নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরের জন্মে মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই

হাসান শরিফ

বাবার সরকারি চাকুরির সুবাদে শৈশব কৈশোর-স্কুল কলেজ সবই চট্টগ্রামে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাংবাদিকতা করি। পরের জন্মে মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই।

হাসান শরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাকে হারানোর এক বছর...

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৫২

আজ ৩ ডিসেম্বর। আমার মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এই দিন ভোরে আমি আমার মাকে হারিয়েছি। যতোদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর আমার জীবনের শোকের দিন হয়ে থাকবে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও আমার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমার মা নেই। মনে হয়, ঢাকা ছেড়ে বাসায় গেলেই বোধহয় মা ছুটে আসবে। ব্যাস্ত হয়ে পড়বে আমাকে নিয়ে।



বিশ্বাস করতে আসলেই কষ্ট হয় এমনটি আর হবে না এ জীবনে। আর কখনোই আমার মা আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে না। কি দুরন্ত উচ্ছল জীবনই না ছিল আমার। এই একটি ঘটনা আমাকে কতো বদলে দিয়েছে। মাকে হারিয়ে আমি যেন হঠাৎ বড় হয়ে গেছি। প্রতিটা দিনই মায়ের কথা মনে হয়, একা একা গুমরে কাঁদি।



গত বছর কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে আমরা মাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। সুস্থ্য একজন মানুষ, সামান্য একটি সমস্যার কারনে হাসপাতালে। আমরা কেউই বুঝতেই পারিনি এভাবে হুট করে মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। হাসপাতালে তিনদিন সবই ভালো। কিন্তু ১ ডিসেম্বর কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ আইসিইউতে নিতে হয়। দুদিন সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে থাকার পর আমার মা চলে গেলেন আমাদের চোখের জলে ভাসিয়ে। আমরা কোনভাবেই মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তার এই হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না।



আমার মা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ার সুযোগ তার হয়নি বিয়ের কারনে। মার সহপাঠীদের কাছে শুনেছি তিনি খুবই ভালো ছাত্রী ছিলেন। ক্লাসের শীর্ষ ছাত্রী ছিলেন। অনেক আদারে কেটেছে তাঁর ছোটবলা। তাঁর পরিবার ছিলো ফরিদপুরের এককালের শীর্ষ কয়েকটি পরিবারের একটি। মায়ের মনটা ছিলো বিশাল। চট্টগ্রামে আমার বাবার সরকারী চাকুরি। সরকারী কলোনীতে আমরা যে বাসায় থাকতাম সেখানে একবার যে গেছে সে মায়ের রান্না খেয়ে, তার আন্তরিকতা দেখে ভক্ত হয়ে গেছে। মা মানুষকে খাইয়ে খুব আনন্দ পেতেন। সবসময় তিনি বাসায় অনেক লোকজন, উৎসব দেখতে পছন্দ করতেন। আমরা দিন নেই, রাত নেই বাসায় বন্ধুবান্ধব নিয়ে যেতাম। মা কখনো বিরক্ত হয়ে বলতেন না অসময়ে কেন এতো বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসিস? এমন অসাম্প্রদায়িক মানুষ, উচ্চ মনের মানুষ আমি জীবনে খুব কম দেখেছি।



মা কখনো গরীব বা ভিক্ষুকদের না বলতেন না। কলোনীতে থাকার কারনেই বাসায় সবসময় ভিক্ষুক আসতো। আমরা খুব বিরক্ত হতাম। কিন্তু মা হাসিমুখে কিছু না কিছু দিয়ে তাদের বিদায় করতেন। তাঁর জীবনে এমন দিন খুব কমই গেছে যেদিন তিনি কোন গরিব বা ভিক্ষুককে খাওয়াননি। মানুষের জন্য তাঁর ছিলো চরম সহমর্মিতা। কারো কোন কষ্টের কথা শুনলেই মা কাঁদতেন। তাদের স্বান্ত্বনা দিতেন।



মা মারা যাওয়ার পর আমার ছোট বোন জানালো, কয়েকদিন আগে নাকি সকাল ১১ টার দিকে এক ভিক্ষুক আমাদের বাসায় এসে মাকে বললো তার খুব খিদে লেগেছে। ১১ টার সময় রান্না থাকার কথা নয়, তাই বাসায় ভাত নেই। কিন্তু আমার মা গরম ভাত রান্না করে তাকে খাইয়ে বিদায় করলেন। এমন হাজারো ঘটনা আছে আমার মায়ের জীবনে। ছুটিতে বাসায় গেলেই মা আমার কাছে বলতেন হাসান টাকা দে তো। আমি বলতাম মা কি করবে? তিনি হাসতেন। সেই টাকা চলে যেতো গরীবদের কাছে। আমরা বাসায় আছি-ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছি-হঠাৎ দেখি কোন এক ভিক্ষুক। আমরা তাকে বলি মাফ করো। সে বলে, তোমার মাকে ডাকো। তোমার মা আমাদের কখনো খালি হাতে বিদায় করে না। আমরা চুপসে যাই তখন। মাঝে মাঝে এ নিয়ে মায়ের সাথে ঝগড়াও বাঁধে। বলি মা ভিক্ষকু-গরিব এরা কি তোমার বান্ধবী? সবসময় এতো জ্বালাতন করে কেন? মা হাসে। প্রতিবেলা রান্নার আগে মা পুরনো ভাত বাইরে কাক বা শালিককে দিতেন। মার রান্না করার সময় রান্নাঘরের সামনে সবসময় পাখি থাকতো। মা প্রচুর বই পড়তেন। তাঁর কারনেই ছোটবেলা থেকে আমরা ভাই বোন প্রুচর বই পড়তাম।



