![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একথা ভাবা অসম্ভব যে মানুষের কখনোই ভাব প্রকাশের প্রয়োজন হয় নি বা হবে না। তবে একথা ভাবা সম্ভব যে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে লাকড়ি জ্বেলে আগুন জ্বালাতে শিখেছে, শিকারের কৌশল শিখেছে কিংবা শিকারের কৌশল হিসেবে বসবাসের গুহায় ছবি আঁকতে শিখেছে। আগে মানুষ ব্যবহার করতো ইশারা-ইঙ্গিত বা সাংকেতিক ভাষা। সেখান থেকে ভাষা ক্রমে বহু পথ পাড়ি দিয়ে বিবর্তিত হয়ে আধুনিক ভাষার রূপ পেয়েছে।
বাংলা ভাষাও তেমনই একদিনে এই অবস্থায় আসে নি। ভাষাকে সহজলভ্য করে তোলে শব্দ, বাক্যের গঠন এবং সমাজ-সংস্কৃতির রূপরেখা। যেমন এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপ চালানো সংস্কৃত ভাষা এখন মৃত। এর কারণ তখনকার সমাজে একমাত্র হিন্দু ব্রাহ্মণরাই সংস্কৃত ভাষায় লিখতে পারতেন। নিচু শ্রেণির জন্য এই ভাষার চর্চা নিষিদ্ধ ছিলো।
বাংলা ও সংস্কৃত একই গোষ্ঠী থেকে এসেছে। বাংলা ভাষার আদি গোষ্ঠীর নাম ‘ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী’ বা ‘আদি আর্য ভাষাগোষ্ঠী’। এই ভাষাগোষ্ঠী থেকে উৎপত্তি হয়েছে অনেকগুলো ভাষার। বাংলা ভাষাকে নব্য ভারতীয় আর্যগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তও করা হয়। ফলে একটা ঐতিহাসিক সূ্ত্রও পাওয়া যায়। এই সূত্র অনুযায়ী বাংলা ভাষা আইরিশ, ইংরেজি, ফরাসি, গ্রিক, রুশ, ফারসি প্রভৃতি ভাষার দূর সম্পর্কের বোন। বাংলা যদি আমাদের মা হয়ে থাকে, তাহলে এই ভাষাগুলোকে আমরা খালা ডাকতেই পারি। কারণ বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে পূর্বদিকের ভাষা এবং সবচেয়ে প্রান্তিকও বটে। এর পশ্চিম দিকে ওড়িয়া, মাগধী, মৈথিলী, এবং পূর্বদিকে অসমিয়া ভাষাভাষী বসবাস করে। এছাড়া সাঁওতালী, মুণ্ডারী, খাসি প্রভৃতি ভাষা অস্ট্রিক গোত্রের ভাষা এবং কাছারী, বোড়ো, গারো, ত্রিপুরী, প্রভৃতি বর্মী গোত্রভুক্ত ভাষা।
বাংলা ভাষা ঠিক কতকাল ধরে বেঁচে আছে তা গবেষকরা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন নি। আসলে ভাষার ধর্ম পাল্টে যাওয়া। মানুষ আদিম কাল থেকে ভাষার ব্যবহার করে আসছে। ফলে তা কালক্রমে বিবর্তিত হয়ে বহু ভাষার রূপ লাভ করেছে।
তবে বাংলা ভাষার জন্মতারিখ যেমন কেউ লিখে রাখে নি, তেমনই ভাষার উদ্ভবের তারিখও কেউ লিখে রাখে নি। আসলে তখন তো লিপিও আবিষ্কৃত হয় নি। যেমন বাংলা লিপি এসেছে ব্রাহ্মী লিপি থেকে। এই কারণেই অনুমেয় বাংলা ভাষার বয়স নির্ণয় করা কঠিন। তবে ইতিহাসবিদ ও ভাষাবিদরা বাংলা ভাষার ইতিহাসের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। বাংলাদেশের অধিবাসীরা বাংলা ভাষায় সবসময় কথা বলতো না। সময়ের পরিপক্কতায় বাংলা ভাষা আজকের রূপ পেয়েছে।
