![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রানুষ
,
লিখা, , , Hafsa Akter (Nafisa)
,
,
সালমান ও জাইয়াদ দু বন্ধু। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার নাম হলে ওরা দুজন সবার আগে থাকবে। তেমনি একবার ওরা দুজন ঘুরতে বেরুলো । উদ্দেশ্য পৃথিবী ঘুরে দেখা। তো ঘুরতে ঘুরতে ওরা একটা মরুভূমির কিনারে এসে দাঁড়ালো।
,
এটা কোন মরুভূমিরে জাইয়াদ? আমার জানামতে এ জায়গায় তো কোনো মরুভূমি থাকার কথা নয়। সালমান জিজ্ঞাসা করলো ।
,
দেখ, মানচিত্রে এর কোন বর্ণনা নেই। এ জায়গায় কোনো মরুভূমির উল্লেখই নেই। জাইয়াদ বলল।
,
আমার মনে হয় এটা ঘুরে দেখা দরকার। তাহলে বুঝা যাবে কিসের কারনে এটার কোনো অবস্থান কেন চিহ্নিত হয়নি। সালমান বলল।
,
তা ঠিক , কিন্তু আমাদের কোনো প্রস্তুতি ছাড়া সেখানে যাওয়া ঠিক হবে না । হতে পারে সেখানে ভয়ঙ্কর জীব জন্তুর আড্ডাখানা। আর সেখানে কয়দিন থাকা লাগতে পারে এর কোন ঠিক নেই। যথেষ্ট খাবার আর পানিও নিতে হবে। আর হেটে তো যাওয়া যায় না গাড়িও লাগবে। জাইয়াদ বলল।
,
ঠিক , তবে আমাদের সোলার বিদ্যুতে চলে এমন গাড়ি খুজতে হবে কারন মরুভূমিতে জ্বালানী নাও পাওয়া যেতে পারে। কেননা আমি দুরবীন দিয়ে দেখেছি কোনো গাছপালা দেখা যায় না। সেখানে তো কোনো মানুষ আর থাকবে না।
,
আমাদের দুজনকে দু কাজ করতে হবে। আমি খাবারের বন্দোবস্ত করি আর তুই গাড়ির খোঁজ কর।
,
এরপর দুজনে লোকালয়ে গিয়ে এসবের ব্যবস্থা করতে লেগে গেলো। খাবার আর গাড়ির ব্যবস্থা করতে গিয়ে বিকেল হয়ে গেলো। গাড়িটি সোলার চালিত একটি জীপ । পেছনের অংশটা খোলা। একজন সর্দারের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে এটা কিনতে হয়েছে। তারপরও ওরা খুশি। কারন মন মতো একটা গাড়ি হয়েছে। পেছনের খোলা অংশে ট্রিপল দিয়ে ছাদের মতো করে দিলো ওরা। যাতে খাবার গুলো নিশ্চিন্তে রাখা যায়। রাতটা ওরা দুজন ঐ লোকালয়ে কাটালো। সকাল হলে ওরা রওয়ানা দিলো মরুর উদ্দেশ্যে।
,
ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে জাইয়াদ। সালমান পাশের সিটে বসে দূরবীন দিয়ে চারপাশটা দেখছে। মরুভূমির পরিবেশটা খুব ভয়ঙ্কর সুন্দর। খানিক পর পর পাতাবিহীন শুকনো গাছগুলো যেন ওদের স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও বালির টিবি। ছিটেফোটা ভাবে কিছু ঝোপঝাড়ও নজরে পড়ছে। সেই লোকালয়টা যে কখন ওদের দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেছে সেটা খেয়ালেই নেই ওদের।
,
বালির উপর কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে থাকা মড়া গাছগুলো খুবই অন্যরকম দেখা যাচ্ছে। কেমন যেন ভয়ঙ্কর। ওরা যত গভীরে যাচ্ছিলো ততই যেন এসব গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত একটানা চলার পর একটা ঝোপের পাশে গাড়ি দাড় করালো। ক্ষুধা পেয়েছে ওদের। পেছন থেকে খাবার নামাতে লাগলো ওরা।
,
অদ্ভুত মরুভূমি এটা । সাধারন ভাবে তো মরুভূমিতে যত ভেতরে যাওয়া যায় তত গাছের সংখ্যা কমে কিন্তু এতে ঠিক উল্টোটা হচ্ছে। খাবার নামাতে নামাতে বলল সালমান।
,
