নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাই।

সুপথকামী হাফিজ

বলার নাই কিছুই।

সুপথকামী হাফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরাধী!

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৪২

রাস্তায় সুন্দরী মেয়েরা শরীর দেখিয়ে হাটতে পারবে, আর আমরা তাকে কিছু বললেই দোষ? শালা, যত্তসব লেংরা-খোঁড়া লোকজন! কী করেছিলাম? মেয়েটার গায়ে একটু হাত দিয়েছিলাম, এই তো? সে জন্য জেলে ঢুকিয়ে দিলো? শুধু তো হাত দিয়েছি, আর তো কিছু করিনি, তাতেই এই শাস্তি? আচ্ছা, দেখিয়ে দেবো। কালকেই তো ছাড়া পাচ্ছি। জেলে দিয়েছিলি তো তোর মেয়েকে ছোঁয়ার অপরাধে, তাই না? কালকে এখান থেকে বেড়িয়ে আগে বাসায় যাবো না, যাবো তোর মেয়ের স্কুলে! আগে তোর মেয়েকে ভালোমত ছুঁয়ে দেখবো, না না, ভালো করে ধরে দেখবো, তারপর বাসায় যাবো। দেখি কী করিস।

একা একা কথাগুলো বলছিলো সুজন। একটি মেয়েকে যৌন হয়রানির অপরাধে ওর এক বছর সাজা হয়। আগামী কাল ওর মুক্তির দিন। গত একটা বছর ও অপেক্ষা করেছে এই দিনটার জন্য। মনের ভেতরের সব চাপা ক্ষোভ এখন গলার কাছে চলে এসেছে, কালকের মাঝেই ও তার উদ্গিরন করতে চায়।

সুজন, জেলা শহরের কেন্দ্রতেই ওদের বাড়ি। বাবা একজন ব্যবসায়ী, সুজনের আর একটি ছোট বোন আছে, দশম শ্রেনীতে পড়ে। দেখতে বেশ সুন্দরী, শারীরিক গঠন দেখে কিশোরী বলে মনে হয় না। এর-ই মাঝে যুবতী যুবতী ভাব চলে এসেছে। সুজনের মা গৃহিণী। সারাদিন নিজের ঘর গোছানো আর প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করে কাটানোই তার প্রধান কাজ।

সুজন পড়াশুনায় কখনোই তেমন ভালো ছিলো না, পরীক্ষায় প্রায়-ই পাস করতে পারতো না। বাবা ছেলেকে একটার জায়গায় তিনটা কোচিং করার জন্য বলতেন, মা ছেলেকে স্কুল শিক্ষকদের কাছে আলাদা পড়তে বলতেন কিন্তু কখনো এটা দেখতেন না যে, ছেলে আসলেই কোচিং কিংবা প্রাইভেটে পড়তে যায় কি না! বেশ সচ্ছল পরিবারের ছেলে হওয়ায় হাতে টাকা পয়সা ভালোই আসতো। আর সেগুলো ও খরচ ও করতো বেশ সহজ ভাবেই। আড্ডা দিতে ভালো লাগতো বলে ওর বাবা যখন ওর পড়াশুনার ক্রম অধঃপতন দেখে পড়া বন্ধ করে দিতে বললেন- ও খুব খুশি-ই হয়েছিলো। সারাদিন আড্ডা আর ঘুরে বেড়ানো, পড়া ছেড়ে দেয়ার পড়ে কমে যাওয়া হাত খরচ থেকে প্রাপ্ত টাকায় সামান্য ছোট খাটো পার্টি- এভাবেই চলছিলো।

ব্যবসায়ী বাবা আর তার বড় সন্তানের দিকে তেমন একটা নজর দিলেন না, মা ও আশা ছেড়ে দিলেন। তারা ভাবলেন, ছেলে তো অনেক বড় হয়েছে, পড়াশুনা যখন হলোই না, কিছুদিন পরে ওকে ব্যবসায় নামিয়ে দেবেন। কিন্তু তারা এটা ভাবলেন না, পড়াশুনা হোক বা না হোক, পাস করুক আর না করুক, তরুণ বয়সের এই সময়টা পড়াশুনার পরিবেশে কাটলে তাদের ছেলের বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।



