![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্প:কালো সেই মেয়েটি
.
:কি ভেবেছেন নিজেকে?আপনার মত কালো একটা মেয়েকে আমি নিজের জীবন সঙ্গীনী হিসেবে ভালবেসে যাব?কখনোই সম্ভব না।মনে রাখবেন।
.
:আমি হাসান।ঢাকায় একটা জব করছি।বাবা মা গ্রামে থাকেন।বিয়ের আগে দেখা হয়নি যাকে বিয়ে করছি সে কেমন।বাবা মায়ের পছন্দের উপর কথা বলার সাধ্য বা সাহস কখনো হয়ে উঠেনি। এই কারণেই হয়ত তাদের পছন্দকে মেনে নিয়েছি একবারও না দেখে।শুধু মেয়েটির নাম জানতাম।নীলা।ভেবেছিলাম নামের মতই সুন্দর হবে আমার বউ।আমার ভাবনাটা যে ভুল তা বুঝতে পারলাম বিয়ের দিন বাসর রাত্রীতে।
.
.
নীলা দেখতে সম্পূর্ণ কালো তবে চেহারার মাঝে অন্যরকম এক মায়া ছিল।বেশির ভাগ মানুষের মতই আমিও সৌন্দর্যের পূজারী,,সৌন্দর্যের অন্বেষণকারী।বাসর রাতে যখন দেখলাম আমার বউ কালো তখন মাথাটা ঠিক রাখতে পারলাম না।খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেললাম।একটা মেয়ের এই রাতে কত স্বপ্ন থাকে,, কত স্বপ্ন শুরু হয় তা কিছুটা হলেও ছেলেরা জানে।নীলার স্বপ্নকে তছনছ করে দিলাম অনেকাংশেই।
.
.
উপরের কথাগুলো শুনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিল ও আর আমি স্বার্থপরের মত শুয়ে পড়লাম।রাত সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যায়।দেখলাম মেয়েটা আমার বুকের উপর ঘুমুচ্ছে আর মুখের উপর পড়া চাঁদের আলোটা যেন ওর চেহারার মায়াটা বাড়িয়ে দিচ্ছে।নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হতে লাগল।কত স্বপ্ন ছিল মেয়েটার আর আমি সব শেষ করে দিলাম।নীলা কালো এটা তো ওর দোষ না।নীলাকে সৃষ্টিকর্তা এভাবেই সৃষ্টি করেছে।ইচ্ছা করছিল ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই।মনের মধ্যে অন্য রকম জিদও কাজ করতে লাগল।না আমি যা বলেছি তাই করব।আর এই মেয়েকে নিয়ে কোথাও যাওয়াটা আমার পক্ষে অসম্ভব।বারবার কেন জানি মনে হচ্ছিল ওর মায়াবী চেহারাটা শুধু আমার জন্যই।
.
.
বাতাসে নীলার চুলগুলো ওর মায়াবী চেহারাটা দেখার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করল।আস্তে করে চুলগুলো সরিয়ে দিলাম যাতে জেগে না যায়।মাথাটা উঁচু করে ওর কপালে আস্তে করে একে দিলাম ছোট্ট একটা চুমু।সাথেই সাথেই ও ধড়ফড় করে উঠে গেল আর নিজেকে আমার বুকের উপর আবিষ্কার করতে পেরে খানিকটা লজ্জাও পেল।যার মায়াবী চেহারার প্রেমে আমি একটু একটু করে পড়ছি তাকে কেন যেন আবার আচ্ছা মত বকলাম।
.
.
:ঘুমিয়ে গেছি দেখে বুকের উপর শুয়ে পড়েছেন তাই না?(আমি)
.
: ...........................
.
:কি হল কথা বলুন?
.
:আমি বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি ঠিক বুঝতে পারিনি।(খানিকটা কাচুমাচু করে বলল নীলা)
.
:এসব ন্যাকামী আমার মোটেও ভাল লাগেনা।এরপর যেন না হয়(আমি)
.
:জ্বী আচ্ছা।(নীলা)
.
.