একদমই তাই। অন্য গুলোর থেকে এটার পরিবেশও অনেক ভয়ানক। সালমানের কথা সমর্থন করলো জাইয়াদ।
,
দেখা যাক সামনে আর কি রহস্য লুকিয়ে আছে আমাদের জন্য। সালমান বলল।
,
আর এটাও দেখতে হবে কত দিন লাগে এটা পার হতে। জাইয়াদ বলল। দুজনেরই খুব ক্ষুধা লেগেছিলো তাই আর কথা না বাড়িয়ে খাবার খেতে শুরু করলো।
,
খাওয়া শেষ হতেই সালমান উঠে দূরবীনটা হাতে নিয়ে ঝোপের আরেকপাশে চলে গেলো। সেখানে দাঁড়িয়ে চোখে লাগালো দূরবীনটা । কিছুটা দূরে একটা অষ্পষ্ট কিছু ওর চোখে পরলো।। দূরবীনের লেন্স ঘুরিয়ে স্পষ্ট দেখার চেষ্টা করলো সালমান। অনেকক্ষন চেষ্টার পর কোন মানুষ বলে মনে হলো। হতবুদ্ধ হয়ে জাইয়াদকে ডাকতে লাগলো।
,
জাইয়াদ সবেমাত্র খাবারগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা চেক করে সিটে বসেছে। এমন সময় সালমানের ডাক শুনতে পেলো। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত সেদিকে এগিয়ে গেলো। দেখল সালমান দূরবীন লাগিয়ে কি যেন একটা দেখছে। জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে , সালমান?
,
সালমান বলল, দেখনা , ওদিকে মাটিতে একটা মানুষের মতো শুয়ে আছে মনে হচ্ছে।
,
দেখি বলে জাইয়াদ দূরবীন টা হাতে নিল। চোখে লাগিয়ে বলল, ঠিক , মানুষ বলেই মনে হচ্ছে। গিয়ে দেখা দরকার, কোন বিপদে পরলো নাতো?
,
দুজনে সেদিকে হাঁটতে লাগলো। কিছুটা সময় লাগলো সেখানে পৌঁছাতে। গিয়ে দেখে একটা লোক উপুর হয়ে শুয়ে আছে। দুজনে মিলে চিৎ করলো লোকটাকে। ভালো করে তাকাতে গিয়ে দুজনেই অবাক হয়ে গেলো। বুকের বাম পাশে বিশাল বড় একটা গর্ত। সালমান ঝুকে দেখল, হৃৎপিন্ডটা নেই। লোকটার শরীর থেকে একটা ক্যামিকেলের গন্ধ আসছে। মুখ চাওয়া চাওয়ি করল দুজন। সালমান বলল, লাশটাকে ক্যামিকেলে ডুবানো হয়েছে যাতে পচে না যায়। কিন্তু কে করলো এসব?
,
আরে এই নির্জন ভূমিতে লাশই বা এলো কিভাবে। কে মারলো একে? আর যাই বল যায়গাটা খুব ভুতুরে কিন্তু। জাইয়াদ বলল।
,
আমরা মনে হয় বড় কোন বিপদে ফেসে যাচ্ছি। আর এ লাশটা তার ইঙ্গিত। দেখ পুরো বডির কোথাও কিছু হয়নি অথচ এর হৃৎপিন্ড গায়েব। এর মানে কি হতে পারে? সালমানের জিজ্ঞাসা।
,
জানিনা। চল , আমরা আমাদের পথে যাই। জাইয়াদ বলল।
দুজনে গিয়ে গাড়িতে বসল। সালমান গাড়ি চালানো শুরু করলো। কিন্তু একটু আগে ঘটা ঘটনা দুজনের মনেই দাগ কেটে গেছে। গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত দুজন। আরো অবাক হলো যখন দেখলো আস্তে আস্তে পাতাহীন গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝোপের সংখ্যাও আগের থেকে অনেক বেশী।
,
ব্যাপারটা কি? গাছের সংখ্যা এভাবে বাড়ছে কেন? সামনে কোনো লোকালয় তো চোখে পড়ছে না। জাইয়াদ জিজ্ঞেস করলো।
,
আমরা মনে হয় কোনো গোপন রহস্যের দ্বারপ্রান্তে এসে পড়েছি। হতে পারে সামনে আমরা কোনো বড় বিপদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। সালমান বলল।
,
এই দেখ , সামনে মনে হয় আরেকটা লাশ। সেরকমই মনে হচ্ছে। জাইয়াদ চিৎকার করে উঠলো।
সালমান সামনে তাকিয়ে দেখলো ঠিকই আরেকটা লাশের মতো। পাশে নিয়ে গাড়ি দাড় করালো। এটাতো সেই আগেরটার মতই অবস্থা। কেমিক্যালের গন্ধ বেরোচ্ছে। আগেরটার মতোই হৃৎপিন্ড নেই। সালমান বলল।
