নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসান ৭৮৬

হাসান ৭৮৬ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুন্নীর দুলাভাই

২১ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৫

:ভাইয়া তোমরা নাকি ছেলে ধরা?
ক্লাস থ্রী পড়ুয়া পিচ্চি মুন্নির কথা শুনে
বিস্ময় ভরা চেহারায় ওর দিকে তাকালাম।
:কে বলল তোমাকে আমরা ছেলে ধরা?(আমি)
:আজকে নীলা আপুই বলল তোমাদের সাথে
কথা না বলতে।আরো বলল তোমরা নাকি
ছেলে ধরা।বাচ্চাদের কিডন্যাপ করে
বিক্রি করে দাও।বল না ভাইয়া আপুর সব কথা
মিথ্যা তাইনা?(এক নাগাড়ে বলল মুন্নি)
:হুম পিচ্চি আপু তোমার আপুর কথাগুলা মিথ্যা
(আমি)
:আমি আগেই বুঝেছিলাম নীলা আপুর
কথাগুলো মিথ্যে।আমি জানি আমার ভাইয়া
এত খারাপ হতেই পারেনা। (মুন্নি)
:হুম ঠিক বলেছ।আর তুমি যে আমার সাথে গল্প
কর এর জন্য তোমার আপু তোমাকে হিংসা
করে।তাই এসব বাজে কথা বলেছে।(আমি)
:ঠিক বলেছ ভাইয়া।আর আপুর কথা শুনব না।
(মুন্নি)
খানিকক্ষন চুপ থাকার পর মুন্নিকে বললাম
সন্ধা হয়ে এল তুমি বাসায় চলে যাও আমিও
চলে যাব।মুন্নি চলে গেল।
আমার পরিচয়টাই তো দেয়া হলনা।আমি
হাসান।বিবিএ ৩য় বর্ষে পড়ছি।তিন বন্ধু
মিলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি আর যার
সাথে এতক্ষন কথা বলছিলাম সে হল বাড়ি
ওয়ালার আদুরে ছোট মেয়ে মুন্নি।নিলা হল
ওর বড় বোন।ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে।মেয়েটা খুব
অহংকারী আর হিংসুটে প্রকৃতির।আমাকে
কেন যেন দু চোখে দেখতে পারেনা।আমাকে
দেখলেই ওর চাঁদ বদন মুখ খানা বাংলার পাঁচ
হয়ে যায়।খুব হাসি পাই ওর মুখটা এরকম
মুহুর্তে দেখে।মেয়েটা যে এমন কেন করে
তার উত্তর একমাত্র মহারাণী অর্থাৎ নীলা
নিজে দিতে পারবে।
ছাদে বসে আনমনে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে
থাকাটাতে আলাদা রকমের আনন্দ খুঁজে পাই
আমি।আর সেই সময়টাতে আমার সাথী হয়
মুন্নি।ওর যত গল্প সব মনে হয় শুধু আমার কাছে
বলে।ভালোই লাগে ও এলে ওর সাথে গল্প
করতে।একদিন ওর সাথে বসে গল্প করছি হঠাৎ
ছাদে মহারাণী এলিজাবেথের আগমন।আমার
সাথে মুন্নিকে দেখে নীলা মুন্নির সামনে
এল আর বলল তোকে না কতবার বলেছি এদের
সাথে কথা বলবিনা।যা বাসায় যা।মুন্নি
চুপচাপ মাথা নীচু করে চলে গেল।আর
আপনাকে বলে রাখি আপনি আর মুন্নির সাথে
কথা বলবেন না।(এই বলে নীলাও চলে গেল)।
কিছুটা অবাক হলাম। বেশি কিছু তো না শুধু
গল্পই করি তার জন্য এত কিছু!!ধুর ভাল
লাগেনা।মহারাণীর যে এত কিসের ভাব!
পরেরদিন ছাদে বসে আছি আজও মুন্নি এল।
দেখলাম মন খারাপ করে চুপ করে বসে পড়ল
আমার পাশে।
:কি হয়েছে মেমসাহেবের?মন খারাপ কেন?