নীলা বিছানার অন্য পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল।আমার দিকে পিঠ করে রাখায় ওর মায়া মাখানো চেহারাটা আর দেখতে পাচ্ছিলাম না।নিজের উপরই খানিকটা রাগ হল।আচ্ছা আমি কেন ওর চেহারাটা দেখার জন্য ছটফট করছি?কেন ওকে আদর মাখা চুমু দিলাম?ও তো একটা কালো মেয়ে যার সাথে আমার যায়না।মনকে খানিকক্ষন শাসালাম।এরপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।সকালে আটটার সময় ঘুম ভাঙল।দেখলাম নীলা গোসল করে নীল রঙের একটা শাড়ী পরেছে।বিছানার পাশের চেয়ারে মনমরা হয়ে বসে আছে।বুঝতে পারলাম ওর মন খারাপের জন্য আমি দায়ী।আমাকে উঠতে দেখে বলল,
:চলুন নাস্তা খাবেন।
.
:নাস্তা খেতে হবে সেটা কি তোমাকে বলে দিতে হবে?(একি আমি যে আপনি থেকে তুমি বলে ফেললাম)আচ্ছা যাও আমি আসছি ফ্রেশ হয়ে।
.
.
নীলা খুব বেশি রাগ করেনি বুঝলাম তার হাসিতে।বরের কাছ থেকে তুমি ডাকটা সব মেয়েরাই চায়।ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে এসে বসলাম।আম্মা আব্বাও এল খেতে।বিচ্ছু ইরাটাকে(আমার একমাত্র আদরের ছোট বোন।যার কোন কথা আমি ফেলতে পারিনা।খুব বেশি ভালবাসি বোনটাকে) দেখতে পেলাম না।আম্মুকে জিজ্ঞেস করতেই আম্মু বলল ইরার খেতে ইচ্ছে করছেনা।সাথে সাথে গেলাম ইরার রুমে।দেখি শুয়ে আছে বিচ্ছুটা।
.
:এই যে মহারাণী ইরাবতী!নাস্তা খাবেন না?
.
:নাহ মহারাজ হাসান।আপনি আপনার বউকে নিয়ে খান।আমার কথা তো আর কারো মনে পড়বে না।কত ক্ষুধা লাগছে আর মহারাজ আসছে এতক্ষনে ডাকতে।
এতক্ষনে বুঝলাম কেন বিচ্ছুটা খাবেনা বলছে আম্মুকে।
.
:যাবি নাকি কান টানা খাবি?(আমি)
.
:এহ আমার কান টানলে তোর খবর করব।আমি আর একা না ভাবীও আছে বুঝলি?(ইরা)
.
:হুম বুঝলাম। এবার নাস্তা খেয়ে উদ্ধার করেন।(নীলার কথা শুনে একটু অন্য মনষ্ক হয়ে ভাবছিলাম ওর সাথে কি আমার কখনো স্বামী স্ত্রীর প্রকৃত সম্পর্ক হবে?)
.
.
নাস্তা খেয়ে টিভি দেখছিলাম।কখন যে বেলা হয়ে গেছে খেয়ালই করিনি।হঠাৎ নীলা এসে জিজ্ঞেস করল,,
.
:হালকা কিছু খাবেন?
.
:না খাবনা।(দুপুর বারটার দিকে কিছু খাওয়া আমার নিত্যদিনের রুটিন।অল্প হলেও খাওয়া লাগবেই।এই মেয়েটা কিভাবে জানল? নাকি এমনি প্রশ্ন করল?ভাবনার অতল সমুদ্রে হারিয়ে গেলাম।)
.
.
.
চার পাঁচ মিনিট পর পিছন দিকে তাকাতেই দেখি ও ছলছল চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝলাম আমার এমন আচরণে বেচারী কষ্ট পাচ্ছে।
.
:আচ্ছা যাও হালকা কিছু নাস্তা নিয়ে আসো।কান্না ভাবের মুখটা মুহুর্তেই পরিবর্তন হয়ে হাসি হাসি ভাব হয়ে গেল।ছুটে গেল নাস্তা আনতে।বারবার ভাবছি নীলার সাথে খারাপ ব্যবহার করবনা তবু কেন যেন ও সামনে আসলে ভাল ভাবে কথা বলতে পারছিনা।আবার খারাপ ব্যবহার করে নিজেরও খারাপ লাগছে।আচ্ছা ওকে তো আমি ভালবাসিনা তবু কেন ওর জন্য খারাপ লাগছে?মনকে দ্বিতীয় দফা শাসালাম।সাতদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছিলাম বিয়ের জন্য।দেখতে দেখতে সাতটি দিন শেষ হয়ে এল।আব্বু আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে নীলাকে নিয়ে ফিরে এলাম কর্মস্থলে।আগে একা একটা ছোটখাট বাসা নিয়ে থাকতাম।বুয়া রান্না করে দিয়ে যেত এখন আর বুয়া লাগবেনা।আমার মিষ্টি বউটা রান্না করবে।ও তো দেখতে মোটেও মিষ্টি না তবু কেন ওকে মিষ্টি বলছি?নাহ মেয়েটার প্রেমে পড়েই যাচ্ছি।পালাতে চাইলেও নীলা ওর অদৃশ্য মায়ার বন্ধন দিয়ে কাছে টানছে।
.
