নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরব কথামালা

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে আসতেই হয়, ভাবনা প্রকাশে......!

এম এ হাসান মাহামুদ

লেখালেখির মোটামুটি ইচ্ছে থেকেই ব্লগে ঢু মারি। ভাল লাগে বই পড়তে আর নিজের ইচ্ছে মতো লিখতে।

এম এ হাসান মাহামুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্লগাররা কতটা নিরাপদ? মুক্তমত প্রকাশে গলাটেপা রোধ কার দায়িত্ব?

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯



১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের (পূর্ব পাকিস্তান) স্বাধীনতা অর্জন যখন আর কয়েকটা ঘন্টার ব্যাপার, তখন বেছে বেছে হত্যা করা হল, দেশের সকল বুদ্ধিজীবীকে। এদেশের দোসরদের সহায়তায় একটি দেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য নাটক মঞ্চায়ন করেছিল হায়েনারা সেদিন। রাজাকার, আলবদর, আল সামস নামে পরিচিত সেই দোসররা স্বাধীনতার পরও বেঁচে ছিল। প্রকাশ্যে কর্মকান্ড চালাতে না পারলেও তাদের অন্তরের বিষ কিন্তু ক্ষয়ে গেছিল না।



তুরস্কের এক শাসক একবার নিয়ম করলো, ওই দেশে সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ভাষায় ধর্ম চর্চা করতে পারবেন। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, সৃষ্টিকর্তা কোনো ভাষা দিয়ে ধর্ম প্রবর্তন করেননি। নিয়ম মোতাবেক, পবিত্র কুরআনও নিজ ভাষায় পড়তে বলা হল। কিন্তু এতে তৎকালীন কিছু আলেম (সবাই নয়) বিরোধীতা করলেন এবং ফতোয়া দিতে থাকলেন। শাসক ভাবলেন, এদের দ্বারা কখনো উন্নতি সম্ভব নয়, আবার এদের রেখেও সম্ভব নয়। এসব ভেবে তিনি বৃহৎ জাহাজে রাতের বেলা একটি রাজকীয় ভোজের আয়োজন করলেন। ফতোয়া দানকারী সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হলো সেই ভোজে। খাওয়া যখন শেষ হলো, শাসকের নির্দেশে জাহাজটি ডুবিয়ে দেয়া হলো। এরপর প্রবর্তিত এই নিয়ম সবাই মানতে শুরু করলো এবং দেশটি একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হয়েছিল। কারণ এরপরের অনেক বছর দেশটিতে পুরোপুরি না বুঝে এবং না জেনে কেউ বিরোধীতা করতো না। ভাল কাজে বাহ্বা আসতো, খারাপ কাজেও বিরোধীতা হতো, তবে অবশ্যই গঠনমূলক। আর যারা প্রথম থেকেই গঠনমূলক কথা বলতো বা মতামত জানাত, তারা সম্মানিত আসনে আসীন হয়েছিল। মুসলিম বিশ্বে তুরস্ক এখনো অন্যরকম পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত।



কিন্তু আমাদের দেশে তা হয়নি। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতাকারী এবং রাজাকারদের তালিকা চেয়েছিলেন দলের কর্মীদের কাছে। তখন প্রায় ৩৯ হাজার ব্যক্তির তালিকা হয়েছিল। কিন্তু প্রাথমিক এই তালিকা আবারো যাচাই-বাছাই করা হয়। এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯ হাজারে। এরপর আরো কয়েকবার এই তালিকা যাচাই-বাছাই করে মাত্র ১১০ জনের সর্টলিষ্ট বঙ্গবন্ধুর হাতে দেয়া হয়। তখন তিনি রাগ করে এই তালিকা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। ফলাফল, এই দেশে মীলজাফরদের দল স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে গেল। এরপর বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন সরকারের আমলে আরো অনেক গল্প রচিত হয়েছে এদের নিয়ে। চূড়ান্ত ফলাফল, তারা দেশের নীতিনির্ধারনী পর্যায়েও আসীন হয়েছে।



