![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোয়েব হাসান
১
সেই ভয়ংকর অনুভূতিটা আবার ফিরে এসেছে। গত তিন দিন ধরেই এটা হচ্ছে। ঢাকার ব্যস্ততম রাজপথে দাঁড়ানো এখন অনিন্দ্য। কিন্তু তার মনে হচ্ছে কোনো এক অশরীরী তাকে ফলো করছে। এমন ব্যস্ত রাজপথেও যে ভৌতিক কোনো ব্যাপার ঘটতে পারে ধারণা ছিল না তার।
ভার্সিটি যাবে বলে বের হয়েছিল। কিন্তু মনটা খারাপ হয়ে গেছে। আজ আর যাবে না সিদ্ধান্ত নেয়। গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল। চিন্তা করে সে, কি কারণে তার সঙ্গে এমন হচ্ছে। কোনো কারণ খুঁজে পায় না। এতে তার অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়।
গত তিনদিন আগে একটা বই কিনে এনেছিল নীলক্ষেত থেকে। সেই বইয়ের সাথে কি এর কোনো যোগসূত্র আছে, না অন্য কিছু। গতকাল সন্ধ্যা হবে হবে। তখন সে তাদের বাসার ছাদে । চারতলা বাসা। একদম উপরের তলায় শুধু ছাদ কমপ্লিট হয়েছে। এখনও দেয়াল তোলা হয়নি। সে ছিল তিনতলার ছাদে। এমন সময় দেখে বিশাল দুটো পা ঝুলে আছে চারতলার ছাদ থেকে। মনে হচ্ছিল চারতলার ছাদে কেউ পা ঝুলিয়ে বসে আছে। কিন্তু এতবড় পা সাধারণ মানুষের হবে না।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার দুটো পায়ের পাতায় আঙুল চারটা করে। পা দুটো প্রায় তিনতলার ছাদ পর্যন্ত নেমে এসেছে। প্রথমে দেখার ভুল মনে করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আজ নিয়ে পরপর তিনবার ঘটলো এমন অদ্ভুত ঘটনা। একদম প্রথম দিন যেটা ঘটেছিলো সেটা হলো। নীলক্ষেত থেকে কিনে আনা বইটা নিয়ে। তার স্পষ্ট মনে আছে, সে বইটা পড়ে বালিশের পাশে শোবার আগে রেখেছিল। ঘুমানোর আগে শুয়ে শুয়ে বই পড়ার অভ্যাস আছে তার। কিন্তু সকালে উঠে দেখে বইটা টেবিলে। বাসার কেউ তার রুমে আসতে পারবে না। কারণ সে ঘুমানোর আগে রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমায়।
ব্যাপারটা অদ্ভুত লেগেছিল সেদিন তার কাছে। পরপর এমন রহস্যজনক ঘটনা অনিন্দ্যকে চিন্তায় ফেলে দিল। সে একটা রিকশা ডাক দেয়। বাসায় ফিরতে হবে। নাহ বাসায় যাবে না এখন। তার একটা ফ্রেন্ড আছে ওর বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আসবে সে।
রিকশায় ওঠার আগমুহূর্তে ফুটপাথের দিকে চোখ যায়। একটা কালোমতো শুকনো লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে। মধ্যবয়সী, ব্রিটিশ আমলে হিন্দু লোকেরা যে ধরনের শর্ট পাঞ্জাবি পরতো, তেমন একটা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরা। কেমন অদ্ভুত লাগছে তাকে এই ড্রেসে। একটা অসামঞ্জস্যতা।
হুম তার চোখ দুটো অস্বাভাবিক। ভাটার আগুনের মতোই যেন জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। যক্ষ্মারোগীদের এমন উজ্জ্বল চোখ হয়। চারদিকে তাকায় অনিন্দ্য। লোকজন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে নিশ্চিন্ত মনে। তার মানে কারও চোখে পড়েনি এই অদ্ভুত লোকটা। পড়লে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও থমকে দাঁড়াতো। হয়তো যান্ত্রিক শহরে সবাই যান্ত্রিক হয়ে গেছে। এসব ছাইপাস দেখার টাইম নেই কারও।
সে রিকশাওয়ালাকে তাগাদা দেয় চালানোর জন্য। রিকশা ছুটে চলে ...পিছন ফিরে আবার দেখে অনিন্দ্য। লোকটার পায়ে কোনো জুতো নেই... আরও অবাক হয় তার পায়ের আঙুল চারটা করে...।
২
রাতে ঘুম ভাঙে কোনো কিছুর শব্দে। রুমে লাইট জ্বালানো নেই। কিন্তু আবছা একটা আলোতে রুম আলোকিত হয়ে উঠেছে। অনিন্দ্য উঠে বসে খাটে। তার চেয়ারে একজন লোক বসে টেবিলে উপুড় হয়ে এক মনে কি যেন লিখে যাচ্ছে। অনিন্দ্য ভীত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে-
-কে? কে আপনি?
