নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফিকহী প্রবন্ধ ও ফতোয়া সিরিজ

আসুন আমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলি।

মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী

মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী, মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া দারুসসুন্নাহ ইসলামপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।

মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রচলিত পশুবর্গার শরয়ী বিধান

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০১

প্রচলিত পশুবর্গার শরয়ী বিধান
লেখক
মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী
মুতাখাসসিস ফিল ফিক্বহি ওয়াল হাদিস
দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী
মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া দারুসসুন্নাহ ইসলামপুর,
ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।

الحمد لله رب العالمين، نحمد تعالى ونستعين به ونستهديه، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا، ومن سيئات أعمالنا. من يهده الله فلا مضل له، ومن يضلل فلا هادي له، ونشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأن محمدا عبده ورسوله وحبيبه، أرسله هدى للعالمين ورحمة وسراجا منيرا لكل من أحب أن يسلك الطريق المستقيم، صلوات الله وسلامه تترى عليه إلى يوم الدين.أما بعد،

পশু পালনের প্রয়োজনীয়তা
আদিকাল থেকেই মানুষ তার প্রয়োজনীয় জীবিকা নির্বাহ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মপন্থা চালিয়ে আসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি করন ও জমিতে ফসল ফলান, পশুপালন, কাপড় তৈরী ও বিভিন্ন রকমের হস্তশিল্প ইত্যাদি মানুষ তার প্রয়োজন মিটানোর জন্যেই করে। এসব কাজ কর্মের মাধ্যমেই মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা পূরণ করে, জীবিকা নির্বাহ করে এবং সুখী হওয়ার চেষ্টা করে। এসব কাজের কোন একটির অবলম্বন ব্যতীত মানুষের জীবন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কেননা কোন মানুষই স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়। এমন কোন ব্যক্তি নেই যার কাছে তার জীবন ধারনের সকল উপকরন বিদ্ধমান। পরনির্ভরশীলতা ও পরমুখাপেক্ষীতার এই উৎস থেকেই নানান কর্মশালা ও কর্ম পদ্ধতির সৃষ্টি হয়। জীবন ধারন ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন কল্পে মানুষ যেসব পেশা বা কায়-কারবার করে থাকে তার বিশেষ একটি হলো পশুপালন। মানব ইতিহাসের শুরুলগ্ন থেকেই এই কাজের প্রচলন ঘটে। পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ২৭ নং আয়াত-
إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآَخَرِ.
‘‘যখন তারা উভয়ে তাদের কুরবানী পেশ করে” এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুফাস্সিরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন যে, আদম (আ.) এর সন্তান হাবীল পশুপালন করতেন। তাই তিনি একটি ভালমানের ভেড়া কুরবানী করেন।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর-২/৪৩)
রাসূল (সা.) বলেছেন সকল নবীগণই ছাগল চড়িয়েছেন। (বুখারী শরীফ-১/৩০১)
এমনকি হযরত মূসা (আ.) এর ছাগল চড়ানোর কথা পবিত্র কুরআনেই বর্ণিত আছে। (সুরা ত্বহা: আয়াত: ১৮)
অতএব পশুপালন ব্যাপক লাভজনক একটি সম্মানী পেশা হওয়ার সাথে সাথে সকল নবীগণের সুন্নতও বটে। তাই অন্য আর দশটি পেশার চেয়ে এর গুরুত্ব তুলনামুলক অনেক বেশী। তাই যুগে যুগে মানুষ এ কাজটি খুবই আগ্রহের সাথে করে আসছে। এবং পশু পলনের এ পদ্ধতিকে মানুষ আরো উন্নয়নশীল ও ব্যাপক করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছে। কখনো ব্যক্তিগত ভাবে, কখনো যৌথভাবে। কেননা সকল মানুষই ঐরূপ সামর্থবান হয়না যে, নিজেই অর্থ ও মূলধনের যোগান দেবে এবং তার সাথে বুদ্ধি, বিবেক, শ্রম ও সময় দিয়ে পশুর লালন পালনও করবে। ফলে মানুষ যৌথভাবে পশু পালন করতে আগ্রহী হয়। এবং বিভিন্ন ধরনের পশু পালনের যৌথ পন্থা উদ্ভাবন করে ও চালু করে।
যৌথচুক্তির ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের মূলনীতি
ইসলামী শরীয়ত এখানেও তার ব্যাপকতা ও পরিপূর্ণতার পরিচয় দিয়েছে এবং যৌথভাবে পশু পলন সম্পর্কে কিছু নীতি নির্ধারণ করেছে। ইসলাম কখনো মানুষের জাগতিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে নয়। বরং অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন কল্পে নানামুখী কর্ম পন্থা অবলম্বন করে আল্লাহর দেয়া জমিন থেকে মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন ও চাহিদার যোগান দিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করার কথাই ইসলামে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা জুমআর ৯ নং আয়াতে এরশাদ হচ্ছে।
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُون-
অর্থ: সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও।
হাদিস শরীফে রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন-
طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة. (رواه البيهقى فى شعب الإيمان۶/۴۲۰ دارالكتب العلمية , لبنان- مشكوة)
অর্থ: অন্যান্য ফরযের সঙ্গে হালাল কামাইয়ের ব্যবস্থা গ্রহণও একটি ফরজ। (বায়হাকী শুআবুল ঈমান -৬/৪২০,মিশকাত )
অন্য এক হাদিসে আছে-
عن رافع بن خديج قال قيل يا رسول الله اى الكسب اطيب؟ قال عمل الرجل بيده وکل بيع مبرور. (رواه أحمد ـ ۲۸ /۵۰۲, حديث نمبر مشكوة: ۱۷۲۶۵ مؤسسة الرسالة.)
