ইমাম সাহেব সম্পর্কে অভিযোগ

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:০৯

একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
প্রশ্ন
বরাবর,
ফতোয়া বোর্ড, তাং-১৭/০২/২০১২ইং
হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
আমরা নিম্নের সাক্ষরকারীগণ হালিশহর ১০নং লেইন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) জাদম মসজিদের পরিচালনা কমিটির সদস্য। আমাদের অভিযোগ হল, আমাদের ইমাম সাহেব সংক্রান্ত অভিযোগের কিছু কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এবং ইমাম সাহেব যে মাদ্রাসায় পড়ান ঐ মাদ্রাসার সহ সভাপতি ও (তদন্ত কমিটির প্রধান) জনাব জাকির সাহেব ও আমাদের ইমাম সাহেবের সাথে আলোচনা করে ইমাম সাহেব মিথ্যা বলেছেন কি বলেন নাই কোনটি প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু ঘটনা পর্যালোচনায় আমাদের দ্বিধা সন্দেহ আছে। এমতাবস্থায় আমরা ইমাম সাহেবের পিছনে নামায পড়তে পারব কি না ?
সাক্ষরকারীগণ
১। আলহাজ্ব জনাব মোস্তাফিজুর রহমান, সহ সভাপতি।
২। আলহাজ্ব জনাব ছাবের আহাম্মদ, সা.সম্পাদক।
৩। আলহাজ্ব জনাব লকিত উল্লা, সদস্য।
শরয়ী সমাধান
حامدا و مصليا و مسلما، اما بعد
প্রশ্নের বর্ণনা ও সংযুক্ত কপিসমূহের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হয় যে,জনাব মাওঃ সাদেক হোসাইন কাসেমী সাহেবের মধ্যে এমন কোন দোষ নেই যদ্বারা তাঁর ইমামতিতে শরীয়ত সম্মত কোন বাঁধা হতে পারে।কিছু ভুল বুঝাবুঝির কারণে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে সে ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাপারে এমন কোন অভিযোগ শরীয়ত সম্মত প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত নয় যা তার ইমামতিতে কোনরূপ বাঁধা হয়। সঠিক প্রমাণাদি ছাড়াই এমন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর ইমামতিতে সন্দেহ পোষণ করা বৈধ নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন -
وَمَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا (سورة النجم،২৮)
অর্থঃ-এবিষয়ে তাদের (প্রমাণ নির্ভর) কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানের উপর চলে। অথচ সত্যের ব্যাপারে অনুমান মোটেই ফলপ্রসু নয়। (সূরায়ে নাজম-২৮)
ধারণার বশবর্তী হয়ে একজন সম্মানিত আলেম ও ইমাম সাহেবের ব্যাপারে কোনরূপ খারাপ সন্দেহ করা, তাঁর গোপনীয় বিষয় তালাশ করা, এসব বিষয়কে আলোচনায় এনে লোক সমাজে তাঁকে হেয় করা বা সম্মান হানিকর কোন আচরণ করা এবং এগুলোকে কেন্দ্র করে তাঁর ব্যাপারে কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পুর্ণ অন্যায়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেনÑ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ، وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ (سورة الحجرات،১২)
অর্থঃ-মুমিনগণ !তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ্। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করোনা। তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। (সূরায়ে হুজরাত-১২)

হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) এরশাদ করেনÑ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا عُرِجَ بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِم(ابوداود،৪২৩৫)
অর্থাৎ মেরাজের রাত্রে এমন একদল লোকের পার্শ্ব দিয়ে আমি অতিক্রম করলাম যাদের রয়েছে তামার নখ। তারা প্রতিনিয়ত তাদের মূখমন্ডল ও বুক ক্ষতবিক্ষত করছে। এদের সম্পর্কে জিব্রাঈল (আ.) কে জিজ্ঞাস করলে তিনি বললেন, এরা ঐসব লোক যারা মানুষের গোশ্ত ভক্ষণ করত (পরনিন্দা করত) এবং তাদের ইজ্জত-সম্মানে আঘাত হানত। (আবূদাউদ)
একজন সাধারণ ব্যাক্তির মান সম্মান হানির ক্ষেত্রে যদি কুরআন হাদিসে এইরূপ কঠোর হুশিয়ারিবাণী ও শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয় তবে একজন সম্মানিত আলেম ও ইমামের ক্ষেত্রে প্রমাণহীন ধারণা প্রসূত কতিপয় অভিযোগকে কেন্দ্র করে কোনরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে কত বড় অন্যায় তা সহজেই অনুমেয়।
অতএব উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রমাণহীনভাবে ইমাম সাহেবের উপর কোন অভিযোগ চাপিয়ে দেওয়া, তাঁর সম্পর্কে কুৎসা রটানো ও তাঁর ইমামতিতে সন্দেহ পোষণ করা বা তাঁকে বরখাস্ত করা কোনটিই জায়েয নয়। বরং এসব কাজে যারা জড়িত হবে তারাই শরীয়তের দৃষ্টিতে অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকেই সহিহ দ্বীন বুঝার ও তদনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন!

০ টি +০/-০