নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবঘুরে

নিপীড়িতের দীর্ঘশ্বাস

নিপীড়িতের দীর্ঘশ্বাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবী মুহাম্মদের ফুলশয্যা, সাফিয়ার স্বপ্নদর্শন বিবাহ ও দাসত্বমোচন!

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৮

মুহাম্মদ (সঃ) (৫৭০ - ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে মুসলমানদের মাঝে গণ্য। নবী মুহাম্মাদ (সঃ) তার জীবনে যে সকল মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মুসলমানগণ তাদেরকে উম্মাহাতুল মুমিনীন অর্থাৎ মুসলমানদের মাতা হিসেবে অভিহিত করেন। ২৫ বছর বয়সে তাঁর সাথে আরবের তৎকালীন বিশিষ্ট ধনী এবং সম্মানিত ব্যক্তিত্ব খাদিজার বিয়ে হয়। তাদের বৈবাহিক জীবন প্রায় ২৪ বছর স্থায়ী হয়। এরপর খাদিজা মৃত্যুবরণ করেন। খাদিজার জীবদ্দশায় তিনি আর কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি। মুসলিম জীবনীকারদের বর্ণনামতে, খাদিজার মৃত্যুর পর নবী আরও ১০ জন (মতান্তরে ১২ জন) স্ত্রী গ্রহণ করেন। অর্থাৎ তার স্ত্রীর সংখ্যা সর্বমোট ১১ জন (মতান্তরে ১৩ জন)। স্ত্রীদের মধ্যে শুধুমাত্র আয়িশাই ছিলেন কুমারী। বাকি সব স্ত্রী ছিলেন বিধবা । তার স্ত্রীদরে মধ্যে একজন হলেন সাফিয়া বিনতে হুয়াই। ইসলামি সোর্স ও ইতিহাস পর্যালোচনায় আমার আলোচ্য বিষয় নবী মুহাম্মদের সাখে সাফিয়া বিনতে হুয়াই এর প্রণয় ইতিহাস।
সাফিয়া বিনতে হুয়াই ছিলেন বনু নাদির গোত্রের প্রধান হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা। তার প্রথম স্বামীর নাম সাল্লাম ইবনে মিশকাম। তার কাছ থেকে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে তিনি বনু নাদিরের সেনাপতি কেনানা ইবনে রাবিকে বিয়ে করেন। খায়বার যুদ্ধে বনু নাদির গোত্র পরাজিত হলে কেনানাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং সাফিয়াকে যুদ্ধবন্দীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মারটিন লিংসের তথ্যমতে, মুহাম্মদ (স:) তাকে দুটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, একটি হল বনু নাদিরে ফিরে যাওয়া আর অপরটি হল ইসলাম গ্রহণ করে মুহাম্মদকে বিয়ে করা। সাফিয়া দ্বিতীয় প্রস্তাব গ্রহণ করে মুহাম্মদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ।
আবু আল-কেইন আল-মুযাননির কন্যা হইতে > আবু হারমালার বোন উম্মে আবদুল্লাহ হইতে > আবু হারমালা হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইবনে আবি সাবরা বলেছেন, আল্লাহর নবীর পত্নীদের মধ্যে আমি তাঁর যে পত্নীর সাথে ঘনঘন সাক্ষাত করতাম তিনি হলেন সাফিয়া। তিনি আমাকে বলেছেন তাঁর লোকজনদের কথা ও তিনি তাদের কাছে যা শুনেছেন, সেই সব কথা। তিনি আমাকে যা বলেছেন তা হলো:
