নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বঙ্গভাষাপ্রেমী

হাসনাত ইবনে তারিক

সাংবাদিক, লেখক, সংস্কৃতিমনা

হাসনাত ইবনে তারিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলিম রাজত্বের ইতিহাসে মুহম্মদ ঘুরী

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৮

মুসলিম রাজত্বের ইতিহাসে ভ্রাতৃ-কলহ, হিংসা-বিদ্বেষ ও ভ্রাতৃ-হত্যার যে মর্মান্তিক কাহিনী আছে সেখানে গিয়াসউদ্দিন ও মুইযউদ্দিনের পরস্পর ভালোবাসা ভারতের ইতিহাসে যেন নতুন দৃ্ষ্টান্ত স্থাপন করে। মুইযউদ্দিনের আরেকটি নাম মুহম্মদ ঘুরী। তিনি ছিলেন ক্ষমতাবান শাসক। একজন ক্ষমতাবান শাসক হিসেবে তিনি ভাই গিয়াসউদ্দিনকে অধীনতা স্বীকার করাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বরং ভাইয়ের নিকট আনুগত্য স্বীকার করে নেন।
মুহম্মদ ঘুরী ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি। গজনীর শাসনকর্তা নিযুক্ত হওয়ার পর মনোনিবেশ করেন রাজ্যজয়ে। উদ্দেশ্য ছিলো ভারত অভিযান ও ভারত বিজয় ।