.
অফিস থেকে বাসায় ফিরতে রাত ৯টা বেজে যেত।মেয়েটা আমার জন্য বসে থাকত।বাসায় এসে কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথেই দরজা খুলে দিত যেন ও আমার জন্য দরজার পাশে বসে অপেক্ষা করছিল।বিয়ের দুটো মাস পেরিয়ে গেল তবু স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আমাদের হয়নি।ও কখনো কিছু আব্দার করেনা।হয়ত বাসর রাতের কথাটি ও মনে রেখেছে খুব ভাল করে।
.
.
প্রতিদিন ও ঘুমিয়ে পড়ার পর এক দৃষ্টিতে ওর মায়াবী চেহারাটার দিকে তাকিয়ে থাকা যেন আমার নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছিল।রাতে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি।হঠাৎ নীলা এসে বলল,একটা কথা বলব?(নীলা)
.
:হুম বলো(আমি)
.
:বকবেন না তো(নীলা)
.
:না বকবনা বল।(আমি)
.
:আজকের চাঁদটা না খুব সুন্দর।আমার সাথে একটু ছাদে যাবেন?খুব ইচ্ছে করছে ছাদটা আপনাকে পাশে নিয়ে দেখতে।(নীলা)
.
:হুম চল।(অবাক দৃষ্টিতে কিছু মুহুর্ত তাকিয়ে থাকার পর বললাম আমি)
.
ওর মুখটা মুহুর্তেই হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।মায়াবিনীর প্রেমে আমি ইতিমধ্যেই হাবুডুবু খাচ্ছি।ছাদে গেলাম নীলাকে সাথে নিয়ে।ছাদের দোলনাটাতে দুজনে পাশাপাশি বসে আছি।নীলা এক মনে চাঁদটাকে দেখছে আর আমি দেখছি আমার পাশের মায়াবিনী কন্যাকে।হঠাৎ চাঁদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকাল নীলা।আমার চোখ তখনও নীলার চেহারাতে আবদ্ধ।আমার এক দৃষ্টির চাহনী দেখে লজ্জায় খানিকটা লাল হয়ে গেল আমার বউটা।
.
:আজকের চাঁদটা দারুণ তাইনা?(নীলা)
.
:হুম আজকের দুটো চাঁদই খুব দারুণ।(আমি)
.
:দুটো চাঁদ মানে?(নীলা)
.
:আমার পাশের চাঁদ আর আকাশের চাঁদ(আমি)
:এই কি বলছেন এগুলা?(নীলা)
.
:কিছুনা।চল বেশ রাত হয়ে গেছে।কাল আবার অফিস আছে(আমি)
.
.
খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম।নীলা ঘুমিয়ে পড়ার পরে ওকে দেখার রুটিনটা পালন করার সময় কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।নীলা রুমে এসে বলল,,
:আমি একটু বাইরে যেতে পারি কি?
.
:তুমিএই অচেনা শহরে আবার কোথায় যাবে?(আমি)
.
:একটু দূরেই আমার খালার বাসা।খালা আর খালাত বোন অনেকদিন ধরে ডাকছিল সেটা আপনাকে বলার সাহস হয়নি।আজ খালাত বোন নিতে আসবে।আপনার অনুমতি পেলে যেতাম।(নীলা)
.
:অনুমতি দিলাম।যাবেন সমস্যা নেই।সাবধানে যাবেন।সমস্যা হলে ফোন করে জানাবেন।
.
.
এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।
অফিসে বিভিন্ন ফাইল পত্রের কাজে ব্যস্ত হঠাৎই নীলার নম্বর থেকে ফোন।প্রতিদিন ও ফোন দেয় ঠিক দুপুর আড়াইটাই খেয়েছি কি না তা জিজ্ঞেস করতে।আজ এই সময়ে ওর ফোন দেখে কিছুটা অবাকই হলাম।অবশ্য স্ত্রীর পূর্ণ অধিকার আছে স্বামীকে যে কোন সময় ফোন দেয়ার।তাই আর কিছু না ভেবে ফোনটা রিসিভ করলাম।অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো এক পুরুষালি কণ্ঠ।অবাক হওয়ার মাত্রাটা তখন আরো অনেক বেশি।জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
:কে আপনি?আর এটা তো আমার ওয়াইফের নম্বর আপনি কোথায় পেলেন?(আমি)
.
:মিসেস নীলা হাসান কি আপনার ওয়াইফ?(অচেনা লোকটি)
.
:জ্বি হ্যা কেন বলুন তো?(আমি)
.
.
লোকটি যা বলল তা শুনে পুরোদমে নির্বাক হয়ে গেলাম।না আমার নীলা আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা।আমি আমার বউকে যেতে দিবনা।
.
.
খালাত বোনের সাথে রিক্সায় করে খালার বাসায় যাওয়ার সময় একটা মিনি ট্রাক আমার নীলার রিক্সাকে ধাক্কা মারে।ভাগ্যক্রমে ওর খালাত বোনের তেমন বড় ক্ষতি না হলেও নীলার মাথায় আঘাত লেগেছে।অচেনা লোকটি নীলাকে মেডিকেল নিয়ে গেছে আর নীলার ফোন থেকে আমাকে ফোন করেছে।সাথে সাথে ছুটে বেরিয়ে গেলাম আমার নীলার কাছে।হাসপাতালে এসে দেখলাম আমার নীলার মাথায় ব্যান্ডেজ।ডাক্তার বলল মাথার আঘাত গুরুতর। আগামী ৭২ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে কিছু করার থাকবেনা।অচেনা লোকটিকে ধন্যবাদ দিলাম নীলার জন্য এত করেছেন তিনি।নীলার খালা,,খালুকেও দেখতে পেলাম।তাদের সাথে কিছু কথা বলে নীলার পাশে গেলাম।আমি আর নীলা ছাড়া রুমে কেউ ছিলনা।আমার মায়াবিনীর মুখটা কেমন যেন হয়ে আছে।হয়ত এত বড় আঘাতের কারণে।সত্যি খুব ইচ্ছা করছিল মায়াবিনীকে জড়িয়ে বলি মায়াবিনী আমাকে ফেলে পালানোর চিন্তা তাইনা?বুঝনা বড্ড ভালবেসে ফেলেছি যে তোমায়?খুব অভিমান হচ্ছিল মায়াবিনীর উপর।কাঁদলাম মায়াবিনীকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে।
.
.
৫২ঘন্টা কেটে গেল তবু মায়াবিনীর জ্ঞান এল না।খুব চিন্তা হচ্ছিল মায়াবিনীকে নিয়ে।সারাক্ষন ওর পাশে বসে থেকেছি এই সময়গুলোতে।ডাক্তাররাও খুব চিন্তায় ওর জ্ঞান না ফেরায়।তিনদিনেও যখন জ্ঞান ফিরলনা তখন ডাক্তাররা বলে দিলেন, আমাদের আর কিছু করার নেই।দুয়া করেন।একমাত্র আল্লাহই ভরসা।ডাক্তাররা চলে যাবার পর জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি আমার বউটাকে।বিয়ের পর কখনো জড়িয়ে ধরিনি আজই প্রথম।নীলার মুখের দিকে তাকাতেই দেখি ওর চোখগুলো পিট পিট করে আমাকে দেখছে আর কাঁদছে।তৎক্ষণাৎ ওর বুক থেকে নিজের বুক আলাদা করে নিলাম আর জিজ্ঞেস করলাম,,এখন কেমন বোধ করছ?নীলা উত্তর দিল মাথায় হালকা ব্যথা করছে তাছাড়া ভাল।ডাক্তারকে ডাকলাম।ডাক্তারও খুব খুশি আমার নীলার জ্ঞান ফেরাতে।ডাক্তার বলল আর একদিন পর আমরা নীলাকে রিলিজ দিব।হাসান সাহেব আপনি তো এই কইদিনে বাসায় যাননি,,খাবারও ঠিক মত খাননি এখন যান নিশ্চিন্তে বাসায় গিয়ে আরাম করুন।ভয়ের কোন কারণ নেই।
.
