![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
বাসর ঘরে ঢুকলো ইমতিয়াজ উদ্দিন । তার পরীর মত বউ বিছানায় বসে আছে । আরেঞ্জম্যারেজ হয়েছে তাদের । হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ের আগে কেউ কাওকেই দেখে নি । এমন কি নামটা ও শুনে নি । বাসর রাতে বউয়ের সাথে কেমন করে কথা বলতে হবে সেটা ও বুঝতে পারছে না মফস্বলের লাজুক ইমিতিয়াজ উদ্দিন। তার এক বন্ধুর বুদ্ধিতে তিনি গোলাপ ফুল নিয়ে ঢুকেছেন। ফুল দিলে পরিবেশটা নাকি হালকা হবে । কথা, আলাপ আলোচনা শুরু করা সহজ হবে। সে ফুল পিছনে লুকিয়ে ঢুকলো । বিছানায় বসতেই তার স্ত্রী লাফ দিয়ে দূরে সরে বসলেন । যেন বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হয়েছে । নতুন বউয়ের কর্কশ কন্ঠ
- আমাকে ছোবেন না ।
- স্ত্রীকে ছোয়ার অধিকার স্বামীর আছে
- থাকলেও আমাকে আপনি ছোবেন না।
- কারনটা কি ?
- কোন কারনই নাই
- তোমার জন্য ফুল এনেছিলাম,গোলাপ ফুল।
- লাগবে না ,এত ঢঙ্গ ভালোনা ।
স্ত্রীর কথায় একটু কষ্ট পায় ইমতিয়াজ উদ্দিন। স্ত্রীকে স্বামী ফুল দিবে এখানে ঢং এর কি আছে খুজে পায় না সে। গোলাপ ফুলের তোরাটা সে রুবিনার পায়ের কাছে ঠেলে দিল। কিন্তু ফুল গুলো ছুড়ে ফেলে দিল রুবিনা । মেঝেতে গড়া গড়ি দিতে লাগলো ইমতিয়াজ উদ্দিনের ভালোবাসা…।।
২
ঘুম ভাংতে দেরি হল ইমতিয়াজ উদ্দিনের । সারা রাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছেন । ভোরের দিকে একটু ঘুম এসেছিল । নতুন জামাইয়ের দেরি করে ঘুম থেকে উঠা লজ্জা জনক।রুবি নাই পাশে । মেয়েটা কি পালাল নাকি ?? রুবি কাল যে আচরন করেছে । তাতে ত মনে হয় তার কোন প্রেমিক আছে।পরিবার জেনে যাওয়ায়, জোড় করে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে । মফস্বল শহরের মেয়েগুলোর এই এক সমস্যা । প্রেম করবে, কিন্তু পরিবার এর সামনে মুখ ফুটে বলতে পারবে না। দেখা গেছে বিয়ে হবে আরেক যায়গায় এর জন্য । রুবিকে পাওয়া গেল রান্না ঘরে । ইমতিয়াজ উদ্দিনের মায়ের সাথে গল্প করছে আর কি যেন রান্না করছে । ইমতিয়াজ উদ্দিনের বুক থেকে স্ব স্থির নিশ্বাস বেড়িয়ে এল। যাক বাবা পালায় নাই। পালালে কেলেংকারী হয়ে যেত। মফস্বল শহরে খারাপ সংবাদ বাতাসের আগে প্রবাহিত হয়। রুবির সাথে আজকে তার প্রেমিকের ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে। তেমন কিছু হয়ে থাকলে সুন্দর একটা ফয়সালাই হওয়া ভালো।
৩
-তোমার কি কোন ভালবাসার কেউ আছে ?
- আমার কি আছে, কি নাই সেটা দিয়ে আপনি কি করবেন ।
-না বললাম যে পরিবার অনেক সময় জোড় করে বিয়ে দিয়ে দেয়। তেমন কিছু হলে বলতে পার।আমি একটা সমাধান করে দিব।
- কি করবেন তার মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে আসবেন পিছন থেকে । এর চাইতে তো বেশি মুরোদ আছে বলে মনে হয় না ।বলেই ফিক করে হেসে দেয় রুবি।
মেয়েটার হাসিটা সুন্দর। এমন নিস্পাপ চেহারার মেয়ে কিভাবে এমন শক্ত শক্ত কথা বলে !!
- আমি কিন্তু মজা করছি না রুবিনা ।
-হ্যা আমার অনেক গুলো প্রেমিক ,কোনটা রেখে কোনটার হাতে তুলে দিবেন ??
যদিও কথাটা রসিকতা করে বলেছে, সহজ সরল ইমতিয়াজ উদ্দিন কষ্ট পেল।তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো ।
- তুমি কাল রাতে এমন করলা কেন ?
- আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই
- আমি কিন্তু এখনও আইনত তোমার স্বামী
- আমার আপনাকে পছন্দ হয় নি। তাই আপনি আমার থেকে দূরে থাকবেন,আর আমার কোন প্রেমিক ট্রেমিক ও নাই ।এতক্ষন মজা করলাম আপনার সাথে।
- আচ্ছা দূরে থাকবো
৪
তিন মাস ধরে্ রুবিনা এমন দূরে দূরে থাকলো ইমতিয়াজ উদ্দিনের থেকে । যে যার মত করে ঘুমায়। একটু আধটু কথা হয়। এক দিন ঘুম ভাংলো রুবিনার ডাকে ।হাতে তার চায়ের কাপ
-ঊঠুন আর কতক্ষন ঘুমাবেন ?
ধর মর করে উঠে বসে সে। এটা কি স্বপ্ন না বাস্তব এখন ও বুঝে উঠতে পারছে না ।
-তুমি চা বানিয়ে এনেছ ?
- কেন আমার হাতের চা খেলে কি কোন সমস্যা ?
- নাহ , সমস্যা না । কিন্তু অবাক হচ্ছি ।
- অবাক হওয়ার কিছু নাই, স্ত্রী স্বামীকে চা বানিয়ে দিবে । এটাই স্বাভাবিক ।
সেই দিনটি ছিল ইমতিয়াজ উদ্দিনের জীবনের সবচাইতে খুশির দিন। স্বরনীয় দিন । এখন ো মনে হয় সেই দিনের ই ত কথা। রুবিনার মনের পরিবর্তন এর দিনটি তার মনে দাগ কেটে গিয়েছিল অনেক ।
- আপনি না সেদিন কি যেন আনছিলেন ? আজকে আনতে পারবেন ?
খুশিতে ইমতিয়াজ উদ্দিনের মুখ দিয়ে শুধু বের হয় হু…………।
৫
এর পর রুবিনার সাথে ইমতিয়াজ উদ্দিনের সময় স্বপ্নের ঘোরে কেটে যেতে লাগলো । মফস্বল শহর দুইজনে চষে ফেলেছেন রিক্সায় করে ঘুরে । সৃষ্টি কর্তার কাছে সে সব সময় কৃ্তজ্ঞতা প্রকাশ করতো এমন একটা সংগীর জন্য ।টানা ত্রিশ বছরের সংসারে ২ টা মেয়ে এসেছে তাদের। দুইজনের ই বিয়ে হয়েছে। শশুর বাড়িতে থাকে । মাঝে মধ্যে এসে তাদের বৃদ্ধ বাবাকে দেখে যায় । ত্রিশ বছরের সংসারে সে রুবির হাতের চা ছাড়া আর কোন চা খায়নি । আজ রুবিকে গোলাপ ফুল দিবে। রুবিকে কথা দিয়েছিল যতদিন সে বেচে থাকবে প্রতিবিবাহ বার্ষিকীতে তাকে গোলাপ ফুল উপহার দেবে। এত বছরে তার অন্যথা হয়নি।আজও হবে না ।
সে শহরের ফুলের দোকান এ আসলো। এই দোকান থেকেই ৩৫ বছর আগে প্রথম ফুল কিনেছিল সে । সেই আগের দোকানী নেই । এখন ছোকড়া মত একজন বসা । হয়তো তার ছেলে । ভালোবাসার সরঞ্জাম নিয়ে দোকানটি আগের মতই আছে। পাল্টায় নাই এতটুকুন।জগতের কোন কিছু পালটায় না । পালটে যায় শুধু তাদের ক্রেতারা । ফুল নিয়ে ইমতিয়াজ উদ্দিন তার স্ত্রীর কবরের কাছে এলো।যেই মেয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য তার সঙ্গ ছাড়তে চাইতো না।আজ সে কিভাবে ওই অন্ধকারের অজানা দেশে একা ঘুমিয়ে আছে। ইমতিয়াজ উদ্দিনের বড্ড অভিমান হয় তার স্ত্রীর উপর…। তার অভিমান হয় সৃষ্টি কর্তার উপর ……… তিনি হু হু করে কেদে উঠেন অসহায়ের মত…। তার চোখের পানি কবরের মাটিতে মিশে……। এই শক্ত বাধা টপকে কি রুবির নরম হৃদয় কেদে উঠে??!!!মৃত্যু বড়ই রহস্য ময়...............।। কোমল হৃদয়কে অ কঠিন নির্লিপ্ত করে দেয়.....................।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৪
পথিক শোয়েব বলেছেন: ধন্যবাদ । অসংগতি গুলোধরিয়ে দিলে পরবর্তী তে লেখার সময় সেগুলো এভয়েড করা যেত ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০০
হাতুড়ে লেখক বলেছেন: কয়েক্টা অসঙ্গতি থাকলেও গল্প ভাল্লাগসে। শুভ কামনা।