![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুফতি শফিকুল ইসলাম হামিদী, মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া দারুসসুন্নাহ ইসলামপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।
সহীহ্ হাদিসের আলোকে বিতিরের নামায
نحمده ونصلى على رسوله الكريم- اما بعد فقالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ { الْوِتْرُ حَقٌّ ، فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ لَيْسَ مِنِّي ، الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنِّي ، الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنِّي }
সর্বপ্রথম আমি নিবেদন করছি সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে দ্বীনি মাসায়িল সম্পর্কে আলোচনা করার ও তা শুনার তাওফীক দান করেছেন। সালাত ও সালাম অবতীর্ণ হোক সেই মহান সত্ত্বার উপর যার মাধ্যমে দয়াময় প্রভূ আমাদেরকে দ্বীনে ইসলামের সন্ধান দিয়েছেন। শান্তি ও মর্যাদা সেই সব ইমামগণের জন্য, যাদের অগাৎ পান্ডিত্য ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক দিশা দান করেছেন।
সম্মানিত মুসলিম ভাইগণ! ইসলাম আজ বিংশ শতাব্দিতে উদ্ভূত কোন নতুন বিষয় নয়। ইসলামের ছোট থেকে ছোট কোন আমলও এ আধুনিক বিশ্বের কারো আবিস্কার নয়। ইসলাম যেমন দেড় হাজার বছর ধরে চলে আসা একটি ধর্ম, তেমনি তার প্রতিটি আমলও এ দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা উম্মতের কর্মপদ্ধতি । এর প্রতিটি আমলের গোড়াপত্তন করেন রাসূল (সা.) এবং তা কথা ও কাজে বাস্তবায়ন করেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। যেহেতু ইসলামের প্রত্যেকটি আমল প্রথম থেকেই পূর্ণরূপে বিধিত হয়নি বরং রাসূল (সা.) এর তেইশ বছরের নবুওয়াতী যিন্দিগীতে পর্যায়ক্রমে আমলগুলো পূর্ণতা লাভ করে। যেমন, নামাযে প্রথম দিকে হাটা-চলা, সালাম-কালাম ইত্যাদি বৈধ ছিল, পরবর্তীতে আস্তে আস্তে তা রহিত হয়ে বর্তমানের এ নামাযের পদ্ধতিতে তা পূর্ণতা লাভ করে। তাই ইসলামের অনেক আমলের ক্ষেত্রেই সহীহ্ হাদিসের কিতাবসমূহে একাধিক পদ্ধতি রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাহাবী রাসূল (সা.) থেকে গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে উম্মতের করণীয় হলো রাসূল (সা.) এর সর্বশেষ কর্মপদ্ধতি কি ছিল তা জেনে সে অনুযায়ী আমল করা। আর পূর্ববর্তী বর্ণনাগুলোকে মানসূখ বা রহিত মনে করে তা বর্জণ করা। যদিও তা সহীহ্ সনদে হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়। এমন কি তা বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফের মত সহীহ্ হাদিস গ্রন্থে থাকলেও তা পরিত্যাজ্য। এসব পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক হাদিসসমূহের মধ্যে কোনটি আমলযোগ্য আর কোনটি পরিত্যাজ্য তা ইমামগণ নিজ নিজ তাকওয়া ও খোদাভীতি, অগাধ পান্ডিত্য ও যোগ্যতা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেহনতের মাধ্যমে ইজতিহাদ করে উম্মতকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তাই অদ্যাবধি ইসলামী বিশ্বের প্রায় সকল মুসলমান চার ইমামের প্রদশির্ত কুরআন-হাদিসের সঠিক দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করে আসছে। ইমামগণের ইজতিহাদের ক্ষেত্রে যেহেতু মতপার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। তাই আলাদা আলাদা মাযহাবের উৎপত্তি হয়েছে। তবে চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই হক্ব, এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর মাযহাবসমূহে পারস্পরিক মতবিরোধ থাকলেও তাদের কেউ কাউকে বাতিল, কাফের মুশরিক ইত্যাদি গালি-গালাজ করেননি। বরং চার মাযহাবের ইমামগণের মধ্যেই পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ভ্রাতৃত্ববোধ পূর্ণ মাত্রায় জাগ্রত ছিল।