(আমি)
:আমার ফ্রেন্ড সুপ্তির দুলাভাই আছে আমারও
একটা দুলাভাই লাগবে।আর আমি তোমাকেই
দুলাভাই হিসেবে সিলেক্ট করেছি।
:এই না না কি বলছ!!তোমার আপু শুনলে
দুজনকেই মারবে।
:আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা।আমি তোমাকে
দুলাভাইয়া বলেই ডাকব।আচ্ছা দুলাভাইয়া
গেলাম।
মুন্নি চলে গেল।ভাবছি এই মেয়েটা যে কোন
বিপদে ফেলে কে জানে।মহারাণী মুন্নির
দুলাভাই ডাকার কথা জানতে পারলে
নিশ্চিত তুলকালাম কান্ড বাঁধাবে।
রাতে ছাদে আসা হয়না তবু আজ চাঁদের
পরিপূর্ণতা দেখে ঘরে থাকা হল না।ছাদে
এসে এক মনে চাঁদ দেখছি।হঠাৎ মহারাণীর
আগমনে কিছু ভয় পেলাম।না জানি কি বলে।
:এই যে মিঃ হাসান!!আপনাকে বাসায় খুজতে
গেছিলাম।আপনার বন্ধুরা বলল ছাদে আছেন
তাই এলাম।কি শিখিয়েছেন মুন্নিকে?সাহস
খুব বেড়ে গেছে তাইনা?(নিলা)
:হুম বেড়ে গেছে তাই তো বেড়ে যাওয়া
জিনিসের প্রদর্শনীর কর্মসূচি পালন করছি।
হা হা হা(আমি)
:এই ফাজলামু করবেন না একদম।(নিলা)
:আমি কেন ফাজলামু করতে যাব যা সত্যি
তাই বললাম।
:আপনাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি আর কখনো
মুন্নির সাথে যেন আপনাকে না দেখি আর
উল্টোপাল্টা কিছু শিখাবেন না।যদি এর
বিপরীত হয় তার ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে।
(নিলা)
এই বলেই মহারাণী রাগে গটগট করে ছাদ
থেকে নেমে গেল।
মন খারাপ করে আমিও ছাদ থেকে নেমে
গেলাম।
পরেরদিন সকালে বাসায় মুন্নির আগমন।এসেই
বায়না ধরল ভাইয়া চল না ছাদে যেয়ে গল্প
করি।বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলাম তার
মহারাণী বোন রাগ করবে তবু সে মানতে
নারাজ।অগত্যা যেতেই হল পিচ্চিটার সাথে।
গল্প করছি হঠাৎই মহারাণীর আগমন।'যেখানে
বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়' প্রবাদটির
সত্যতা উপলব্ধি করতে পারছিলাম।
:মুন্নি তোকে না বার বার করে মানা করেছি
এদের কাছে আসবিনা?আর এই যে মিস্টার
কানে কথা যায়না?কতবার মানা করা
লাগবে?যা মুন্নি এক্ষুনি বাসায় যা(নিলা)
:না আমি দুলাভাইয়ার সাথে গল্প করব(মুন্নি)
আগ পিছ না ভেবেই বেশ জোরে একটা চড়
বসিয়ে দিল নিলা মুন্নির গালে।পিচ্চিটা
কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।নিলাও চলে
যাচ্ছিল আমি ডাকলাম এই যে শুনুন।
কাছে এসে বলল হ্যা বলেন কি বলবেন।
(নিলা)
আমিও কষে একটা চড় বসিয়ে দিলাম নিলার
গালে।ঘটনার আকস্মিকতায় নিলা
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইল।
:কি মনে করেন নিজেকে?রাণী এলিজাবেথ
নাকি প্রিন্সেস ডায়ানা?নাকি এর থেকেও
বেশি কিছু?কিসের এত অহংকার আপনার?
