নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বঙ্গভাষাপ্রেমী

হাসনাত ইবনে তারিক

সাংবাদিক, লেখক, সংস্কৃতিমনা

হাসনাত ইবনে তারিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিন্ধুদেশে মুসলমান: আরব কতৃত্ব ও আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কলহ

১৯ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৯

ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই আরববাসীরা ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করতে থাকে। বিখ্যাত কুরাইশ বংশ আরব বণিকদের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্যে উত্তরোত্তর উন্নতি করছিলো। এরপর এই বংশেই হযরত মুহম্মদ (স) জন্ম নেন। তিনি ৪০ বছর বয়সে নব্যুওয়্যাত পান। পরবর্তীতে বদরের যুদ্ধ, খন্দকের যুদ্ধ, মুতার যুদ্ধ, তাবূক যুদ্ধ এবং সব শেষে মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে ইসলামের পতাকাতলে আসে আরবরা। হযরত মুহম্মদ (স) এর মৃত্যুর পর খলিফা হন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা), হযরত উমার ফারুক (রা), হযরত উসমান (রা) এবং হযরত আলী (রা)। এসময় মুসলিম সাম্রাজ্য তিল তিল করে বাড়তে থাকে। সৈন্যাধ্যক্ষ মূসা-বিন নুসাইর উত্তর আফ্রিকা এবং সৈন্যাধ্যক্ষ তারিক স্পেন জয় করেন। মিশরেও ফাতেমীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। তবে হযরত উমার ফারুক (রা) এর সময় একবার মুসলমানরা ভারতে অভিযান করতে চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সেই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিলো। এসময় প্রাচ্যে কুতাইবা নামে এক সৈন্যাধ্যক্ষ ইসলামের বিজয় পতাকা মধ্য-এশিয়া পর্যন্ত নিয়ে যান। এরপর ইরাকের শাসনকর্তা হাজ্জাজ-বিন ইউসূফ তাঁর জামাতা মুহম্মদ-বিন কাসিমকে সৈন্যাধ্যক্ষ বানিয়ে ভারতে পাঠান। সিন্ধু অভিযানের কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে তখন আরব রাজ্যের সীমা ভারতের সিন্ধু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিলো। তাছাড়াও সেসময় আরবদের সাথে ভারতের বিভিন্ন কারণে সংঘর্ষ হয়েছিলো। এর একটি কারণ হচ্ছে তখন হাজ্জাজ-বিরোধীরা ভারতে দাহিরের রাজ্যে আশ্রয় পায়। এ কারণে আরবরা ভারতীয়দের উপর অসন্তুষ্ট ছিলো। তাছাড়া এই অভিযানের বেশ কিছুদিন আগে দেবল বন্দরে আরবদের উপঢৌকনসহ আটটি জাহাজ জলদস্যুদের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়।
মুহম্মদ-বিন কাসিম প্রথমবার সিন্ধু অভিযান করে ব্যর্থ হন। দ্বিতীয়বার সফল হন। ৭১১-১২ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ-বিন কাসিমের নেতৃত্বে মুসলমানরা সিন্ধু অভিযান করে। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে রাওয়ারের যুদ্ধে মুহম্মদ-বিন কাসিমের হাতে সিন্ধুরাজা দাহির নিহত হন এবং এর ফলে অন্যান্য হিন্দু যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যায়। দাহিরের অন্যতম পত্নী রাণীবাঈ তাঁর পরিচারিকাসহ অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেন। এভাবে মুসলমানরা সিন্ধু অভিযানের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর মুসলমানরা ব্রাহ্মণাবাদ দুর্গের দিকে অগ্রসর হলে সেখানে হিন্দুদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হয়।
এরপর মুহম্মদ-বিন কাসিম মুলতানে প্রবেশ করেন এবং এখানেও ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু হিন্দুরা মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয় এবং ৭১৩ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ-বিন কাসিম মুলতান শহরটি দখল করেন। এই বছরই তিনি সিন্ধু ও পাঞ্জাবের মাঝখানে অবস্থিত সিন্ধু উপত্যকাস্থ জায়গাটি দখল করেন। এভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলিত হয়।
মুহম্মদ-বিন কাসিমের মৃত্যু সম্পর্কে ‘অপরিচ্ছন্ন’ ধারণা