'যখন আল্লাহর নবী আমাদেরকে মদিনা হতে বহিষ্কার করেন তখন আমরা মদিনা থেকে যাত্রা করি ও খায়বারে এসে বসতি স্থাপন করি। কিনানা বিন আবি আল-হুকায়েক আমাকে বিবাহ করে, সে ছিল আমার স্বামী। সে আমাকে সুলালিম এর দুর্গে স্থানান্তর করে, সেখানে আমি নিদ্রামগ্ন অবস্থায় যা দেখি, তা হলো - মদিনা থেকে চাঁদটি আমাদের অভিমুখে এসেছে ও তা আমার কোলের ওপর পতিত হয়েছে। আমি তা আমার স্বামী কিনানার কাছে উল্লেখ করি, এই কথা শ্রবণ করে সে আমার চোখে আঘাত করে ও তা সবুজ বর্ণ ধারণ করে। যখন আমি আল্লাহর নবীর কাছে আসি, তখন তিনি তা দেখেন ও বিষয়টি আমার কাছে জানতে চান, আমি তাঁকে তা অবহিত করাই।"
ইতিমধ্যে ইহুদিরা তাদের সন্তানদের নাটার দুর্গগুলো থেকে খালি করে নিয়ে আসে ও তাদেরকে রাখে আল-কাতিবায়। যখন আল্লাহর নবী খায়বারে এসে নাটার দুর্গগুলো দখল করে নেয় কিনানা আমার কাছে আসে ও বলে, "মুহাম্মদ নাটা দখল করা শেষ করেছে ও এখানে একজন যোদ্ধাও নেই।" নাটার জনগণদের হত্যা করার প্রাক্কালে ইহুদিদের হত্যা করা হয়েছিল, আরবরা আমাদেরকে বিশ্বাস করেনি।
কিনানা আমাকে স্থানান্তরিত করে নিয়ে আসে আল-নিযার দুর্গে। আল্লাহর নবী আল-কাতিবা অগ্রসর হওয়ার আগে আমাদের কাছে আসেন। আল্লাহর নবী আল-কাতিবা পৌঁছার আগেই আমাকে আল-নিযার দুর্গ থেকে বন্দী করেন। আল্লাহর নবী আমাকে নিয়ে আসার জন্য ঘোড়া পাঠান, অতঃপর তিনি সন্ধ্যার সময় আমাদের কাছে আসেন ও আমাকে ডেকে পাঠান। আমি নম্রভাবে অবগুণ্ঠিত অবস্থায় আসি ও তাঁর সম্মুখে বসে যাই। তিনি বলেন, "যদি তুমি তোমার ধর্মে বহাল থাকো, আমি সে জন্য তোমাকে বল প্রয়োগ করবো না; কিন্তু তুমি যদি আল্লাহ ও তার রসুলের ধর্ম পছন্দ করো, তবে সেটাই তোমার জন্য অধিক মঙ্গলজনক।"
আমি আল্লাহ ও তার রসুল ও ইসলাম ধর্ম মনোনীত করি; অতঃপর আল্লাহর নবী আমাকে মুক্ত করেন, বিবাহ করেন ও তিনি আমার দাসত্ব-মোচন ও দাম্পত্য মূল্য নির্ধারণ করেন। যখন আল্লাহর নবী মদিনায় ফিরে আসা মনস্থ করেন, তাঁর অনুসারীরা বলে, "সে কি তাঁর পত্নী, নাকি তাঁর রক্ষিতা, তা আমরা আজ জানতে পারবো। যদি সে তাঁর পত্নী হয়, তবে তিনি তাকে অবগুণ্ঠিত করবেন; যদি তিনি তা না করেন তবে সে হলো তাঁর রক্ষিতা।
আল্লাহর নবী যখন যাত্রা শুরু করেন, তিনি আদেশ করেন, আমি যেন অবগুণ্ঠিত হই এবং সবাই যা জানতে পারে, তা হলো - আমি তাঁর পত্নী।
