![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নীহারীকার প্রথমে চরিত্রটাকে আর দশটা চরিত্রের মতোই দেখেছিলো।এ ব্যাপারে অবশ্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না। শুধু কাজের জন্য কাজ করতে করতে সে কিছুটা বিরক্ত । কিন্তু আস্তে আস্তে সে বুঝতে পেরেছ্ েনতুন নাটকের এই চরিত্রটি অবশ্যই বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে।নাট্যপরিচালক শাহরিয়ার মাহমুদ খান অনেক আগে থেকেই নীহারীকাকে বলে রেখে ছিল কোন দিবস ভিত্তিক নাটক না, সময় নিয়ে সত্যিকারের একটা ভালো কাজ করতে চায়। নীহারীকাও তার হাতের সব কাজ শেষ করে শিডিউল ফ্রি করে রেখেছিল যাতে সমস্ত
মনোযোগ শুধু এই কাজটায় দিতে পারে।
পরিচালক শাহরিয়ার কিছু বই ও দিয়েছিলেন পড়ার জন্য। বলেছিলেন আগে আমি এই বিষয়ে তোমার নিজের মতামত শুনতে চাই।
নীহারীকা সেই গুলো শেষ করে এর পর আরো বই পত্র যোগার করেছে ।ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছে।
কিন্তু যতোই সে অপরাজিতা চরিত্রটির ভেতর ঢুকছে ততোই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
পরিচালক শাহরিয়ার চরিত্রটি নীহারীকার সাথে ডিসকাস করছেন:
আগে বলো, এ কয় দিনে লেখাগুলো পড়ে তোমার নিজের কি মনে হলো?
নীহারীকা: আমরা বীরাঙ্গনাদের সবসময় স্বামীহারা নির্যাতিতা,আক্রান্ত, আসহায় ধর্ষিতা হিসাবেই দেখি। সবসময় যেন আশপাশ দিয়ে ঘুরাঘুির করি কিন্তু বেদনার ক্রেদ্রে যেতে পরি না।কোন মুক্তিযোদ্ধা কখনো কোন কিছু প্ওায়ার আশায় যুদ্ধ করেন নি । জাতি হিসাবে আমরা তাদেরকে কতোখানি দিতে পেরেছি সেটা অন্য কথা কিন্তু একজন আহত মুক্তিযোদ্ধা অন্তরের অন্তরস্থল্ েযে ধরণের অহংকার অনুভব করেন। দেশের জন্য কিছু করার অহংকার।একজন বীরাঙ্গনাও সেই একই আত্ম অহংকারের দাবি রাখে।
২.
নীহারীকা মেকআপ রূমে একা বসে আছে।আজ শুটিং এর প্রথম দিন। কিছুক্ষণ আগে তাকে মেকআপ দেয়া হয়েছে। এ সময়টা নীহারীকার বেশ লাগে। চরিত্রটা নিয়ে চিন্তা করতে পারে, নিজেকে চরিত্রটার সাথে মিলিয়ে নিতে পারে। নিহারিকা আয়নার সামনে দাড়িয়ে কেমন যেন চমকে ওঠে। আলুথালু শাড়ী, মুখে কালি মোটামুটি বিদ্ধস্ত অবস্থা। নিজেকে সে নিজেই চিনতে পারে না। মনে মনে বলে এখন আর তুমি নীহারীকা ন্ওা। এখন তুমি অপরাজিতা ,শুধুই অপরাজিতা।
এমন সময় হঠাৎ তানভির এর মাথা দেখা যায়। নীহারীকা রিতিমতো বিরক্ত হয়। এ সময়টা তার একান্ত নিজের এ সময়টায় কারো অযাচিত হস্তক্ষেপ তার পছন্দ হয় না। তানভির আজাদ ইদানিং অভিনয় জগতে বেশ নাম করেছে ।এই লোকটাকে কেন জানি নীহারিকা ঠিক পছন্দ করতে পারে না।কিন্তু মা বলে রেখেছে ইন্ড্রাস্টির সবার সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাই তাকে স্বাভাবিক ভদ্রতা দেখাতেই হয়।
-হ্যালো, নীহারীকা কি অবস্থা তোমার?
- তানভির ভাই আপনে এই সেটে কোথেকে?
-আমি ও তো এই নাটকে আছি।
- শাহরিয়ার ভাই তো আমাকে কিছু বলেন নি।
-বাদ দেও তো শাহরিয়ার এর কথা। আমি কিন্তু এই নাটকে কাজ করতে রাজি হয়েছি শুধু তোমার জন্য।
- আমার জন্য মানে? আমি তো জানি ই না যে আপনেও এই ইউনিটে আছেন। আমি যতোদূর জানি এই নাটকটার প্রধান চরিত্র অপরাজিতা।আর সে টা তো আমি করছি।আপনি কোন চরিত্রটি করছেন?
