নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বঙ্গভাষাপ্রেমী

হাসনাত ইবনে তারিক

সাংবাদিক, লেখক, সংস্কৃতিমনা

হাসনাত ইবনে তারিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘৭৫-এর রাজনীতি: নভেম্বরের যুদ্ধ

০৭ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৩৭

যুদ্ধোত্তীর্ণ দেশ পুনর্গঠনে সবে মনোযোগ দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর শান্তিপূর্ণ বিদায়ের পর মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণ করেছেন। শুরু হয়েছে অর্থনীতির দ্বিতীয় বিপ্লব।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ বিনির্মাণে যখন একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন জাতির পিতা, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মারণকামড় বসায় ঘাতকের দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাকে সপরিবারে নিঃশেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে নামে মোশতাক গং। এরপরের ইতিহাস কলঙ্কের ইতিহাস।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশতাক। তাকে ক্ষমতায় দেখে বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও আঁতকে উঠেছিল (নাসির আহমেদ, ৩ নভেম্বর: ইতিহাসের ভয়ংকর বাঁক বদলের দিন)। ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনরায় সমুন্নত রাখার অভিপ্রায়ে খালেদ মোশাররফ সেনা অভ্যুত্থান করেন।

মোশতাকের পদত্যাগ: সেনাবাহিনীতে জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান হয়। এ সময় জিয়াউর রহমানকে স্ব গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়। এ সময় কর্নেল তাহের ও জাসদের ভূমিকা ব্যাপক সমালোচিত হয়। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। এরই মধ্যে মধ্যরাতে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে খালেদ বচসায় লিপ্ত হন এবং মোশতাক পদত্যাগে বাধ্য হন। পদত্যাগের পর তিনি সিঙ্গাপুর চলে যান।

এদিনই ঘটে যায় ইতিহাসের নিকৃষ্টতম, ভয়াবহ জেলহত্যা। কারাগারে জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এম. মনসুর রহমান ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। (রক্তস্রোতে ভেসে থাকা নভেম্বর)

খালেদ মোশাররফের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না: ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না খালেদ মোশাররফের। তিনি যখন সেনা অভ্যুত্থান পরিচালনা করছেন, তখন তার মা ও তার ভাই রাশেদ মোশাররফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের দাবিতে এক মিছিলে অংশ নেন। এ সময় তিনি জানতেন না খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের বিষয়ে। এতে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার কাছে ইমেজ সংকটে পড়েন তিনি। যে কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে তার অভ্যুত্থান (বিভুরঞ্জন সরকার, বাংলাদেশের রাজনীতির দুই গভীর ক্ষত: অগাস্ট ও নভেম্বর ট্র্যাজেডি)।

প্রকৃত অর্থে খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়নি। মূলত তখনকার রাজনৈতিক অস্থির অবস্থায় খালেদ মোশাররফকে অভ্যুত্থান করতেই যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হন এবং তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। মোশতাককে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দেন খালেদ মোশাররফ। সেই সঙ্গে তার অনুরোধে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হন। পরে অবশ্য জিয়াউর রহমান সুবিধামতো সময়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি হয়ে বসেন।

তাহেরকে জিয়ার টেলিফোন: স্ব গৃহে অন্তরীণ জিয়াউর রহমান কর্নেল আবু তাহেরকে টেলিফোনে তার মুক্তির জন্য মিনতি জানান। জাসদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা ও জনসমর্থন আদায়ের জন্য ৬ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান করেন তিনি। ৭ নভেম্বর জিয়াকে ছাড়িয়ে আনেন তিনি।

ভাগ্যের পরিহাস, যে তাহের জিয়াকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে সিপাহি-জনতার বিপ্লবের তথা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটালেন, কৃতঘ্ন হয়ে সেই তাহেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলান জিয়াউর রহমান।

১৯৭৫ সালে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, খালেদা মোশাররফের অভ্যুত্থান, খন্দকার মোশতাকের পদত্যাগ ও বিচারপতি সায়েমের রাষ্ট্রপতিত্ব লাভ, জিয়াউর রহমানের বন্দিত্ব এবং আবু তাহেরের পাল্টা অভ্যুত্থান- এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এসব ঘটনা এ দেশের ইতিহাসের মোড়কে ব্যাপক আকারে প্রভাবিত করে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পালাবদলেও সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র:
১. মহিউদ্দিন আহমদ, জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি;
২. মহিউদ্দিন আহমদ, ইতিহাসের বাঁকবদল: একাত্তর ও পঁচাত্তর;
৩. মহিউদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোন পথে;
৪. মহিউদ্দিন আহমদ, লাল সন্ত্রাস;
৫. আলী রীয়াজ, বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যত গতিপ্রকৃতি (সিজিএস আলোচনাপত্র);
৬. মাহজাবীন খালেদ, ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ ও খালেদ মোশাররফের একটি চিঠি (প্রথম আলো);
৭. বিবিসি;
৮. বিভুরঞ্জন সরকার, বাংলাদেশের রাজনীতির দুই গভীর ক্ষত: অগাস্ট ও নভেম্বর ট্র্যাজেডি (বিডিনিউজ২৪);
৯. সিরাজুল আলম খান, প্রতিনায়ক (নিউক্লিয়াস, মুজিব বাহিনী, জাসদ);
১০. মহিউদ্দিন আহমদ, বিএনপি: সময় অসময়;
১১. মহিউদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০;
১২. মহিউদ্দিন আহমদ, যুদ্ধদিনের কথা ১৯৭১;
১৩. মহিউদ্দিন আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল তিন অধ্যায়।
১৪. ইত্তেফাকে প্রকাশিত লেখকের অন্য একটি নিবন্ধ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.