![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হঠাৎ করেই চোখ দুটো খুলে গেলো! সারা শরীর ঘামছে। ঘর পুরোই অন্ধকার, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। পিট পিট করে এদিকে ওদিকে তাকালাম, কিছুই চোখে পড়ছে না। কোথায় আছি বুঝতে চেষ্টা করলাম। অনির্দিষ্টভাবেই কিছু খোঁজার জন্য ডান হাতটা মাথার পিছনে বাড়িয়ে দিলাম। দুইটা প্যাকেট হাতে ঠেকলো- একটার তুলনায় অন্যটা বেশ ছোট। বড় প্যাকেটটা থেকে একটা সিগারেট বের করে মুখে নিয়ে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালালাম।
সব মনে পড়ে গেলো। আমি আছি রাঙামাটির কোন এক পাহাড়ি বস্তিতে- কাল নিজেই যেখানে এসেছি। নিজের কাছ থেকে পালানোর জন্য অনির্দিষ্ট ঠিকানায় চলে এসেছি। আমার আশ্রয়দাতা আমাকে দয়া করে তার ঘরে থাকতে দিয়েছে আমার আন্তরিক অনুরোধের কারণে। আমার সাথে কোন ফোন নেই, ঘড়ি নেই, সামান্য কিছু টাকা আছে। গত পাঁচ মাস ধরেই এভাবে অনির্দিষ্ট পথে হাঁটছি। যখন অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে, একটু ঘুমানোর জায়গা দেয়ার জন্য কোন ঘরে গিয়ে অনুরোধ করছি। কখনো জায়গা হচ্ছে আবার কখনো পথেই থাকতে হচ্ছে। ভয়াবহ ব্যাকুলতা সত্ত্বেও নিজের ঘরে ফিরতে পারছি না। নিজের আপনজনের অপরিণত সময়ে মৃত্যু চোখের সামনে কে দেখতে চায়?
প্রায় সাত মাস আগের কথা, ভালোই ছিলাম নিজের ঘরে। বাবা-মা, ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশিদের নিয়ে। পুরোটা দিন নিজের মত কাঁটিয়ে সন্ধ্যায় বা আরও পরে ঘরে ফিরতাম। সেই অভ্যাসগত জীবন। মাঝে মাঝে একঘেয়ে লাগলেও খুব খারাপ ছিলাম না। একটা সমস্যা-ই ছিলো, যেটা আমার শারীরিক সমস্যা- ঘুম থেকে জাগলেই খুব অস্থির লাগতো। আর মনে হতো কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু কখনোই কোন দুঃস্বপ্নের কথা মনে করতে পারতাম না। এভাবেই চলতেছিলো।
ভয়াবহ সময়টার শুরু হয় তখন-ই কোন এক রাতে...
অন্ধকার থাকতেই হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো। হাড়কাঁপানো শীত সত্ত্বেও ঘামে সারা শরীর ভিজে আছে। বাতি জ্বালানোর জন্য মাথার কাছে ইলেকট্রিক সুইচটা খুঁজতে গিয়ে হাতে ধাতব কিছু একটা ঠেকলো! তারাতারি বাতি জ্বালিয়ে দেখলাম রক্তমাখা একটা ছুরি আর তার পাশেই একটা বিড়ালের কাটা মাথা!
লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলাম, আতঙ্কে শরীর থর থর করে কাঁপছে... কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমার ঘর ভেতর থেকেই বন্ধ, কোন খোলা জানালাও নেই, কিন্তু কীভাবে ছুরি আর বিড়ালের রক্তাক্ত খণ্ডিত মাথা আমার বিছানায় এলো মাথায় ঢুকছিলো না। তারাতারি দরজা খুলে বেড়িয়ে এলাম। বাহিরের ঘর থেকে সবুজকে ডেকে নিয়ে এলাম। ও পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। ভোর রাতে ওকে ঘুম থেকে উঠিয়ে এনে যা দেখালাম তাতে যে কারোর-ই এমন হওয়ার কথা। তবুও শেষ পর্যন্ত ও ঘরটা পরিষ্কার করে চলে গেলো। আমি এবার বসার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
ঘুম থেকে একটু দেরীতে উঠে যখন মুখ ধুতে গেলাম, হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার বাম হাতের পাতার উল্টোপিঠে বেশ কয়েকটা আচরের দাগ!
