![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের আরেক নাম দেয়া হয়েছে ক্রসফায়ার অথবা বন্দুকযুদ্ধ। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায়। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে গভীর রাতে আরব আলীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাব। তারপর তাকে আর অক্ষত পাওয়া যায়নি। পর দিন সকালে সংবাদ হলো আরব আলীকে নৃশংসভাবে পুলিশ হেফাজতে হত্যা। তখন পুলিশের বক্তব্য ছিলো, সে (আরব আলী) ছিলো মাদক চোরাচালানকারী। আদতে এ ছিলো মিথ্যা অভিযোগ।
বাংলাদেশে উগ্রপন্থার পেছনে ইসলামি অন্ধবিশ্বাসকে দাঁড় করানো হলেও আসলে এর মূলে ছিলো স্বাধীনতাউত্তর জাসদের উগ্র রাজনৈতিক নকশাল আন্দোলন। ভারতের নকশাল আন্দোলন শক্ত হাতে সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী প্রতিহত করেন। বাংলাদেশে প্রতিহত করেন সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান।
এ প্রসঙ্গে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে তাদের এক ‘সংবাদ ভাষ্যে’ জানায়, ‘স্বাধীনতার পরে সমাজে উগ্রপন্থার বিস্তারে সিরাজুল আলম খানদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল৷ অথচ দলটির সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন৷ মুক্তিযুদ্ধে পা হারানো কর্নেল তাহের, যিনি জিয়াউর রহমানকে তাঁর স্বপ্নের বিপ্লবের কাণ্ডারি ভেবেছিলেন এবং বন্দি দশা থেকে জিয়াকে উদ্ধারের পরে তাঁর নির্দেশেই ফাসির দড়িতে প্রাণ দিয়েছিলেন, তিনিই বঙ্গবন্ধুকে কেন কবরস্থ করা হয়েছিল, সেজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন৷ বলেছিলেন, তাঁর লাশ বঙ্গোপসাগরেই নিক্ষেপ করা উচিত ছিল৷ ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের আগে জাসদ প্রেসিডেন্ট মুজিবকে বহনকারী গাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল৷ বলা হয়ে থাকে, তাহের দেশপ্রেমিক, কিন্তু তাঁর মুক্তির পথ ভ্রান্ত ছিল৷ তিনি সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের বীজ বপন করেছিলেন৷ আবার জাসদের সশস্ত্র অঙ্গ গণবাহিনীকে ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় রক্ষীবাহিনী শক্তি ব্যয় করেছিল৷’
এদেশের আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলে থাকে যে, সিরাজ শিকদারই বাংলাদেশের প্রথম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। সেসময় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবুর রহমান আবার এ হত্যাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, সিরাজ শিকদার কোথায় ?
কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভুলে গেলে চলবে না কার্নেল তাহের তাঁর সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের জন্য যে বিপ্লব করতে চেয়েছেন, তাকে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দলগুলোর নেতারা ‘ভুল’ বলে থাকেন। অবশ্য তাদের যুক্তি এক্ষেত্রে ভুলও না। কারণ কর্নেল তাহের মোহে পড়ে জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। কিন্তু কৃতঘ্ন জিয়াউর রহমান সেই তাহেরকেই ফাঁসিতে ঝোলান। ফলে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সম্ভাবনাটুকু ধূলিসাৎ করে দেন।
এরপর জিয়াউর রহমান নিহত হলেন। বলা হয়ে থাকে, তাঁকে হত্যা করেছেন জেনারেল মঞ্জুর এবং জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করেন জেনারেল এরশাদ। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি এরশাদের বিরুদ্ধে এ বিচারের রায় মুলতুবি করে রাখা হয়। যাই হোক, আমি হয়তো অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ফেললাম। তারপরও এগুলো পাঠকের হিন্টস হতে পারে। আর বাংলাদেশে বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ার একেবারেই পুরাতন কিছু নয়। সেক্যুলার সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের বাবুরা অবশ্য একে ‘বিনা বিচারে হত্যা’ বলে অভিহিত করে থাকেন। এর পেছনে মূল কারণ হলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং দলের ভেতরের কোন্দল। তবে শুধু ‘হত্যা করাই আর যথেষ্ট নয়৷ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে মৃত্যুকে ভয়াল করে তোলা হচ্ছে৷ সম্প্রতি ফেনিতে ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতাকে তাঁর গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ৩৯ জন দলীয় নেতা-কর্মীর ফাঁসি হয়েছে৷ তারা অভিযোগপত্রভুক্ত আসামী হওয়ার পরেও দল কিন্তু তাদের বহিষ্কারে পদক্ষেপ নেয়নি৷’ ফলে এর ভেতরও ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ থেকে যায়। বাংলাদেশে অভিজিৎ রায়ের একজন খুনীকেও বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে। ফলে তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায় একটি জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশনকে জানিয়েছিলেন, ‘অভিজিৎ রায়ের খুনীকে বন্দুকযুদ্ধে না দিলে হয়তো আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতো।’ এসময় তিনি দাবি করেন অভিজিৎ রায়ের হত্যার নির্দেশ এসেছে সুদূর আল কায়েদা থেকে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধফেরতরা একটি শ্লোগান দিতো আর তা হলো-‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান।’ পরিচিত লাগছে শ্লোগানটা ? হ্যাঁ। বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানানোর এই ‘ব্যর্থ’ চেষ্টা আগেও হয়েছে। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার শাসনামলে তা পূর্ণতা পেয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ যখন রোধ হয়ে গেল তখন ইসলামি উগ্রপন্থার পেছনে তথাকথিত সর্বহারার রাজ কায়েম করার প্রবণতা কাজ করেছে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ছিলো জাম’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এদের সংস্কারপন্থী অংশ এখন ‘নব্য জেএমবি’ তথা আইএসের সমর্থক হিসেবে নাম লিখিয়েছে।
তবে বাংলাদেশে প্রথম বোমা হামলার ঘটনা ঘটায় হরকাতুল জিহাদ। তাদের দেখানো পথ ধরেই ধীরে ধীরে হিযবুত তাহরির, জেএমবির মতো উগ্রপন্থী ইসলামি লেবাসধারী সংগঠন পা পা করে এগায়। আর জোট সরকারের শাসনামলে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার পর থেকেই জোট সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ ও র্যাব সোচ্চার হয়। জেএমবির প্রধান দুই শায়খকে গ্রেপ্তারের পর গণহারে ক্রসফায়ারের সংস্কৃতি চলতে থাকে। জঙ্গিবাদ ও মাদক চোরাচালান দমনের নামে এ ক্রসফায়ার ধীরে ধীরে সাধারণ ও নিরপরাধ মানুষ হত্যার সংস্কৃতিতে রূপান্তর হয়। র্যাবের নাম শুনলে তাই সেসময়কার মানুষ আতঙ্কে থাকতো। আর মানুষের ভেতর এই ‘র্যাবফোবিয়াকেই’ ব্যবহার করছে বর্তমান সরকার। তারা বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নাম দিচ্ছে। বেশিরভাগ বন্দুকযুদ্ধের পেছনে রাজনৈতিক নির্দেশ (উপরের নির্দেশ) জড়িত থাকে বলে বন্দুকযুদ্ধকে পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপহরণের পর গুম। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইলিয়াস আলীসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে অপহরণের পর আর পাওয়া যাচ্ছে না। সম্ভবত তাদেরকে গুম করে ফেলা হয়েছে।
©somewhere in net ltd.