অর্থ: হযরত রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) বলেন, একদা জিজ্ঞাসা করা হল ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন প্রকার উপার্জন উত্তম? রাসূল (সা.) বললেন, হাতের কাজ এবং হালাল ব্যবসার উপার্জন।
(মুসনাদে আহমদ ২৮/৫০২ হাদিস নং ১৭২৬৫)
বুখারী শরীফে এক বর্ণনায় আছে-
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَتْ عُكَاظٌ وَمَجَنَّةُ وَذُو الْمَجَازِ أَسْوَاقًا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَلَمَّا كَانَ الْإِسْلَامُ فَكَأَنَّهُمْ تَأَثَّمُوا فِيهِ فَنَزَلَتْ { لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَبِّكُمْ }فِي مَوَاسِمِ الْحَجِّ قَرَأَهَا ابْنُ عَبَّاسٍ.( صحيح البخارى ۱/۲۷۵ كتاب البيوع.)
অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, উকায, মাজিন্নাহ ও যুলমাজায নামে কয়েকটি বাজার ছিল (মক্কায়) জাহেলী যুগে, অতঃপর যখন ইসলাম আগমন করল তখন মানুষ হজ্জের মৌসুমে সেখানে ব্যবসা করাকে গোনাহ মনে করতে শুরু করল। তাই পবিত্র কুরআনে এই আয়াত অবতীর্ণ হয় :
“তোমাদের প্রভূর অনুগ্রহ তালাশ করার ক্ষেত্রে (ব্যবসা করে লাভ করায় ) কোন গোনাহ নেই”। (বুখারী শরীফ ১/২৭৫ ব্যবসা অধ্যায়)
অতএব যে ব্যবসা বা কর্ম পদ্ধতি মানুষের জন্য মঙ্গলজনক এবং ক্ষতিমুক্ত তা কখনো ইসলামী শরীয়ত নিষেধ করে না। তবে মানুষ তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও স্বল্পতা এবং অপরিনামদর্শিতা হওয়ার কারণে সমাজে এমন সব কর্মপদ্ধতিও চালু করে দেয় যা তাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেমন : দুপক্ষের মধ্যে এমন সব চুক্তি সম্পাদন করা যাতে থাকে অস্বচ্ছতা, অস্পষ্টতা বা কোন এক পক্ষের পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি। বিভিন্ন কারণেই মানুষ এসব চুক্তি করে থাকে, কেউবা করে অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে, আবার কেউ করে অধিক লোভের বশবর্তী হয়ে। ফলে সমাজে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরণের বিভেদ, বিশৃংখলা ঝগড়া-ফাসাদ ইত্যাদি। মানুষ থেকে দূর হয়ে যায় নীতি-নৈতিকতা, ভ্রতৃত্ত্ববোধ ও পারস্পরিক সহমর্মিতা। যার কারণে দুনিয়াটাই একটি জাহান্নামে পরিণত হয় এবং শান্তিকামী মানুষগুলো আর কখনো তাদের সেই সোনার হরিণকে খুজে পায়না। তাই ইসলামী শরীয়তে এসব ক্ষেত্রে এমনসব চুক্তি সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে যা হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, কোনরূপ অস্পষ্টতা মুক্ত এবং সব পক্ষের সমান পক্ষপাতিত্বকারী।
হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমাম আল্লামা বুরহানুদ্দীন মারগিনানী রহ. (মৃত ৫৯৩হিজরী) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ ফিকাহ গ্রন্থ হিদায়ার ইজারা অধ্যায়ে উল্লেখ করেন -
( وَلَا تَصِحُّ حَتَّى تَكُونَ الْمَنَافِعُ مَعْلُومَةً وَالْأُجْرَةُ مَعْلُومَةً ) لِمَا رَوَيْنَا ؛ وَلِأَنَّ الْجَهَالَةَ فِي الْمَعْقُودِ عَلَيْهِ وَفِي بَدَلِهِ تُفْضِي إلَى الْمُنَازَعَةِ كَجَهَالَةِ الثَّمَنِ وَالْمُثَمَّنِ فِي الْبَيْعِ .