রূপের অহংকার দেখান?শুনুন এসব আলতু ফালতু
ভাব আমার সামনে দেখাতে আসবেন না।
থাপ্পড়টা আমাকে মারলেও কিছু বলতাম না
তবু কেন এই ছোট্ট মেয়েটাকে আমার সাথে
গল্প করার কারণে মারলেন?মেয়েটা তো
আপনার নিজের ছোট বোন।ভেবে দেখবেন
কাজটা কতটুকু ঠিক করেছেন।ছাদ থেকে চলে
এলাম।নিলা তখনও ছাদে দাড়িয়ে।
সেদিন রাত্রেই বাসায় হঠাৎ বাড়ি ওয়ালার
আগমন।কিছু অস্বস্তিও লাগছিল কারণ মাসের
ভাড়া পরিশোধ করা আছে তবু কেন এই
অসময়ে তিনি বাসায় এলেন।
:আংকেল আসুন না ভিতরে এসে বসবেন।
(আমি)
:তোমাদের এখানে আমি বসতে আসিনি।
যেটা বলতে এসেছিলাম সেটা হল এই মাসেই
তোমরা বাসা ছাড়বে।(বাড়িওয়ালা)
:সরি আংকেল হঠাৎ এই ধরনের নোটিশের
কারণ কি?
:তোমাদেরকে ভাল ছেলে ভেবে বাসা
ভাড়া দিয়েছিলাম।সেখানে তুমি আমার
মেয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছ।এরপর আর
কিসের জন্য তোমাদেরকে রাখব?
:আংকেল ভুল সঠিক বিচার না করে সিদ্ধান্ত
নেয়াটা ঠিক না।আচ্ছা আংকেল আপনি যখন
বলছেন আমরা এই মাসেই চলে যাব।(আমি)
:হুম সেটা ভাল।(বাড়িওয়ালা)
এই বলে চলে গেল বাড়িওয়ালা।নিলার উপরই
রাগ হতে লাগল একটা থাপ্পড় দিয়েছি বলে
অপবাদ দিয়ে বাসা থেকে তাড়াবে!!যাহ
ভালই হল এই মহারাণীর উপদ্রব থেকে বাঁচব।
যেহেতু আমার কারণেই বাসা ছাড়তে হচ্ছে
তাই বাসা খোজার বিরক্তিকর দায়িত্বটা
আমার কাঁধেই পড়ল।খুব বেশি খোজা লাগল
না নিলাদের বাসার সাত প্লট পরেই একটা
বাসা পেয়ে গেলাম।পরের মাসে ওখানেই
উঠলাম।এই বাসাতে আসার পরেও ছাদে উঠার
অভ্যাসটা ঠিকঠাকই চলতে লাগল।প্রতিদিন
বিকেলে ছাদে বসে কখনো দূর আকাশের
পাখির ঝাকের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া,,কখনো
গোধুলী বেলার লালচে আকাশের দিকে
অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকা,,আবার কখনো
আনমনে কবিতা আবৃত্তি করা বা গান গাওয়া।
খুব ভালই চলছিল।পিচ্চি মুন্নিটাকে খুব মিস
করতাম।আমরা চলে আসার পর অবশ্য নিলা ওর
ভুল বুঝতে পেরেছিল আর ওর আম্মুকে সত্যটা
বলেছিল।প্রতিদিন মুন্নি ওর আম্মুর ফোন
থেকে সকাল বিকেল সময় পেলেই ফোন দেয়।
পাকনি পাকনি কথাগুলো শুনতে বেশ লাগে।
এখানে এসে আরেকটা মেয়েকে দেখি
মাঝে মাঝে আমি গান গাওয়ার সময় পাশে
এসে দাড়িয়ে থেকে গান শুনে।মেয়েদের
সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাওয়াটা
আমার স্বভাব কখনোই না।মেয়েটাও কিছু
বলতনা।একদিন গান গাওয়া শেষে চুপচাপ
বসে আছি।মেয়েটা আমার গান শোনার পর
বলল বাহ্ গানের গলা তো বেশ ভাল আপনার।
:হা হা হা তাই নাকি?ধন্যবাদ।(আমি)
:আমি রোদেলা।ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।
:হাসান।বিবিএ থার্ড ইয়ার।
থ্যাংক্স।আমাকে কিন্তু মাঝে মাঝে গান
গেয়ে শুনাতে হবে(রোদেলা)
:আসলে কাউকে গান শোনাতে গেলে গান
গাইতে পারিনা।আমি গাইলে পাশে এসে
শুনতে পারেন তাতে অসুবিধা নেই।(আমি)
:আচ্ছা তাহলে তাই করব।এখন বাই(রোদেলা)
:হুম বাই(আমি)
মেয়েটা খুব হাসি খুশি প্রকৃতির।খুব অল্পতেই
আমাকে আপন করে নিয়ে কথা বলতে লাগল।
ঠিক যেন মহারাণীর বিপরীত মেরু।আমি ওকে
তুমি বলে ডাকতাম আর ও আমাকে ভাইয়া
বলে।
:ভাইয়া আমার একটা ফ্রেন্ড আছে।পাশেই
বাসা।আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব
আচ্ছা?আপনার কথা ওকে বলাতে ও পরিচিত
হতে চেয়েছে।(রোদেলা)
:আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই।(আমি)
পরেরদিন বিকেলে রোদেলা তার বন্ধুকে
নিয়ে ছাদে এল।ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম।
আরে এ যে মহারাণী নিলা।
:ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দিই।(রোদেলা)
:নীলা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।(আমি)
:আরে ভাইয়া আপনি কিভাবে চিনেন ওকে?