কিন্তু অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, অধুনা বিশ্বের কতিপয় নামধারী আলেম, যারা মূলত: কোন ইমামকেই মানে না, প্রকৃত অর্থে যাদেরকে গায়রে মুকাল্লিদ বলা হয়। নিজেদেরকে আহলে হাদিস তথা হাদিস অনুসরণকারী নাম দিয়ে, কতিপয় অগ্রহণযোগ্য বা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ হাদিসের আশ্রয় নিয়ে, হাজার বছরের অধিক কাল ধরে চলে আসা চার মাযহাবের বিভিন্ন আমলকে তারা ভুল ও ভ্রান্ত আখ্যা দিয়ে মুসলিম সমাজে এক নতুন ফিতনার সৃষ্টি করছে। আর যেহেতু গোটা বিশ্বে হানাফী মাযহাবের অনুসরণকারীই সবচেয়ে বেশি তাই তাদের সকল ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যই হলো হানাফী মাযহাব।
তাই তারা হানাফী মাযহাবের বিভিন্ন আমল যা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, কতিপয় বিরোধপূর্ণ হাদিসের আশ্রয় নিয়ে এসব আমলকে বাতিল আখ্যা দেয়। হানাফীরা বেনামাজী, তাদের বিতিরের নামায শুদ্ধ নয়, তাদের তারাবীহ ভুল, তারা কাফির, মুশরিক ইত্যাদি বলে গালি-গালাজ করতে থাকে। এসব ষড়যন্ত্রের মূলত: উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের কতিপয় আমলের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে গোটা ইসলামটাকেই সন্দেহপূর্ণ করে দেওয়া। যাতে মুসলমানদের চির শত্র“ ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের ষড়যন্ত্রই সফল হয়। এদলের উৎপত্তি কালের সঠিক ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায় যে, মূলত: ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের দালালী করার জন্যেই এদলের আবির্ভাব হয়।
সম্মানিত উপস্থিতি! হানাফী মাযহাবের যেসব আমল তথাকথিত আহলে হাদিসের ষড়যন্ত্রের স্বীকার তার উল্লেখযোগ্য একটি হলো বিতিরের নামায। হানাফীগণ বিতিরের নামাযকে ওয়াজিব মনে করে। এবং এক সালামে দুই বৈইঠকে তিন রাকাত বিতিরের নামায আদায় করে। আর এসব গায়রে মুকাল্লিদ আলেমগণ এটাকে ভুল আখ্যা দেয়। এবং তাদের দাবী হলো বিতিরের নামায সুন্নত। এবং তা এক রাকাত। তিন রাকাত পড়তে চাইলে হয়ত এক বৈঠকে তিন রাকাত পড়বে অথবা দুই সালামে তিন রাকাত পড়বে।
আজকের আলোচনায় আমরা একথা প্রমাণ করতে সচেষ্ট হব যে, হানাফী মাযহাবের বিতিরের নামায সহীহ্ শুদ্ধ আমলযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, তা ভোয়া, ভ্রান্ত বা বেদলীল নয়।
وما توفيقى إلا بالله
একথা সকলেরই জানা যে, ফরয, সুন্নতে মুত্তয়াক্কাদা, নফল প্রতিটি নামাযের কিছু ভিন্ন ভিন্ন আহ্কাম রয়েছে। ফরয ও সুন্নতে মুওয়াক্কাদার রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত। তাতে কারো পক্ষে কম বেশি করার কোন অধিকার নেই। পক্ষান্তরে নফলের কোন নির্ধারিত রাকাত সংখ্যা নেই।