তারুণ্য যখন পুরোপুরি ভর করলো, সুজন তখন হাওয়ায় ডানা মেলা পাখির মত মুক্ত জীবন যাপন করে, রাস্তার ধারে সারাদিন আড্ডা দেয়। বন্ধুদের নিয়ে মাঝে মাঝে সামান্য নেশা করে, এলাকার বখে যাওয়া ছেলেদের মাঝে প্রভাব রাখার জন্য কখনো কখনো ধমকা-ধমকি, হাতাহাতি আবার কখনো মারামারিও করে। রাস্তায় সুন্দরী পথচারী মেয়ে দেখলে যৌবনের আকর্ষণে একটু আধটু ঠাট্টা মশকরা করে। এভাবেই দিন কাটতে থাকে। এর মাঝে একদিন একটা ঘটনা ঘটলো...

সুজন এক মেয়েকে পেছন থেকে ফোঁড়ন কাটলো, মেয়েও জবাবে কিছু একটা বললো। সুজন মজা পেয়ে গেলো। সাথে আরও দুইটা ছেলে ছিলো, ওদের নিয়েই মেয়েটার পেছনে যেতে যেতে একটা পর একটা অশ্লীল বাক্য ছুড়তে লাগলো। শেষে কিশোরী মেয়েটির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে উল্টোদিকে ঘুরে সুজনকে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দিলো। নিজের অনুগতদের সামনে অপমানিত হওয়ায় সুজনের মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। মেয়েটাকে খপ করে ধরে মেয়েটার শরীরের উত্তেজক স্থানে হাতের সকল শক্তি দিয়ে চাপ দিলো, মেয়েটা ব্যথায় চিৎকার করে উঠে কেঁদে ফেললে ও প্রবল শক্তিতে মেয়েটার কান এবং গাল বরাবর একটা চড় দিয়েই চ্যালা দুটোকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

কিন্তু পালিয়ে বাঁচতে পারলো না, ওর আড্ডাস্থলে কিছুক্ষণের মাঝেই মেয়েটির বাবা মেয়েটিকে আর পুলিস নিয়ে হাজির হয়ে যায়। যৌন হয়রানির অভিযোগে তৎক্ষণাৎ এক বছরের জেলের হুকুম দেয়া হয় সুজন কে। সেই এক বছর আজ শেষ হচ্ছে।

সুজনকে নিতে যেতে কেউ আসেনি। ও একাই বের হয়। জমাদারের কাছ থেকে নিজের মানিব্যাগ, মোবাইল ফেরত নিয়ে নেয়। প্রথমেই ও ফোন দেয় ওর বন্ধু মঞ্জুকে। জেলে থাকার সময় ওর সাথে মঞ্জু কয়েকবার দেখা করতে গিয়েছিলো। জেলের অপরাধীদের কাছ থেকে শোনা তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা ও মঞ্জুকে শুনিয়েছে, আর তরুণ বয়সের মঞ্জুও তাতে প্রবলভাবে আকর্ষণ বোধ করেছে। বিভিন্ন অপরাধ করাটাকে যেখানে তরুণেরা বাহাদুরি মনে করে, সেখানে সরাসরি অপরাধীদের অপরাধে সফল হওয়ার গল্প শুনে মঞ্জু আরও বেশি প্রলুব্ধ হয়, তার মনেও সাধ জাগে। সে সুজন জেলে থাকাকালীন সেই মেয়েটিকে নিয়ে করা পরিকল্পনায় পুরোপুরি সায় দেয়। তাই, আজ প্রথমেই সুজনের মঞ্জুকে দরকার!