এরপরে কয়েকদিন স্বাভাবিক ভাবেই কাটলো, কিন্তু চার-পাঁচদিন পরে কোন এক বিকেলে বাসার পোষা কুকুরটা সবুজকে কামড় দিলো। সবুজ-ই ওটাকে পালতো, সবুজকে রাখাই হয়েছিলো ওটাকে দেখাশুনা করা আর সামনের বাগানের পরিচর্যা করার জন্য। চাকুরী নেয়ার সময় ছেলেটা বলেছিলো ও কুকুর খুব পছন্দ করে আর কুকুর পোষ মানাতে ওর কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু কয়েকদিন পরে দেখা গেলো ও ডোবারম্যান জাতের এই ভয়ানক কুকুরটাকে ততটাই ভয় পায় যতটা একজন সাধারণ মানুষের পাওয়া উচিৎ। যাই হোক, তবুও ওকে কাজে রেখে দেয়া হয়েছিলো, কারণ ছেলেটা অনেক বেশি ভালো। আর আজ সেই ডোবারম্যান-ই ওকে কামড় দিলো। ও ওটাকে কাছে নিয়ে ওর প্রতি অনুরক্ত করার চেষ্টা করছিলো, কিন্তু হঠাৎ করেই কুকুরটা ওর বাম হাতের তিনটা আঙ্গুলে একসাথে কামড় বসিয়ে দেয়। এমনকি দুটো আঙ্গুল পুরোপুরি কেটে ফেলে। কুকুরটাকে হয়তো আমাদের পরিবারের দরকার কিন্তু সবুজকে আমরা সবাই অনেক বেশি ভালবাসতাম। আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। মনে চাইলো ওটাকে খুন করে ফেলি। কিন্তু মনের চাহিদাকে আর বাস্তবে রূপ দিতে পারলাম না।
রাতে খাওয়ার পরে শুয়ে শুয়ে দিনের ঘটনাটা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম।
আবার সেই ভোর রাত আর সেই ঘাম আর হঠাৎ চোখ খুলে যাওয়া! বাতি জ্বালাতেই দেখলাম খাটের পাশের ছোট্ট টেবিলটাতে ডিঙ্গু নামের আমাদের ডোবারম্যানটার কাটা মাথা আর তার পাশে একটা রক্তমাখা ছুরি! সেদিনের সেই ছুরিটা- যেটা আমাদের স্টোর ঘরে থাকার কথা!
এবার আর কাউকে ডাকতে সাহস হল না, নিজেই গেট খুলে দূরে বিলের কাছের খালে কুকুরটার মাথাটা ফেলে দিয়ে আসলাম।
সকাল বেলা গেটের কাছেই শেকলে থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা বিহীন কুকুরটাকে পাওয়া গেলো। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সবকিছু মনে করার চেষ্টা করলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ঘুম পড়ার আগেও কুকুরটার কথা ভাবছিলাম, তখনো রাগে আমার ওটাকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো! সাথে এটাও মনে পড়লো, কয়েকদিন আগে, যেই রাতে বিড়াল খুন হয়, সেই রাতে খাবার সময় টেবিলে গিয়ে দেখি একটা বিড়াল আমার জন্য পেতে রাখা খাবার খাচ্ছে। আমার প্রিয় খাবার চিংড়ি ভুনা। সেই রাতে না খেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর বিড়ালটাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা মনে জেগেছিলো! এবার মনে প্রশ্ন জাগলো- তাহলে কি আমি......? কিন্তু কীভাবে?
এর আরও বেশ ক'দিন পরে একদিন বেশ রাত করে বাসায় ফিরছিলাম। আমরা গ্রামে থাকলেও বাড়ির সীমানা পাচিলের মধ্যে ঢুকলেই শহুরে অভিজাত বাড়ি বলেই মনে হয়, কিন্তু দেয়ালের বাইরে সেই গ্রামীন অন্ধকারময় স্বাভাবিক পরিবেশ। হাটতে হাটতে যখন বাড়ির গেটের কাছে চলে এসেছি, তখন হঠাৎ দেখলাম সামান্য অন্ধকারে দুইজন মানুষ জড়াজড়ি করে দাড়িয়ে আছে, নিজেকে একটু ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গেলাম- দেখি আমার ছোট বোন আর বাড়ির পাশের দোকানী সোহাগ!