(هداية ۳/۲۹۳ كتاب الاجارۃ-)
অর্থ: কাজ ও বেতন উল্লখ করা ব্যতীত ইজারা চুক্তি সহিহ হবে না। পূর্বে বর্ণিত হাদিসের কারণে এবং এজন্য যে, কাজ ও বেতন অস্পষ্ট থাকলে তা উভয় পক্ষকে বিবাদের দিকে ঠেলে দিবে। যেমন ব্যবসার,ক্ষেত্রে পণ্য ও মূল্যের অস্পষ্টতা। এ বিষয়ে ইমাম মুহাম্মদ রহ. (মৃত্যু ১৮৯ হিজরী) কর্তৃক সংকলিত সহিহ হাদিস গ্রন্থ “কিতাবুল আছার” এর একটি বর্ণনা প্রনিধানযোগ্য-
وَرَوَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَسَنِ فِي " كِتَابِ الْآثَارِ " أَخْبَرَنَا أَبُو حَنِيفَةَ عَنْ حَمَّادِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ عَنْ إبْرَاهِيمَ النَّخَعِيّ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، وَأَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : { مَنْ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَلْيُعْلِمْهُ أَجْرَهُ } انْتَهَى . (نصب الراية ۴/۳۱۵)
অর্থ : ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বর্ণনা করেন হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান থেকে, তিনি ইব্রাহিম নাখয়ী থেকে, তিনি আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে, তারা উভয়ে নবী করীম (সা.) থেকে, তিনি বলেন- যে ব্যক্তি কাউকে কোন কাজের জন্য (ইজারা চুক্তিতে) রাখবে সে যেন তার বেতন স্পষ্ট ভাবে বলে দেয়।
(নছবুর রায়াহ ৪/৩১৫, কিতাবুল আছার)
হাদিসটি শব্দের অল্প ব্যবধানে আরো উল্লেখ আছে-
১. মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক: ৮/১৩২
২. মুছনাদে আহমদ: ১৮/১১৬ হাদিস নং ১১৫৬৫
৩. নাসায়ী শরীফ : ২/১৩২
৪. মারাছীলে আবী দাউদ: ১০
৫. সুনানে কুবরা লিন নাসায়ী: ৩/১১০ ইত্যাদি গ্রন্থে।
তবে কোন কোন ক্ষেত্রে চুক্তির অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা যদি এমন সামান্য হয় যা মানব সমাজের অধিকাংশ লোকই মেনে নেয় এবং এর দ্বারা ভবিষ্যতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনাও না থাকে, তাহলে শরীয়ত এক্ষেত্রেও কিছুটা শিথিলতা করেছে এবং ব্যাপক স্বার্থের খাতিরে তার অনুমোদন দিয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হলে একজন মুসলমানকে অবশ্যই ইসলামের আইন বিশেষজ্ঞ কোন বিজ্ঞ মুফতি সাহেবের শরণাপন্ন হতে হবে।
এসম্পর্কে ইমাম শামসুদ্দীন সরখসী রহ. (মৃত: ৪৯০ হিজরী) কর্তৃক প্রণীত “কিতাবুল মাবসূত’’ এর একটি মাসআলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন-
فَإِنْ كَانَ اشْتَرَطَ عَلَيْهِ حِينَ دَفَعَ الْغَنَمَ إلَيْهِ أَنْ يُوَلِّدَهَا وَيَرْعَى أَوْلَادَهَا مَعَهَا فَهُوَ فَاسِدٌ فِي الْقِيَاسِ ؛ لِأَنَّ الْمَعْقُودَ عَلَيْهِ هُوَ الْعَمَلُ فَلَا بُدَّ مِنْ إعْلَامِهِ ، وَإِعْلَامُهُ بِبَيَانِ مَحِلِّهِ وَهُنَا مَحَلُّ الْعَمَلِ مَجْهُولٌ ؛ لِأَنَّهُ لَا يَدْرِي مَا تَلِدُ مِنْهَا وَكَمْ تَلِدُ وَجَهَالَةُ الْمَعْقُودِ عَلَيْهِ مُفْسِدَةٌ لِلْعَقْدِ وَلَكِنَّهُ اسْتَحْسَنَ ذَلِكَ فَأَجَازَهُ ؛ لِأَنَّهُ عَمَلُ النَّاسِ وَلِأَنَّ هَذِهِ الْجَهَالَةَ لَا تُفْضِي إلَى الْمُنَازَعَةِ بَيْنَهُمَا ، وَالْجَهَالَةُ بِعَيْنِهَا لَا تُفْسِدُ الْعَقْدَ فَكُلُّ جَهَالَةٍ لَا تُفْضِي إلَى الْمُنَازَعَةِ فَهِيَ لَا تُؤَثِّرُ فِي الْعَقْدِ وَالْإِبِلُ وَالْبَقَرُ وَالْخَيْلُ وَالْحَمِيرُ وَالْبِغَالُ فِي جَمِيعِ مَا ذَكَرْنَا كَالْغَنَمِ ، (كتاب المبسوط ۱۵/۱۶۴)