১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনারা যখন বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল, তখন পাকিস্তানের কিছু নাগরিক এর বিরোধীতা করেছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা, অপ্রয়োজনীতা লেখনিতে তুলে ধরেছিলেন। সারাবিশ্বে তাদের এই লেখনি ছড়িয়ে পড়লে পাকিস্তান সরকারের সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন ভাবে নিপীড়িত করা হয়েছিল। বিজয়ের এতো বছর পর, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিভিন্ন বিদেশী বন্ধু এবং সাহায্যকারীদের সম্মাননা জানানো হচ্ছে। এবার সম্মাননা জানানো ৬৯ বিদেশী ব্যক্তিদের মধ্যে ১১জন পাকিস্তানীও রয়েছে। এদের মধ্যে নাসিম আখতার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। ’৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট নামের গণহত্যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন তিনি। উত্তাল মার্চের শেষ সপ্তাহে লাহোরের মল রোডে গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন। পুরো পরিবার ও গ্রামের পৈতৃক বাড়ির লোকজন তার কারণে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেছেন। গতকাল সম্মাননা নেয়ার পর সাংবাদিকদের আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা তখন গাদ্দার ছিলাম। বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আজ তোমরা, বাংলাদেশ সরকার ডেকে এনে সম্মাননা দিলে, আজ আমি খুব খুশি। এর চেয়ে বড় পাওয়া জীবনে আর কি হতে পারে।’ হুইল চেয়ারে বসা এই নারীর চোখে যে আজো ভাসে ’৭১-এর নির্মমতার দৃশ্য! নাসিম আখতারের স্বামী রাজনীতিবিদ ও চিত্র নির্মাতা শামিম আশরাফ মালিক। তিনিও স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন। তার মরণোত্তর সম্মাননা নেন ছেলে জাফর মালিক। এদিকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সামরিক জান্তার হাতে গ্রেফতারকৃতদের মামলা পরিচালনা করতেন আইনজীবী জাফর মালিক। তিনিও নিজ হাতে সম্মাননা নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে পাকিস্তানের ৪৩ জন বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তিনিও এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে দল গড়ে তোলেন। যার কারণে তিনি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে চরম বিড়ম্বনার শিকার হন।



ভাল কাজের ফলাফল দেরীতে হলেও পাওয়া যায়। কখনো কখনো তা সঙ্গে সঙ্গেই আসে। যেমন পেয়েছিল তুরস্ক। আর আমাদের দেশ এখনো একাত্তরের ঘাতকদের জের টানছে। ৪২ বছর হলেও এদের বিচারের কাঠগড়ায় আনা হয়েছে। দল-মত-নির্বিশেষে এই বিচার হওয়া উচিত। কোনো নির্দিষ্ট দলের বা গোষ্ঠীর হতে হবে এমন তো কথা নেই। তবে এর মধ্যে নতুন একটি সুর উঠেছে ‘ব্লগারদের বিচারের আওতায় আনা হোক’। অবশ্য গুটিকয়েক লোকজন এটা চাইছে। গত ২৩ মার্চ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সমাবেশে ওলামা-মাশায়েখরা এই দাবি জানিয়েছেন। যদিও অল্পকিছু লোক চাইছে, কিন্তু এর প্রভাব পড়ছে বেশি। এরই মধ্যে ব্লগারদের হত্যাও করা হয়েছে। কারো কারো উপর আক্রমণ হয়েছে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবার রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মুক্তমত প্রকাশের আরো বেশি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমাদের দেশে খুব বেশি দিন হয়নি ব্লগিং শুরু হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সেই নব্বই দশক থেকে ব্লগিং চলছে। ওসব দেশে এখনো ব্লগিং নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন হয়নি। এমনকি আমাদের দেশের মতো অতটা তদারকির আওতায় রয়েছে কিনা আমার ঠিক জানা নেই। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রককারী সংস্থা বিটিসিএল একটি ব্লগ সাইটের কাছে নির্দিষ্ট কিছু ব্লগারের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে। এটি কি জন্য তা অবশ্য আমার জানা সম্ভব হয়নি। এ কিছুদিন আগে কিছু সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেগুলো এখনো সচল হয়নি। কবে নাগাদ হবে তার কোনো ব্যাখ্যা আসেনি।



