![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে কলঙ্কমুক্তির যেসব উল্লেখযোগ্য দিন বিদ্যমান সেসব দিনের মধ্যে অন্যতম একটি দিন হচ্ছে ২৭ নভেম্বর ২০১৯। সেই সাথে ঐতিহাসিকও বটে। অবশ্যই কলঙ্কমুক্তির দিন। ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দায়ে পাঁচ খুনীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। তেমনই যুদ্ধাপরাধী, পাকিস্তানের দালালমুক্ত একটি স্বাধীন সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যা অবশ্যম্ভাবী ছিলো তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এ বিচার কার্যক্রমেও জামায়াতে ইসলামীর তীব্র বাধার মুখে বর্তমান সরকার তাদের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
অনেকে প্রশ্ন তোলেন, এ বিচার নিরপেক্ষ নয়। অনেকে বলে থাকেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, অধ্যাপক গোলাম আযমসহ আরও অন্যান্য যুদ্ধাপরাধী নাকি আদৌ যুদ্ধাপরাধী নয়। বিশেষ করে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাসিম আলী ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের নামে এ কথা বেশি শোনা যায় যে তারা সেসময় প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন না। তাহলে তারা কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে শামিল থাকেন ? ফ্যাক্ট হলো দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে তার জামায়াতে ইসলামীকে বেছে নেয়ার কারণ জানিয়েছেন যখন বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় ছিলো। তাহলে তারা যদি তাকে ‘আল্লামা’, ‘তাফসিরুল কুরআন’ উপাধিতে ভূষিত করে থাকেন, তাহলে কি তিনি মিথ্যা বলেছেন সেসময়। সে অনুযায়ী তার কথা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। শরীয়ত মোতাবেক নয়।
যাই হোক, এগুলো আলোচনার বিষয় না। যে কথা বলতে চাই, তা হলো কলঙ্কমুক্তির দিন হিসেবে আজকের দিনটি নিঃসন্দেহে ইতিহাসে বারবার স্মরণ করার যোগ্য। কেননা ২০১৬ সালে হলি আর্টিসান বেকারিতে পাঁচ জঙ্গি মিলে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়, তা কোনো বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ করতে পারে না। সেকারণেই এ হামলার বিচার আবশ্যক ছিলো এবং বিচারের রায়ে আমরা সকলেই খুশী। যদিও রাজনীতিকিকরণের এ দেশে এই প্রথম একটি বিচারের রায় দেখলাম যা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য ‘পুঁথিগত’ স্বীকৃতির কোনো প্রয়োজন নেই।
এ হামলা পাঁচ জঙ্গি ঘটালেও তা কিন্তু একদিনে হয়নি। তার পেছনে বড় একটি মহল কাজ করেছে। বিশেষ করে তামিম আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বড় একটি দল এ হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে থাকে। কারণ দেশে উন্নয়নের পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই এই হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি করে তারা। এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা হিসেবে সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা সৃষ্টি করা হয়। তারা কুরআন ও সুন্নাহ পড়ে, কিন্তু তা অনুযায়ী নিজেরা জীবনযাপন করে কিনা সন্দেহ আছে। কারণ হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বেশ কিছু হাদিস প্রণিধানযোগ্য। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, শেষ যামানায় এমন একদল মানুষের আবির্ভাব হবে, যারা হবে কমবয়স্ক এবং যাদের বুদ্ধি হবে স্বল্প। ভাল ভাল কথা বলবে, কিন্তু তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলার নিচে পৌঁছবে না। (বুখারী- ৫০৫৭)
এছাড়াও আরেকটি হাদিস উল্লেখযোগ্য। কারণ এ হাদিসটি আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর বর্ণিত হাদিসটিকে সত্য প্রমাণ করে। আবূ সা’ঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের সলাতের তুলনায় তোমাদের সলাতকে, তাদের সওমের তুলনায় তোমাদের সওমকে এবং তাদের ‘আমালের তুলনায় তোমাদের ‘আমালকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালীর নিচে (অর্থাৎ অন্তরে) প্রবেশ করবে না। এরা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। (বুখারী-৫০৫৮)