ইতিহাসে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় খ্রিস্টপূর্ব প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়ায় যারা বসবাস করতো তারা আর্য নামে পরিচিত ছিলো। তারা যে ভাষায় কথা বলতো সেই ভাষাকে (পূর্বোক্ত) ‘ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা’ বলে। তাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা মধ্য এশিয়ায় থাকতে পারলো না। তারা ভারতের মাটিতে স্থানান্তর হলো। বর্তমানে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষীদের একটি অংশ ভারতে প্রবেশ করেন। তাদের ভাষা ‘আর্য’ ভাষা হিসেবে পরিচিত ছিলো। তারা তাদের একটি অংশকে রেখে আসেন ইরান ও মধ্য এশিয়ায়। এরা সেখানে বসবাস শুরু করেন। ইরানীয় ও ভারতীয় আর্যদের ভাষাকে ‘ইন্দো-ইরানীয় ভাষা’ হিসেবে ধরা হয়। এই ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন ঋগ্বেদে পাওয়া যায়। নিঃসন্দেহ যে ঋগ্বেদ ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ তবে ভারতীয় গ্রন্থ নয়। আর্যরা আমাদের নতুন ধর্মে দীক্ষিত করেছে মাত্র। যাই হোক, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে আর্যরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে ভারতবর্ষে আসতে থাকেন। এই উপমহাদেশে আর্য ও অনার্য উভয় ভাষার সংমিশ্রণের ফলে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে বাংলা ভাষা মাগধী প্রাকৃত নাকি গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে এসেছে সেই বিষয়ে ভাষাবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ মনে করেন বাংলা ভাষা গৌড়ীয় প্রাকৃত থেকে এসেছে। আর ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন বাংলা ভাষা মাগধী প্রাকৃত থেকে এসেছে। তবে ড. শহিদুল্লাহর মতটিকেই যেহেতু অধিকাংশ ভাষাবিদ সমর্থন করেছেন সেহেতু এই মতই সর্বজনস্বীকৃত।
চর্যাপদের যুগে বাংলা ভাষা ছিলো কিনা সেই বিষয়ে আছে সন্দেহ। কারণ চর্যাপদ যে ভাষায় লেখা হয়েছে সেই ভাষাকে সান্ধ্য ভাষা বলে চিহ্নিত করেছেন ভাষাবিদরা। তবে অন্যান্য ভাষার মতো বাংলা ভাষাও যে মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি হওয়া কোনো ভাষা থেকে এসেছে এবং কালের বিবর্তনে সেই ভাষার ডালপালা থেকে বাংলা ভাষা আধুনিক রূপ লাভ করেছে সেকথা নিঃসন্দেহ।
তথ্যসূত্র:
১. http://itibritto.com/bengali-spelling/
২. Click This Link
৩. Click This Link
৪. Click This Link
৫. হুমায়ূন আজাদ, বাঙলা ভাষার জন্মকথা, লাল নীল দীপাবলী বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী, প্রকাশকাল ১৯৭৬
৬. হায়াৎ মামুদ, ভাষা-শিক্ষা: বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি
২১ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৫
হাসনাত ইবনে তারিক বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। এভাবে সহযোগিতা করবেন।
২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৪১
ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার ।তথ্যবহুল পোস্ট ।
+++
শুভকামনা রইলো।
০৩ রা অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৮
হাসনাত ইবনে তারিক বলেছেন: ধন্যবাদ। সাথে থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৯
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বাংলাভাষার উৎপত্তি নিয়ে তথ্যবহুল পোস্ট।

সুন্দর। ব্লগে সুস্বাগমত। হ্যাপী ব্লগিং ।