![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব সম্ভবত আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। সেভাবেই বিবেচনা করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার তিনি বললেন, রাশিয়া ক্রমাগত সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে উঠছে। তাই যেকোনো সময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। আবার একই দিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রত্যুত্তরে পুতিনও বলে দিয়েছেন, এ বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য ও অন্যায্য।
পুতিনের এমন প্রতিক্রিয়া তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত করে। এ যুদ্ধ শুরু হলে পারমাণবিক বোমার বিস্তার ঘটবে এ কথা বলাই বাহুল্য। সেদিক থেকে চীন এবং উত্তর কোরিয়া নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চড়াও হতে পারে। উত্তর কোরিয়া তার প্রতিশোধস্পৃহা কাজে লাগাতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব সাগরে চীন সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে তাইওয়ানকে নিজেদের বলে ঘোষণা করতে পারে। একই সঙ্গে হংকংয়ে বিরোধীদের দমন-পীড়ন জোরদার করতে পারে দেশটি। অন্যদিকে ইরানের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা উঠিয়ে দেয়ার চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যাতে রাশিয়াকে তারা সহায়তা করতে না পারে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সিরিয়া, চেচনিয়া বা আফগানিস্তানর চেয়েও রাশিয়া বেশি পর্যুদস্ত হয়েছে ইউক্রেনে।
এর আগে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়ে ১৫ হাজার, চেচেন যুদ্ধে ১৩ হাজার এবং চলমান সিরিয়া যুদ্ধে কয়েকশ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। ২০১১ সলে শুরু সিরিয়া যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন ও কূটনৈতিকভাবে সহায়তা করতে থাকে রাশিয়া। একই নিজের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, আরেকদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবাদ কমানোর পর ঠাণ্ডা মাথায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন পুতিন। এর ফলে সুইফটসহ রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলো। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সম্প্রতি বাইডেনের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ মারিউপোল, খারকিভ, মেলিটোপোল, চেরনিহিভ ও চেরনোবিল- এই ৫ শহর দখলে রাশিয়া। রাজধানী কিয়েভে প্রবেশের জন্য রুশ সেনারা হোস্টোমেল ও সুমি শহর হয়ে একটু একটু করে অগ্রসর হচ্ছে। সম্প্রতি কাছাকাছি চলে এসেছে তারা। কিন্তু কিয়েভ দখলে এত শ্লথগতি কেন পুতিনের?
পুতিন নিজেও এই মুহূর্তে কিয়েভ দখল করতে চাইছেন না। অপরদিকে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ন্যাটোতে সরাসরি যোগ দেবে না ইউক্রেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও বলেছেন, এখনই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে নেয়া হবে না। পুতিন এমনটিই চাইছিলেন। চাইছিলেন ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান না করার নিশ্চয়তা। ইতোমধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান না করার নিশ্চয়তা দেয়ার দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। সেদিক থেকে দেখলে, যুদ্ধের আগুন আরও বিস্তৃত হতে পারে।
তবে যাই বলি না কেন, এই মুহূর্তে পুতিন সম্পর্কে একটি গুজব নিয়ে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যে বেশ আলোচনা হচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিতি পেসকভ তো সাংবাদিকদের বলেই বসলেন, আপনাদের ‘জিহ্বা কামড়ে ধরা’ অর্থাৎ লজ্জা পাওয়া উচিৎ। অন্যদিকে রাশিয়ার গণমাধ্যম ও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ক্যান্সারের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হচ্ছে। পুতিন কি সত্যিই ক্যানসারে আক্রান্ত? ২০১৪ সালে দুর্নীতির অভিযোগে গণবিক্ষোভের মুখে ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পদত্যাগের পর ক্রিমিয়া দখলে নেন তিনি। এরপর জার্মান চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু পাশ্চাত্যের রাজনীতিকরা যা বলছেন, তার সারমর্ম হলো ক্যানসারের কারণে তাকে স্টেরয়েড নিতে হচ্ছে। আদতে সত্যিমিথ্যে কেবল খোদাই জানেন! ইউক্রেন থেকে বহুসংখ্যক বেসামরিক লোক শরণার্থী হয়ে হাঙ্গেরি, রোমানিয়া কিংবা পোল্যান্ডে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ইউরোপ থেকে অস্ত্র সহযোগিতা পাচ্ছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। আরও বাড়াবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে বেশ সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী বলেই মনে হচ্ছে। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে আর দেরি নেই। একইভাবে যুদ্ধের শুরুতে বাইডেন বলেছিলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিকল্প হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জেলেনস্কির যুক্তি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও রাশিয়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিলো। এখনও সেভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তাহলে আমাদের সামনে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ অপেক্ষা করছে?
©somewhere in net ltd.