নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বঙ্গভাষাপ্রেমী

হাসনাত ইবনে তারিক

সাংবাদিক, লেখক, সংস্কৃতিমনা

হাসনাত ইবনে তারিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আফগান ভূমিতে কি আবার যুদ্ধ অপেক্ষা করছে ?

০১ লা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৮

এ কথা বিস্ময়কর নয় যে আফগানিস্তানে তালেবানরা আবার ক্ষমতা গ্রহণ করবে। এ কথা আমার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। গেল মাসের ২৯ ফেব্রুয়ারি তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হয়। এ চুক্তির প্রেক্ষাপট ছিলো ধূম্রাচ্ছন্ন। গত বছর আগস্ট থেকে এ চুক্তির মুলো ঝুলে ছিলো। কিন্তু সেসময় তালেবানের গাড়িবোমা হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এক সেনা নিহতের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তালেবানের সঙ্গে আলোচনাকে মৃত বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু নভেম্বরে পাল্টে গেল শান্তি আলোচনা স্থগিতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। সেসময় ডেমোক্র্যাট সিনেটর ও যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমায় খলিলজাদ আকস্মিকভাবে রাশিয়া সফর স্থগিত করে পাকিস্তানে গিয়ে তালেবানের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু ডিসেম্বরে আবারও হামলা হলে সে আলোচনাও থেমে যায়। সবশেষ চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে আফগান ভূমিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয় এবং ২৯ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধবিরতির চুক্তি করা হয়।

প্রশ্ন উঠতে পারে, ২০০১ সালে নাইন ইলেভেনের পর জর্জ ডব্লিউ বুশের কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আফগান ভূমিতে যে আগ্রাসন শুরু করেছিলেন, তা হঠাৎ করে হাল ট্রাম্পের আমলে বন্ধ করার প্রয়াস হলো কেন ? আসলে এর ব্যাখ্যা হতে পারে এক নম্বর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিশংসন প্রস্তাব সিনেটে উঠেছে এবং এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সমালোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা আর দুই নম্বর চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্প আবার যাতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারেন সেই কারণেও এ চুক্তি হয়ে থাকতে পারে। কেননা যে চুক্তি করতে বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ আগ্রহ দেখাননি সে চুক্তি ট্রাম্প করলেন, এ কথা কিছুটা বিস্ময়কর। তবে এর চেয়েও আরেকটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে হোয়াইট হাউসে আর ঘটনাটি ২৯ ফেব্রুয়ারি চুক্তির পরদিন ঘটেছে। ট্রাম্প তালেবানের প্রতি সপ্রশংস হয়েছেন। এই ঘটনা ভবিষ্যতে আফগান ভূমির রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে প্রভাব ফেলতেও পারে আবার নাও ফেলতে পারে।

তবে ট্রাম্প অন্তত স্বীকার করেছেন, তালেবান সন্ত্রাসীগোষ্ঠী নয়। তাহলে এ স্বীকারোক্তি থেকে কি এটা প্রমাণিত হলো না যে বুশের কথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ আসলে মিথ্যা ছিলো। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অনেক বছর যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আমরা উভয় পক্ষই এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তাই এ চুক্তি হওয়া প্রয়োজন ছিলো।’ কিন্তু তালেবান বারবারই প্রতিশ্রুতি ভেঙেছে। তারা চুক্তির আগে চুক্তির প্রতি সংবেদনশীল মনোভাব ধরে রাখতে পারেনি।

এখন পয়েন্ট হলো তালেবান আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে কিনা। আশ্চর্যজনক হলেও হাকিকত এই যে তালেবানের ক্ষমতায় আসার শক্তি ইতঃপূর্বে হয়ে গেছে। কারণ তারা আফগান সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করার সক্ষমতা রাখছে। ২৭ মার্চ আফগান সরকার তালেবান বন্দিদেরকে মুক্ত করার ঘোষণাও দিয়েছেন। যতদূর জানা যায়, বোধহয় আফগান ভূমির সিংহভাগ তালেবানের দখলে। আর কেবল কাবুল ও তার আশেপাশের এলাকা আফগান সরকারের দখলে রয়েছে। সুতরাং সেটাও যেকোনো মুহূর্তে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। আবার সেখানেও যে বিরোধী শক্তি নেই তা তো না। গেল ৩ মার্চ হামিদ কারজাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে শপথ নিলে আব্দুল্লাহ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখান করেন। ফলে হামিদ কারজাইয়েরও অবস্থান যে শক্তিশালী তা তো না। এ কারণে তালেবানের জন্য কাবুল দখল করা মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা তাদের খিলাফত ঘোষণার আগে ভেবেছে কি যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পাতা ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে নাকি ? কারণ যুক্তরাষ্ট্র কখনো স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজ করে না।

সিরিয়ায় প্রথমে বাশার আল আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে মদদ দিয়েছে। কিন্তু তাতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সেখানে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড শাম (আইএসআইএস) তথা দায়েশ সৃষ্টি হয়। তাদের বিরুদ্ধে আবার কুর্দিদেরকে লেলিয়ে দেয়। যদিও ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় উইকিলিকস সেসময়ের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল হ্যাক করে আইএস-উত্থানের পেছনে তার ভূমিকার বিষয়টি খোলাসা করে দেয়। সম্ভবত এই কারণেই ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হয়েছেন। গোটা সিরিয়ার রাজনৈতিক হিসাব দিয়েও যদি বিচার করা যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কি তাহলে তালেবানের সামনে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে ব্যবহার করতে যাচ্ছে। কেননা ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে বলেছেন, আইএস সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কিন্তু তালেবান নয়। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে তালেবানকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ট্রাম্পের এ বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির। ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির। সুতরাং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনৈতিক দর্শনের বিরোধিতাও আফগান ভূমিতে যুদ্ধবিরতির কারণ হতে পারে। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো আফগান ভূমিতে কি আবার যুদ্ধ অপেক্ষা করছে ?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১২

জাহিদ হাসান বলেছেন: বর্তমান আফগানিস্তানের একজন সাধারণ নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার -

নারীঃ আমাদেরকে এখন আর চাকরি কিংবা লেখাপড়া করতে হয় না। এগুলো করতে পারবো তাও ভাবি না। আমাদেরকে বাড়ির বাইরেও যেতে হয় না। যেতে পারবো, সেই কল্পনাও করি না!

পুরুষঃ আপনাদের দেশে পুরুষদের হয়তো অনেক লক্ষ্য থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের পুরুষদের একটাই লক্ষ্য। বউ-বাচ্চা নিয়ে বিমানের চাক্কা ধরে হলেও এই সন্ত্রাসের জনপদ থেকে বের হয়ে যাওয়া! :D

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:২১

হাসনাত ইবনে তারিক বলেছেন: যথার্থ বলেছেন। লেখাটি গত বছরের। বর্তমান আফগানিস্তানের চিত্র এটাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.