আমাকে হুঙ্কার দিয়ে দৌড়ে আসতে দেখেই বোন গেট থেকে পালিয়ে গেলো বাড়ির ভিতরে আর ছেলেটা উল্টোদিকে অন্ধকারেই দৌড় দিয়ে চলে গেলো। বাসায় ঢুকে বোনটাকে কিছুক্ষণ শাসালাম, কয়েকটা চড়-থাপ্পরও দিলাম। পরে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। সকালে ব্যাটাকে শায়েস্তা করার চিন্তা করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম।
আবার সেই এক-ই ভাবে জেগে ওঠা, ঘেমে যাওয়া আর বাতি জ্বালানো। তবে আজ যা দেখলাম তাতে চিৎকার না দিয়ে পারলাম না। আমার ঘরের দরজা সেভাবেই আটকানো, আমার হাত, সারা শরীর রক্ত মাখা আর ঘরের মেঝেতে একটা কাটা মুণ্ডু! বাড়ির পাশের দোকানী সোহাগের!!
আমার চিৎকারে বাবা-মা দৌড়ে এলেন, ছোট বোনটা উপরের ঘরে শোয় বলে হয়তো চিৎকারের তীক্ষ্ণতা ওর কানে পৌঁছায়নি। আর কুকুরের কামড়ের পরে সবুজ বাড়ি চলে যাওয়ায় ঘরে শুধু আমরা তিনজন। তার মাঝে মা এমন পরিস্থিতি দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। বাবা আমাকে ধরে নিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলেন গোসল করার জন্য। আর মাথাটাকে কী করলেন আমি জানি না। শুধু মনে আছে গোসল করতে গিয়ে আমার শরীর খুব খারাপ লাগছিলো, এরপর যখন হুশ ফিরলো, দেখলাম হাসপাতালে শুয়ে আছি।
বাবাকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, পরেরদিন সকালে নাকি লোকজন দোকানে এসে দেখতে পায় সোহাগের লাশটা মাথা বিহীন অবস্থায় দোকানের দরজার চৌকাঠে পড়ে আছে, আর তার কাছেই কয়েকটা সস্তা সিগারেট আর খুচরো টাকা। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট বলছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক কোপে ওর মাথা কেটে ফেলা হয়। বাবা আরও জানালেন, আমি গোসল করতে ঢুকলে তিনি সেই ধারালো অস্ত্রটা আমার ঘরেই খাটের পাশে রক্ত মাখা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান। যেটা দিয়ে মূলত সবুজ বাগানের জঙ্গলগুলোকে নিড়িয়ে দিতো!
আমি ভয়াবহ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, সারাদিন শুধু বমি বমি লাগতো, কিছু খেতে পারতাম না। হাসপাতালের বিছানাটা মনে হতো উত্তাল সাগরে কোন ডিঙি নৌকা; যেটা শুধু দুলছে।
কিছুদিন এভাবে কাটলে ধীরে ধীরে শরীরটা একটু সুস্থ হয়, চিন্তা করার ক্ষমতা পাই। শরীরে শক্তি ফিরে আসতে থাকে। ভয়াবহতা ভুলে গিয়ে সুস্থ জীবনে আবার প্রবেশ করার সুযোগ যখন চলে আসে, তখন একদিন বাবা এসে আমাকে হাসপাতালের বারান্দায় নিয়ে গেলেন। ছোট্ট কেবিনের মাঝে কেউ না থাকলেও কেউ আড়ি পেতে থাকলে দেখা যাবে না, তাই বারান্দায় নিয়ে এলেন, যেখানে অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায়।
- তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না, আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। পুলিশ এটাকে ডাকাতির চেষ্টা বলেই ধরে নিয়েছে।
- কিন্তু বাবা, আমি তো জানি আসলে কী হয়েছিলো!
- না, তুমি জানো না। আর যা হয়েছে ভালো হয়েছে। তুমি কি বাঁচতে চাও?