অন্যদিকে ফরয নামায না পড়লে ক্বাযা পড়তে হয়। কিন্তু নফলের কোন কাযা নেই। বিতিরের নামায সম্পর্কে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে এগুলো পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ। কতিপয় হাদিস দ্বারা বিতিরের এমন কিছু আহ্কাম প্রমাণিত হয় যার দ্বারা বিতিরের নামায নফল সাব্যস্ত হয়। যেমন রাকাত সংখ্যা অনির্ধারিত হওয়া, যত রাকাত ইচ্ছা পড়তে পারা, সওয়ারির উপর বসে বিতির পড়া ইত্যাদি। আর অনেক হাদিস দ্বারা বিতিরের নামাযের এমন আহ্কাম প্রমাণিত হয় যার দ্বারা বিতিরের নামায ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। যেমন- বিতিরের সংখ্যা নির্ধারিত হওয়া, তার জন্য ওয়াক্ত নির্দিষ্ট হওয়া, সময়মত পড়তে না পারলে কাযা ওয়াজিব হওয়া, শেষ রাত্রে জাগ্রত হতে না পারলে শুরু রাত্রে পড়ার হুকুম দেওয়া এবং রাসূল (সা.) তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য না ডেকে বিতিরের নামাযের জন্য ডেকে দেওয়া ইত্যাদি সকল হাদিস বিতিরের নামায ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
যেহেতু বর্ণিত হাদিসসমূহে পারস্পরিক দ্বন্ধ সৃষ্টি হয়েছে তাই এক্ষেত্রে ইমামগণের ইজতিহাদের প্রয়োজন হয়েছে। প্রত্যেক ইমাম নিজ নিজ ইজতিহাদ অনুযায়ী কোন একপক্ষের হাদিসকে অগ্রাধিকার দিয়ে সে অনুযায়ী আমল করেছেন। আর বাকী হাদিসগুলোর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তাই বিতিরের নামায সম্পর্কে হানাফী ইমামগণের বক্তব্য হলো এ নামাযটি প্রথমে নফল ছিল, তখন এর রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত ছিল না । তাই ঐ সময়ের বর্ণনাগুলোতে বিতিরের রাকাত সংখ্যা তিন, পাঁচ, সাত, নয়, এগার, তের ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে।
فَمَا فِي السُّنَنِ إلَّا التِّرْمِذِيَّ ، قَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ { الْوِتْرُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ، فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيُوتِرْ ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِثَلَاثٍ فَلْيَفْعَلْ ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةِ فَلْيُوتِرْ } وَرَوَاهُ ابْنُ حِبَّانَ وَالْحَاكِمُ وَقَالَ عَلَى شَرْطِهِمَا
এমনকি বিতির না পড়ে শূধু ইশারা করে দেয়ার কথাও বর্ণিত আছে,
وفي رواية أن رسول الله قال أوتر بخمس أو بثلاث أو بواحدة فإن لم تستطع فأوم إيماء وفي رواية عن أبي أيوب رضي الله عنه موقوفا الوتر حق أو واجب فمن شاء فليوتر بسبع ومن شاء فليوتر بخمس ومن شاء فليوتر بثلاث ومن شاء فليوتر بواحدة ومن غلب فليوم إيماء
وفي لفظ فليوم برأسه (مختصر كتاب الوتر)
আর যেহেতু নফল নামাযে প্রশস্থতা রয়েছে তাই সওয়ারির উপর বিতিরের নামায পড়ার বর্ণনা এসেছে,
أَخْرَجَ الْبُخَارِيُّ وَمُسْلِمٌ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا { أَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوتِرُ عَلَى الْبَعِيرِ }
ঐ সময় যেহেতু নামাযের ভেতরে সালাম-কালাম বৈধ ছিল তাই বিতিরের নামাযে দু’রাকাতের পর সালাম দেয়ার ও কথা বলার বর্ণনা এসেছে।
পরবর্তীতে বিতিরের নামায ওয়াজিব হয়ে যায় এবং তার রাকাত সংখ্যা তিন নির্ধারিত হয় এবং তা এক সালামে দুই বৈঠকে পড়ার বিধান করা হয় যা সহীহ্ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।আর সওয়ারির উপর বিতিরের নামায পড়ার বিধানও রহিত হয়ে যায় ।
رَوَى الطَّحَاوِيُّ عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي عَلَى رَاحِلَتِهِ وَيُوتِرُ بِالْأَرْضِ وَيَزْعُمُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ ذَلِكَ ، فَدَلَّ أَنَّ وِتْرَهُ ذَلِكَ كَانَ إمَّا حَالَةَ عَدَمِ وُجُوبِهِ أَوْ لِلْعُذْرِ .