এ সম্পর্কিত আরও হাদিস আছে। আবূ সা’ঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু গনিমতের মাল বন্টন করছিলেন। তখন এক ব্যক্তি এসে বললো, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহকে ভয় করুন। ইনসাফ করুন। তখন তিনি বললেন, আমিই যদি নাফারমানী করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। [আবূ সা’ঈদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন] আমি তাকে খালিদ ইবনু ওয়ালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলে ধারণা করছি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে নিষেধ করলেন। অতঃপর অভিযোগকারী লোকটি যখন ফিরে গেল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ ব্যক্তির বংশ হতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। দ্বীন হতে তারা এমনভাবে বেরিয়ে পড়বে যেমনি ধনুক হতে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে (মুসলিমদেরকে) হত্যা করবে আর মূর্তিপূজারীদেরকে হত্যা করা হতে বাদ দেবে। আমি যদি তাদের পেতাম তাহলে তাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম। (বুখারী- ৩৩৪৪) ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেনঃ খারেজীদের সবচেয়ে মারাত্মক যে দোষ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন তা হলো তারা ইসলামপন্থীদের হত্যা করবে, এবং মূর্তিপূজকদের ছেড়ে কথা কথা বলবে। (মাজমূ’, ২৮/৫২৮) ইমাম কুরতবী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তারা মুসলিমদের কাফির সাব্যস্ত করে যখন তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে, তাদের রক্ত তখন তারা হালাল মনে করবে, আর ঐ দেশের কাফির জনশক্তিকে ছেড়ে দেবে। (আল মুফহিম, ৩/১১৪)
এছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ এরা এমন হবে যে মানুষদের বিস্মিত করাবে, এবং তারা নিজেদের নিয়েই গর্ব বোধ করবে। (আহমাদ, ১২৯৭২, আলবানী হাদীসকে সাহীহ বলেছেন)।
হাদিসগুলো এখানে উল্লেখ করার কারণ হলো বাংলাদেশে আশির দশক থেকে বর্তমান সরকারের শাসনকাল পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান উগ্রপন্থার বিস্তারকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন চোখে দেখেছেন তা পরিস্কার করে দেয়া। বুখারির ৩৩৪৪ নং হাদিসে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় (উপরি উক্ত) যে তিনি জীবদ্দশায় তাদের পেলে হত্যার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন। এতে স্পষ্ট হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আহবানে সাড়া দিয়ে যেসব মুসল্লী প্রতারিত হচ্ছেন তাদের সাবধান করাই আমার উদ্দেশ্য।
হলি আর্টিসানে হামলার তিনদিন পর গুলশান থানার সাব-ইনস্পেক্টর রিপন কুমার দাশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে ছয়জন জঙ্গি মদদদাতা এবং আরও কয়েকজন অজানা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ সময় পুলিশ তদন্ত করার সময় আরও ২১ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ২১ জঙ্গির মধ্যে আট জন জঙ্গিকে অভিযুক্ত করেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-এর ইনস্পেক্টর হুমায়ূন কবীর।
এ হামলার পেছনে যে ২১ জঙ্গি জড়িত ছিলো বলে পুলিশ জানায়, তাদের মধ্য থেকে ১৩ জনই পুলিশ ও র্যাবের বিভিন্ন অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
এ হামলা সম্পর্কে বলতে গেলে এসব জঙ্গির ক্রমবিকাশের পথ কিভাবে উন্মোচিত হলো তা উল্লেখযোগ্য। কেননা শুধু একা নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবশ্বির, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এ হামলায় অংশ নেয়নি। বরং পেছন থেকে সহায়তা ও সমর্থন করা হয়েছিলো। আগেই বলেছি, তামিম আহমেদ চৌধুরী এ হামলার প্রধানতম পরিকল্পনাকারী, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা এবং প্রধানতম অর্থদাতা। সারোয়ার জাহান সহ-সমন্বয়ক এবং মামুনুর রশীদ পরিকল্পনা সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখে। তানভীর কাদেরী অর্থ ও আশ্রয়দাতা হিসেবে ভূমিকা রাখে আর এসব জঙ্গিকে ব্রেইন ওয়াশের মাধ্যমে নিয়োগ দেয় শরিফুল ইসলাম।
প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলো চার জঙ্গি- জাহিদুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী ও রায়হান কবির তারিক। এছাড়া অস্ত্র, বোমা সরবরাহ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যারা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় তারা হলো নুরুল ইসলাম মারজান, মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান, বাশারুজ্জামান চকলেট, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, আব্দুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ এবং আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ।
এ মামলায় স্বাক্ষী দেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিম ও তার স্ত্রী এবং পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা।
এ মামলায় আট জনকে দোষী সাব্যস্ত করে পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দেয় ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই। একই বছর ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল এবং ৩ ডিসেম্বর এ বিচার শুরু করে আদালত।
কি ঘটেছিলো সেদিন ?