সাফিয়া বিনতে হুয়াই এর উপরুক্ত বর্ণনা পর্যালোচনায় আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, 'ইতিমধ্যে কিনানা বিন আল-রাবি বিন আবুল হুকায়েকের পত্নী থাকা অবস্থায় সাফিয়া যে-স্বপ্নটি দেখে, তা হলো - চাঁদটি তার কোলের ওপর এসে পড়তে যাচ্ছে; সে তার স্বামীকে তা বলে; সাফিার কথা শুনে কিনানা তার মুখে এমনভাবে ঘুষি মারে যে, তার চোখ কালো হয়ে যায়। যখন তাকে আল-নিযার দুর্গ থেকে বন্দী করে নবী মুহাম্মদের কাছে নিয়ে আসা হয়, তখনও সেই দাগটি তার ছিলো; দাগটি সর্ম্পকে নবী মুহাম্মদ জানতে চাই এবং সাফিয়া ঘটনাটি বলে।
সাফিয়া বিনতে হুয়েই বিন আখতাব নামের এই অসামান্য সুন্দরী মহিলাটির বিয়ে হয়েছিল মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এই আগ্রাসী খায়বার আক্রমণের অল্প কিছুদিন পূর্বে। সদ্য বিবাহিত সতের বছর বয়সী সাফিয়ার স্বামী কিনানা বিন আল-রাবি বিন আবি আল-হুকয়েক-কে মুহাম্মদ ও তার অনুসারীরা অমানুষিক নৃশংসতায় খুন করেছিলেন। সাফিয়ার স্বামী ও তাঁর অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ও খায়বার জনপদবাসীদের আরও অনেককে খুন, জখম ও তাঁদের সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করার পর মুহাম্মদ তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদের বন্দী করে দাস ও যৌনদাসী রূপে রূপান্তরিত করেন। ইসলামি ইতিহাস ও সোর্স হতে আমরা জানতে পারি যে, সদ্য বিবাহিত এই সাফিয়া-কে যৌনদাসী হিসাবে প্রথমে হস্তগত করেছিলেন ‘দিহায়া আল-কালবি নামের মুহাম্মদের এক অনুসারী। পরবর্তীতে যখন এই অসামান্য সুন্দরী সপ্তদশী তরুণীকে মুহাম্মদের কাছে ধরে নিয়ে আসা হয়, মুহাম্মদ তাঁর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে তাঁর নিজ যৌনদাসী (রক্ষিতা) হিসাবে মনোনীত করেন! পরিবর্তে তিনি দিহায়া-কে দান করেন সুফিয়ার কাজিনকে। অতঃপর মুহাম্মদ সাফিয়া-কে যে দু'টি বিকল্প প্রস্তাব দেন, তা হলো:
১) ইহুদি অবস্থায় তাঁর পূর্ব ধর্মে অবিরত থাকতে পারা - যার সরল অর্থ হলো, মুহাম্মদের যৌনদাসী ও রক্ষিতা হয়ে তাঁর বাকি সমস্ত জীবন অতিবাহিত করা; অথবা,

২) মুহাম্মদের বশ্যতা স্বীকার ও তাঁর ধর্মে দীক্ষা লাভ করে মুহাম্মদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাসত্বমুক্ত হয়ে মুহাম্মদের বহু পত্নীদের একজন হয়ে তাঁর সমস্ত জীবন কাটিয়ে দেওয়া।