فَعُلِمَ أَنَّ هَذَا وَمَا شَاكَلَهُ كَانَ قَبْلَ أَنْ يَسْتَقِرَّ أَمْرُ الْوِتْرِ ،
এবার আমরা বিতিরের নামায ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে কয়েকটি সহিহ্ হাদিস পেশ করব।
বিতিরের নামায ওয়াজিব
১নং হাদিস
(১)عن خارجة بن حذافة قال خرج علينا رسول الله فقال إن الله أمدكم بصلاة هي خير لكم من حمر النعم الوتر جعله الله لكم فيما بين صلاة العشاء إلى أن يطلع الفجر
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এরশাদ করেন-আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের জন্য একটি নামায বৃদ্ধি করেছেন যা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়েও উত্তম। এটি হল বিতিরের নামায। এশার পর থেকে সুবহে সাদেক উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’য়ালা এর সময় নির্ধারণ করেছেন।
হাদিসটি সুনানে আবি দাউদ, তিরমিযী, ত্বহাবী, মুস্তাদরাকে হাকেম, ত্ববরানী, সুনানে কুবরা লিল বায়হাক্বী গ্রন্থসমূহে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটি বুখারী, মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ্। ইমাম যাহাবীও অনুরূপ সহীহ বলেন। ক্বাযী আবু যায়েদ কিতাবুল আসরারে হাদিসটিকে মাশহুর বলেছেন। (উমদাতুল ক্বারী, বিতির অধ্যায়)
উক্ত মাশহুর হাদিসে বিতিরের নামাযকে ফরয নামাযের উপর বৃদ্ধি করা ও তার জন্য ওয়াক্ত নির্ধারণ করার দ্বারা বিতিরের নাময ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।
২নং হাদিস
(২)قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ { الْوِتْرُ حَقٌّ ، فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ لَيْسَ مِنِّي ، الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنِّي ، الْوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنِّي }
অর্থাৎ- রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, বিতিরের নামায অবশ্য পালনীয়, যে বিতির পড়লনা সে আমার দলভূক্ত নয়। বিতির অবশ্য পালনীয়, যে বিতির পড়লনা সে আমার দলভূক্ত নয়। বিতির অবশ্য পালনীয়, যে বিতির পড়লনা সে আমার দলভূক্ত নয়।
হাদিসটি সুনানে আবি দাউদ এবং মুস্তাদরাকে হাকেমে বর্ণিত আছে। ইমাম হাকেম এবং যাহাবী (রহ.) হাদিসটিকে সহিহ্ বলেছেন।
উক্ত হাদিসে বিতিরের নামায ছেড়ে দেয়ার উপর রাসূল (সা.) যে হুশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করেছেন তা দ্বারাও বিতিরের নামায ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।
৩নং হাদিস
قَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْوِتْرُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ،
অর্থাৎ- রাসূল (সা.) বলেন, বিতির অবশ্য কর্তব্য, প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব।
হাদিসটি সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিত আছে এবং ইমাম ইবনে হিব্বান এটিকে সহিহ্ বলেছেন। (ফাতুহুল বারী- ২/৪০০)
৪নং হাদিস
(৪) عَنْ عَبْدِ اللهِ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : الْوِتْرُ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ.
অর্থাৎ রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত যে, বিতির প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব।
হাদিসটি মুসনাদে বাযযারে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)থেকে বর্ণিত।
উপরোক্ত হাদিস সমূহ দ্বারা খুবই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, বিতিরের নামায ওয়াজিব। পূর্বে নফল থাকলেও পরবর্তীতে তা ওয়াজিব হয়ে যায়। এটিই হানাফী মাযহাবের ফতোয়া।
এপর্যায়ে আমরা বিতিরের রাকাত সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করব।
তিন রাকাত বিতির
১নং হাদিস
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا كَيْفَ كَانَتْ صَلَاةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلَا تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلَاثًا قَالَتْ عَائِشَةُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ فَقَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلَا يَنَامُ قَلْبِي
