার জন্য গরুর মাংস রান্না করছিলো আর আমি গিয়েছিলাম বাজার থেকে ওর জন্য উপহার কিনতে। পান আনতে বলেছিলো আমাকে! পান!!
সেই যে বের হয়েছিলাম, আর কোনোদিন ওর সাথে দেখা হয়নি। ওর চেহারা ভুলে গেছি। নামটা বোধহয় বউ-ই ছিলো। কিন্তু মনে আছে, ওর থেকে সুন্দরী, ওর থেকে মিষ্টি বা ভালো পৃথিবীতে কেউ ছিলো না।
ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে- আমি সেদিন বাজার থেকে ফেরার পথে কেউ একজন আমাকে বলেছিলো আমার বাসায় নাকি দুর্ঘটনা ঘটেছে! এক্ষুনি আমার সেখানে যাওয়া দরকার!
আমি দৌড়ে বাসার কাছে গিয়ে দেখলাম শুধু আগুন আর আগুন! পাগলের মত গিয়ে আগুনে ঢাকা বাসায় ঢুকে গিয়েছিলাম। চারিদিকে আগুন আর আগুন!
মনে আছে, কিছুই দেখতে পাইনি কিন্তু তার মাঝেও মাংসের ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম! তবে ভুনা মাংসের নয়, কাবাবের!
আচ্ছা, বউ কি সেদিন আমার জন্য কাবাব বানাচ্ছিলো? কিন্তু আমিতো ভুনা মাংস বেশি পছন্দ করতাম!!
এরপর আর কিছুই আমি জানি না। চোখে কিছুই দেখতাম না আগে, এখন কিছুটা দেখি। তবে অন্ধকার অন্ধকার লাগে সব। একটু হাতড়ে হাতড়ে চলতে হয়।
স্বপ্ন গুলো খুব সুন্দর হয় এখন। ঝকঝকে পরিষ্কার! তবে প্রতিদিন এক-ই স্বপ্ন দেখি... আমার বউ আমার জন্য গরুর মাংস রান্না করছে, আমাকে বাজারে যেতে বলেছে পান নিয়ে আসার জন্য। কথাগুলো খুব স্পষ্ট! তবে চেহারা দেখি না। অনেক আবদার আর আহ্লাদ মেশানো কণ্ঠ! কিন্তু আমি বাজারে রওয়ানা দিলেই ভয়াবহ কাবাবের গন্ধে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর ঘুমাতে পারি না।
প্রতিদিন আমি স্বপ্নে শোনা কথা গুলো একা একা বলি, কেমন যেন লাগে। ভালো না খারাপ বুঝতে পারি না। তবে কেন যেন চোখ জ্বালা-পোড়া করে আর শুধু পানি ঝরে!
পাগল দুটো এখন হাসছে! আমিও হাসছি ওদের হাসি দেখে। কি নির্মল দুঃখহীন হাসি! আমি হাসছি তো হাসছি। থামতে পারছি না! দমকে দমকে হাসছি। চিৎকার করে হাসছি। এদিকে চোখ থেকে আবার পানি ঝরা শুরু হয়েছে। হাসি যত বাড়ছে, চোখের পানির বেগ ততই বাড়ছে। চোখের জ্বালার জন্যই বোধহয় আমার হাসির শব্দ আর কানে আসছে না, তবে আমার দুই কানের কাছে আমারই কণ্ঠে কারা যেন গলা ছেড়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদছে! শব্দ পাচ্ছি কিন্তু কাউকে দেখছি না। এতকিছুর মাঝেও ঝাপসা চোখে দেখলাম কে যেন একটা লাঠি নিয়ে পাগল দুটিকে তাড়াতে গিয়ে ভুলে আমাকেই বলছে-
- এই পাগল ভাগ! যা, যাহ্...
২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ২:০০
সুপথকামী হাফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪
নাসরীন রহমান বলেছেন: Very touching story!