.
নীলাকে বললাম আমি একটু বাসায় যাচ্ছি।তুমি নিজের খেয়াল রেখ।রুটিন চেক আপের সময় ডাক্তার এল নীলাকে চেক করতে আর আমি তখন বাসায়।
.
:আচ্ছা উনি কি এই কইদিনে বাসায় যাননি?(নীলা)
.
:জ্বি না মিসেস হাসান।উনি সারাক্ষনই আপনার পাশে বসে থাকতেন।সত্যি আপনি খুব লাকী এত ভাল হাজবেন্ড পেয়েছেন।(ডাক্তার)
.
.
নীলা খানিকটা আনমনা হয়ে ভাবছিল কেন ও এত করেছে আমার জন্য?কেন নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে আমার পাশে বসে?কেন আমার জ্ঞান না ফেরায় ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল?প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে খানিকটা বেগ পেতে হল নীলাকে।তাহলে কি ও আমাকে ভালবাসেন?
.
.
ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট করে আবার হসপিটালে গেলাম।দেখলাম নীলা আনমনে বসে আছে।আমাকে দেখে খানিকটা হতচকিত হয়ে নিজেকে সামলে নিল।
.
:এখন কি আর কোন সমস্যা হচ্ছে?(আমি)
.
:জ্বী না আর কোন সমস্যা হচ্ছে না।(নীলা)
.
.
.
ভালবেসে ফেলেছি এটা আগে বুঝলেও এই কইদিন নীলার অজ্ঞান থাকা আমাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আমার জীবনে নীলার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতটা।ওকে ছাড়া চলা সম্ভব না আমার পক্ষে।জাস্ট ইম্পসিবল।মায়াবিনীটাকে বলতে হবে বড্ড ভালবাসি।তারপরের দিন দুপুরে নীলাকে রিলিজ দেয় হাসপাতাল কতৃপক্ষ।বাসায় আসার পরও ওকে কিছু করতে দিইনি।এক প্রকার জোর করেই ওকে শুইয়ে রেখেছি আর রান্না বান্নার কাজটা আমি সামলাচ্ছি।দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নেয়ার জন্য শুলাম।নীলা আমার পাশ ঘেষেই শুয়ে আছে।
.
.
আজ জোৎস্না।সেদিনের মতই দারুণ একটা পূর্ণাঙ্গ চাঁদ আজও আকাশে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।নীলাকে বললাম ছাদে যাবে?দারুণ একটা চাঁদ উঠেছে?(আমি)
নীলা তো মহাখুশী।
.
:আপনি নিয়ে গেলে অবশ্যই যাব।(নীলা)
.
:আচ্ছা আমি নিয়ে যাব।চল।(আমি)
.
:আচ্ছা চলেন।
.
বাসার গেইট থেকে বের হওয়ার সময় নীলাকে বললাম ছাদে যেতে।আমি দু এক মিনিটের মধ্যেই আসছি।ও চলে গেলে আমি ঘরের ভিতর রাখা জরুরী একটা জিনিস নিলাম।ছাদে যেয়ে দেখি আমার মায়াবিনী চাঁদের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।মায়াবিনীর সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম আর বললাম,,,
জানিনা কোন অদৃশ্য শক্তি আমায় তোমার প্রেমে ফেলেছে।মনের মাঝে ছোট্ট একটা সাম্রাজ্য আছে আমার।সেই রাজ্যের রাণীর আসনটা ফাকা।রাণীর আসনে বসতে হলে কোন ফর্সা চেহারার মেয়ে লাগবেনা একটা ফর্সা মনের মায়াবিনী লাগবে।হবে আমার রাজ্যের মায়াবিনী রাণী?হবে বাবুর আম্মু যেই বাবুর আব্বু হব আমি?
.
গোলাপ ফুলটা তখনও আমার হাতে।এখনও নেইনি মায়াবিনী।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে মায়াবিনীটার।হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে নিল।তখনও কেঁদে চলেছে।
.