আমাদের পরিবারে দুঃখ কষ্ট সেভাবে ছিল না। বেশিরভাগ সময়েই ছিল আনন্দ উচ্ছলতা। কিন্তু এতো আনন্দের মধ্যেই আমার মাটা চলে গেলো আমাদের ছেড়ে। আমরা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি সে এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবে। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সকাল সোয়া সাতটায় আমার মা মারা যায়। সেন্ট্রাল হাসপাতালে আমার ছোটবোনটার কান্না দেখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে। আমরা দুই ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারনে ওই বাসায় বেশি থাকতো। ওর কতো আফসোস মাকে নিয়ে। ও হাসপাতালে মাকে সুস্থ্যে দেখে, রাতে খাইয়ে বাবার সাথে চট্টগ্রাম গিয়েছিল ভর্তি হতে। এসে দেখে মা আর নেই।



এসএসসি পাস করার পর কলেজ, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ বছর ধরে আমি বাসার বাইরে। এরপর আবার সাংবাদিকতা। তাই বছরে খুব কম সময় বাসায় গিয়ে থাকতে পারতাম। কিন্তু যখন যেতাম মা আমায় নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে উঠতেন। কি খাওয়াবেন কি করবেন দিশা পেতেন না। আমি ফেরার সময় মায়ের চোখ ছলছল করতো। ভাবতে কষ্ট হয়, সেসব দিন আর কখনো ফিরে আসবে না।



মায়ের কথা মনে করে আমার বাবা কখনো আমাদের সামনে মন খারাপ করেন না। আমরা বুঝি প্রতিমুহুর্তে কতোটা কষ্ট তিনি পান। আমি আমার ছোটবোনের সামনে কাঁদতে পারি না মাকে নিয়ে। কিন্তু আমি বুঝি আমরা সবাই কাঁদি সবাই সবাইকে আড়াল করে। এই কান্না কখনোই হয়তো শেষ হবে না।



ফরদেপুরের বালিয়াডাঙ্গী ঈদ গা মাঠের কবরে এখন আমার মা শুয়ে আছেন। তিনি এখন সব কিছুর উর্ধ্বে। মা কি দেখছে তাঁর সাজানো পরিবারের এখন কি অবস্থা। এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোনভাবেই মায়ের হঠাৎ চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারি নাই। ভাবলেই তাই কষ্ট হয়। আল্লাহ তাকে শান্তি দিক। মা আমরা সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি ভালো থাকো মা। ভালো থাকো।







মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ২:০১

টিনটিন` বলেছেন: আল্লাহ আপনার মায়ের আত্মাকে শান্তি দিক।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ২:১৭

আবদুল্লাহ আল মনসুর বলেছেন: তুমি ভালো থাকো মা। ভালো থাকো।

৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ২:১৯

আবদুল্লাহ আল মনসুর বলেছেন: আল্লাহ্ মাকে চির শান্তির বেহেশত নসিব করুন.. আমিন..

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ২:২১

মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেছেন: আমারও আপনার মতো অবস্থা। সামান্য অসুস্থতায় মাত্র ৪৫ বছর বয়সে আমার মা ইন্তেকাল করেন। যার মা নেই তার মনের অবস্থা কি তা আমি অনুভব করি।
মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্ত যেনো ভাই,
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভূবনে নাই।
মহান আল্লাহ তায়ালা আপনার/আমার/সকলের মা'কে জান্নাতবাসী করেন, আমিন।

৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ২:৫২

কালের সাক্ষী বলেছেন: মা শুধুই মা.... মা তোমাকে অনেক ভালবাসি..........

হে আল্লাহ, মা'কে আপনি জান্নাতবাসী করুন, আমিন।

৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:৫৩

এখন ও বৃষ্টি ভালবাসি বলেছেন: চোখটা ভিজে উঠল ।আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমার মা চলে গেলে আমি কী ভাবে থাকব ।

৭| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২৮

মাহবুব রনী বলেছেন: আল্লাহ আপনার মাকে বেহেশত নসিব করুক। এই দোআ করি।

৮| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২৫

পারভেজ বলেছেন: আপনার মা যেন পরকালেও তার সেই মমতায় সবাইকে বাঁধতে পারেন; নিশ্চই আল্লাহ তাকে শান্তিতে রেখেছেন।

৯| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৩১

কাজ করে খাই বলেছেন: মা -

চির শান্তিতে থাকবেন আপনার মা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.