মুহাম্মদ তাঁকে এও জানিয়ে দেন যে, তিনি তাঁর ওপর এ ব্যাপারে কোনো জোরজবরদস্তি করবেন না! সিদ্ধান্ত সাফিয়াকেই নিতে হবে: যৌনদাসী, নাকি তাঁর পত্নী ও দাসত্বমুক্ত জীবন - কোনো জোরজবরদস্তি নেই! বুদ্ধিমতী সাফিয়া মুহাম্মদের দ্বিতীয় প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। মুহাম্মদের অনুসারীরা জানতেন না যে, সাফিয়া মুহাম্মদের কোন প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তারা অপেক্ষা করে আছেন, তা জানার জন্য। তারা যা জানেন, তা হলো, যদি সাফিয়া অবগুণ্ঠিত অবস্থায় হাজির হন, তবে তিনি হলেন মুহাম্মদের পত্নী, আর যদি তিনি অবগুণ্ঠিত না থাকেন, তবে তিনি হলেন মুহাম্মদের রক্ষিতা। সাফিয়া-কে অবগুণ্ঠিত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তারা নিশ্চিত হন যে, সাফিয়া মুহাম্মদের "সেটাই হবে তোমার জন্য অধিক মঙ্গলজনক" দ্বিতীয় প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন। সাফিয়া তাঁর এই কর্মের বিনিময়ে দাসত্বমুক্ত হতে পেরেছিলেন এবং এই "দাসত্বমুক্তিই" ছিল এই হতভাগ্য তরুণীটির বিবাহের মোহরানা (দাম্পত্য মূল্য)।
এই ঘটনাটি বর্ণনার মাধ্যমে ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা (অধিকাংশই না জেনে) দাবি করেন যে, সাফিয়ার প্রতি মুহাম্মদ কোনো জোরজবরদস্তি করেননি। কারণ সাফিয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা ছিলো তিনি মুহাম্মদের কোন প্রস্তাবটি গ্রহণ করবেন। মুহাম্মদ-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা আরও দাবি করেন যে, সাফিয়া স্ব-ইচ্ছায় মুহাম্মদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এই দাবির স্বপক্ষে তারা যে-বর্ণনাটি হাজির করেন, তা হলো সাফিয়ার স্বপ্নদর্শন!
বিশিষ্ট ইসলামিক ইতিহাসবিধ আল-ওয়াকিদির বর্ণনায় আমরা যা জানতে পারি, তা হলো, সদ্যবিবাহিত এই সপ্তদশী তরুণীটি এই ঘটনার আগে যে-স্বপ্নটি দেখেছিলেন, তা হলো, "মদিনা থেকে চাঁদটি আমাদের অভিমুখে এসেছে ও তা আমার কোলের ওপর পতিত হয়েছে।" আল-ওয়াকিদি তাঁর এই ঘটনার বর্ণনায় সাফিয়ার স্বামী কিনানার রেফারেন্সে "এই চাঁদ"-এর কোনো অর্থ নির্ধারণ করেননি। অন্যদিকে, মুহাম্মদ ইবনে ইশাক তাঁর বর্ণনায় সাফিয়ার স্বামী কিনানার রেফারেন্সে 'এই চাঁদ'-এর অর্থ নির্ধারণ করেছেন এই বলে, "এর সরল মানে হলো এই যে, তুমি হিজাযের রাজা মুহাম্মদের জন্য লালায়িত।" মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের এই বর্ণনার উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা দাবি করেন যে, সাফিয়া মুহাম্মদের জন্য ছিলেন লালায়িত ও তিনি স্ব-ইচ্ছায় মুহাম্মদকে পছন্দ করে মুহাম্মদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এখানে কোনো জোরজবরদস্তি ছিলো না!
