![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মেধাবী তরুন এবং দেশের জন্য নিবেদিত প্রান মানুষ । তারা কাজ করে কোন কিছুর পাওয়ার আশা ছাড়াই । এদের বেশির ভাগই থাকে লোক চক্ষুর অন্তরালে । কালে ভদ্রে কিছু লোককে আমাদের সামনে নিয়ে আসে এদেরকে আরেক সাদা মনের মানুষ । তেমনই এক সাদা মনের মানুষ জাহিরুল ইস লাম খান । তৎকালীন প্রথম আলোর সাংবাদিক । তার জবানিতেই তুলে ধরা হল তার সেই কাজের কথা
মানুষের কাছে চলো, মানুষের কথা বলো-০১:
জাহিরুল ইসলাম খান
সাদা মনের মানুষ আব্দুল মালেক হাওলাদারকে নিয়ে আমার স্মৃতিচারণ এই লেখাটি। ২০০৭ সালে ইউনিলিভারের আয়োজনে দেশব্যাপী ‘সাদা মনের মানুষ’-এর খোঁজে লেখা আহবান করা হয়। বাছাইয়ে আমার পাঠানো লেখাটি মনোনীত হয় এবং এনটিভি থেকে সরেজমিনে এসে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে যা এই পোস্টের ভিডিওতে দেয়া আছে, দেখলে ভালো লাগবে। পরে চূড়ান্ত বাছাইয়ে সারা দেশের মধ্যে ১০ জন সাদা মনের মানুষের মধ্যে একজন নির্বাচিত হওয়ার পর শ্রদ্ধেয় আব্দুল মালেককে এক লক্ষ টাকা, একটি স্বর্ণের মেডেল উপহার দেয়া হয়। আর মনোনয়নকারী হিসেবে আমাকে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। যা আমার জীবনের অন্যতম একটি বড় পাওয়া।
কয়েক বছর আগেই শ্রদ্ধেয় আব্দুল মালেক এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার সাথে অনেক স্মৃতি। বিশেষ করে প্রথমে যখন সংবাদের খোঁজে যাই তখন তিনি চাননি তার কোন প্রচার হোক। অনেক কষ্ট করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়েছে।
ঢাকায় যখন পুরস্কার আনতে আমি আমি তিনি যাই তখন আমাদের রাখা হয় বিলাসবহুল একটি হোটেলে। প্রায় একশ’ বছর বয়সী আব্দুল মালেক যেমন তাজ্জব, তেমন আমিও অবাক। আমার হাত চেপে ধরে বললেন, এই জীবনে এত সুন্দর জায়গা এনে এত সম্মান পাওয়ার ব্যবস্থা যে তুমি করে দিয়েছে আমি তা কোন দিনও ভুলবো না। পরে বিশাল আয়োজনে অনুষ্ঠানের মঞ্চে ঘোষণায় দেখলাম সারা দেশের মধ্যে আব্দুল মালেকের নাম প্রথম স্থানে। পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সেই টাকাগুলো নেই, কিন্তু এখনও হৃদয়ে আছে সেই কষ্টের স্বীকৃতি। কারণ আমিওতো অনেক কষ্ট করে প্রতিবেদন তৈরি করেছিলাম। সেই সাদা মনের মানুষ আজ পৃথিবীতে নেই, কিন্তু তার অবদানতো রয়েই গেছে।
২০০৩ সালে লেখা আমার প্রতিবেদনটি সকলের জন্য ফেসবুকে দিলাম:
‘শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে: ‘আব্দুল মালেকের পাঠশালা’
জহিরুল ইসলাম খান: ৫৪ বছর যাবত প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আব্দুল মালেক। এলাকাবাসী বলে ‘আব্দুল মালেকের পাঠশালা’। স্কুলের অবকাঠামো বাঁশ ও পাটখড়ির বেড়া, উপরে জরাজীর্ণ টিনের ছাউনি। বাঁশ ও পাটখড়ি ছুটে গেছে; ভাঙ্গাচোরা টিনের ফাঁকা দিয়ে বৃষ্টির দিনে অঝোর ধারায় পানি পড়ে। দিনের বেলাতেও এই পাঠশালায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ, একই রকম অবস্থা বিগত ৫৪ বছর যাবত। সময়ের পরিবর্তনে সব কিছুর পরিবর্তন হলেও পরিবর্তিত হয়নি আব্দুল মালেকের পাঠশালা। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে এলাকার মানুষের শিক্ষার ক্ষেত্রে। এক সময় এই পাঠশালায় লেখাপড়া করেছেন এমন অনেকেই হয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তা, ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা, কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। বয়সের ভারে ন্যুব্জ আব্দুল মালেক আজও তার জরাজীর্ণ পাঠশালায় শিশুদের যতœ সহকারে ভবিষ্যত গড়ার কারিগর হিসেবে তৈরির কাজে নিমগ্ন।