লোকটা অনিন্দ্যের দিকে ফিরে তাকায়। বিরক্ত হয়েছে কাজে বাঁধা পেয়ে। ভাব-সাবেই বলে দিচ্ছে তা।
-বলুন কে আপনি। আমার রুমে ঢুকলেন কীভাবে?
-আমি নরেন্দ্র রায়।
- নরেন্দ্র রায় তো আমি সেদিন যে বইটি কিনে এনেছি তার লেখকের নাম। আপনি কে?
- আমিই লেখক নরেন্দ্র রায়।
ভয় আর কৌতূহল একসাথেই পেয়ে বসে অনিন্দ্যকে। সে কি জেগে আছে না স্বপ্নে দেখছে এসব! শুনেছে হ্যালুসিনেশন হলে মানুষ আবল-তাবল সব জিনিস দেখে। তার মাথায় কি গণ্ডগোল দেখা দিচ্ছে নাকি ইদানীং।
- নরেন্দ্র রায় তো সেই কবেই মারা গেছে, আপনি নরেন্দ্র রায় হন কীভাবে?
- আমার আত্মা অমর।
- দেখুন আপনি যা তা বলবেন আর আমি বিশ্বাস করছি , সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি জানি আপনি আমার কল্পনার সৃষ্টি। আমার মস্তিষ্ক আপনাকে কল্পনা করে আমার সামনে দাঁড় করিয়েছে, হ্যালুসিনেশন এটা।
ঈষৎ বাঁকা হাসি নরেন্দ্র রায়ের মুখে
- আমি তোমার কল্পনা না অনিন্দ্য,
- তাহলে কি চান আমার ঘরে?
- আমি যখন বেচে ছিলাম, আমার লেখা কেউ বই আকারে বের করতে চায়নি। পড়েই দেখতো না কোনো প্রকাশক।
- আপনার এই বইটা তাহলে তো প্রকাশিত হয়েছে। কীভাবে?
- হ্যাঁ এটা প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু আমি মারা যাওয়ার পর। এক ভক্ত ছিলো। যে আমার লেখাগুলোর পাঠক ছিলো। পরে অনেক চেষ্টা তদবির করে একে ওকে ধরে বই প্রকাশ করতে সে সক্ষম হয়।
- ওহ
- তাই আমি মারা যাওয়ার পর এখন লিখি, প্রচুর লিখি।
- আপনি তো অশরীরী আত্মা, আপনি লেখেন কীভাবে।
- আমার সমস্যা হয় না লিখতে।
- আচ্ছা লেখেন বুঝলাম, কিন্তু প্রকাশ করেন কীভাবে আপনি সেই লেখা?
- এই যে এখন মাত্র একটা পাণ্ডলিপি প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু তুমি বাঁধা দিলে শেষ করতে পারলাম না।
নিজের শরীরে ভয়ের শিহরণ অনুভব করে অনিন্দ্য। গতকাল বিকেলের কথা মনে পড়ে তার। রাস্তায় দেখা সেই ভয়ংকর লোকটার কথা। তার সাথে হুবহু মিল এই লোকটার। তার মানে গত এই কয়দিন যা যা ঘটেছে, নীলক্ষেত থেকে কিনে আনা ‘প্রেত’ বইটার সাথে যোগসূত্র আছে। সব গণ্ডগোলের মূলে এই বইটা।
অনিন্দ্য বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালায়। সঙ্গে সঙ্গে লোকটা উধাও। কোথাও তার টিকিটিও খুঁজে পাওয়া গেলো না। তার মানে এতক্ষণ সে যা দেখেছে সবই তার মনের কল্পনা। সে টেবিল থেকে প্রেত নামক বইটা নামায়। আগুনে একটু একটু করে পুড়ে ফেলে পুরো বই। মনে এক রকম শান্তি পায়। এই বইটা সে শেষ করতে পারেনি পড়ে। একটু আফশোস থেকে গেলো। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টিকারী কিছু রাখাটাও ঠিক না।
বেশি ভূতের গল্প পড়ে বলে হয়তো তার এই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু ভূতের আর রহস্য গল্পগুলো অদ্ভুতভাবে টানে তাকে। বই কিনতে গেলেই হাতে ভূতের বই উঠে আসে তার। যাইহোক আপদ বিদায় হয়েছে এই বেশি। বিছানায় ওঠে সে। ঘুমাবে এখন সে। কিন্তু চোখের আড়ালে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র রায় তার সেই বাঁকা হাঁসিটা দিয়েছিলো। দেখতে পেলো না অনিন্দ্য...