অর্থাৎ-হযরত মা আয়েশা (রা.) কে আবূ সালমা ইবনে আব্দুর রহমান রাসূল (সা.) এর তাহাজ্জুদের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসূল (সা.) সর্বদা এগার রাকাত নামায পড়তেন। চার রাকাত চার রাকাত করে এবং শেষে তিন রাকাত বিতির পড়তেন।
হাদিসটি বুখারী, মুসলিমসহ হাদিসের প্রায় সকল গ্রন্থেই উল্লেখ আছে। হাদিসটি সহিহ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। এই হাদিসে মা আয়েশা ثم يصلي ثلاثا বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, রাসূল (সা.) তিন রাকাত বিতির পড়তেন।
২নং হাদিস
عن عائشة قالت كان رسول الله يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهن وقال إنه صحيح على شرط البخاري ومسلم ولم يخرجاه
অর্থাৎ- হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এক সালামে তিন রাকাত বিতির পড়তেন। হাদিসটি মুস্তাদরাকে হাকেমে ইমাম হাকেম বর্ণনা করে বলেন এটি বুখারী মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।
৩নং হাদিস
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِسَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى وَقُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ وَقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
অর্থাৎ- হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) سبح اسم ربک الاعلي ও قل يا ايھا الکافرون এবং قل ھو الله احد এ তিন সূরা দিয়ে বিতিরের নামায পড়তেন।
হাদিসটি সহিহ সনদে নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে। এহাদিসে তিন সূরার দ্বারা বিতিরের নামায তিন রাকাত ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।
৪নং হাদিস
عن المسور بن مخرمة قال دفنا أبا بكر ليلا فقال عمر انى لم أوتر فقام وصففنا وراءه فصلى بنا ثلاث ركعات لم يسلم الا في آخرهن
অর্থাৎ- হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামাহ বলেন, রাত্রে হযরত আবূ বকর (রা.) এর দাফন কাজ শেষ হলে হযরত উমর (রা.) বললেন, আমি এখনো বিতির পড়িনি। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমরাও তার পিছনে কাতারে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি আমাদেরকে নিয়ে এক সালামে তিন রাকাত বিতির পড়লেন। (ত্বহাবী শরীফ)
এ হাদিস থেকে একথা প্রতিয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সকলেই এক সালামে তিন রাকাত বিতির পড়তেন এবং এভাবেই তাঁরা রাসূল (সা.) থেকে বিতিরের নামায শিখেছিলেন। আর হানাফীগণও এভাবেই বিতিরের নামায আদায় করে থাকেন।
وفى البخارى قَالَ الْقَاسِمُ وَرَأَيْنَا أُنَاسًا مُنْذُ أَدْرَكْنَا يُوتِرُونَ بِثَلَاثٍ حديث৯৩৮
ইমাম বুখারীও বিশিষ্ট তাবেয়ী ও ফকীহ্ কাসিম ইবনে মুহাম্মদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি মদিনায় সমস্ত লোজনকে তিন রাকাত বিতির পড়তে পেয়েছি। (বুখারী শরীফ, বিতির অধ্যায়)
ইবনু আবি শায়বা তাঁর মুছান্নাফ গ্রন্থে হযরত হাসান থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন-
عن الحسن قال أجمع المسلمون عن أن الوتر ثلاث لا يسلم إلا في آخرهن .অর্থাৎ- এক সালামে তিন রাকাত বিতিরের উপর সমস্ত মুসলমানের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনি আবি শায়বাÑ বিতির অধ্যায়)
وفي ্রالمُدَونةগ্ধ من قِيام رمضان: أَنَّ آخِرَ ما صلَّى بها الوِتْر بعد التراويح ثلاثُ ركعاتٍ، وعند الطحاوي: أنَّ عمرَ بن عبد العزيز أَثْبَتَ الوِتْر بالمدينة بقولِ الفقهاءِ ثلاثًا لا يُسلِّم إلا في آخِرِهنَّ. وعنده عن أبي الزِّنَادِ عن السبعة: سعيد بن المسيَّب، وعروةَ بن الزُّبير، والقاسم بن محمد، وأبي بكر بن عبد الرحمن، وخارجةً بنِ زيد، وعبيد الله بن عبد الله، وسُلَيمان بن يَسَار، في مشيخةٍ سواهم أَهلَ فِقْهٍ وصلاحٍ وفضلٍ، وربمااختلفوا في الشيء، فأخذ بقول أَكثرِهم وأفضلِهم رأيًا، فكان مِمَّا وَعَيْت عنهم على هذه الصفة: أن الوِتْر ثلاثٌ لا يُسلَم في آخَرِهنَّ... إلخ. وفيه عبدُ الرحمن بن أبي الزِّناد، وفيه لَيِّن.