-মুক্তিবাহিনীর দলনেতার চরিত্র। শুধু তোমার জন্য আমি অতিথি চরিত্র করতে রাজি হয়েছি।নাটকের শেষে দৃশ্যে আমার আবির্ভাব হবে।আমি তোমাকে পাক হানাদার বাহিনী থেকে উদ্ধার করবো।
-আমাকে না তানভির ভাই, অপরাজিতাকে।
-ওই একই কথা।
- তানভির ভাই আমার একটু মাথা ধরেছে।এছাড়া কিছুক্ষণ পরই আমার শুটিং।আপনি যদি একটু..
-আচ্ছা,ঠিক আছে।আমার ও অনেক কাজ বাকি। স্পটে দেখা হবে।
তানভির ঘর থেকে বাহির হয়ে যেতে যেতে
[নীহারীকাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই] হঠাৎ বলে উঠে:
-কিন্তু রিয়েল লাইফেও তোমার মুক্তি কিন্তু আমারই হাতে।
(নীহারিকা কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ই মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে যায় তানভির)
নীহারীকার মন বিরক্তিতে ভরে যায়।
৩.
শাহরিয়ার নীহারীকাকে শর্ট বুঝিয়ে দিচ্ছেন :
নেহা , আমরা সেটটা এমন ভাবেই তৈরি করেছি যাতে সেই সময়টাকে ধারণ করতে পরি।এই ছোট ঘরটা সম্পুর্ণ আন্ধকার থাকবে। শ্ধুুমাত্র তোমার মুখটার উপর থাকবে আলো।এ পর্যায়্ েআমি একটা এক্রট্রিম ক্লোজাআপ শর্ট চাই। এখানে তোমার কোন ডায়লগ নাই।কেবল ভাবলেশ হীন শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা । যেন পৃথিবীর কোন কিছুতেই আর তোমার কিছু যায় আসে না। পুরো দৃশ্যটা মুখের অভিব্যক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।আমি চাইছি শর্টটা একবারেই ্ওকে হবে। নীহারীকা প্রশ্ন করে ”আমি কি ঘরটাতে একাই থাকবো”? না, তোমার সাথে আরো দুজন মেয়ে থাকবে।হঠাৎ দরজায় লাথি মারার শব্দ হবে। তোমাদের মধ্যে আতঙ্কের ঢেউ বয়ে যাবে ।এখানে একটা স্টপড্ মোশন শর্ট যাবে। একজন আরেক জনের দিকে তাকাবে।এমন সময় অপরাজিতা উঠে দাঁড়াবে সারা স্টেজে ছুটাছুটি করে কিছু একটা খুঁজবে। দর্শক যেন বুঝতে পারে সে এমন কিছু খুজছো যাতে সে আত]œহত্যা করতে পারে।এখানে লাগবে একটা টপ শর্ট । কিস্তু সে কিছুই খুজে পাবে না। অপরাজিতার আত্মচিৎকারে আবার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠবে । সে বরাবার নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে মৃত্যু কামনা করবে। এমন সময় দরজা ভাঙ্গার শব্দ হবে । কিন্তু নীহারীকা আবাক হয়ে দেখবে যে, এবার কোন নরপশু নয়। তাদের সামনে একদল মুক্তিযোদ্ধা । গত কিছু দিন তারা যে গোলাগুলির শব্দ শুনছে; শুনেছে যে মুক্তিবাহিনী কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তলেছে- কোন কিছুই তাহলে মিথ্যা নায়। যে সৃষ্টিকর্তা কে তারা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল আবার মনে হতে থাকে যে সৃষ্টিকর্তা আসলে ই আছেন । উনি মাঝেমাঝে বান্দার কথা শুনতে দেরি করেন , কিস্তু শুনেন ঠিকই। অপরাজিতার মনে হয় সে যদি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে একটু ছঁঁুঁয়ে দেখতে পারতো। তাকে মুখে কিছু বলতে হলো না। যে মানুষটি তাকে উদ্ধার করেছে সে নিজেই অপরাজিকতার মাথায় হাত রেখে বললো ” তোর বয়সি আমার একটা বোন রে রাইখা আসছি গ্রামে আল্লাই জানে কেমন আছে। কোন মতে নিজেকে সামলে মানুষটা জানতে চায় ”তুই এখন কোথায় যাবি ? অপরাজিতা বলে ”আমার পরিবার কেমন অবস্থায় আছে কে জানে? তারা কি আমাকে মেনে নিবে? আমার কষ্ট কি তারা বুঝতে পারবে? মানুষটা আবার বলে ”আবশ্যই পারবো, ক্যান পরবো না।”
৪.