আমার সরল পর্যালোচনায় যেটা দেখতে পাই তা হলো------
সাফিয়া বিনতে হুয়েই বিন আখতাব ছিলেন মদিনায় বংশ-বংশানুক্রমে অবস্থানরত বানু নাদির গোত্রের এক সদস্যা, এই ঘটনার মাত্র তিন বছর আগে (মার্চ, ৬২৫ সাল) যে-গোত্রের সমস্ত মানুষকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা প্রায় এক বস্ত্রে বিনা দোষে জোরপূর্বক মদিনা থেকে উৎখাত করে তাঁদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ লুণ্ঠন করেছিলেন। তখন সাফিয়া ছিলেন ১৪ বছর বয়সের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু। এই ঘটনার প্রভাব সাফিয়ার শিশু মনে 'আনন্দ যুগিয়ে' মুহাম্মদের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলো, এমন চিন্তা, বোধ করি, কোনো উন্মাদেও করবে না। অন্য দিকে নবী মুহাম্মদের করায়ত্ব হওয়ার মাত্র বছর খানেক আগে (মার্চ-এপ্রিল, ৬২৭ সাল) যার অসীম সাহসী পিতা হুয়েই বিন আখতাব কে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা গলা কেটে হত্যা করেছিলেন, বনি কুরাইজার গণহত্যার দিনটিতে! সাফিয়ার পিতা বনি নাদির গোত্র নেতা হুয়েই বিন আখতাব ইচ্ছে করলেই ঐ দিন তাঁর জীবন বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে, খন্দক যুদ্ধ শেষে তাঁর গোত্রের লোকদের কাছে ফিরে না গিয়ে, মৃত্যু অবধারিত জেনেও, বনি কুরাইজার গোত্রের লোকদের সাথে অবস্থান করেছিলেন। তখন সাফিয়ার বয়স ছিলো ১৬ বছর! এই ঘটনার প্রভাব সাফিয়ার শিশু মনে 'আনন্দ যুগিয়ে' মুহাম্মদের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলো, এমন চিন্তা, বোধ করি, শুধুমাত্র বদ্ধ উন্মাদের পক্ষেই করা সম্ভব! নিজ পিতার হত্যাকারী সেই মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর সাঙ্গদের নিয়ে এসেছেন আবারও তাঁদেরকে আক্রমণ, নির্যাতন, খুন ও বন্দী করে তাঁদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি লুট করতে! সদ্য বিবাহিত এই তরুণীর স্বামী ও অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের তারা খুন করেছেন অমানুষিক নৃশংসতায়! এই ঘটনার প্রভাব সাফিয়ার শিশু মনে 'আনন্দ যুগিয়ে' মুহাম্মদের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলো, এমন চিন্তা এক সীমাহীন তামাশা ছাড়া আর কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই!
শুধু তাইই নয়,
যে সময়টিতে মুহাম্মদের এই খায়বার আক্রমণটি সংঘটিত হয়েছিলো, সে সময়টিতে মুহাম্মদ কোনো "হিজাযের রাজা ছিলেন না। তিনি ছিলেন খন্দক যুদ্ধে নাজেহাল ও বানু কুরাইজার গণহত্যার নায়ক! তিনি ছিলেন মাত্র মাস তিনেক আগে কুরাইশদের সঙ্গে অবমাননাকর "হুদাইবিয়া সন্ধি চুক্তি" স্বাক্ষর শেষে ফিরে আসা এক পরাজিত সৈনিক। এমত পরিস্থিতিতে সাফিয়ার স্বপ্ন দর্শনের সেই "চাঁদ"-কে তাঁর স্বামী "হিজাযের রাজা মুহাম্মদ" রূপে ব্যাখ্যা করেছিলেন, মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের এই উদ্ভট বর্ণনা আরব্য উপন্যাসের যাবতীয় উদ্ভট বর্ণনাকেও হার মানায়।
ইমাম বুখারীর বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে খায়বার বিজয় শেষে মদিনা প্রত্যাবর্তন কালে "সাফিয়া তার রজ:স্রাবের মাধ্যমে শুদ্ধ হন; অতঃপর আল্লাহর নবী তাকে বিবাহ করেন।" অন্যদিকে মুহাম্মদ তাঁর আল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে কুরানে ঘোষণা দিয়েছেন:

২:২২৮ - 'আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়।

২:২৩৪ - 'আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই।