মুহম্মদ ঘুরীর আক্রমণের সময় ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি
মুহম্মদ ঘুরী যখন ভারত আক্রমণ করেন তখন বাংলায় পাল বংশের শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেন শাসন শুরু হয়েছিলো। বুন্দেলাখন্ড চান্দেলাদের, গুজরাট বাঘেলাদের এবং দিল্লি ও আজমীর চৌহান বংশের অধীনে ছিলো। মুহম্মদ ঘুরীর আক্রমণের সময় শক্তিশালী রাজপুত বংশ উত্তর ভারতে রাজত্ব করছিলো। তাদের মধ্যে দিল্লি ও কনৌজের শাসনকর্তাগণ সবচেয়ে ক্ষমতাবান ও শক্তিশালী ছিলেন। সমসাময়িক মুসলিম লেখকরা কনৌজের রাঠোর শাসনকর্তা বা গাহড়বালরাজ জয়চাঁদকে তদানিন্তন শক্তিশালী রাজা বলেছেন।
জয়চাঁদ চৌহানরাজ পৃথ্বিরাজকে হিংসা করতেন। কারণ তাঁর মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় রাজা পৃথ্বিরাজ। এই কারণে তিনি পৃথ্বিরাজের প্রতি বিরূপ ছিলেন। কন্যা অপহরণকে কেন্দ্র করে তাঁদের ভিতর শত্রুতা সৃষ্টি হয়। এই শত্রুতাকে কাজে লাগান মুহম্মদ ঘুরী। তবে একথা সত্য নয় যে জয়চাঁদ মুহম্মদ ঘুরীকে ভারত আক্রমণ করতে আমন্ত্রণ করেছিলেন। মুহম্মদ ঘুরী গজনীদের পাঞ্জাবে পরাজিত করেছিলেন। পাঞ্জাব বিজয় তাঁর ভারত বিজয়ের অনিবার্য পরিণতি ।
ভারত আক্রমণ
১১৭৫ সালে মুহম্মদ ঘুরী তাঁর সর্বপ্রথম ভারত অভিযানে সৈন্য প্রেরণ করেন। ওই সময় মুলতানে ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমগণ ইসলাম ধর্মের বিরোধিতা করছিলো এবং সেখানে তাদের প্রাধান্য ছিলো বেশি। মুহম্মদ ঘুরী প্রথমে ইসমাইলিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মুলতান অধিকার করেন। তারপর ১১৭৫-৭৬ সালে সিন্ধুর উচদুর্গ অবরোধ করে অতি সহজে দখল করেন। এর দুই বছর পর ১১৭৮ সালে গুজরাটের বাঘেলা বংশের রাজাভীম এর রাজধানী আনহিলওয়ার দখল করতে অসমর্থ হন। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি মুলরাজের নিকট চরম পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হন।
তবে নিরুৎসাহ হওয়ার পাত্র নন মুহম্মদ ঘুরী। ১১৭৯ সালে তিনি পেশাওয়ার আক্রমণ করে গজনী বংশের শেষ সুলতান খুসরু মালিককে পরাজিত করেন। খুসরু মালিক তাঁর হাতে বন্দী হলেন। তিনি গজনী রাজ্যের শেষ অবলম্বন লাহোর জয় করেন। সমগ্র পাঞ্জাব অধিকার করার ফলে সমগ্র ভারত জয় করার পথে রাজপুত শক্তি ভিন্ন অন্য কোনো বাধা থাকল না।
তরাইনের প্রথম যুদ্ধ
গজনীদের পতনের পর মুহম্মদ ঘুরী রাজপুতদের তীব্র বাধার সম্মুখীন হন। ১১৯০-৯১ সালের শেষের দিকে তিনি দিল্লি ও আজমীরের চৌহানরাজ পৃথ্বিরাজের রাজ্য ভাতিন্দা দখল করেন। বিজয়ী মুহম্মদ ঘুরীর কথা শুনে রাজা পৃথ্বিরাজ বিশাল সৈন্য-সমাবেশ করে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। উত্তর ভারতের রাজাদের সম্মিলিত বাহিনীর সাথে জয়চাঁদ ও মুহম্মদ ঘুরী পেরে উঠেন নি। এর কারণ হিসেবে জয়চাঁদের বিরদ্ধে রাজা পৃথ্বিরাজের বিরূপ থাকাকে দায়ী করা যায়।
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ
তবে মুহম্মদ ঘুরী পরাজিত হয়ে মোটেও বিচলিত হলেন না। বরং রাজা পৃথ্বিরাজকে পরাজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তার পরের বছর ১১৯১ সালে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি পুনরায় তরাইনে উপস্থিত হন। পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বে ভারতীয় সম্মিলিত বাহিনীর সাথে মুহম্মদ ঘুরীর সেনাবাহিনীর যুদ্ধ হয়।
মুহম্মদ ঘুরী রাজপুতদের এই মিলিত বাহিনীকে তীব্র আক্রমণ করে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। পৃথ্বিরাজের রাজপুত বীরত্ব মুসলিম সৈন্যবাহিনীর নিকট পরাজিত হলো। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। হিন্দুদের এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে উত্তর ভারত তুর্কী মুসলিমদের অধিকারে আসে। মুসলিমরা দিল্লির উপকণ্ঠ পর্যন্ত ‍বিস্তৃত হলো। প্রকৃতপক্ষে এই বিজয় ছিলো উল্লেখযোগ্য ঘটনা। হান্সি, সামান, গুহরাম ও অন্যান্য কয়েকটি সুরক্ষিত দুর্গ মুহম্মদ ঘুরীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।
উত্তর ভারতের শাসনকর্তা নিয়োগ
গজনীতে প্রত্যাবর্তনের আগে কুতুবউদ্দিনকে ভারতের বিজিত রাজ্যের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। কুতুবউদ্দিন আইবক ধীশক্তি দ্বারা সমগ্র উত্তর ভারতে প্রভুত্ব কায়েম করেন। তিনি যখন এসব কাজে ব্যস্ত, তখন তাঁর এক সৈনাধ্যক্ষ ভাগ্যান্বেষী সৈনিক ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ১২০১ (১২০৩>১২০৪) সালে নদীয়া ও লক্ষ্ণৌ বিজয় করেন।
ভাইয়ের মৃত্যুতে দিল্লীর সুলতান পদে অধিষ্ঠান
এদিকে মুহম্মদ ঘুরীর ভ্রাতা গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যু হলে ১২০৩ সালে তিনি দিল্লি, ঘুর ও গজনীর সুলতান হন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে বিদ্রোহ বিপ্লবের ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ১২০৪ সালে মধ্য এশিয়াস্থ খাওয়ারিজমের শাহ আলাউদ্দিন মুহম্মদ ঘুরীকে আক্রমণ করলে তিনি পরাজিত হন। এই শোচনীয় পরাজয়ের খবর সারা রাজ্যে পৌঁছে গেল এবং অধিকাংশ প্রদেশের শাসনকর্তাগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বিদ্রোহ দেখা দিলো পাঞ্জাবের খোকার জাতির মধ্যে। তারা মুহম্মদ ঘুরীর আনুগত্য অস্বীকার করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এই খবর পেয়ে মুহম্মদ ঘুরী বিদ্রোহ দমন করেন এবং ১২০৫ সালের মধ্যে খোকারদের চরমভাবে পরাজিত করেন। তবে তাঁর জীবনাবসানের দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ১২০৬ সালের ১৫ মার্চ লাহোর থেকে গজনী প্রত্যাবর্তনের পথে আততায়ীর ছুরিকাহত হন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.