অর্থ: ছাগলের মালিক পালনকারীকে (ইজারায়) দেয়ার সময় যদি এ শর্ত করে যে, এছাগল থেকে উৎপাদিত বাচ্চাদেরকেও পালন করতে হবে তবে এ চুক্তিটি ক্বিয়াস অনুযায়ী ফসিদ হয়।
কেননা এখানে চুক্তির মূল বিষয় হলো পালনকারীর আমল। অতএব তা স্পষ্ট করা জরুরী। আর তা স্পষ্ট হবে কর্মক্ষেত্র উল্লেখ করার দ্বারা। কিন্তু এখানে তা অস্পষ্ট। কেননা একথা জানা নেই যে, এ ছাগল বাচ্চা দিবে কি না? বা দিলে কয়টি দিবে? আর চুক্তির বিষয়ে এরূপ অস্পষ্টতা চুক্তিকে ফাসিদ করে দেয়।
কিন্তু ফুকাহায়ে কেরাম এ শর্তটিকে জায়েয বলেছেন মানব সমাজে ব্যাপক প্রচলনের কারণে। কেননা এরূপ অস্পষ্টতা উভয় পক্ষকে বিবাদের দিকে ঠেলে দেয় না। আর শুধুমাত্র অস্পষ্টতাই কোন চুক্তিকে ফাসিদ করে দেয় না। বরং কেবলমাত্র ঐ অস্পষ্টতাই চুক্তিকে ফাসিদ করে যা উভয়পক্ষকে ঝগড়া-বিবাদের দিকে ঠেলে দেয়। আর উট, গরু, ঘোরা, গাধা ও খচ্চর এক্ষেত্রে ছাগলের হুকুমের ন্যায়।
(কিতাবুল মাবসূত ১৫/১৬৪)
সুতরাং ‘‘কিতাবুল মাবসূত’’ এর উক্ত বর্ণনার দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, কোন চুক্তিতে কিছুটা অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা থাকলেও যখন তা মানব সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়ে যাবে এবং এর দ্বারা সমাজে কোনরূপ ঝগড়া-বিবাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টির আশংকা থাকবে না তখন ঐরূপ চুক্তিও ব্যাপক জনস্বার্থের কারণে ইসলামী শরীয়ত অনুমোদন দিয়েছে।
চুক্তির ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের দিক নির্দেশনা ও মূলনীতির সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর এখন আমরা যৌথভাবে পশুপালনের ঐসব পদ্বতির শরয়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করব যা সমাজে বহুল প্রচলিত।


১নং পদ্ধতি
পশুর মালিক কোন ব্যক্তিকে পশুপালনের জন্য দিয়ে দেয় এবং তার একটি নির্দিৃষ্ট বিনিময়ে একটি নির্ধারিত বেতনও উল্লেখ করে। এক্ষত্রে পশু থেকে উৎপাদিত যাবতীয় সম্পদের অধিকারী পশুর মালিক হয় এবং পালনকারী শুধূু তার নির্ধারিত বেতনটুকু পায়। এ পদ্ধতিটি আমাদের সমাজে একেবারেই কম প্রচলিত । তবে উপরে বর্ণিত চুক্তির ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের মূলনীতির সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই এ্রপদ্ধতিটি ইসলামী শরীয়তে বৈধ হওয়ার ব্যাপারে কোন রূপ সন্দেহ নেই। এ সম্পর্কে ইমাম মুহাম্মদ রহ. (মৃত: ১৮৯ হি.) তাঁর লিখিত ‘‘মাবসূত’’ কিতাবে উল্লেখ করেন-
( قَالَ : رَحِمَهُ اللَّهُ وَإِذَا اسْتَأْجَرَ رَاعِيًا يَرْعَى لَهُ غَنَمًا مَعْلُومًا مُدَّةً مَعْلُومَةً فَهُوَ جَائِزٌ ؛ لِأَنَّ الْمَعْقُودَ عَلَيْهِ مَعْلُومٌ مَقْدُورُ التَّسْلِيمِ ، (كتاب البسوط لشمس الدين السرخسى المتوفى ۴۹۰هجرى : ۱۵/۱۶۰)
অর্থ: যদি কোন ব্যক্তি কাউকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাগল নির্ধারিত মেয়াদের জন্যে বেতন নির্ধারিত করে দেয় তবে তা জায়েয। কেননা এখানে কাজ ও তার বিনিময় নির্ধারিত আছে এবং তা আদায়যোগ্য।
(মাবসূত ১৫/১৬০)
এই পদ্ধতিটি জায়েয হওয়ার ব্যাপারে একটি সহিহ হাদিসও পেশ করা যায়।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا بَعَثَ اللَّهُ نَبِيًّا إِلَّا رَعَى الْغَنَمَ فَقَالَ أَصْحَابُهُ وَأَنْتَ فَقَالَ نَعَمْ كُنْتُ أَرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ لِأَهْلِ مَكَّةَ.