(রোদেলা)
:আমরা আগে ওদের বাসাতে ভাড়া ছিলাম
সে হিসেবেই চেনা।(আমি)
:ওহ আচ্ছা তাহলে তো বেশ ভালই।আচ্ছা
ভাইয়া আমার একটু কাজ আছে বাসায় যাচ্ছি
আর আপনারা কথা বলুন।নীলা সমস্যা নেই
ভাইয়ার সাথে গল্প কর দু একটা গান শোনারও
আব্দার করতে পারিস।ভাইয়া কিন্তু দারুণ
গান গায় তুই হয়ত জানিস।আমি যাচ্ছি
(রোদেলা)
এই বলে নেমে গেল রোদেলা।আমি আর
মহারাণী খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে।
:কেমন আছ?
:জ্বী ভাল।আপনি?
:হুম বেশ ভাল।ভাল না থেকেও ভাল আছি
বলার মানুষগুলোর মধ্যে আমিও তো একজন
তাই ভাল থাকি বা না থাকি সবসবয় ভাল
আছি বলতেই হয়।(আমি)
:হুম বেশ ভাল।আচ্ছা আপনি রোদেলার সাথে
গল্প করেন,, ওকে গান শোনান তাইনা?(নিলা)
:মাঝে মাঝে দু একটা কথা বলাকে যদি গল্প
মনে কর তাে হুম গল্প করি আর আমি ওকে গান
শুনাই না আমি গাইলে ও এসে শুনে।(আমি)
:আচ্ছা আপনার নম্বরটা দেন তো।(নিলা)
মোবাইলটা বের করে ওর নম্বরে একটা
মেসেজ দিলাম।
:যে নম্বর থেকে মেসেজ গেল ওটা আমার
নম্বর।
:আমার নম্বর আপনার কাছে আছে?(খানিকটা
অবাক হয়ে বলল নিলা)
:হুম আছে।মুন্নি আপনার নম্বরটা দিয়েছিল।
সেই থেকে রয়ে গেছে।(আমি)
:আচ্ছা আপনি এমন কেন?একটু কি ফোন দেয়া
যায়না?(নিলা)
:না যায়না।কে জানে আবার আগের মত বলে
বেড়ান কি না যে আপনাকে ফোন করে
বিরক্ত করি।আর তাছাড়া আমার নম্বরও তো
আপনার কাছে আছে।প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে
যাওয়ার আগে শুভ রাত্রী আর সকালে ঘুম
থেকে উঠে সুপ্রভাত মেসেজ আসে কোন
নম্বর থেকে তা আমার অজানা নয়।(আমি)
:আচ্ছা আমি এখন যাই।(লজ্জায় মহারাণী
পালিয়ে গেল)
মুচকি মুচকি হাসছি মহারাণীর কান্ড দেখে।
রাতে মহারাণীর ফোন।
:হ্যালো কি করেন?(নিলা)
:এইত শুয়ে আছি।তুমি?(আমি)
:বসে আছি।খেয়েছেন?(নিলা)
:না খেতে ইচ্ছে হচ্ছেনা তাই খাওনা হয়নি।
তুমি খেয়েছ?(আমি)
:কি!!খাননি!!খেতে ইচ্ছা করেনি তাই
খাইনি।কত্ত সুন্দর কথা।যান বলছি এক্ষুনি
খেয়ে নিন।(নিলা)
:থাক না।(আমি)
:ও বুঝেছি আমি আর কে আপনার যে আমার
কথা শুনবেন তাই না?(অভিমানী কণ্ঠে নিলা)
:আচ্ছা বাবা ঠিক আছে খাচ্ছি।খুশি?