এবার একটু অন্য দিকে নজর দেয়া যাক। ২০১১ সালে একযোগে দেশের প্রায় সকল জেলা বাতায়ন হ্যাক হয়েছিল। সরকারি তথ্য মতেই, এ পর্যন্ত সরকারের প্রায় গুরুত্বপূর্ণ সকল ওয়েবসাইট (মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থা) হ্যাক হয়েছে। এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বেশকিছু ওয়েবসাইট একাধিকবার হ্যাক হয়েছে। দুর্বল ডোমেইন ব্যবহার এবং নিয়মিত তদারকির অভাবে অহরহ হ্যাকিংয়ের ঘটণা ঘটছে দেশের বিভিন্ন ওয়েবসার্ভারে। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে হ্যাকিং প্রতিরোধে তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় হ্যাক করে পার পেয়ে যাচ্ছে হ্যাকাররা। এখন পর্যন্ত্র বড় ধরণের কোনো ডিজিটাল নাশকতা না হলেও সরকারি সাইটগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত আইটি বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত হ্যাকাররা এসব সাইট থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য না নিলেও তথ্য বিভ্রাট ঘটিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারের ইমেজ নষ্ট করতে পারে। পাশাপাশি সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে কোনো সময় মারাÍক হুমকির মুখে পড়তে পারে। সরকারি কাজের একমাত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বিজিপ্রেসের নিজস্ব ওয়েবসাইট হ্যাক হয় গত বছরের জুন অথবা খুব সম্ভবত এপ্রিলে। আজ পর্যন্ত ওই ওয়েবসাইট উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ কর্তৃপক্ষ বিফল হয়ে বিকল্প ওয়েবসাইট চালুর কাজ করছে। এই ওয়েবসাইটটিও চলতি বছরের জুনের আগে চালু হবে না বলে সংস্থাটির খোদ পরিচালক জানিয়েছেন। (এ বিষয়ক সংবাদের লিংক নীচে দেয়া হয়েছে)। এখন কথা হচ্ছে, সরকার আসলে তথ্যপ্রযুক্তির সুরক্ষার ক্ষেত্রে কতটা আন্তরিক বা সফল হতে পেরেছে। স্বাভাবিকভাবে এই প্রশ্ন সামনে আসছে, যখন একের পর এক ব্লগ সাইট বন্ধ হচ্ছে। যখন ব্লগাররা জীবনের অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। সেক্ষেত্রে যদি বলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবাই ভোগ করবেন। তবে তুরস্কের মতো সরাসরি বলা যাবে না, সেটাও কতটা যুক্তিযুক্ত হবে?



ব্লগিং কারা করে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তরুন সমাজই নিজেদের ভাবনাগুলো প্রকাশের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির একটি মাধ্যম ব্যবহার করে মাত্র। বর্তমানে অনেক পেশাজীবী, রাজনীতিকরাও ব্লগিং করে। তবে এই সংখ্যা তরুনদের চেয়ে অধিক নয়। যদি বাংলাদেশে তথা পৃথিবীতে নতুন কিছু করতে হয়, বিপ্লব আনতে হয় তরুনদের কোনো বিকল্প নেই। শাহবাগের ‘প্রজš§ চত্বর’ যার সর্বশেষ অতি জ্বলন্ত উদাহরণ।

যখন ব্লগিংয়ের সুবিধা ছিল না, তখন কি আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবী চর্চ্চা হয়নি? মতামত প্রকাশ হয়নি? তখন উপসম্পাদকীয়-এর জন্য কয়টা পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে?

ব্লগিং ছাপার অক্ষর ছাড়া একটি পত্রিকা, হেডলাইন ছাড়া একটি অনলাইন নিউজসাইট, সরাসরি জবাবদিহীতা ছাড়া লেখা একটি কাজগের খাতা মাত্র। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ আনা কতটা যুক্তিকর তা অবশ্যই আমাদের নীতিনির্ধারকরা বিবেচনা করবেন। তবে একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে এতটুকু বলতে পারি, যদি খুব প্রয়োজন হয়, কেন্দ্রিয়ভাবে ব্লগিং সাইটগুলোতে তদারকি বাড়ান, আপত্তিকর ব্লগিং আপ হলেও সরিয়ে ফেলুন, কটুক্তিকর লেখা সরিয়ে ফেলুন। কিন্তু ব্লগারদের গলা টিপে ধরবেন না। কারণ বুক থেকে একবার যে শব্দ বেরিয়ে গেছে তা উচ্চারিত হবেই, যতক্ষণই আপনি গলাটিপে রাখুন না কেন।



লিংক ১:

http://manobkantha.com/2013/03/09/111146.html



লিংক ২:

Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.