- অবশ্যই!
- তাহলে চুপ করে থাকো। তুমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি। এ বিষয় নিয়ে মন খারাপ করো না। আর শোনো, পৃথিবীর কারো কাছে এ বিষয়ে কিছু বলার দরকার নেই, বুঝেছ?
- জী বাবা।
- আচ্ছা, শোনো- কয়েকদিনের মাঝেই তুমি বাড়িতে ফিরছো, সাবধান! তুমি কিন্তু তোমার বোনের সাথে এ বিষয়ে কিছুই বলবে না! তুমি যেমন আমাকে সব খুলে বলেছো, তেমনি সেও বলেছে... আর সে মনে করে কাজটা তুমি করেছ! তার দাবি, আমাদের কুকুরটাকেও তুমি মেরেছো। কারণ, সে নাকি ঐ রাতে তোমাকে কুকুরটার কাছে যেতে দেখেছে। ঘর থেকে গেট দূরে হওয়ায় সে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছে না, কিন্তু সন্দেহ করছে তোমাকেই, বুঝেছ?
- জী বাবা।
- ঠিক আছে, এখন বেডে যাও।
- জী!
বাবার সব কথাগুলো মাথায় ঘুরতে লাগলো! তার কথার অর্থ হল অরণী সব জানে? আচ্ছা, ও কি তাহলে আমাকে ধরিয়ে দেবে? নিজের ভাইকে নিশ্চয়-ই ফাঁসিতে চড়াতে চাইবে না... এভাবে অনিশ্চিত কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আমার খাবার নিয়ে অরণী চলে এলো...
- কীরে, আজকে মনে হয় একটু বেশি সুস্থ হয়েছিস?
- কেন?
- না, দেখলাম এতক্ষন বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বললি, মাথা ঘুরলো না...
- হ্যাঁ, একটু সুস্থ।
- হুম, তারাতারি সুস্থ হ! কত কাজ বাকি আছে না!
- তুই এখন যা...
- হুম, যাচ্ছি
বলে দরজার কাছে গিয়ে আবার ফেরত এসে ফিস ফিস করে বললো-
- শোন হাফিজ, আমি সব জানি, সব! তুই যা করলি তার কোন ক্ষমা আমার কাছে নাই। শুধু তোর সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। আর দেখছিস না, তোকে নাম ধরে ডাকছি? ভাইয়া ডাকতে ঘৃণা লাগে তো, তাই কুৎসিত নামটা ধরে ডাকছি। এখন যত পারিস ভালো ভালো খাবার খেয়ে নে... খা, মন ভরে খা...
যতটা কষ্ট পেলাম তার থেকে বেশি উঠলো রাগ, চূড়ান্ত রাগ। যার কোন শেষ নেই, রাগের যেন তুফান কিন্তু শিশির মধ্যে বন্দী; প্রকাশ করতে পারছি না।
বিকেল বেলা ডাক্তার বললেন বাড়ি চলে যেতে। বাবা বুঝালেন, আর কয়েকটা দিন থাকলে ভালো হতো কিনা! কিন্তু ডাক্তার বললেন, হাসপাতালে রোগীরা সুস্থ হয় আর সুস্থরা রোগী হয়ে যায়। আর আমি নাকি সুস্থ হয়ে গেছি। তাই তারাতারি বাসায় যাওয়াই ভালো। হয়তো কয়েকটা দিন একটু বিশ্রামে থাকতে হবে, এই আর কী!