,
ঠিক কিন্তু এটা কে করবে? আর এ মরুভূমিতে এরকম কেমিক্যাল এলো কোথা থেকে? জাইয়াদ জিজ্ঞেস করল।
,
কি জানি । এখানে থাকাটা ঠিক হবে না। চল। সামনে এগোই।
ওরা এসে গাড়িতে বসল। গাড়ি চলতে আরম্ভ করল। দুজনের মাঝেই চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ রহস্যের কোন কূল কিনারা খুজে পেল না ওরা। কিছুদুর যাওয়ার পর ওরা দেখলো কতগুলো প্রাণী ঘুরাফেরা করছে। দুজনের কেউই চিনতে পারলো না এরা কোন ধরনের প্রাণী। এরা দেখতে প্রায় মানুষের মতো কিন্তু হাতে পায়ে ইয়া বড় বড় নখ আর পশম। একেবারে হিংস্র জন্তুদের মতো। মাথায় ছোট ছোট শিং আছে আবার। কারোটা বড় আবার কারোটা ছোট। ওদের চারপাশে নেট দিয়ে আটকানো।
,
সালমান ও জাইয়াদ গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে গেল। এলাকাটা বিভিন্ন ধরনের ঝোপঝাড় দিয়ে ঘেরা। ওরা একটা গাছের পাতা ছুয়ে বুঝল এগুলো নকল। দুজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। ওরা আরো সামনে এগুলো। একটা গুহা মতো কি যেন দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে ওদের চারপাশে কতগুলো প্রাণী এসে ঘিরে ফেলল। মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলা হল ওদেরকে। কতক্ষন অজ্ঞান ছিল জানা নেই ওদের।
‘
জ্ঞান ফিরার পর ওরা নিজেদেরকে আবিষ্কার করল একটা কাচের দেওয়ালে তৈরি একটা ঘরের মধ্যে। হাত পা প্লাস্টিকের কর্ড দিয়ে চেয়ারের সাথে বাঁধা । নড়া চড়া করতে পারলো না কেউই। চারদিকে নজর বুলাতে গিয়ে দেখল , কাচের দেওয়ালের ওপাশে ডানদিকের একটা বিশাল অংশ জুরে আধুবিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো একটা ল্যাব। সেখানে যেমন বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি আছে তেমনি মেডিকেলের সরঞ্জাম ও আছে। মাঝখানে একটা লম্বা টেবিল বিছানো। এর উপর পাশাপাশি দুটো থালায় দুটি হৃৎপিন্ড রাখা। এর পাশে আরো দুটি খালি থালা রাখা। হৃৎপিণ্ড দুটির উপর কেমিক্যাল দেওয়া । এগুলো থেকে কতগুলো ওয়্যার একটা ইলেকট্রিক ডিভাইসের সাথে লাগানো। ইলেকট্রিক ডিভাইস থেকে লাল নীল আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। সেটা আবার একটা কম্পিউটারের সাথে সংযোগ করা। একজন লোক সেখানে বসে কাজ করছে।
,
আর বাম পাশের দিকে একটা ইয়া বড় খাঁচা। খাঁচায় কতগুলো অদ্ভুত রকমের জন্তু। একেকটার আকৃতি একেক রকম। কোনোটার কান ইয়া লম্বা, কোনোটার মাথা পুরোই বিটকেলে, কোনটার হাতে পায়ে ইয়া বড় বড় নখ ইত্যাদি। পুরো ল্যাবের বিভিন্ন স্থানে গার্ড দাঁড়ানো। গার্ডরা আধুনিক অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত। এসব দেখে সালমান ও জাইয়াদ উভয়েই অবাক হয়ে গেলো।
,
ওদের জ্ঞান ফিরতে দেখে লোকটা কম্পিউটারের কাজ রেখে ওদের সামনে এসে বসল। কতক্ষন ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, হ্যালো ইয়ং ম্যান। আমি ডঃ ডেভিড আব্রাহাম।
,
সালমান বলল, আপনি কে? আমাকে আর আমার বন্ধুকে আটকে রেখেছেন কেন?