(بخارى شريف، ۱/۳۰۱)
অর্থ:- হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন-সকল নবীগণই ছাগল চড়িয়েছেন। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনিও কি চড়িয়েছেন? তখন রাসূল (সা.) বললেন- হ্যাঁ! আমি নির্দিষ্ট কিছু কীরাতের (টাকার) বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চড়িয়েছি।
(বুখারী শরীফ: ১/৩০১)
অতএব যৌথভাবে পশুপালনের এ পদ্ধতিটি সবচে’ উত্তম। এপদ্ধতিতে যদি কেউ পশুপালন করে তবে মালিকের জন্যে এসব পশু যেকোন বৈধ কাজে ব্যবহার করা জায়েজ এবং পালনকারী যদি মালিক থেকে কোন পশু ক্রয় করে বা তার বেতনের বিনিময়ে নেয় তাতেও কোন সমস্যা নেই।
দ্বিতীয় পদ্ধতি
পশুর মালিক পালনকারীকে দেয়ার সময় পশুর একটি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। পরবর্তীতে যখন তাদের চুক্তি শেষ হবে তখনকার বাজারমূল্য অনুযায়ী যা লাভ হবে সেই লভ্যাংশ উভয়ে আধাআধি হারে বন্টন করে নিবে। অথবা কোন মাদী ছাগল এভাবে দেয় যে, তা থেকে যা বাচ্চা হবে তা অর্ধেক করে বন্টন হবে। দু’টি বাচ্চা হলে একটি করে, আর ১টি হলে অর্ধেক করে বন্টন হবে। এই পদ্ধতিটি সমাজে অধিক হারে চালু আছে। তবে ইসলামী শরীয়তের মূলনীতির সাথে এখানে কিছু অমিল রয়েছে। যথা:-
১। পশুপালনকারীর কোন নির্ধারিত বেতন না থাকা। যার ফলে চুক্তিটি কেবলমাত্র এক পক্ষের পক্ষপাতিত্ত্ব করে। কেননা এমনও হতে পারে যে, পশুর মালিক তাকে দিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত কাজ করিয়ে নিল, তারপর পশুটি মারা গেল বা তার কোন বাচ্চা হলোনা বা তাতে কোন লাভ হলোনা। ফলে এই চুক্তি অনুযায়ী পালনকারীর সমস্ত শ্রমই পণ্ড হয়ে যায় এবং তাকে খালি হাতে ফিরতে হয়।
২। অনেক ক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদও নির্ধারিত থাকেনা বা বলা থাকে যে, বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত। পরবর্তীতে ভাল জাতের পশু না হলে বাচ্চা হতে বিলম্ব হয় এবং তাকে বেশী শ্রমে কম উপার্জন করতে হয়। ফলে এসব নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বা বিতর্কের সৃষ্টি হয় ইত্যাদি।
উল্লেখিত পদ্ধতিতে এধরনের বিভিন্ন অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা থাকার কারণে ফিক্বহে হানাফীর প্রায় সব কিতাবেই এটাকে না জায়েয বলা হয়েছে। যেমন ইমাম শামসুদ্দীন সরখছী রহ. (মৃত: ৪৯০ হিজরী) তাঁর লিখিত কিতাবুল মাবসূতে ১৫/১৬২ লিখেন-
وَلَوْ دَفَعَ إلَيْهِ غَنَمَهُ يَرْعَاهَا عَلَى أَنَّ أَجْرَهُ أَلْبَانُهَا وَأَصْوَافُهَا فَهُوَ فَاسِدٌ ؛ لِأَنَّهُ مَجْهُولٌ وَإِعْلَامُ الْأَجْرِ لَا بُدَّ مِنْهُ لِصِحَّةِ الْإِجَارَةِ ،
অর্থ: যদি কেউ তার ছাগলের পাল অন্য কাউকে চড়ানোর জন্য এই শর্তে দেয় যে, তার বিনিময় হবে ঐ পশুর দুধ ও পশম। তবে এই চুক্তিটি ফাসিদ। কেননা এতে বিনিময়ের পরিমাণ জানা নেই। আর এরূপ ইজারা চুক্তিতে পালনকারীর বেতন স্পষ্ট করে নির্ধারণ করা জরুরী।
হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট ইমাম আল্লামা বুরহানুদ্দীন মারগিনানী রহ. (মৃত: ৫৯৩ হিজরী) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব হিদায়া এর ৪নং খণ্ডের ৪২৫ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন- بِخِلَافِ دَفْعِ الْغَنَمِ وَالدَّجَاجِ وَدُودَ الْقَزِّ مُعَامَلَةً بِنِصْفِ الزَّوَائِدِ لِأَنَّهُ لَا أَثَرَ هُنَاكَ لِلْعَمَلِ فِي تَحْصِيلِهَا فَلَمْ تَتَحَقَّقْ شَرِكَةٌ .