বিকেলে বাসায় চলে এলাম। শরীরের দুর্বলতা কিছুটা কম মনে হচ্ছে। রাতে পছন্দের খাবারগুলো একসাথে পেলাম, যদিও বেশি খেতে পারলাম না। শেষে নিজের ঘরে শুইতে গেলাম। চোখ বন্ধ করে ভাবছি- ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দুপুরে বোনের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো। খুব জিদ চাপলো ওর উপর। নিজের জন্য খুব মায়া সাথে ওর উপরে ক্ষোভ বাড়তে বাড়তে চোখে দুটো ঘুমে যখন প্রায় বুজে আসছে, মাথাটা খুলে গেলো। আমাকে পালাতেই হবে, যেভাবেই হোক! আমার নিজের ছোট বোন- যেটাকে আমি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসতাম- আজ খুন হয়ে যাবে! ওকে বাঁচাতে আমাকে পালাতে হবে! নিরুদ্দেশ হতে হবে, যেন আমি ওকে হাতের নাগালে না পাই।
সত্যি-ই আধা সুস্থ শরীর নিয়ে পালিয়ে এলাম। নিজের ঘরে টাকা যা ছিলো সব নিয়ে এলাম। আমি নিজে যেমন বাঁচতে চাই; সবাইকে বাঁচাতেও চাই। তাই সবাইকে বাঁচাতেই আমি জঙ্গল, সাগর, পাহাড়- অচেনা সব এলাকা ভ্রমনের নামে নিরুদ্দেশ হওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। এভাবেই গত পাঁচটা মাস কাঁটিয়ে দিয়েছি। টাকা-পয়সাও প্রায় শেষ! কিন্তু গতকাল যা দেখলাম তাতে হয়তো আমার আর পালিয়ে থাকা হবে না। দোকানে সিগারেট কিনতে গিয়ে দেখি টেলিভিশনে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হচ্ছে, আমার ছবি সহ, আর খুঁজে দিতে পারলে পুরস্কার! কিছুই মাথায় আসছিলো না। এখনো আমি রাতে আগের মতই জেগে উঠি অন্ধকারে, ঘামে ভেজা শরীর কিন্তু রক্ত দেখি না। আমি আর দেখতে চাই ও না! আমাকে বাচতেই হবে এই ভয় থেকে, আতঙ্ক থেকে, পালিয়ে বেড়ানো থেকে।
আজ সকাল সকাল আশ্রয়দাতার ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম। নিজের ভাগ্যের উপরে রাগ নিয়ে সারাদিন কাঁটিয়ে দিলাম। নিজেকেই মেরে ফেলতে আজ খুব ইচ্ছে করছে। কী লাভ এভাবে বেঁচে থেকে? তাই আজ শেষ করনীয় ঠিক করে নিলাম। সুন্দর ঝকঝকে একটা ছুরি কিনে নিয়ে নিজের কাছে থাকা শেষ টাকাগুলো খরচ করে হোটেলে রুম নিলাম শহরের নির্জন এক কোণে। রাতে পছন্দের খাবার খেয়ে নিলাম। সিগারেট টানতে টানতে শুয়ে শুয়ে নিজের উপর বেশি থেকে বেশি ঘৃণার জন্ম দিতে লাগলাম। ভাগ্যকে অপরাধীর কাঠগড়ায় ফাঁসির হুকুম শুনিয়ে দিলাম আর সেই সাথে নিজেকেও...
......আমি আর কখনো ঘুম থেকে হঠাৎ চোখ খুলে তাকাবো না, ঘামে ভেজা শরীরে ঘরের বাতি জ্বালিয়ে আর কখনো রক্তমাখা হাত কিংবা পৈশাচিক মুহূর্ত আমার ঘরে দেখবো না। কাল অন্যরা দেখবে পৈশাচিকতা। আমার শেষ পৈশাচিকতা- যার মাধ্যমে শেষ হবো আমি আর শেষ হবে একটি অজানা কালো অধ্যায়! আমার এখন ঘুম পাচ্ছে, খুব! পশুর তাজা রক্তের গন্ধে যেই ঘুম ভাঙেনি, মানুষের শেষ আর্তচিৎকার যেই ঘুমকে এতটুকু টলাতে পারেনি, নিজের বুকের রক্তের গলগল করে বেড়িয়ে আসার শব্দ কিংবা শেষবারের মত নিজের মুখ থেকে উঠে আসা ভাঙা গলার সামান্য গোঙানির আওয়াজেও আজ তার ব্যাঘাত ঘটবে না... অবিনশ্বর- নিশ্ছিদ্র ঘুমে প্রবেশ করার আগে ক্ষণিকের এই জীবনটাকে বিদায়.........।
২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৫৮
সুপথকামী হাফিজ বলেছেন: ভালো নাকি খারাপ?
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১২
অস্তিত্বহীন বলেছেন: ভিন্ন ধারার .....