,
তোমাদের হৃদয়টার জন্য। ক্রুর হাসি হেসে বলল ডঃ ডেভিড।
,
মানে, আপনি কি বলতে চাইছেন? জাইয়াদ প্রশ্ন মাখা দৃষ্টিতে চেয়ে বলল।
,
এই যা, আমি তোমাদের কেন এখানে এনেছি তাতো বলতে ভুলে গেছি। এবার বলে ফেলি, এইযে খাচার প্রাণী গুলো দেখছ আমি তাদের মানুষের মতো বানাতে চাই। হৃদয় ছাড়া তো আর মানুষ বানানো যাবে না । আর বানানো গেলেওতো মানুষের মতো আচরন করতে পারবেনা। তাই হৃদয় চাই ওদের জন্য। ডঃ ডেভিড বললেন।
,
কন্ঠ শুকিয়ে গেছে সালমান আর জাইয়াদের । কিছুক্ষন পর জাইয়াদ বলল, শুধু হৃৎপিণ্ড স্থাপন করলেই কি তারা মানুষ হয়ে যাবে। আর এই প্রাণী গুলোর নাম কি?
,
আরে না বাছা। হৃৎপিণ্ড বসানোর পর ওদের মাঝে জিনে গত পরিবর্তন করে দিই। এর ফলে তারা ধীরে ধীরে মানুষের মতো হয়ে যায়। কিন্তু পুরো মানুষ হয় না । স্বাভাবিক ভাবে এদের কে মানুষ বলে মনে হলেও তার ভেতরে হিংস্র পশুর স্বভাব থেকে যায়। তোমরা বাইরে যাদের দেখেছ তারা এ প্রক্রিয়ায় আছে। আর কিছু দিন পর এরা পুরো মানুষের মতো হয়ে যাবে। তোমরা বেচে থাকলে দেখতে পেতে। কিন্তু আফসোস তোমরা এটা দেখতে পারবে না। শয়তানি হাসি হাসলেন ডঃ ডেভিড।
,
আপনি এটা কি করে করতে পারেন? জিজ্ঞাসা সালমানের।
,
এটা আমার আবিষ্কার। আমি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত এটা নিয়ে গবেষনা করছি।দশ বছর আগে এই জিন গত পরিবর্তনের কৌশল সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারি। আর এইযে প্রাণী গুলো দেখছ এগুলো কোন আসল প্রাণী নয়। এগুলো আমারই আবিষ্কার। আমি এক নতুন উপায়ে এগুলোকে আবিষ্কার করেছি। আমার রিসার্চ সম্পূর্ণ হলে এগুলো এমন হবে যে, এরা শক্তিতে আর সাহসে হিংস্র জন্তুর থেকে ভয়ানক হবে আর বুদ্ধিতে একজন মানুষের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান হবে। কেননা এদের মস্তিস্কে বিভিন্ন মাইক্রো চিপ বসান আছে। কম্পিউটার দ্বারা যার নিয়ন্ত্রন করা যায়। এবার বুঝতে পারছ এদের ক্ষমতা। ডঃ ডেভিড বললেন।
,
ডঃ ডেভিডের কথা শুনে সালমান আর জাইয়াদ থ মেরে গেলো। কিছুক্ষন কথা বলতে পারলো না কেউ। অনেক ক্ষন পর জাইয়াদ কথা বলল কিন্তু সেটা কথা বললে ভুল হবে যেন ক্রোধে ফুসে উঠল, কিন্তু আপনি এসব কেন করছেন? এদের নাম কি ? এতোটা নিষ্ঠুর হয়ে মানুষকে মেরে তাদের জায়গায় এই প্রাণীদের দিতে চাইছেন কেন?
,
রিলাক্স, বয়েস , রিলাক্স। এতো উত্তেজিত হলে সেটা স্বাস্থের জন্য ভালো হয় না। মন দিয়ে শোন, এরা যেহেতু প্রাণী ও মানুষ উভয় বৈশিষ্ঠ সম্পন্ন তাই আমি এদের নাম দিয়েছি প্রানুষ। আর আমি এগুলো কেন বানাচ্ছি এটা জানতে চাইলে আগে বল তোমরা কোন ধর্ম মানো?