:হুম খুব খুশি।এখন রাখছি।খেয়ে নিন।বাই।
(নিলা)
:বাই।
ফোনটা কেটে দিল নিলা।খেয়েদেয়ে শুয়ে
আছি হঠাৎ মেসেজ এল নিলার।
:খেয়েছেন তো।(নিলা)
:হুম খেয়েছি।(আমি)
:আমার মিষ্টি বাবু(নিলা)
:মানে??(আমি)
:কিছুনা।ঘুমিয়ে পড়ুন(নিলা)
আমি আর রিপ্লাই না দিয়ে শুয়ে রইলাম।কখন
যে ঘুমের অতল সাগরে ডুবে গেছি ঠিক
খেয়াল নেই।সকালে ঘুম ভাঙল নিলার ফোনে।
হালকা কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
দু তিন দিন হল লক্ষ্য করছি নিলা আমার খুব
বেশি কেয়ার করছে।কিছু জিনিস বুঝলেও
অবুঝের মত থাকাতেই ভাল নিহিত আছে।তাই
অবুঝের মতই আছি।প্রতিদিন কয়েকবার ফোন
করে খাওয়া দাওয়া করেছি কি না,,ঠিক মত
ক্লাস করছি কি না ইত্যাদির খোজ খবর
নেয়া যেন ওর নিত্যদিনের রুটিন হয়ে
দাড়িয়েছিল।ভালই লাগত ওর কেয়ারিংগুলো।
ভাল লাগা গুলো মনের অজান্তে কখন যে
ভালবাসায় রূপান্তর হয়ে গেল তা ঠিক
জানিনা।ওর ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম
কখন ও ফোন করবে,কখন ওর মিষ্টি গলাটা
শুনব।
হঠাৎ একদিন রাত সোয়া দুটোর সময় নিলার
ফোনে ঘুমটা ভেঙে গেল।ফোন ধরার সাথে
সাথেই নিলা বলল এক্ষুনি ***** হসপিটালে
আসুন।মুন্নি খুব অসুস্থ।আপনাকে দেখতে
চাচ্ছে।নিলার গলা শুনে বুঝলাম নিলা
কান্না করছে।তৎক্ষণাৎ রেডি হয়ে বন্ধুর
বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম হাসপাতালের
উদ্দেশ্যে।রিশেপসনে জিজ্ঞেস করলাম
আপনাদের এখানে মুন্নি নামের পেশেন্ট
কোন কেবিনে আছে।রিশেপসনে যিনি ছিল
তিনি জানালেন ইমার্জেন্সী তে পাবেন।কি
আমার পিচ্চি মুন্নি ইমার্জেন্সীতে!!ছুটে
গেলাম ইমার্জেন্সীতে।রুমের দরজার সামনে
মুন্নির আব্বু আম্মু আর নিলাকে দেখতে
পেলাম।উনাদের কাছে যেতেই আংকেল
আমাকে জড়িয়ে কাঁদা শুরু করলেন।
:তুমি বল বাবা আমার এত ছোট্ট নিষ্পাপ
মেয়েটার কি ব্রেন টিউমার হতে পারে?কি
দোষ ওর যে আল্লাহ ওকে এত কষ্ট দিচ্ছেন?
