![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে উগ্রপন্থী তৎপরতাকে তিনটি জেনারেশনে ভাগ করা যায়। এর প্রথম জেনারেশন হলো আশির দশকের শুরুতে মাওলানা মতিউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত মুসলিম মিল্লাত আর আশির দশকের শেষে গঠিত হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম বাংলাদেশ (হুজি-বি)। মাওলানা মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তারের পরে এ দলের আর কোনো ভূমিকা পাওয়া যায় না। পরে অবশ্য তিনি জামিন নেন। তবে তার সম্পর্কেও খুব একটা নির্ভরযোগ্য তথ্য গোয়েন্দা বাহিনী দিতে পারে নি। আর হুজি-বি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে তথাকথিত শরিয়াহ আইন আনতে চায়। এরা আল কায়েদার অনুসারী। পরবর্তীতে জঙ্গিবাদের দ্বিতীয় জেনারেশন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে উত্তরাঞ্চলে সিদ্দিকুর রহমান ওরফে ‘বাংলা ভাইয়ের’ হাতে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এ সময় থেকে হুজি-বিও সক্রিয় থাকে এবং শায়খ আবদুর রহমানের সঙ্গে ‘বাংলা ভাই’ আলোচনা করেন সংগঠনটিকে শক্তিশালী করার জন্য। এর আগে শায়খ আবদুর রহমান দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানে যান এবং লস্কর-ই-তৈয়বার ভারপ্রাপ্ত আমীর আবদুস সালামের কাছে জেএমবির গঠনতন্ত্র দেন। বস্তুত তার কাছে গঠনতন্ত্র দেয়ার উদ্দেশ্য ছিল জেএমবি গঠনের বিষয়ে পরামর্শ নেয়া এবং আফগানিস্তানে যুদ্ধফেরত যোদ্ধাদের দলে ভেড়ানো। অবশ্য ১৯৯৫ সালে শায়খ আবদুর রহমান হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে আলোচনা করলেও পরে মাযহাবগত মতপার্থক্যের কারণে তাদের থেকে সরে আসেন তিনি। যা পুলিশের কাছে তিনি স্বীকার করেন। ২০০১ সালে ময়মনসিংহে জাম’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রতিষ্ঠার পর আলোচনার কেন্দ্রে আসে তারা। এ সময় বাংলা ভাই রাজশাহীতে শাহাদাৎ-ই-আল হিকমা প্রতিষ্ঠা করেন। সমসাময়িক সময়ে আরও বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠন গড়ে ওঠে যেমন সিলেটে আল্লাহর দল, মেহেরপুরে হিযবুত তাওহিদসহ আরও অনেক দল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার পর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের টনক নড়ে। এছাড়া জামায়াতের তখনকার আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ২০০৪ সালের ২৩ মে মিডিয়াতে বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাই’ মিডিয়ার সৃষ্টি। যাই হোক, সিরিজ হামলার পর টনক নড়ে জোট সরকারের। এরপর শুরু হয় জেএমবির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান। নিরাপত্তা বাহিনীর এক রুদ্ধশ্বাস অভিযানের মুখে ২০০৬ সালের ২ মে সিলেট থেকে শায়খ আবদুর রহমান সপরিবারে গ্রেপ্তার হন। একই মাসের ২৬ মে ময়মনসিংহ থেকে ‘বাংলা ভাই’গ্রেপ্তার হন। ২০০৭ সালে শায়খ আবদুর রহমান, ‘বাংলা ভাই’, আতাউস সানি সহ জেএমবির ছয় জন শীর্ষ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। শায়খ আবদুর রহমানের স্ত্রী-সন্তানদের কারাদণ্ড হয়। এ সময় জেএমবির আমীর হন মাওলানা সাইদুর রহমান। অবশ্য দলের একটি অংশ তাকে আমীর হিসেবে মেনে নেয় নি। এর ফলে জেএমবি বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে তারা ভারতে যায় এবং বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ২০১০ সালে মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হন। তারপর আর বাংলাদেশে তাদের কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। ২০১৪ সালের দিকে তারা বেঙালুরুতে কার্যক্রম শুরু করে ও পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে সম্পৃক্ত ছিলেন বাংলাদেশে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম দুজন আসামী যারা বাংলাদেশ থেকে কয়েক বছর আগে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ১০০ জঙ্গির তালিকা দেয়।
জেএমবিতে ভাঙনপর্বের ফলে বাংলাদেশে এখন জঙ্গিবাদের তৃতীয় জেনারেশন চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে নব্য জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম তথা আনসার-আল ইসলাম সারা দেশে নাশকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। নব্য জেএমবি নিজেদের ‘ইসলামিক স্টেটসের’ সমর্থক বলে দাবি করে থাকে। আর মেজর জিয়াউদ্দিন যোগ দেয়ার পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম পরিবর্তন করে আনসার-আল ইসলাম রাখা হয়। এ সময় আকস্মিকভাবে ব্লগারদের হত্যা করতে শুরু করে তারা বিশেষ করে ব্লগার, লেখক, সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পী-সাহিত্যিকদের টার্গেট করে হত্যা করতে থাকে। এর মাধ্যমে তারা তথাকথিত শরিয়াহ আইনের কথা বলতে থাকে এবং এভাবে মানুষ হত্যা শরিয়াহসম্মত বলে দাবি করতে থাকে বস্তুত যা ইসলাম ধর্মের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক। এর ফলে সমগ্র বিশ্ব ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ভুল বার্তা পেতে থাকে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে এ হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মেজর জিয়াকেই প্রধান আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। ইতঃপূর্বেই মেজর জিয়াউদ্দিনকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়৷
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারতই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে আসছে। তার অংশ হিসেবে ১৪ অক্টোবর ২০১৯ (সোমবার) এনআইএ প্রধান যোগেশচন্দ্র মোদি সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে এক বৈঠকে ১২৫ জঙ্গির তালিকা প্রকাশ করে এবং এটি বাংলাদেশের জন্য সুখকর কোনো সংবাদ নয়। কারণ তিনি জানান, জেএমবি এখন দক্ষিণ ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে অগ্রসর হচ্ছে। এ খবর বিশ্বের শীর্ষ গণমাধ্যম এনডিটিভি, ইকোনোমিক টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডেতে প্রকাশ হয়। এছাড়াও বাংলাদেশেও এ খবর প্রকাশ হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে নব্য জেএমবির হামলার ঘটনাও উদ্বেগের।
তথ্যসূত্র :
১. রুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্ত রাজনীতি ১৯৯২-২০১২, মতিউর রহমান
©somewhere in net ltd.