,
আমরা মুসলমান। দুজনে একসাথেই বলল।
,
হা হা হা। মুসলমান। তাহলেতো আমার কথা গুলো শুনতে তোমাদের খুব ভালো লাগবে। আমি তোমাদের ধর্ম বিশ্বাস আর অস্তিত্বের শত্রু। তোমাদের মুসলিম দেশের মধ্যে আমার তৈরি এই প্রানুষদের গোয়েন্দা হিসেবে জয়েন্ট করানো হবে। তারপর আমরা প্রথমে তোমাদের দেশ তারপর তোমাদের কে ধংশ করে দিব। তারপর তোমাদের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। কুৎসিত আর বিভৎস হাসি হাসতে হাসতে বললেন ডঃ ডেভিড।
,
এ হতে পারে না। তোমরা কক্ষনো এমন ক্ষতি করতে পারবে না। তোমার পেছনে যত বড় শক্তিই থাকুক না কেন সবার বড় আল্লাহ। তার সামনে তোমরা পুরোই তুচ্ছ। আর আমাদের মুসলিম শাসকরা এতো বোকা নয় যে তোমাদের ফাদে তারা পা দিয়ে দেবে। তারা তোমাদের পাঠানো প্রানুষদের দেখে ধোকা খেয়ে যাবেন। রাগে কাপতে কাপতে কথাগুলো বলল সালমান।
,
তারা এমনটাই করবেন। তোমাদের অধিকাংশ রাষ্ট্রনায়ক আমার বসেদের কথা শুনেন। আমরা যেমনটা বলব তারা তেমনটাই করবে। কারন টাকার কাছে লোকে অন্ধ হয়। ডঃ ডেভিড বললেন।
,
এমনটা কক্ষনো হতে পারে না । আমরা হতে দেব না এমনটা । আমরা তোমাদের মুখোশটা খুলে ফেলবো। চিৎকার করে বলল জাইয়াদ।
,
হা হা হা । বেচে থাকলে তো এর খবর তোমরা বাইরে নিয়ে যাবে। বলে ডঃ ডেভিড টেবিল থেকে একটা সিরিঞ্জে কিছু মেডিসিন ভরে নিলেন। তারপর ফিরে এসে বললেন, এর মধ্যে বিষ আছে। এটা পুশ করার কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা যাবে। জাইয়াদের বাহু থেকে হাতাটা টেনে ছিড়ে ফেললেন তিনি। তারপর ইঞ্জেকশন টা পুশ করে দিলেন। জাইয়াদ কিছুক্ষন ছট ফট করে একসময় অচেতন হয়ে পরলো।
,
এইযে শুনুন, আপনি আমার বন্ধুকে মেরে ফেললেন কেন? কি চান আপনি? এতো নিষ্ঠুর হওয়া মানুষের পক্ষে সাজেনা। শুনুন, আমার কথা শুনছেন না কেন? আমার বন্ধু তো কোন অন্যায় করেনি। বিনা অপরাধে কাউকে মারা ঠিক না। আপনি কিন্তু সেটাই করছেন। সালমান প্রাণপনে চিৎকার করছে। বন্ধুকে বাচানোর জন্য কাকুতি মিনতি করছে কিন্তু ডঃ ডেভিড তার কোনো কথাই শুনছে না।
,
ডঃ ডেভিড তার কাজ করেই চলছে। জাইয়াদ নিস্তেজ হয়ে যেতেই ওর হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিল। তারপর গার্ডদের ডাকলো। দুজন এসে জাইয়াদকে তুলে নিয়ে একটা ট্রলির উপর রাখলো। ডঃ ডেভিড জাইয়াদের জামাটা কাচি দিয়ে কেটে ফেললেন। তারপর তিনি হাতে ছুড়ি আর চিমটা তুলে নেন। সালমান চোখ বন্ধ করে ফেলে। ডঃ ডেভিডের উদ্দেশ্য তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। সে এমন কিছু করবে যেটা দেখা সালমানের জন্য মৃত্যুর যন্ত্রনা সহ্য করার চেয়েও কঠিন হবে। কিন্তু সালমানের কোন উপায় নেই বন্ধুকে সাহায্য করবে । কারন ও নিজেইতো বাঁধা পরে আছে। তাই একরকম অনুন্যপায় হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
,