فيض الباری
وكذا قول عائشة كان يسلم بين كل ركعتين ويوتر بواحدة يعارضه ما روى ابن ماجه عن أم سلمة رضي الله تعالى عنها أنه كان يوتر بسبع أو بخمس لا يفصل بينهن بتسليم ولا كلام فيحمل على أنه كان قبل استقرار الوتر ومما يدل على ما ذهبنا إليه حديث النهي عن البتيراء أن يصلي الرجل واحدة يوتر بها أخرجه ابن عبد البر في ( التمهيد ) عن أبي سعيد أن رسول الله نهى عن البتيراء وممن قال يوتر بثلاث لا يفصل بينهن عمر وعلى وابن مسعود وحذيفة وأبي بن كعب وابن عباس وأنس وأبو أمامة
وعمر بن عبد العزيز والفقهاء السبعة وأهل الكوفة وقال الترمذي ذهب جماعة من الصحابة وغيرهم إليه وعند النسائي بسند صحيح عن ابي بن كعب كان رسول الله يوتر بسبح اسم ربك الأعلى وقل يا أيها الكافرون وقل هو الله أحد ولا يسلم إلا في آخرهن وعند الترمذي من حديث الحارث عن علي رضي الله تعالى عنه كان رسول الله يوتر بثلاث. عمدۃ القاری
وعن عبد الله ، : ্র صلاة المغرب وتر النهار ، ووتر الليل كوتر النهار গ্ধ وعن ثابت : بت عند أنس ، فقام يصلي من الليل ، وكان يسلم في كل مثنى ، فلما كان آخر صلاته أوتر بثلاث مثل المغرب ، لم يسلم بينهن وعن أنس : ্র الوتر ثلاث ركعات গ্ধ وعن أبي العالية ، ্র لليل وتر ، وللنهار وتر ، فوتر النهار صلاة المغرب ، ووتر الليل مثله গ্ধ وعن خلاس بن عمرو بمعناه وعن أبي بكر بن رستم ، سمعت الحسن ، ومحمدا ، وقتادة ، وبكر بن عبد الله المزني ، ومعاوية بن قرة ، وإياس بن معاوية ، يقولون : ্র الوتر ثلاث গ্ধ وعن أبي إسحاق : ্র كان أصحاب علي وعبد الله لا يسلمون في الوتر بين الركعتين গ্ধ وعن طاوس أنه : ্র كان يوتر بثلاث لا يقعد بينهن গ্ধ وعن عطاء ، أنه : ্র كان يوتر بثلاث ركعات لا يجلس فيهن ولا يتشهد إلا في أخراهن গ্ধ وقال حماد ، كان أيوب ، يصلي بنا في رمضان ، فكان يوتر بثلاث لا يجلس إلا في آخرهن ، وكان يقرأ في الركعة الأولى أحيانا بالشيء يبقي عليه من السورة ، ويقرأ في الآخرة بالسورة ، وأحيانا يقرأ في الأولى ب الشمس وضحاها ، وكان لا يدع أن يقرأ في الركعة الآخرة ب قل هو الله أحد ، والمعوذتين ، لا يجاوزها
(صلاة الوتر لمحمد بن نصر المروزي)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, উপরোক্ত সকল হাদিসসমূহ দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, বিতিরের নামায এক সালামে তিন রাকাত। যেভাবে হানাফীগণ আমল করে থাকেন। পূর্বে বিতিরের নামাযের আরো বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও এটিই ছিল রাসূল (সা.) এর শেষ আমল। যার কারণে হযরত উমর (রা.) সহ সকল সাহাবায়ে কেরাম এ পদ্ধতিতে বিতির আদায় করেছেন। এবং এটিই মদিনাবাসীর আমল ছিল। হযরত হাসানের বর্ণনানুযায়ী সকল মুসলমান অর্থাৎ সাহাবী ও তাবেয়ীগণ শেষ সময়ে এমতটির উপরই একমত হয়েছেন। তাই এক সালাম ও দুই বৈঠকে তিন রাকাত বিতির ইজমা দ্বারাও প্রমাণিত।
অতএব হানাফী মাযহাবের বিতিরের নামাযকে ভুল আখ্যা দেয়া, অশুদ্ধ বলা বা সহিহ্ হাদিস পরিপন্থি বলা তাঁর ইলমের দৈন্যতা এবং কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে স্বল্পজ্ঞানের অধিকারী বলে প্রমাণ করে। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করব, এসব কান্ডজ্ঞানহীন মুর্খতাপূর্ণ বিবৃতি দিয়ে, লিফলেট ছাপিয়ে মুসলিম সমাজে ফিৎনা সৃষ্টি করবেন না। জনসাধারনকে ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহের মধ্যে ফেলবেন না। সর্বোপরি মুসলিম সমাজে অনৈক্যের বীজ বপন করে মুসলমানদের চিরশত্র“ ইয়াহুদী খৃস্টানদেরকে মুসলিম নিধনের ক্ষেত্র তৈরী করে দিবেন না। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সকলকেই সঠিক দ্বীন বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন!!!
وصلي الله تعالي علي خير خلقه محمد و اله و صحبه و بارک و سلم
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৫৩
ডা: মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: জাযাকাল্লাহ। ধৈর্য্য ধরে লিখতে থাকুন। আমরা পড়ব ইনশাআল্লাহ।