:মাফ করে দিয়ে হওয়া যায়না কি আমার বাবুর আম্মু?(আমি হাটু গেড়ে তখনও বসে আছি)
.
:.................................(নীলা)
.
:কাঁদছ কেন মায়াবিনী?হবেনা তাহলে আমার বাবুর আম্মু?(আমি)
.কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়ে)আমি তো প্রথমদিন থেকেই আমার রাজ্যের রাজার আসনটা তোমায় দিয়ে রেখেছি।তোমার বাবুর আম্মু হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই তো তোমায় বিয়ে করেছি।এটা কি আবার জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি?আর কান্না!!মানুষ যখন খুব খুশি হয় তখনও অনেকে কেঁদে ফেলে।আমিও তেমনই কাঁদছি।(এক নাগাড়ে কথাগুলো বলল নীলা)
.
:আচ্ছা বাবুর আম্মু চল এবার রাত হয়ে গেছে।অনেক কাজ আছে।(আমি)
.
:এত রাতে কি কাজ আবার(নীলার মুখে দুষ্টু হাসি)
.
কিছু না বলে নীলাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে চলে এলাম নীচে।খুব শক্ত ভাবে আমাকে আকড়ে ছিল বাবুর আম্মুটা।বাবুর আম্মুটাকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।আর আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে ওর উপর আস্তে আস্তে ঝুকে পড়ছি।
.
:এই না না কোন দুষ্টুমী চলবেনা।খবরদার না।(দুষ্টু হাসি নিয়েই বলল নীলা)
.
মুখে মানা করলেও বাঁধা দেয়ার কোন প্রচেষ্টাই ওর ছিলনা।গভীর একটা চুমু দিলাম ওর ঠোটে।মায়াবিনীটা আর কিছু বলছেনা।সেদিন রাতে ওর সাথে অনেক দুষ্টামী হল।পরেরদিন সকালে উঠে দেখি মায়াবিনী গোসল করে আমার পছন্দের নীল রঙের শাড়ি পরেছে।আমাকে ডাকতে এল যখন তখন উঠার বদলে ওকে আবার জড়িয়ে কাছে টেনে নিলাম।
.
:সারারাত অনেক দুষ্টুমী হয়েছে আর না বলছি।(নীলা)
.
:আমার বউয়ের সাথে দুষ্টুমী করব না তো কার সাথে করব?আচ্ছা তুমি যখন চাওনা তখন ঠিক আছে আর কখনও দুষ্টুমী করব।
.
অভিমানে ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার গালে নীলার ঠোট।
.
:এই যে মহারাজ অভিমান ভাঙল নাকি আরো চায়?(নীলা)
.
:ঠোঁটে লাগবে একটা।(আমি)
.
:নাহ পারবনা লজ্জা করছে।(নীলা)
.
এবার ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আবার লম্বা করে চুমু দিলাম।মেয়েটা নিশ্চুপ হয়ে আছে।
১বছর পর
কনগ্র্যাচুলেশন মিঃ হাসান।আপনার মেয়ে হয়েছে।খুশিতে তখন কেঁদেই ফেললাম।নীলাকে রুমে আনার পর দেখতে গেলাম বেশ হাসি খুশিই আছে।আমি প্রথমে ওর কপালে তারপর বাবুর কপালে আদর একে দিলাম।মেয়েটির নাম দিয়েছিলাম অধরা।সত্যি যেই কালো মেয়েটিকে আমি প্রথম রাতে এত কথা বলেছিলাম তাকে ছাড়া আমার চলা অসম্ভব।আমার জীবনটা যেন ওর কাছে থাকে।দুজনের ভালবাসায় কখনো কমতি হয়নি।দুজন যে দুজনকে সত্যিকারের ভালবাসি।
.
পরিশিষ্ট:গত পরশু অপেরার নিউজ আপডেটে একটা খবর দেখলাম।
"কালো হওয়ায় স্ত্রীকে বাসর রাতে তালাক দিল স্বামী" খুব খারাপ লেগেছিল খবরটা দেখে।ভাবছিলাম এই বিষয়ের প্রেক্ষাপটে একটা গল্প লিখব।লিখা হল জানিনা গল্প মান সম্বন্ধে পাঠকেরা কি বলবেন।
.
লেখা:Md Hasan (পিচ্চি রাইটার)
©somewhere in net ltd.