নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারন একজন মানুষ... লিখতে ভালো লাগে।কিন্তু আলসেমি লেখার গতি কমিয়ে দেয়.।এমন একটা যন্ত্র আবিস্কার হত।যাতে বলার সাথে সাথে প্রিন্ট হয়ে বের হয়ে যেত লেখা।সেই দিনের অপেক্ষায় আছি

পথিক শোয়েব

পথিক শোয়েব › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাশ চোর

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০৭





রাত একটা বাজে । কবর স্থানের পাশের চায়ের খুপরিটা এখনও খোলা । সারা রাতই কম বেশি লাশ আসে, লাশের সাথে আসে তাদের আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংক্ষিরা । লাশ কবর দেয়ার চাইতে তাদের অলস সময় কাটেই বেশি । জালালের এই চায়ের খুপরিতে তারা চা , পান , সিগারেট খেয়ে তাদের অলস সময় কাটায় । লাশ কবর দেয়া , হাতে মাটি ভরাতে ততোটা ইচ্ছুক না তারা । ততোক্ষনই তারা সিগারেট চা খেতে থাকে যতক্ষন পর্যন্ত না লাশ কবরে নামানো হয় । আর পরস্পর আলোচনায় মেতে উঠে । মৃত ব্যক্তির চরিত্রের বিভিন্ন দিক উঠে আসে তাদের আলোচনায় । বেশির ভাগই তার গুন সূচক আলোচনা । এই আলোচনা গুলোও হয় আলোচনার খাতিরেই । মারা গেলে দোষ বলতে নেই । সচেতন ভাবেই তারা মৃত ব্যক্তির দোষ এড়িয়ে যায় । খায়ের প্রতিদিন রাতে আসে কবর স্থানে । সে লাশ চোর দলের একজন । স্বজনরা লাশ কবর দিয়ে চলে যাওয়ার পর সুযোগ মত সে লাশ চুরি করে । আজ কে ও এসেছে সে । জালালের দোকানে কেউ নেই। একশো পাওয়ারের বাল্বটা মিট মিট করে জ্বলছে । সেই হলদে আলো আশপাশে আলো আধারির একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে । অদ্ভুত লাগে খায়েরের কাছে সেটা ।
_ আজ লাশ আহে নাই জালাল ভাই
-একখান আইছিল। হেই দুপুরে । বুড়ার লাশ
এই লাশ না আসলে লোক জনও আসে না । জালালের বেচা বিক্রিও ভালো হয় না । আর খায়ের ও বুড়ার লাশ শুনে কেমন মিইয়ে যায় । বুড়ার লাশ নিয়ে লাভ নাই। দাম পাওয়া যায় না । কেন যায় না সে জানে না । তাই সে বুড়া মানুষের লাশ কবর থেকে তুলে না । হাই তোলে খায়ের । এদিক ওদিক তাকায় সতর্ক দৃষ্টিতে । আশ পাশে কেউ নাই,চারদিক নিরিবিলি । কোথা থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকের শব্দ আসছে । কান স্তব্ধ করা সেই শব্দ। ঢাকার মত যান্ত্রিক শহরে ঝিঁ ঝিঁ পোকা , অদ্ভুত । কবর স্থানের সামনের বড় রাস্তা দিয়ে মাঝে মধ্যে দুই একটা গাড়ি শোঁ শোঁ শব্দ তুলে চলে যাচ্ছে , তাদের এদিকে ফিরে তাকানোর সময়ও নাই । দূরে কয়েকটা বিল্ডিংয়ে এখনও আলো জ্বলছে । তার মানে ঘুমায় নাই তারা । অস্পষ্ট কিস্তি কাটে খায়ের । পুরো ঢাকা বাসির উদ্দেশে । জালাল শুনতে না পেয়ে বলে , কিছু কইলা খায়ের ভাই ?