(আংকেল)
শান্তনা দেয়ার মত কিছুই মাথায় আসছিল না।
তবু বললাম আংকেল দুয়া করেন ইনশা আল্লাহ
সব ঠিক হয়ে যাবে।(আমি)
তখন ডক্টর রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন
মুন্নির দুলাভাই কে?মুন্নি তাকে দেখতে
চাচ্ছেন।কিছু না ভেবেই বললাম আমি মুন্নির
দুলাভাই।আপনি মুন্নির সাথে দেখা করুন।এই
বলে চলে গেল ডাক্তার।
সাদার পরতে মোড়ানো রুমের মাঝে শুয়ে
আছে ছোট্ট সাদা পরীটা।ওর পাশে বসে ওর
হাতটা ধরতেই ও চোখ মেলে আমার দিকে
তাকাল।
:ও দুলাভাইয়া তুমি এসেছ?(মুন্নি)
:হ্যা মুন্নি এইত দেখ তোমার দুলাভাইয়া
আসছে(আমি)
দেখলাম নিলা এসে মুন্নির পাশে বসল।
:তুমি এখন কেমন বোধ করছ মুন্নি?মাথা কি
ব্যথা করছে?(আমি)
:হুম দুলাভাইয়া একটু একটু ব্যথা।দুলাভাইয়া
আমার না খুব ইচ্ছা ছিল আমি তোমার আর
আপুর বিয়ে দিব আর সেখানে অনেক মজা
করব।কিন্তু তা আর হল কোথায়?আমি তো চলে
যাব।তবে দুলাভাইয়া জানো একটা কথা?
(মুন্নি)
:কি বল (আমি)
:আপুও তোমাকে খুব ভালবাসে।(মুন্নি)
নিলা লজ্জা পেয়ে আস্তে করে উঠে চলে
গেল।আমি মুন্নির কানের পাশে মুখটা
নামিয়ে আস্তে করে বললাম তোমার
দুলাভাইয়াটাও তোমার আপুকে খুব
ভালবাসে।মুন্নি একটু হাসল তারপর বলল
দুলাভাইয়া মাথা ব্যথাটা আবার বাড়ছে।
:আচ্ছা তুমি শুয়ে থাকো আমি ডাক্তার
আনছি।(আমি)
:না দুলাভাইয়া ডাক্তার লাগবেনা।তুমি
আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে থাকো।
আর শুন আমার আপুকে কখনো কষ্ট
দিবেনা,,কখনো কাঁদাবেনা।আমি চলে
যাচ্ছি তবে আমার দুলাভাইয়া আর আপুর
মাঝে আমি থাকব।ভাল থেক ভাইয়া।খুব কষ্ট
হচ্ছে।আমি একটু চোখ বন্ধ করব।
এতটুকু এক নাগাড়ে বলে চোখটা বন্ধ করল
মুন্নি।কেমন যেন মনে হল ওর হাতটা বেশ
ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।ডাকলাম ওর নাম ধরে
কোন সাড়া পেলাম না।তাহলে কি?না এ
সম্ভব না।ডাক্তারকে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে
ডাক্তার চলে এল।মুন্নির পালসটা চেক করার
সময় দেখলাম ডাক্তারের মুখটা অন্ধকারে
ছেয়ে গেল।
:সরি মুন্নি আর নেই(ডাক্তার)
আমি আর ওখানে থাকতে পারলাম না।হয়ত
পরীটা যে মারা গেছে এটা মানতে মন
চাচ্ছেনা তাই।মুন্নিকে দাফন করে বাসায়
চলে আসলাম।কেন যেন মনটা ভাল নেই।
কয়েক বছর পর
:এই শুনছ?(নিলা)
:হুম বল(আমি)
:কি তোমার হাতে ওটা?কি মুছতেছিলা?
(নিলা)
:মুন্নির ছবি(আমি)
উজ্জ্বল মুখটা মুহুর্তেই কালো হয়ে গেল।ছুটে
চলে গেল নিলা রুমে।জানি ও এখন খুব
কাঁদবে।আমারও যে কান্না পাচ্ছে।আজ
মুন্নির মৃত্যুবার্ষিকী।মুন্নি আমি আজ সত্যি
তোমার দুলাভাই কিন্তু আমাকে দুলাভাই বলে
ডাকার জন্য তুমি নেই।তুমি ঠিকই বলেছিলা
মুন্নি তুমি আজও আমাদের মাঝে আছ।চিরদিন
রবে তুমি।
.
লেখা:Md Hasan(পিচ্চি রাইটার)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.