অর্থ: লভ্যাংশকে আধাআধি হারে বণ্টন করার ভিত্তিতে ছাগল, মুরগী ও রেশমী পোকা বর্গা দেয়া জায়েয নেই। এসম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে-
 ফাতওয়ায়ে ক্বাযীখান আলমগীরীসহ ২/৩৩০
 ফাতওয়ায়ে আলমগীরি ৪/৪৪৬
 ফাতওয়ায়ে শামী ৪/৩২৭
 ক্বিফায়াতুল মুফতী ৭/৩৩৭
 ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৬/৫৯৫
যুগে যুগে বিজ্ঞ মুফতিয়ানে কেরাম এ বিষয়টিকে নাজায়েয বলে ফাতওয়া দিলেও এ পদ্ধতিটি ক্রমেই ব্যাপক হতে থাকে। এর প্রচলন আরো অনেক বেড়ে যায়। ফলে বাদশাহ আলমগীর (মৃত: ১১১৮ হিজরী) এর যমানায় তারই ছত্র ছায়াই তৎকালীন ভারত বর্ষের প্রায় শতাধিক বিজ্ঞ ফক্বিহ ও মুফতি সাহেবগণের সমবেত প্রচেষ্টায় যে ফাতওয়া আলমগীরী লেখা হয় তাতে এ পদ্ধতিটি জায়েয হওয়ার একটি বিশেষ পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। আর তা হলো -
وَالْحِيلَةُ فِي ذَلِكَ أَنْ يَبِيعَ نِصْفَ الْبَقَرَةِ مِنْ ذَلِكَ الرَّجُلِ وَنِصْفَ الدَّجَاجَةِ وَنِصْفَ بَذْرِ الْفُلَّيْقِ بِثَمَنٍ مَعْلُومٍ حَتَّى تَصِيرَ الْبَقَرَةُ وَأَجْنَاسُهَا مُشْتَرَكَةً بَيْنَهُمَا فَيَكُونُ الْحَادِثُ مِنْهَا عَلَى الشَّرِكَةِ ، كَذَا فِي الظَّهِيرِيَّةِ .
অর্থ: গরু, মুরগী ইত্যাদির বর্গা জায়েয হওয়ার একটি পদ্ধতি হলো এই যে, মালিক তার পশুর একাংশ পালনকারীর কাছে বিক্রি করে দিবে। অতএব তারা উভয়ে যেহেতু মূল অংশে শরীক তাই লভ্যাংশেও শরীক হওয়া জায়েযে হবে।
(আলমগীরি : ২/৩৩৫)
এপর্যায়ে কোন পশু পালনকারী হয়ত নগদ টাকা দিয়ে ক্রয় করে শরীক হতে চাবে না। তাই মালিক তার কাছে বাকীতে বিক্রি করতে পারে। পরবর্তীতে যখন পশু বিক্রি করবে তখন পশুর মূল টাকা সম্পূর্ণটাই মালিক পাবে। অর্ধেক তার নিজের অংশের টাকা আর অর্ধেক বাকীতে বিক্রি করার টাকা। আর লভ্যাংশে উভয়েই তাদের চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীক হবে।
এভাবে চুক্তি করে পশু পালন করার দ্বারা তা জায়েয হয়। কেননা এখানে পালনকারী শুধুূ পালনকারীই নয় বরং মূল পশুর একাংশে মালিক হওয়ার ভিত্তিতে সে তাঁর লাভ-লোকসানের ঝুকিও বহন করে। ফলে পূর্বের যেসব ক্ষতিকর ও অস্পষ্ট দিকগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা এখানে থাকে না। তাই এ পদ্ধতিতে পশু পালনের ফাতওয়া পরবর্তী অনেক মুফতিয়ানে কেরামও দিয়ে আসছেন। তৎকালীন ভারত বর্ষের মুফতিয়ে আযম আল্লাম মাহমুদ হাসান গাংগুহী (রহ.) এর সুবিশাল ফাতাওয়া গ্রন্থ ‘ফতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া’ তে উল্লেখ আছে-
البتہ نصف بکری فروخت کردیں اور قیمت معاف کردیں، تو وہ نصف کا شریک ہوجائیگا، نصف بکری اسکی ہوگی، اور دودھ ، بکری، بچے سب نصفا نصفی ہوں گے۔فقط۔
অর্থ: মালিক তার পশুর একাংশ পালনকারীর কাছে বিক্রি করে দিবে অত:পর তার মূল্য মাফ করে দিবে। সুতরাং পালনকারীও পশুর একাংশের মালিক হয়ে যাবে। অতএব দুধ, পশু ও বাচ্চা সকল কিছুতেই তারা শরীক হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৬/৫৯৫)
উল্লেখ যে, এখানে পশুর একাংশ পালনকারীর নিকট বিক্রি করার পর মালিককে তার মূল্য মাফ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীর এক এবারতেও একথাটির উল্লেখ আছে। সম্ভবত পালনকারী নগদ টাকা দিয়ে ক্রয় করতে রাজি হবে না এজন্যেই একথাটি লেখা হয়েছে। অন্যথায় পদ্ধতিটি জায়েয হওয়ার জন্যে এটি কোন মূখ্য শর্ত নয়। কেননা আলমগীরীর অন্য এক এবারতে একথাটির উল্লেখ নেই। যা পূর্বে এ প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া কোন মালিকও এভাবে তার পশুর একাংশ বিক্রি করে মূল্য মাফ করতে রাজি হবে না। তাই পূর্বে আমরা বাকিতে বিক্রি করার কথা বলের্ছি। কেননা এখানে মূখ্য বিষয় হলো উভয়ে মূল পশুতে শরীক হওয়া। যেন তারা তাদের মালিকানার ভিত্তিতেই লভ্যাংশের মালিক হতে পারে। আর তা বাকীতে ক্রয়-বিক্রিয়ের মাধ্যমেও সম্ভব। এবিষয়ে আরও ফাতাওয়া দেখুন- আশরাফুল ফাতাওয়া ৩/২১৬।