- নাহ , কি কমু আর কও জালাল ভাই । পেটের দায়ে এই ব্যাবসা করি । ছাইড়া দিমু চিন্তা করছি । ঘরে দুইডা ছোড ছোড পোলা মাইয়া । ওগোর দিক চাইলে এই কাম আর করতে মন চায় না ।
- - হ খায়ের ভাই , ছাইড়া দেও । দেহ একটা রিক্সা কিনবার পারোনি ।
- হু , বলে আকাশের দিকে তাকায় সে ।
মেঘ মুক্ত আকাশ , তারা নেই সেই আকাশে । নীলাভ একটা ভাব আছে । ঝির ঝির করে বসন্তের ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে । আদিম মৃত্যুর উপর দিয়ে আদিম বাতাস । সেই বাতাসে কবরের বাসিন্দারা ঘুমুচ্ছে অঘোরে । কেয়ামতের আগে এই ঘুম ভাংবে না । মৃত্যু তাদের ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে । খায়েরের মন উদাস হয়ে যায় , তার গান গাইতে ইচ্ছা করে ...। মন উদাস হলে তার সিগারেটের তৃষা পায়।
- একটা সিগারেট দাও জালাল ভাই।
সিগারেটে সুখ টান দেয় খায়ের । নিকোটিন গিয়ে মেশে তার রক্তে । রোকন উদ্দিন লোকটা খারাপ । সে লাশ চোরদের পালের গোদা । তার খায়েরের মত অনেক লোক ফিট করা আছে । পঁচা গলা লাশ সংগ্রহ করে তার কাছে আনে ,সেই লাশ সে নিয়ে যায় তার গোপন আস্তানায় ।
সেখানে একটা বিশেষ কেমিকেলে ডুবিয়ে রাখে । পরে সেই লাশ তুলে পরিস্কার করে । হাড় থেকে মাংস আলাদা করার পর ঝক ঝকে সাদা হাড় বেড়িয়ে আসে । এই হাড়ের কদর অনেক মেডিকেলের ছাত্রদের কাছে । রোকন এই কংকাল বিক্রি করেই আজ কোটিপতি । ঢাকায় দুইটা বাড়ি করেছে । দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছে । এখনও সে এই ব্যাবসা কেন করে বোঝেনা খায়ের । রোকন উদ্দিনের টাকার অভাব নাই ।। অন্য জায়গা থেকে ও তার অনেক টাকা আসে। শুনেছে মাদক ব্যাবসার সাথেও নাকি জড়িত সে । সে সিগারেট ফেলে উঠে দাঁড়ায় ... কবর স্থানের দিকে এগিয়ে যায় । তাকে দেখে গার্ড এগিয়ে আসে । এতক্ষন হারাম জাদা ঘাপটি মেরে বসে ছিল হয়তো কোথাও , খায়েরকে দেখেও না দেখার ভান করে ছিল।
_ কেমন আছ খায়ের ভাই ?
- এই আল্লাহ রাখছে কোন রকম ।
- আট দশ দিন ধইরা কোন খোজ নাই যে
- অসুখ করছিল মতি ভাই , বিছান থেকে উঠবার পারি নাই এই কয় দিন ।
কোন কথা বলেনা মতি , উশখুশ করছে । হারাম জাদা টাকার জন্য এমন করছে বুঝে খায়ের । পকেট থেকে একটা পাঁচশত টাকার নোট বের করে ধরিয়ে দেয় তার হাতে । খুশিতে চক চক করে মতির চোখ । লাশের কি অবস্থা , জিজ্ঞেস করে খায়ের ।