মুহম্মদ-বিন কাসিমের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিলো সেই বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে এ প্রসঙ্গে একটি রোমাঞ্চকর কাহিনী মানুষকে বিভ্রান্ত করে। জনশ্রুতি আছে, সিন্ধুরাজ দাহিরের দুই কন্যা সূর্য দেবী ও পরমল দেবী পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মিথ্যা অপবাদ রটনা করেন। কিন্তু এটা নিঃসন্দেহে অবাস্তব এবং ভিত্তিহীন। বাস্তবিক, মুহম্মদ-বিন কাসিমের মৃত্যু একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ বিষয়ে ইতিহাসবিদরা একমত নন। তবে মীর মাসুমের ‘তারিখ-ই-মাসুমী’ ও ‘ফুতুহ-ই-বুলদানে’ বলা হয়েছে যে মুহম্মদ-বিন কাসিমকে শামদেশের (সিরিয়া) রাজধানী দামাস্কাসে (দামেস্ক) ডেকে নিয়ে গিয়ে কারাগারে অন্তরীন করা হয় এবং খলিফার আদেশে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
সিন্ধু দেশের শাসনব্যবস্থা
সিন্ধুদেশ জয়ের পর মুহম্মদ-বিন কাসিম বিজয়োল্লাস কিংবা অযথা হারয (হত্যাকাণ্ড) করেন নি। তিনি এসময় রাজ্য শাসনে উদারনীতি গ্রহণ করেন। ইতিহাসে একজন রণকৌশলী যোদ্ধা হিসেবেই স্মরণ করা হয়। কিন্তু তিনি একজন ন্যায়-বিচারকও ছিলেন।
সিন্ধু প্রদেশ শাসন করার সময় অন্য ধর্ম ও মতের প্রতি তিনি সহনশীল ছিলেন। হিন্দুরা যাতে নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করতে পারে সেই ব্যবস্থা তিনি নিয়েছেন। যেসব এলাকা বা রাজ্য অধিকৃত হতো সেসব এলাকা বা রাজ্যের অধিবাসীরা আনুগত্য করলে তিনি শান্তিমূলক নীতি গ্রহণ করতেন।
মুহম্মদ-বিন কাসিম ছিলেন একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রপরিচালক, রাজনীতিক এবং ন্যায়পরায়ণ শাসনকর্তা। তিনি সিন্ধু প্রদেশে প্রচলিত রীতিনীতির পরিবর্তন করেন নি। বরং সিন্ধু প্রদেশের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্ব নিজ পরিচালনার আওতায় রেখে সিন্ধু প্রদেশের অভিজ্ঞ ব্রাহ্মণদের হাতে ন্যস্ত করেন।
এসময় মুহম্মদ-বিন কাসিম সিন্ধু প্রদেশকে কয়েকটি জেলায় ভাগ করেন এবং প্রতিটি জেলায় শাসনকাজের দায়িত্ব একজন সরকারি কর্মচারীর ওপর ন্যস্ত করেন। তাদের এসময় কাজের বিনিময়ে জমি জায়গীর হিসেবে দেয়া হতো। কখনো কখনো মাসিক বেতনও দেয়া হতো। মাঝে মাঝে মসজিদকে ও এবং আলেমদেরকে সরকারি জমি ভোগ করতে দেয়া হতো।
সিন্ধু প্রদেশে স্থানীয় বিশেষ বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ পদে যারা ছিলেন তাদেরকে ছাঁটাই করা হয় নি। এমনকি হিন্দুদের ওপর কোনো অন্যায়-অবিচার এবং অত্যাচার করা হয় নি।
সিন্ধু দেশে আরব শাসনের অবসান
চালুক্য, প্রতিহার ও কার্কটদের অবিরাম যুদ্ধ ও আরব অধিকৃত দেশসমূহের আভ্যন্তরীণ স্বার্থ-দ্বন্দ্ব কিছুদিনের মধ্যেই সমগ্র বিশ্বে আরব আধিপত্য নিঃশেষ করে দেয়। এছাড়া আরবের খলিফাদের দূর্বলতার সুযোগে সিন্ধু প্রদেশে আরব নেতাদের মধ্যে কলহ ও অন্তর্বিরোধ সৃষ্টি হয়। অবশেষে ৮৭১ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশে আরব শাসনের অবসান ঘটে এবং আরবদের থেকে সিন্ধু মুক্ত হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র
ভারতে মুসলিম রাজত্বের ইতিহাস, এ. কে. এম. আবদুল আলীম

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭

জাহিদ হাসান বলেছেন: আমি ইসলামের ইতিহাস সম্পূর্ণ ভালো করে জানি। আমি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছিলাম।
আপনি ইসলামের ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
পারলে স্পেনে উমাইয়া শাসন ও মিশরে ফাতেমী শাসন সম্পর্কে পোস্ট দিয়েন।

১৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:২৪

হাসনাত ইবনে তারিক বলেছেন: ধন্যবাদ। বর্তমানে ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিহাস সম্পর্কে লিখছি। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সেগুলো প্রকাশ করা হবে। ভালো থাকবেন।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:২০

জাহিদ হাসান বলেছেন: মিশরে ফাতেমী শাসন সম্পর্কে খুব কম জানি। জানার আগ্রহ আছে।

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:০২

হাসনাত ইবনে তারিক বলেছেন: ধারাবাহিকভাবে লেখা শুরু করেছি। প্রকাশ করা হবে। অনুসরণ করে পাশে থাকবেন।

৩| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৬

ইসিয়াক বলেছেন: লেখা চলুক ভালো লাগছে....।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.