এভাবে বিশেষ পদ্ধতিতে যৌথভাবে পশু পালনের ফাতওয়া মুফতিয়ানে কেরাম বিভিন্ন যুগে দিয়ে আসলেও সর্ব সাধারণের মোড় ঘুরেনি। বরং পূর্বের পদ্ধতিটিই মানুষ ব্যাপকভাবে করতে তাকে। এখানে কিছু অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা থাকলেও মানব সমাজ এটাকে এমনভাবে গ্রহণ করেে নিয়েছে যে, তার ক্ষতিকর দিকগুলো আর অস্তিত্ত্বে আসেনা । বরং এটাই সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। তাই শতাব্দির শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ হাকীমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রহ. মৃত: ........ বিষয়টি সম্পর্কে আরো গবেষণা করলেন এবং এ বিষয়ে কেউ তাকে প্রশ্ন করলে তিনি যে মতামত ব্যক্ত করলেন তা ‘‘এমদাদুল ফাতাওয়ার’’ ৩নং খণ্ডের ৩৪৩ নং পৃষ্ঠায় এভাবে উল্লেখ আছে-
الجواب؛۔کتب الی بعض الاصحاب من فتاوی بن تيمية کتاب الاختيارات ما نصه ؛ وَلَوْ دَفَعَ دَابَّتَهُ أَوْ نَخْلَه إلَى مَنْ يَقُومُ بِهِ وَلَهُ جُزْءٌ مِنْ نمَائه صَحَّ ، وَهُوَ رِوَايَةٌ عَنْ أَحْمَدَ
پس حنفیہ کے قواعد پر تو یہ عقد ناجائز ہے۔کما نقل فی السوال عن العالمغيرية۔لیکن بنا بر نقل بعض اصحاب امام احمد ؒ کے نزدیک اس میں جواز کی گنجائش ہے ، پس تحرز احوط ہے۔اور جہاں ابتلاءشدید ہو توسع کیاجاسکتاہے۔(امداد الفتاوی ج۳ ،صفحہ ۳۴۳،زکریا)
মর্মানুবাদ: লভ্যাংশ আধাআধি হারে বণ্টন করার ভিত্তিতে পশু বর্গা দেয়া হানাফী মাযহাবে নাজায়েয হলেও ইমাম আহমদ রহ. (মৃত: ২৪১ হিজরী) এর এক বর্ণনা মতে তা জায়েয। যার উপর শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ও ফাতওয়া দিয়েছেন। হানাফীদের জন্যে এ পদ্ধতি অবলম্বন না করাটাই উত্তম। তবে যেখানে ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে সেখানে এভাবে মুআমালা করারও সুযোগ রয়েছে।
হাম্বলী মাযহাবের এই ফাতওয়াটি আল্লামা ইবনে কুদামা হাম্বলী রহ. (মৃত: ৬৩০ হিজরী) তার সুপ্রসিদ্ধ ফিক্বহ গ্রন্থ ‘‘আল মুগনীর’’ ৬ নং খণ্ডের ১৩নং পৃষ্ঠায় এভাবে উল্লেখ করেন-
فَإِنْ قِيلَ : فَقَدْ جَوَّزْتُمْ دَفْعَ الدَّابَّةِ إلَى مَنْ يَعْمَلُ عَلَيْهَا بِنِصْفِ رِبْحِهَا .قُلْنَا : إنَّمَا جَازَ ثَمَّ تَشْبِيهًا بِالْمُضَارَبَةِ ؛ لِأَنَّهَا عَيْنٌ تُنَمَّى بِالْعَمَلِ ، فَجَازَ اشْتِرَاطُ جُزْءٍ مِنْ النَّمَاءِ ،
মর্মানুবাদ: অর্ধেক লভ্যাংশের ভিত্তিতে পশু বর্গা দেয়া জায়েয যৌথ ব্যবসার (মুদারাবা) ন্যায়। কেননা পশু এমন একটি সম্পদ যাতে কাজ করার দ্বারা তা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং তার লভ্যাংশের চুক্তি করা বৈধ।
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃত: ৭২৮ হিজরী) কর্তৃক প্রণীত ‘‘আল ফাতাওয়াল কুবরা’’ এর ৪র্থ খণ্ডের ৩৭২নং পৃষ্ঠাতে উল্লেখ আছে-
وَلَوْ دَفَعَ دَابَّتَهُ أَوْ نَخْلَه إلَى مَنْ يَقُومُ بِهِ وَلَهُ جُزْءٌ مِنْ نمَائه صَحَّ ، وَهُوَ رِوَايَةٌ عَنْ أَحْمَدَ
অর্থ : কোন পশু বা খেজুর গাছ তার উৎপাদিত ফসল এর একাংশের চুক্তিতে কাউকে পরিচর্যা বা পালতে দেয়া জায়েয এবং তা ইমাম আহমদ রহ. এর এক বর্ণনা।