৩
সেদিন নরেন্দ্র রায় বলেছিলেন তিনি নাকি একটা পাণ্ডুলিপি লেখা প্রায় শেষ করেছেন। কিন্তু রাতে কোনো পাণ্ডুলিপি খুঁজে পায়নি সে। এখন মোটামুটি নিশ্চিত এতোদিন যা যা হয়েছে সবই হ্যালুসিনেশন। সাময়িক এটা হতে পারে। অত্যধিক ভৌতিক গল্প পড়ার দরুন এ সমস্যা হয়েছে তার।
কিন্তু সেদিনের পর থেকে হঠাৎ করেই তার লেখালেখি করার ইচ্ছা পেয়ে বসে। ইতোমধ্যে একটা পাণ্ডুলিপি তৈরিও করে ফেলেছে। কয়েকটা প্রকাশকের কাছে জমাও দিয়েছিল। তাদের মধ্যে একটা নাম করা প্রকাশনী বইটা ছাপার আগ্রহও প্রকাশ করেছে। আজ ফাইনাল করে এসেছে।
ঘড়ির দিকে তাকায়। দুপুর বারোটা। কিছু বই কেনার দরকার। এখন সে নীলক্ষেত যাবে বই কিনতে। সেদিন বইটা পুড়িয়ে ফেলার পর থেকে আর কোনো সমস্যা হয়নি। হাফ ছেড়ে বেঁচেছে সে। আজ সেই পুরনো বইয়ের দোকানেই এসেছে। কি অদ্ভুত! প্রেত বইটার আর এক কপি দেখতে পায়। পুড়িয়ে ফেলা পুরনো বইটি কেনার সময় যে জায়গায় ছিল, সেই আগের জায়গায়ই আছে। পুরাতন বই হলে কি হবে, একাধিক কপি থাকাটাও বিচিত্র না। প্রায় সত্তর-আশি বছর আগের আরেকটা বইয়ের দুই কপি থাকাটা রহস্যজনক, প্রায় অসম্ভবও বলা চলে। অনিন্দ্যকে দেখে দোকানি। মুচকি হাসি দিয়ে ডাকে।
- ভাই কি বই লাগবে?
- আচ্ছা ভাই ওই বইটা আপনার কাছে কত কপি আছে। হাত দিয়ে ইশারা করে সে।
- ভাই পুরনো বইতো, দুই কপিই ছিল। একটা তো সেদিন আপনি নিয়ে গেলেন, আর এক কপি আছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে অনিন্দ্য। বইটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখে। এর এক কপি বই তাকে কি ভোগান্তিই না ভুগিয়েছে। অতীতের কথা মনে করে হাসি পায়। কিন্তু তার হাসি বন্ধ হয়ে যায় বইয়ের এক পাতায় এসে। তার একটা স্বভাব বই কিনেই নিজের নাম আর সংগ্রহের তারিখ লিখে রাখা। এই বইটাতেও তার নাম লেখা আছে। পুড়িয়ে ফেলা বইটাতে যেভাবে লিখেছিল হুবহু একই ভাবে।
কীভাবে সম্ভব। ভালো করে চেক করে। না তারই তো হাতের লেখা। সে একটার পর একটা পৃষ্ঠা উল্টায়। একদম শেষ পাতায় লেখা দেখে তার ঘাম ঝরতে শুরু করে। সেখানে ছোট করে একটা টিকা লেখা। সম্ভবত প্রকাশনী লিখেছে। এই বইয়ের পিশাচ নামে দ্বিতীয় একটা খণ্ড আছে। কিন্তু সেটা কমপ্লিট না করেই লেখক মারা যান।
অনিন্দ্য আজ যেই পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে এসেছে সেটার নামও তো পিশাচ। নরেন্দ্র রায়ের কথা মনে পড়ে তার। তিনি বলেছিলেন মারা যাওয়ার পরেও লিখে যাচ্ছেন ... তাহলে কি অনিন্দ্যকে দিয়েই বেনামে তার বই প্রকাশ করিয়েছে। ভয়ে গা শির শির করছে। কোনো উত্তর খুঁজে পায় না সে...। থাক না পেলে নাই। কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো!
২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০৫
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনি সেই নরেন্দ্র রায় নন তো? যে এই গল্পটা লিখছে?
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১২
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন:
পড়তেছি