সরেজমিন মাদারীপুর সদর উপজেলার মিঠাপুর গ্রামে আব্দুল মালেকের পাঠশালায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী ৩৫/৪০ জন শিশু-কিশোর লেখাপড়া করছে। শিক্ষক একজনই আব্দুল মালেক হাওলাদার (৯০)। প্রাকৃতিক বা অন্য যে কোন বাধা উপেক্ষা করেই এ বয়সেও শিশু-কিশোরদের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫৪ বছর যাবত নিরবে নিভৃতে এলাকার মানুষের শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে এই মানুষটি। প্রথম শ্রেণী থেকে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত সব শ্রেণীর ছাত্রই আছে তার স্কুলে। মূলত: এলাকার যে সকল শিশু-কিশোর পড়াশোনার ক্ষেত্রে অমনযোগী তাদের অভিভাবক দ্বারস্থ হয় আব্দুল মালেকের পাঠশালায়। কারণে এখানে আব্দুল মালেক তার নিজস্ব আলাদা পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। একজন শিক্ষার্থীকে নাচ, গান, অভিনয়সহ সব ধরণের শিক্ষায় শিক্ষিত করে। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী হাইস্কুল থেকে নবম শ্রেণীতে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর ব্যবস্থা করেন। এভাবে গত ৫৪ বছরে তিনি নিজ হাতে বিকশিত করেছেন অসংখ্য মেধাবীকে। যারা পরবর্তী জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মানুষের মত মানুষ হয়েছে।
স্কুল শুরুর কাহিনী: তৎকালীন সময়ে প্রাইমারী স্কুল খুব একটা ছিল না। এলাকার মানুষের শিক্ষার কথা চিন্তা করেই প্রথমে ৪/৫ জন ছাত্র নিয়ে শুরু করে এই স্কুল। আস্তে আস্তে এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ওই গ্রামে ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হলেও আব্দুল মালেকের স্কুলের জনপ্রিয়তা কমেনি। বিশেষে করে অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা নিশ্চিন্তে লেখাপড়ার ভার আব্দুল মালেকের হাতে ছেড়ে দিতে পারতেন। মিঠাপুর গ্রামের যুবক মাসুদুর রহমান জানান, আমি শুনেছি আমার দাদা এই স্কুলে লেখাপড়া করেছে, আমার বাবাও লেখাপড়া করেছে; আমি এবং আমার বড় ভাই দু’জনেই লেখাপড়া করেছি। বর্তমানে আমার ভাতিজি লেখাপড়া করছে।
নিরক্ষর থেকে ২ বছরেই ১ম বিভাগে এসএসসি পাশ : শিক্ষক আব্দুল মালেকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, অসংখ্য ছাত্র তার এখানে থেকে লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন পেশায়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাসহ সব ধরণের পেশাজীবী। যাদের অনেকেই পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে এক সময় পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, তার এক সময়কার ছাত্র আক্তার হোসেনের নাম। বর্তমানে তিনি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। অথচ এই আক্তার হোসেন ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত কোনদিন বই নিয়ে পড়তে বসেনি। আব্দুল মালেক তাকে সেই ১৬ বছর বয়সেই তার স্কুলে এনে ভর্তি করিয়ে দেন। এর ১ বছর পরই মেধাবী আক্তার হোসেনকে পার্শ্ববর্তী মিঠাপুর এল.এন. উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন এসএসসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশনের জন্য এবং পড়াশোনা চলতে থাকে আব্দুল মালেকের পাঠশালায়। পরের বছর অর্থাৎ ২ বছর আব্দুল মালেকের স্কুলে অধ্যয়ন করেই আক্তার হোসেন প্রথম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে আব্দুল মালেকের হাতে গড়া সেই আক্তার হোসেন মাদারীপুর সদর উপজেলার চরমুগরিয়া মার্চেন্ট স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক।