রাত নয়টার দিকে সেদিন বাংলাদেশের প্রায় সব টেলিভিশন তাদের স্ক্রলে হঠাৎ করেই হেডিং করে- রাজধানীর হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা, সেখানে থাকা অতিথিরা জিম্মি।
এ খবর যখন আরও বিস্তারিত আকারে সরাসরি সম্প্রচারে আসে, ততক্ষণে ওই এলাকায় উৎসুক মানুষের ভীড় জমে গেছে। সংবাদকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো সরাসরি সম্প্রচারে ব্যস্ত। অবশ্য তারাও বুঝে উঠতে পারে নি যে এমন একটি বীভৎস ঘটনার স্বাক্ষী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
রাতের জ্বলজ্বলে হেডলাইটের আলোয় যখন মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে, যখন মসজিদগুলোতে তারাবির নামায চলছে, ঠিক সেই সময়টিতেই হলি আর্টিসান বেকারিতে আক্রমণ চালায় এই পাঁচ জঙ্গি। এরা ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ যিকির করতে করতে ঢোকে এবং অস্ত্র হাতে মুহূর্তেই সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের কাবু করে ফেলে। এরপর সেখানে আগত দেশি-বিদেশি অতিথিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ জানা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করে। এসময় যারাই এ কালিমা বলতে পারছিলো না তাদের টার্গেট করে রাখে। আর যারা বলতে পারে তাদের ছেড়ে দেয়।
নব্য জেএমবির ইতিহাস
১৯৯৭ সালে সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ নামে একটি উগ্রপন্থী সংগঠন গড়ে তুললেও পর ২০০১ সালে শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই একসঙ্গে জাম’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রতিষ্ঠা করে। এরপর তারা সারাদেশে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ ছাড়াও আরও অনেক নাশকতামূলক অপতৎপরতা চালায়। পরে তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হলে মাওলানা সাইদুর রহমান জেএমবির আমীর হয়। কিন্তু মাওলানা সাইদুর রহমানকে আমীর হিসেবে মেনে নিতে পারে নি জেএমবির একটি অংশ। আর তাই তারা পৃথক হয়ে যায় এবং নতুন ভাবধারায় সংগঠিত হয়। আর জেএমবির মূল অংশ বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নাশকতার চক্রান্ত করছে। বিশেষ করে ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ফলে দুই জঙ্গি নিহত হয়। ২০১০ সালের ২৫ মে জেএমবির আমীর মাওলানা সাইদুর রহমানসহ চারজনকে ঢাকার দনিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ গঠন করা হয়। তিনটি অভিযোগের মধ্যে দুটি প্রমাণিত হয়। একটিতে সাত বছর ও অন্যটিতে ছয় মাস- মোট সাড়ে সাত বছর কারাদণ্ড হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রিজন ভ্যান থেকে সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজানুর রহমান ওরফে বোমা মিজান ওরফে ছোট মিজান ও হাফেজ মাহমুদকে ছিনিয়ে নেয় জেএমবির জঙ্গিরা এবং এর কয়েক ঘন্টা পর হাফেজ মাহমুদ ধরা পড়ে এবং বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। মাওলানা সাইদুর রহমান কারাগারে থাকার সময় সালাহউদ্দিনকেই ভারপ্রাপ্ত আমীর বানানো হয় বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়।
মাওলানা সাইদুর রহমান ১৯৭৭-৭৮ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে ২০০৫ সালে জেএমবির সঙ্গে জড়িত হলে তাকে বহিষ্কার করে দেয় জামায়াতে ইসলামী।
সাম্প্রদায়িক মনোভঙ্গি, ধর্মান্ধতা এবং উগ্রপন্থী চেতনা কিভাবে ছড়িয়ে পড়লো বাংলাদেশে ?
ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার কালো ছায়া আচ্ছাদিত হলো তা জানার জন্য বেশিদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে যখন দেশ উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করে তখন থেকেই সাম্প্রদায়িকতার কালো ছায়া বিস্তার করতে থাকে। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী এ বিষ ঢেলে দেয় এবং বাংলাদেশের মানুষের মনে ধর্মান্ধতার বীজ বপন করে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে যেমন ধর্মভিত্তিক দলগুলো থেকে সুবিধা নেয়া হয়েছে, একইভাবে এরশাদের শাসনামলেও তাই করা হয়েছে। বিশেষ করে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে রেখে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বৈরাচার, দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দমন, পীড়ন ও নির্যাতনের সংস্কৃতি মূলত এ সময় থেকেই শুরু হয়। সংবাদপত্রগুলোর ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ আর আন্দোলন দমনে পুলিশের হিংস্র ভূমিকা কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারের এসব ধর্মভিত্তিক দল থেকে সুবিধা নেয়ার সংস্কৃতি চলতেই থাকে যা এখনও বিদ্যমান।
নব্য জেএমবি এখন কোন পথে যেতে পারে ?
হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা মামলায় সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের রায়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সন্তোষ প্রকাশ করলেও এক জঙ্গির আইএস এর টুপি পরে আদালতে দাঁড়ানোর ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ পর্যায়ে উগ্রপন্থী সংগঠনটি আপাতদৃষ্টিতে দূর্বল মনে হলেও আসলে শক্তি সঞ্চয় করে বড় কোনো নাশকতার চেষ্টা চালাতে পারে বলে জানান উগ্রপন্থা বিশ্লেষকরা। তবে তারা বলছেন, উগ্রপন্থার বিকাশের কারণ হলো বেকারত্ব। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব দূর করা না গেলে উগ্রপন্থা চরম রূপ নেবে। যার সুবিধা নিতে পারে নব্য জেএমবি, আনসার-আল ইসলাম অথবা হিযবুত তাহরিরের মতো কোনো উগ্রপন্থী সংগঠন।
ফলে এ রায়ের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্তি হলেও কলঙ্কের ছিটেফোটা থেকেই যাবে।
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৯
হাসনাত ইবনে তারিক বলেছেন: যাজাকাল্লাহ খায়ের। শুভকামনা আপনাকেও।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১০
ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে।
শুভকামনা রইলো