![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিল্লিতে খিলজি শাসনের পর তুঘলক শাসন ইতিহাসে প্রসিদ্ধ অবস্থান লাভ করেন। খিলজি বংশের সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির মৃত্যুর পর তাঁর তেমন যোগ্য উত্তরসূরী ছিলো না। এসময় সুলতান হন যথাক্রমে কুতুবউদ্দিন মুবারক শাহ ও খুসরু খান। তাদের অযোগ্যতার সুযোগ বুঝে গিয়াসউদ্দিন তুঘলক দিল্লির শাসনক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং তুঘলক রাজবংশের শাসন শুরু করেন।
গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শাসনব্যবস্থায় উদারতার নীতি গ্রহণ করেন। কৃষিক্ষেত্রে জলসেচের ব্যবস্থা করেন এবং তিনি বহু স্থানে খাল খনন করেন। কৃষকদের উৎপাদন করা ফসলের এক দশমাংশ রাজস্ব হিসেবে দেয়া হতো এ সময়। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এসময় কৃষকদের অবস্থার পরিবর্তনের নীতি গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি সরকারি ডাক চলাচলের জন্য লোকমারফত ও ঘোড়ার ব্যবস্থা করেন। তবে তিনি এতটাই উদার ছিলেন যে স্বজনপ্রীতি তাঁর সময়ে সীমা ছাড়িয়ে যায়। বিশেষ করে পুত্র ফখরউদ্দিন মুহম্মদ জুনা খানকে তিনি ‘উলঘ্ খান’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৩২১ খ্রিস্টাব্দে জুনা খানের নেতৃত্বে দাক্ষিণাত্যের বরঙ্গলের কাকতীয় বংশের রুদ্রদেবের বিরুদ্ধে এক সামরিক বাহিনী পাঠালে জুনা খান সেখানে তুঘলক বংশের শাহী পতাকা উত্তোলন করেন।
এসময় বাংলায় শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহের তিন পুত্রের মধ্যে বাংলার শাসন নিয়ে ব্যাপক বিরোধ হয়। তারা দিল্লির আনুগত্য নামমাত্র দিল্লির আনুগত্য প্রকাশ করত এবং স্বাধীনভাবেই তখন তারা বাংলার শাসনভার পরিচালনা করত। বাংলার অভ্যন্তরীন বিশৃঙ্খলার সুযোগে জুনা খান বাংলা আক্রমণ করেন এবং বিজয়ী বেশে ফিরে আসেন। বিজয়ী বেশে ফিরে এসে বাংলায় দিল্লির প্রভুত্ব কায়েমের জন্য সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলককে দিল্লি থেকে ছয় মাইল দূরে আফগানপুর নামক স্থানে কাষ্ঠনির্মিত তোরণ নির্মাণ করে জুনা খান সংবর্ধনা দেন। এসময় সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক হস্তিপৃষ্ঠে উঠে কাষ্ঠনির্মিত তোরণে কাছে গেলে তোরণটি ধ্বসে পড়ে এবং এতে তিনি নিহত হন। তবে ঐতিহাসিকদের মধ্যে তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ আছে। ঐতিহাসিক বারনী ও ইয়াহিয়া সরহিন্দি মনে করেন, বজ্রপাতের ফলে তোরণটি ধ্বসে পড়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। তবে ঐতিহাসিক ইবনে বতুতা মনে করেন, তাঁর মৃত্যুর পেছনে স্বীয় পুত্র জুনা খানের হাত ছিলো। কোনো কোনো ঐতিহাসিক এ কথা মনে করেন, তোরণটি এমন হাল্কাভাবে আহম্মদ বিন আওয়াজের দ্বারা নির্মিত যেন হস্তিপৃষ্ঠে আরোহন করে সুলতান ওই তোরণের কাছে তোরণটি ধ্বসে পড়ে। পরবর্তীতে আবুল ফজল, নিজামউদ্দিন আহম্মদ, বদায়ূনি প্রমুখ ঐতিহাসিক সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের আকস্মিক মৃত্যুর পেছনে ইবনে বতুতার মতকেই সমর্থন করেছেন। এদিকে ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে জুনা খান ‘মুহম্মদ বিন তুঘলক’ উপাধি নিয়ে দিল্লির সুলতান হন। তবে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের মৃত্যুর পেছনে জুনা খান ওরফে মুহম্মদ বিন তুঘলকের জড়িত থাকা অমূলক না হলেও বজ্রপাতে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের আকস্মিক মৃত্যু কেবল অমূলকই নয়, হাস্যকরও বটে।
©somewhere in net ltd.