ওসি সিরাজুল ইসলামও এক সময় লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিল। ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ৩ বছর পড়ালেখা থেকে দূরে থাকার পর বাবা-মা তাকে নিয়ে আসে আব্দুল মালেকের পাঠশালায়। সেখান থেকে পড়াশুনা করার পর এসএসসি পাশ করে সিরাজুল। বর্তমানে সে পুলিশের ওসি হিসেবে কর্মরত আছেন। বছর খানেক পূর্বে এসে সে আব্দুল মালেকের সাথে দেখা করে গেছে বলে জানালেন। সাবেক যুগ্ম শিক্ষা সচিব জালালউদ্দিন আহমেদের শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি তার চাচা আব্দুল মালেকের হাতে। তার নাতি নাট্যকার এজাজকে ছোটবেলা তিনি নাটক ও অভিনয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
তার স্কুলে এক সময় অধ্যয়ন করেছে এমন অনেকেই হয়েছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তা, ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। চন্ডবর্দী গ্রামের ব্যাংকার আবু তাহের হাওলাদার, দুধখালী গ্রামের এসআই বাকিবুল্লা, মিঠাপুর গ্রামের ব্যাংকার আজাহার খান, ডাক্তার আবুল কালাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এক সময় আব্দুল মালেকের পাঠশালায় লেখাপড়া করেছেন।
স্কুলের বর্তমান অবস্থা: দিন দিন শারীরিক বার্ধক্যের সাথে সাথে স্কুলেরও বার্ধক্য এসেছে বলে জানালেন আব্দুল মালেক। আর্থিক দৈন্যতার কারণে স্কুলগৃহ মেরামত করতে পারছেন না। জীবনের শেষ দিনগুলো ছাত্রদের শিক্ষা দিয়েই কাটাতে চান। বর্তমানে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৪২ জন। স্কুলগৃহের বর্তমানের অবস্থার পরিবর্তনেও কোন আশা করছেন না আব্দুল মালেক। সরকারী সাহায্যের চেষ্টাও করেন নি কোন দিন। আব্দুল মালেক জানালেন, নিজের ছেলেকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক বানিয়েছেন যিনি বর্তমানে মাদারীপুরের সরকারী ইউ.আই. উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
প্রচারবিমূখ আব্দুল মালেক এলাকার মানুষের শিক্ষাকে বড় করে দেখেছেন সব সময়। ৫৪ বছর অতিবাহিত করলেও পাওয়া না পাওয়াকে হিসেব করে দেখেননি বলে জানালেন তিনি। এক সময় স্কুলের লেখাপড়া ছেড়ে দেয়া অনেকেই তার স্কুলে পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এটা তার সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয়। সদর উপজেলার মিঠাপুর ও আশপাশ গ্রামের মানুষের জন্য তার স্কুল এতদিন অবদান রাখলেও এখন পর্যন্ত তিনি তৈরি করতে পারেননি এমন কাউকে যে নিঃস্বার্থভাবে তার অবর্তমানে স্কুলটিকে পরিচালিত করবে। এটাই একমাত্র অপ্রাপ্তি বলে জানালেন শিক্ষক আব্দুল মালেক।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৪২
পথিক শোয়েব বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ । সাদা মনের মানুষ আব্দুল মালেক হাওলাদার আমার আপন দাদা , দোয়া করবেন তার জন্য .।.।.।.।.।।।
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৪৬
আমিই মিসির আলী বলেছেন: আব্দুল মালেকের জন্য দোয়া রইলো ।
ভালো লাগলো।
++++++++
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:১৭
প্রামানিক বলেছেন: এরকম মানুষ কোটিতে একটা পাওয়া মুশকিল। সাদা মনের মানুষই বটে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৯
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লাগল।
++++++