সেই মেয়েটি এখন তার পরিবারের সাথে সুজনদের গলিতেই থাকে। ওরা এখানকার ভাড়াটিয়া, বাসা পরিবর্তন করে সম্প্রতি এখানে এসেছে। সুজনদের বাড়ি ওরা চিনতো না। মেয়েটি এখন কালো বোরকা পড়ে বের হয়। দশম শ্রেণীর ছাত্রী, তার উপরে বেশ বাড়ন্ত শরীর আবার অতীতে ওকে নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার কারনেই মেয়েটা বোরকা পড়তে বাধ্য হয়। আজকেও মেয়েটা স্কুলে যাবে। কিন্তু ও জানে না মঞ্জু তার দুই শাগরেদকে নিয়ে গলির মুখে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। আর ওদিকে মঞ্জুও জানতো না যে, সুজনের বোন ও কালো বোরকা পড়ে নিজেকে উত্যক্তকারীদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।

রিকশাটা যখন তারাতারি পৌঁছানোর জন্য একটু নিরিবিলি রাস্তায় ঢুকে, তখন-ই মঞ্জু রিকশাটাকে পেছন থেকে থামার জন্য বলে, মেয়েটি রিকশাওয়ালাকে চলে যেতে বললেও নির্জন রাস্তায় মারমুখী দর্শন কয়েকটা ছেলেকে দেখে চালক চলে যেতে সাহস করলো না। রিক্সা থামতেই কোন কথা না বলে মেয়েটির মুখে একটা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। মঞ্জুর ডেকে নিয়ে আসা টেম্পুতে তোলা হয় মেয়েটিকে। বাড়তি টাকা পাওয়ার লোভে আর নিজের শরীরের মায়ায় এই চালকও কিছু বলেন না, ছুটতে থাকে ছোট্ট গাড়িটি ওদের চারজনকে নিয়ে শহরের শেষ মাথায়- নদীর পাড়ে, যেখানে মাথার উপরে ব্রিজের আড়াল আর নিচে আছে সাধারণ উচ্চতার আখের ক্ষেত!



মঞ্জুর আশ্বাস মত সেখানে সুজন অপেক্ষা করে আছে। ও জানে, মঞ্জু এখানে আসবে। তাজা ফুলের সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করা সম্ভব হলেও সুগঠিত নারী দেহের স্বাদ উপভোগের লোভ সদ্য যৌবনে পা দেয়া মঞ্জুর পক্ষে অসম্ভব। তাই ও অপেক্ষায় থাকে মঞ্জুর আসার। সুখভোগ আর ক্ষোভ নিঃশেষ করতে ওর নিজেরও আর তর সইছে না।

সুজন মঞ্জুকে ফোনে পাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় ওর পক্ষে আর তা সম্ভব হয় না। ও একাকী অপেক্ষা করতে থাকে।

মঞ্জু পাকা রাস্তায় টেম্পুটিকে দাড় করায়, বাড়তি ভাড়ার সাথে থাকে হুমকি। যখন ও আশ্বস্ত হয়, তখন ড্রাইভারকে বিদায় করে দিয়ে নির্জন ক্ষেতে প্রবেশ করে। পছন্দসই জায়গায় গিয়ে সুজনকে ফোনে খোঁজে, কিন্তু পায় না। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পরে ভুলে যায় সুজনের কথা। সাঙ্গ দুটিকে সাথে নিয়ে মেয়েটির উপরে সৃষ্টির আদি খেলায় মেতে ওঠে, যেখানে খেলা হয় এক পাক্ষিক! মেয়েটির উদ্ভাসিত শরীরের ঝলকে ওরা মুখ দেখতে ভুলে যায়, মানুষটি কে তা ওরা ঠাহর করতে পারে না। এখন আনন্দের সময়, তাই শুধুই আনন্দ ভোগ করে। তবে সুজনকে কিংবা মেয়েটির মুখের অবয়ব পর্যবেক্ষণের কথা ভুলে গেলেও স্মরণীয় এই মুহূর্তটিকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দী করতে ভুলে না।

ওদের পৈশাচিক চাহিদা মিটে গেলে রক্তাক্ত শরীরের অজ্ঞান মেয়েটিকে ফেলেই ওরা পালিয়ে যায়। সুজনের কথা ওদের মন থেকে এতক্ষনে পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। নিজেদের নিয়ে ছোটাটাই এখন ওদের মূল কাজ!