এদিকে ডঃ ডেভিড ছুড়ির সাহায্যে জাইয়াদের বুকের বাম পাশটা কেটে ফেললেন। চিমটা দিয়ে বের করে আনে হৃৎপিণ্ড টা । সাদা গ্লাভস পরা ডঃ এর হাত রক্তে ভিজে গেছে। হাতে হৃৎপিণ্ড টাকে একখন্ড জমাট রক্ত বলে মনে হচ্ছে। হাতের তালুতে এটাকে রেখে শয়তানের মতো ক্রুর হাসি হাসতে থাকেন। হাসি শুনে চোখ খুলে সালমান। কিন্তু সামনে একান্ত প্রিয় বন্ধু জাইয়াদের কাটা ছেড়া করা বিভৎস লাশটা দেখে বুকটা ছেৎ করে উঠলো। ইয়া আল্লাহ বলে চিৎকার দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল সালমান।
,
এবার ডঃ ডেভিড জাইয়াদের হৃৎপিণ্ডটাকে দুটো খালি থালার একটাতে রেখে আরেকটা সিরিঞ্জ ভরে নিলেন। তারপর সালমানের দিকে এগিয়ে গেলেন। বললেন, ইয়ংম্যান, এবার তোমার পালা, তৈরি হয়ে নাও। আফসোস যে আমাদের বিজয় দৃশ্যটা তুমি দেখতে পারবে না। তবে কোন সমস্যা নেই, তুমি ঠিক উপরে গিয়ে আমাদের সফলতা দেখতে পারবে। একটা সত্য কথা বলব, তুমি জানোনা তোমার জাতি ভাইদের বর্তমান অবস্থা কি? এরকম যদি চলতে থাকে তাহলে তোমার ভাইয়েরাই তাদের দেশ আমাদের হাতে তুলে দেবে। একদিন তোমাদের ধর্ম বলে কিছুই থাকবে না।
,
তোমরা এরকম কিছু করতে পারবে না। আমি সবাইকে জানিয়ে দিব তোমাদের ষড়যন্ত্র। সালমান বলল।
,
তুমি কিছু করতে পারবে না। তুমি সারাদিন চিৎকার করে বললেও তারা তোমাকে বিশ্বাস করবে না। তোমাকে পাগল বলবে। আর বেচে থাকলে তো বলবে। এই বলে ডঃ ডেভিড সিরিঞ্জটা সালমানের চোখের সামনে তুলে ধরলেন।
,
সহসা যেন মৃত্যু এসে হাজির হলো ওর সামনে। প্রিয় বন্ধু জাইয়াদের করুন মৃত্যুটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। নিজেকে ও জাইয়াদের স্থানে কল্পনা করতে লাগলো। হঠাৎ ই মায়ের মুখটা ভেসে উঠলো ওর মনে। মা ছাড়া আর কেউ নেই । মা কেমন আছে? এখন কি করছে? কোথায় আছে? খুব দেখতে ইচ্ছে করছে মাকে। কিন্তু এই মূহুর্তে কোন উপায় নেই সংবাদ দেওয়ার।
,
এদিকে ডঃ ডেভিড সিরিঞ্জ হাতে নিয়ে সালমানের কাছে এগিয়ে এলেন। এক বাহুতে সুইয়ের মাথা ঢুকিয়ে দিলেন তিনি। সালমানের পুরো হাতে এক অসহ্য যন্ত্রনা ছড়িয়ে গেল। জ্বালা ধরে গেল পুরো শরীরে। আল্লাহ বলে এক বুকফাটা চিৎকার দিয়ে উঠলো সালমান।
,
ধর মর করে বিছানায় উঠে বসল সালমান। পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। বিছানা থেকে উঠে লাইট অন করলো ও। দেখলো নিজের রুমেই আছে কোন মরুভূমিতে নয়। হাতে একটা চিমটি কেটে শিওর হলো এতক্ষন যা দেখছিলো তা নিছক স্বপ্ন ছিল।
,
টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেল। তারপর লাইট নিভিয়ে আবার শুয়ে পরলো। কতক্ষন এপাশ ওপাশ করলো কিন্ত ঘুম যেন হাওয়া হয়ে গেছে। বারবার সেই স্বপ্নের কথা মনে করতে লাগল। ডঃ ডেভিড এর কথাগুলো বার বার ওর কানে ধনিত হয়ে ফিরতে লাগলো।
,