সুতরাং হযরত থানভী (রহ.) এর মতানুযায়ী ব্যাপক প্রচলন ও প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হাম্বলী মাযহাবের এই ফাতাওয়া অনুযায়ীও আমল করা যেতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে আমি উস্তাদে মুহতারাম ফক্বিহুয যামান আল্লামা মুফতি নূর আহমদ (দা.বা.) ও উস্তাদে মুহতারাম মুফতিয়ে আযম, আল্লামা মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী (দা. বা.) এর সাথে আলোচনা করেছি। তারা উভয়েই হযরত থানবী রহ. এর এ মতের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন। এ ছাড়া ‘হেদায়া’ ৪র্থ খণ্ডের ছবক পড়ার সময় আমাদের উস্তাদ মুফতি কেফায়াতুল্লাহ সাহেব (দা. বা.)ও হযরত থানবী রহ. এর এমতের সাথে একমত হওয়ার কথা বলেছিলেন।
তাই আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, উল্লেখিত বর্গা প্রথা থেকে বেঁেচ থাকাটাই উত্তম। কেউ করতে চাইলে ‘‘আলমগীরী’’তে বর্ণিত সেই বিশেষ পদ্ধতিতে করাটা অধিক মঙ্গলজনক। তারপরেও যদি কেউ প্রচলিত এই পদ্ধতিতেই করে ফেলে তবে নাজায়েয হবে না। বরং শরীয়তে এক পর্যায়ে এরও অনুমতি রয়েছে। সুতরাং প্রচলিত এই বর্গা পদ্ধতিতে পশুপালন করে বর্গাদার ও মালিক তাদের লভ্যাংশের নিজ নিজ অংশ দিয়ে কুরবানী করলে তাও জায়েয।

৩নং পদ্ধতি
বর্গার তৃতীয় আরেকটি পদ্ধতি কোন কোন স্থানে এভাবেও চালু আছে যে, গাভীর মালিক বর্গাদারকে গাভী দেয়ার সময় এই শর্ত করে যে, গাভীর প্রথম বাচ্চাটি আমার। তারপর দ্বিতীয় বাচ্চাটি তোমার। এভাবে তারা পালাক্রমে বাচ্চা নেয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
এই চুক্তিটিতে অনেকগুলো অস্পষ্টতা ও ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন:
১. গাভীর বাচ্চা সবগুলো একই সমান হয় না। ফলে কোন এক পক্ষের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
২. দ্বিতীয় বাচ্চা কত দিন পরে হবে বা আদৌ হবে কি না? তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
৩. প্রথম বচ্চা হওয়ার পর গাভীটি মারা গেলে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মালিক বাচ্চাটি পেয়ে যাবে কিন্তু বর্গাদারের সকল শ্রম বৃথা যাবে। কেননা চুক্তি অনুযায়ী সে কিছুই পায় না। ফলে এই চুক্তিটি এক পক্ষের পক্ষপাতিত্ত্বকারী হিসেবে বিবেচিত। এসব কারণে ভবিষ্যতে উভয়পক্ষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও ফিতনা হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী।
তাই এ চুক্তিটি ইসলামি শরীয়তের মূলনীতির সাতে কোনরূপ মিলনেই। যার কারণে এ চুক্তিটি ফাসিদ বলে গণ্য হবে।
এক্ষেত্রে ঐ গাভী থেকে যা বাচ্চা ও লাভ হবে তার সবকিছু গাভীর মালিক পাবে। বর্গাদার তার কাজের বেতন অর্থাৎ সমাজে এমন ব্যক্তি ঐ কাজটি করলে কি পরিমাণ বেতন পেতে পারে সম্ভাব্য সেই বেতন পাবে। এক্ষেত্রে যদি বর্গাদার পূর্বের চুক্তি অনুযায়ী গাভীর কোন বাচ্চা নিয়ে নেয় তবে তা শরীয়ত কর্তৃক বৈধ মালিক হিসাবে গণ্য হবে না। কেননা এই বাচ্চার বৈধ মালিকানা গাভীর মালিকের। সুতরাং এই বাচ্চা দিয়ে বয়স্ক হওয়ার পর বর্গাদার কুরবানী করলে কুরবানীও হবে না।
তবে যদি গাভীর মালিক বর্গাদারকে ঐ বাচ্চাটি তার বেতনের পরিবর্তে দেয় এবং সেও তা বেতন হিসেবে গ্রহন করে বা বর্গাদার অন্য কোন বৈধ পন্থায় যেমন ক্রয় করা ইত্যাদির মাধ্যমে মালিক হয় তাহলে ঐ অবস্থায় যেহেতু সে ঐ বাচ্চার বৈধ সূত্রে মালিক হয়েছে তাই তা দ্বারা কুরবানী করা তার জন্যে জায়েয হবে।


রচনায়
মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী
সাং কান্তপুর, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা
সর্বোচ্চ হাদিস গবেষণা বিভাগ
দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী
মোবাঃ-০১৯২০৬৬৬৮১১
তাং- ২৩/১১/১৪৩১হি.


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৫০

মাহবুবা আক্তার বলেছেন: চমৎকার লেগেছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.