নাট্যপরিচালক শহারিয়ার নিজে এসে নীহারীকাকে এমন অসাধারধণ অভিনয়ের জন্য অভিনন্দন জানালেন। এই ঘটনাটি খুব বেশি ঘটতে দেখা যায় নি।ইউনিটের সবাই অসম্ভব আনন্দিত। কোন সত্যিকারের ভালো কাজ করার সময়ই সবাই উপলব্ধি করতে পারে যে, কাজটা ভালো হচ্ছে। নিহারিকার ভেতর কেমন যেন করতে থাকে। তাকে ঘিরে সারা ইউনিটের মানুষ হাত তালি দিচ্ছে। কিন্তু সে দিকে তার খেয়াল নেই। তার চোঁখের জল কাউকে দেখতে দিতে চায় না। দেীড়ে গিয়ে নিহারিকা মেকআপ রূমে ঢুকে। আয়নার সামনে বসে সে আর নিজেকে সামলাতে পারে না। জীবনে আনেক ধরনের চরিত্র সে করেছে কিন্তু এভাবে কখনো কোন চরিত্র তার আত্মার সাথে মিশে যায় নি । নিজেকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে এটা অভিনয় ছাড়া আর কিছুই নয়।সে একজন পেশাদার অভিনেত্রী। পরিচালক তাকে যা কাজ দিবেন তাকে তাই করতে হবে। সেটাই নিয়ম সেটাই স্বাভাবিক।তার চোঁখ বারবার ভিজে ওঠে। তাকে চরিত্রের সাথে মিশে যেতে হবে কিন্তু নিজেকে মিলিয়ে ফেললে হবে না।শিল্প কে সবসময় একধরনের নি:লিপ্ততার চোঁখ দিয়ে দেখতে হয় তা না হলে সৃষ্টি হয় না। কিন্তু নিহারীকা নিয়ম রক্ষা করে নি। এই কাজটা করতে করতে কখন যে, আপরাজিতা সাথে তার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে আপরাজিতার কষ্ট কখন যে, তাকেও স্পর্শ করেছে সে নিজ্ওে জানে না। বাহিরে কিসের যেন একট্ াঝগড়ারার আওয়াজ শোনা যায়। কিছুক্ষণ পর শাহারিয়ার মেকআপ রুমে আসে।্ ততোক্ষণে নীহারীকা নিজেকে কিছুটি গুছিয়ে ্্আনতে পেরেছে।
শাহরিয়ার : শেষ পর্যন্ত কাজ টা শেষ হলো তাহলে?
নিহারিকা : হ্যা, সেটাই তো ভাবছি। আমি না অপরাজিতার চরিত্র টা থেকে এখনো বের হতে পারছি না।
শাহরিয়ার : এমনটা হতেই পারে । নতুন কোন কাজে যখন ব্যস্ত হয়ে পরবে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীহারীকা: তা হলে ও এই টিম টা কে খুব মিস্ করবো।এতো দিন এক সাথে।যাই বলেন না কেন কোজটা মনে হয় বেশ ভলোই হয়েছে। ও,যে কথাটা জানতে চাইছিলাম বাহিরে ্এতে শোরগোল কিসের?
শাহরিয়ার : তানভির একটু গ্যানজাম করার চেষ্টা করছিল। শেষ মুহুর্তে নাকি তার ডায়লগ পরিবর্তন করা হয়েছে।এসব নিয়ে আর কি।
নীহারীকা: এতোক্ষণ পর বুঝলাম তানভির ভাই নাটকের মধ্যে আমার ভ্ইা হলো কিভাবে? সব আপনার কারসাজি তাই না? আপনে কিভাবে বুঝলেন ওনার সাথে আমি আনইজি ফিল করি।
শাহরিয়ার: এটাকেই বলে ডিরেক্টরের চো^^^ঁখ ।যা হোক, যে কথাটা বলতে আসা অনেক দিন পর মনে হলো যে ভালো একটা ্অভিনয় দেখছি। শাহারিয়ার এ কথাটুকু বলেই চলে গেলো নীহারীকার জন্য অবশ্য এ টুকুই যথেষ্ট ছিলো।
নীহারীকার কাজটাই এ রকম যে তাকে যে চরিত্রটি করতে দেয়া হয় সে সেই চরিত্রটাকেই নিজের মধ্যে ধারণ করে, অনুভব করে। এই প্রথম সে কোন চরিত্রের মধ্যে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে খুঁজে পেলো।
<><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><><>
©somewhere in net ltd.