ভাবনার অতলে হারিয়ে গেল সালমান। আসলেই তো, আজকে মুসলমানদের প্রথম কেবলা ইয়াহুদিদের কবলে। ফিলিস্তিন নাম উচ্ছারন করলে চোখের সামনে ভেসে উঠে হাসপাতালের বছানায় ক্ষত বিক্ষত যন্ত্রনাকাতর একঝাক শিশুর লাশ। কিছুক্ষন পর পর জানাযা বেরোয়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ খচিত লাল-সবুজ চাদরে মোড়ানো কফিনটিকে ঘিরে থাকে হাজারো ফিলিস্তিনী। ইয়াহুদিরা এখানে জবর দখল করার পর এভাবে দৃশ্যায়িত হয়েছে অসংখ্য ক্ষুদে শহীদদের কফিনযাত্রা। দীর্ঘ ষাট বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ও ফিলিস্তিনীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় নি। শহীদ হয়েছে দাদা,তারপর ছেলে, তারপর নাতি, এভাবে শহীদদের কাফেলা দীর্ঘায়িত হয়েছে। এই একই অবস্থা কাশ্মীর, মায়ানমার, বসনিয়া, ইরাক, সিরিয়া সহ অনেক মুসলিম দেশে....... ।
,
আর ভাবতে পারে না সালমান। ভেতর থেকে কে যেন ওকে হাতুরি পেটা করছে। কেউ যেন ওকে ডেকে ধিক্কার জানিয়ে বলছে , তুমি একজন মুসলিম হয়েও তোমার ভাইয়ের সাহায্য করছ না। তুমি কি ভুলে গেছ, তোমার নবীর সেই অমোঘ বানী ‘মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই’। তুমি কি ভুলে গেছ সেই মহান বানী, ‘প্রতিটি মুসলমান একটি মানব দেহের ন্যায়, যার এক অঙ্গ আঘাত পেলে তার প্রভাব পুরো শরীরে পরে’। তোমাকে সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী হতে হবে,তোমাকে মূসা বিন নুসাইর হতে হবে, তোমাকে তারিক বিন যিয়াদ হতে হবে,তোমাকে মুহাম্মাদ বিন কাশিম হতে হবে, তোমাকে কুতাইবা বিন মুসলিম হতে হবে। তোমার উচিৎ তোমার জাতির সেবা করা। উঠো সালমান , উঠো। আর অজ্ঞতায় থেক না। তোমার স্বপ্নের চেয়েও ভয়ঙ্কর এই দুনিয়া।
,
সালমান, উঠ। ফজরের আজান হতে আর বেশি দেরী নেই কিন্তু। মায়ের ডাক শুনে সজাগ হয় সালমান। উঠে দেখে আর মাত্র দশ মিনিট বাকী আজান হতে। উঠে ফ্রেশ হতে হতে আজানের সুর ভেসে আসে। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে সালমান। আজকের পরিবেশটা অন্যরকম লাগছে ওর কাছে। ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া ওকে স্বাগত জানাচ্ছে মসজিদ পানে। নামাজ শেষে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যাতে ও সঠিক পথে চলতে পারে। শয়তানদের মুকাবেলায় জয়ী হতে পারে।
,
সালমান বাড়ি ফিরে আসে। মা দরজা খুলে সালমানকে দেখে অবাক হন। একদম অন্যরকম লাগছে। একটা স্বচ্ছতা, নিষ্পাপতা ভেসে আছে চেহারায়। অন্তরের গভীর থেকে দুয়া চলে এলো সালমানের জন্য।
,
বিকেলে জাইয়াদকে নিয়ে একটি ইসলামিক কনফারেন্সে যোগ দেয়। সেখানে বর্তমানে মুসলমানদের অবস্থা এবং করণীয় সম্পর্কে বক্তৃতা দেয়। অনেকে ওর কথায় একমত হয়।
,
বাসায় আসার সময় প্রথম ক্ষেত্রে সফলতায় একটা আনন্দের একটা স্ফুরন খেলে যায় সালমানের মনে। আবেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে ও। এটা কারো উপর অভিমানে নয় বরং সঠিক পথে দৃঢ় থাকার প্রত্যয় বহন করে।
,
,
,
শক্তি দাও হে আল্লাহ সত্য কথা বলার
হকের উপর অটল থেকে সারা জীবন চলার।
,
,my all post here
©somewhere in net ltd.