......অনেক সময় অপেক্ষা করার পরে সুজন মঞ্জুকে খুঁজতে বের হয়, বনের মত বেড়ে ওঠা আখ ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ মেয়ে কণ্ঠের সামান্য গোঙানির শব্দ ওর কানে যায়। ও চমকে ওঠে, ভাবে- হয়তো এখানেই আছে মঞ্জু আর সাথে ওর শিকার! ও দ্রুত ভিতরে ঢুকে, চাপা গলায় মঞ্জুকে ডাকে, কিন্তু কোন সাড়া পায় না, আর একটু এগিয়ে যায় এবার- গিয়ে একটা সামান্য ঢালু খুঁজে পায় যেখানে পড়ে আছে একটি প্রায় অচেতন মেয়ের শরীর, আর পোশাক গুলো আশে পাশে ছিন্ন-ভিন্ন অবস্থায় ছিটানো। মনে প্রবল ঘৃণা নিয়ে সুজন ওর সেই শিকার ভেবে উপুর হয়ে পড়ে থাকা মেয়েটিকে পায়ের সাহায্যে আকাশ-মুখী করে উল্টে দেয়। দেখে, ও যে মেয়েটিকে নিয়ে আসার জন্য বলেছিলো, সেই বয়সের একটি মেয়ে, মুখ হা করা অবস্থায় মাথার পেছন দিক থেকে পেঁচিয়ে ওড়না বাঁধা আর শরীরের কয়েক জায়গায় তাজা রক্ত। তবে মেয়েটির চেহারা কেমন চেনা চেনা মনে হয়- নিচু হয়ে ভালো করে দেখে বুঝতে পারে- মেয়েটি দেখতে হুবুহু ওর ছোট্ট বোনটির মত!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২১

অজয় বলেছেন: এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কিছু কিছু অমানুষের জন্য ভাই বলে নিজেকে পরিচয় দিতেই তো ঘৃনা আসবে। by the way গল্প টা টা অনেক ভালো

২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৫৮

সুপথকামী হাফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: গল্পের বিষয়বস্তু ভালো। অনেকটা স্কুল জীবনে পড়া একটা প্রবাদের মতো। 'ঊর্ধ্ব মুখে থুথু ফেললে, নিজের মুখে পড়ে।' সুজনের বেলায় তা-ই হয়েছে। আরেকটা ব্যাপার লক্ষণীয় হল, সুজনের পরিবারই সুজনের নষ্টের কারণ। পারিবারিক উদাসীনতাই তাকে ধীরে ধীরে বিপথগামী করেছে।
বিষয়বস্তু অনুযায়ী গল্পের বয়ান ভালো হয় নাই। বাক্য গঠনে আরও দক্ষতা দেখানো দরকার ছিল। কাহিনী বিন্যাসকে সব চেয়ে বেশী দুর্বল মনে হল। কারণ গল্প শেষ হওয়ার অনেক আগেই পাঠক বুঝে গেছে এই গল্পের শেষটা কী হতে যাচ্ছে। সুতরাং আপনার গল্পটা পাঠক ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে বলে মনে হল। আপনি সুজনের বোনের শারীরিক বর্ণনার একটা ইংগিত আগেই দিয়েছেন। বুঝদার পাঠক তখনই ব্যাপারটা কিছুটা উপলব্ধি করে নিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ছোট গল্পে এই বিষয়গুলোর দিকে একটু বেশী মনোযোগ দিতে হয়, যাতে গল্প শেষ হওয়ার আগেই পাঠক গল্পের শেষ পরিণতি সম্বন্ধে আঁচ করতে না পারে। বরং শেষ হওয়ার পরও যেন গল্পের রেশটা পাঠকের মধ্যে থেকে যায়, এমন ভাবে কাহিনী বিন্যাস করতে হবে। ধন্যবাদ সুপথকামী হাফিজ।

২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ২:০০

সুপথকামী হাফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ঘাসফুল আপনার মন্তব্যের জন্য। আসলে ওই ব্লগে একবার রিপ্লাই দিয়েছি বলে আবার লিখতে মন চাচ্ছে না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.