সাফিয়া-কে বিবাহ করার সময় মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ "তাঁর আল্লাহর" এই বিধানটি স্পষ্টতই ভঙ্গ করেছিলেন। তিনি সাফিয়া-কে বিবাহ করার পূর্বে তাঁর "তিন হায়েয বা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত" অপেক্ষা করেননি।
'আল্লাহর নবী খায়বার অবস্থানকালে কিংবা পথিমধ্যে যখন সাফিয়া-কে বিবাহ করে ও আনাস বিন মালিক এর মাতা উম্মে সুলালিম বিনতে মিলহান তার চুলে চিরুনি দান করে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তাকে আল্লাহর নবীর জন্য উপযুক্ত করে; আল্লাহর নবী তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর তাঁবুতে রাত্রি যাপন করেন। আবু আইয়ুব, বানু আল-নাজির গোত্রের খালিদ বিন যায়েদ নামের এক ভাই তার কোমরে তরবারি সমেত সারা রাত ধরে তাঁবুটি প্রদক্ষিণ করে আল্লাহর নবীকে প্রহরা দেয়, যতক্ষণে না সকাল হয়; আল্লাহর নবী তাকে সেখানে দেখতে পায় ও তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে চায়, সে কী উদ্দেশ্যে এই কাজটি করেছে। সে জবাবে বলে, "এই মহিলাটি আপনার সঙ্গে থাকায় আমি ছিলাম আশংকাগ্রস্ত, এই কারণে যে আপনি তার পিতা, তার স্বামী ও তার লোকজনদের হত্যা করেছেন ও অতি সাম্প্রতিক কালেও সে ছিলো অবিশ্বাসী, তাই তার ব্যাপারে আমি আপনার জন্য ছিলাম শঙ্কিত।"
আল্লাহর নবী বলেন, "হে আল্লাহ, আবু আইয়ুব-কে নিরাপদে রাখো, যেমন ভাবে সে রাত্রি যাপন করে আমাকে নিরাপদে রেখেছিলো।

সাফিয়া বিনতে হুয়েই বিন আখতাব নামের এই হতভাগ্য তরুণীটির পিতা, স্বামী, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করার অল্প সময় পর মুহাম্মদ এই তরুণীটিকে তাঁর তাঁবুতে নিয়ে আসেন ও বিবাহ বাসর উদযাপন করেন। ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো - মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর এই কর্মটি এত বেশি নৃশংস, হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ছিল যে, আবু আইয়ুব আল-আনসারী নামের মুহাম্মদের এক বিশিষ্ট অনুসারী ৫৮ বছর বয়স্ক মুহাম্মদের জীবন আশংকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এই ভেবে যে, সপ্তদশী সাফিয়া প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মুহাম্মদকে হত্যা করতে পারে। এই ভাবনায় আবু আইয়ুব এত বেশি উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, তিনি উন্মুক্ত তলোয়ার হাতে মুহাম্মদকে রক্ষার চেষ্টায় তাঁর তাঁবুর চারপাশে সারা রাত জেগে প্রহরায় নিযুক্ত ছিলেন।
পরিশেষে আমার পর্যালোচনায় দিনের আলোর মত পরিস্কার:- বাবা, স্বামীসহ পরিবারের নিকট আত্বীয়স্বজনদের মৃত্যু পরবর্তী একজন কিশোরীর পক্ষে যুদ্ধ জয়ী এক সেনাপতির দ্বিতীয় প্রস্তাব "মুহাম্মদের বশ্যতা স্বীকার ও তাঁর ধর্মে দীক্ষা লাভ করে মুহাম্মদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাসত্বমুক্ত হয়ে মুহাম্মদের বহু পত্নীদের একজন হয়ে তাঁর সমস্ত জীবন কাটিয়ে দেওয়া।" গ্রহণ করে নিজ স্বপ্নভ্রমের কলঙ্ক নিয়ে নিকট আত্বীয়দের রক্তে যার হাত লাল তার সাথে মরুভুমির বুকে সসস্ত্র প্রহরী বেষ্টিত তাবুতে অন্ধকার রাতে ফুলশয্যা করা ছাড়া আর কি বা করার ছিল।
প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। যা মোটেও ঠিক না। প্রতিটি মুসলিমের ইসলামের সঠিক এবং নির্ভুল ইতিহাস জানা উচিত।
========================
তথ্যসুত্র : (১) “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৭৪-৬৭৫; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; পৃষ্ঠা ৩৩২।
(২) “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, পৃষ্ঠা ৫১৫।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.