-লাশ যেই গুলা নেওয়ার মত সব নিয়া গেছে গা খায়ের ভাই, তয় পাঁচ ছয় দিন আগে একটা লাশ আইছিল। সেটা এখনো আছে । আমি অন্য কেউরে কই নাই এইডার ব্যাপারে । তোমার লাইগা রাইখা দিছি । তাগড়া জয়য়ান । ওইডা নেন । ভাল দাম পাইবেন ।

আশ পাশ বহু আগেই নিরব হয়ে গেছে। দূরের বাড়ি গুলোর আলোও এতক্ষনে নিভে গেছে । খায়ের কোঁদাল নিয়ে আগায় কবরের দিকে । পিছু পিছু আসে মতি । তারা কবর খুড়তে থাকে । মৃতের মাঝে বেঁচে থাকার রসদ খুজে চলে............।


রোকন উদ্দিনের কিছুদিন ধরে মন খারাপ । তার দুই ছেলেকে অষ্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে ছিল । কিছু দিন আগে ছোট ছেলে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রান হারায় । লাশ বাংলাদেশে এসেছে । দাফন করাও হয়েগেছে । কিন্তু পুত্র শোক এখনও ভুলতে পারেনি সে । রোকন উদ্দিন তার কামরায় বসে আসে। একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছে । সিগারেট যতক্ষন থাকে ততক্ষন শোক একটু ভুলে থাকে । শেষ হলেই আবার পেয়ে বসে । কিছুই ভালো লাগছে না । এই কয় দিন সে তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে আসেনি । আজকে এসেছে । এমন সময় খায়ের ঢুকে রুমে।
- স্যার একটা লাশ আনছি
খায়ের কি বলেছে শুনতে পায়নি এমন ভাব করে কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকে রোকন । এটা তার স্বভাব । এমন করতে ভালো লাগে তার । টাকা পয়সা হয়ে গেলে কিছু অদ্ভুত কান্ড কারখানা করতে হয় । এটা ও এমন একটা । অন্য কেউ হলে মনে করতো রোকন শুনতে পায়নি কিছু। আবার একই কথা বলতো , তখনই ধমকে উঠতো সে। কিন্তু খায়ের রোকনের স্বভাব জানে । তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো । এতে রোকন একটু বিরক্তই হল মনে হয় । অনেকক্ষন পর সে বলল , লাশ আনছো তো আমাকে বলার দরকার কি,ভিতরে লোক আছে তাদের কাছে দিয়ে দাও।
- দিয়েছি স্যার
- তো দাঁড়িয়ে আছ কেন , যাও এখন ।
হাত কচলাতে থাকে খায়ের । রোকন বোঝে কেন দাঁড়িয়ে আছে খায়ের । তার পরও না বোঝার ভান করে । এটাও তার বড়লোকি স্বভাবের একটা । গরীব থেকে যারা ধনী হয় তাদের এমন অদ্ভুত অদ্ভুত স্বভাব থাকে । খায়ের যতক্ষন তার মুখ দিয়ে কিছু না বলবে সে না বোঝার ভান করেই থাকবে । তাছাড়া টাকা পঁয়সা আগ বাড়িয়ে দেওয়ার লোক সে না । যক্ষের ধনের মত টাকা আগলিয়ে রাখে । টাকা পঁয়সার চাইতে সে দুনিয়ার আর কাওকে বেশি ভালো বাসে না । ছেলে, বউকেও না ।
- স্যার কিছু টাকা লাগতো , বউ বাচ্চা নিয়া সমস্যায় আছি ।
বাঁকা হাসি রোকনের মুখে । পকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে দেয় ।
খায়েরের মুখ কালো হয়ে যায়। মনে মনে একটা কঠিন গালি দেয় । কিন্তু মুখ স্বাভাবিক রাখে সে।
- স্যার আর কিছু টাকা যদি বাড়িয়ে দিতেন।
- এখন টাকা নাই আমার কাছে ,পরে নিও।
আবার অনুরোধ করে খায়ের ।
জোড়ে ধমক লাগায় রোকন উদ্দিন । খায়ের আর কিছু বলে না । চলে আসে । সে জানে এখন হাজার কান্না কাটি করলে ও রোকন উদ্দিনের পকেট থেকে একটা টাকা ও বের হবে না । জানোয়ার একটা সে। পরে হয়তো আর হাজার দুই তিন ধরিয়ে দেবে । কিন্তু সে তো শুনেছে অনেক টাকায় বিক্রি হয় এই লাশ গুলো । সে আর এই কাজ করবে না । আর আসবে না সে রোকনের কাছে । হয়তো তার জায়গায় অন্য কোন লোক বসাবে রোকন উদ্দিন । বসালে বসাক ,জাহান্নামে যাক জানোয়ারের বাচ্চা ।

কিছু দিন পরে । রোকন উদ্দিনের আজ মন খুব ভালো । দুই লক্ষ টাকা নগদ পেয়েছে সে । সকাল সকাল বৌনিটা ভালই হয়েছে । খায়েরের দেয়া লাশটা সে পরিস্কার করে কংকাল বিক্রি করেছে । নগদ দুই লক্ষ টাকা । টাকা পেলে সে সকল দুঃখ ভুলে যেতে পারে । খায়ের পঁচা গলা যে লাশটা এনেছিল । সেই লাশটাই যে এত টাকা এনে দিতে পারে । কে বলবে সে কথা । চেহারা বোঝার কোন উপায় নাই ,এমন ভাবে পঁচে গেছে । সে আজকে খুশি অনেক খুশি । কিন্তু জানতে পারলো না সে যেই কংকাল আজকে বিক্রি করেছে সেটা তার পুত্রের । জানলে বোধ হয় এত খুশি হতে পারতেন না রোকন উদ্দিন । কোন বাবাই পারতেন না ।
…………………………………………………………………………………******………………………………………………………………

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.