নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা মানুষের কথায় কিই বা আসে যায়

বোকা মানুষ বলতে চায়

আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১

বোকা মানুষ বলতে চায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

Never Underestimate Anybody: জীবন থেকে নেয়া একগুচ্ছ প্রেরণার গল্প (নিজেকে প্রমাণের গল্প - গল্প ০৩)

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫২



সিরিজের সব লেখা Never Underestimate Anybody: জীবন থেকে নেয়া একগুচ্ছ প্রেরণার গল্প



থমথমে মুখ করে রাফিন ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে। মিথিলা তার শোবার ঘর থেকে দেখতে পাচ্ছে, থেকে থেকে ছেলেটার সারা শরীর কেঁপে উঠছে। বার বার মনে হচ্ছে উঠে গিয়ে ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু মিথিলার বিদ্রোহী সত্ত্বা তাকে পিছু টেনে রেখেছে। কারণ সে জানে আজকের এই দুঃখের দুয়েকটি টুং টাং শব্দ ভবিষ্যতে এক মহান সুর স্রস্টা হিসেবে আবির্ভূত হবে।



রাফেক ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে খাটের উপর বসল। ব্যালকনিতে রাফিন একা দাঁড়িয়ে আছে আর মিথিলা থমথমে মুখ করে নিস্পলক দৃষ্টি দিয়ে সেদিকে চেয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে ছেলেকে কড়া করে বকতে গিয়ে কিছু তিরস্কার মাখা বাক্য বেখেয়ালে বলে ফেলেছে রাফেক, তারই প্রতিক্রিয়া মা-ছেলের মাঝে।



“লাইট কি অফ করে দেব?” রাফেক স্ত্রীর দিকে চেয়ে বলল।



“দাও”



“এমন পাথর মুখ করে আছো কেন? আমি কি আমার ছেলেকে শাসনও করতে পারবোনা?”



“কেউ তোমাকে বারণ করেনি”



“তো তুমি এত রিঅ্যাক্ট করছো কেন?”



“আমি কোন কিছুই করছি না”



কিছুক্ষণ আগে রাফেক তার ছেলে রাফিনকে খুব বকেছে। ছেলের পড়ালেখা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে, আজ হাফ ইয়ারলি এক্সামের রেজাল্ট দিয়েছে, ম্যাথে রীতিমত ফেল করেছে! রেগে রাফেক ছেলেকে বলেছে পড়া-লেখা বাদ দিয়ে বাসার সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতে। আর এতেই যত বিপত্তি। রাফেক জানে তার এই মন্তব্য মিথিলার কোন সুপ্ত ক্ষতে আঘাত করেছে। কিন্তু রাফেক কোনভাবেই সেই উদ্দেশ্যে মন্তব্যটি করে নাই, এটা মিথিলাও ভালো করে জানে। তারপরও সে রিঅ্যাক্ট করবে, কারণ কিছু কিছু কথা নিজের অজান্তেই অনেক আঘাত দিয়ে যায়।



বিয়ের কিছুদিন পর, মাসখানেক হবে বোধহয়। রাফেক একদিন মিথিলাকে বলল আসো আমরা আমাদের জীবনের কিছু গোপন কষ্ট শেয়ার করি। সেদিন মিথিলা বলেছিল তার বেদনার বর্ণমালা...

মিথিলা ছোট বেলা থেকে পড়ালেখায় কিছুটা দুর্বল ছিল, বিশেষ করে লজিকাল ফাংশন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। তো কোনমতে ম্যাথ আর সাইন্সের সাবজেক্ট পাশ করে করে ক্লাস নাইনে উঠল এবং খুব স্বাভাবিকভাবে আর্টসে ভর্তি হল। কিন্তু তাতে কি? তাকে তো ম্যাথে পাশ করতে হবে। হাফ ইয়ারলি এক্সাম খুব খারাপ হওয়ায় তার বাবা খুব খোঁজ করে একজন স্পেশালিষ্ট ম্যাথ টিচার যোগাড় করলেন। এই টিচার মিথিলাকে ম্যাথ বুঝানোর জন্য তার জানা সর্বপ্রকারের বিদ্যা প্রয়োগ করে বিফল হলেন। ফাইনাল এক্সামে মিথিলা সবাইকে আরও অবাক করে দিয়ে ডাবল জিরো পেল। সেদিন টিচার বাসায় এসে মিথিলার বাবাকে একটি বাক্য বলেছিলেন, যা আজো মিথিলাকে ব্যাথিত করে। আজো মিথিলার কানে ভাসে একটি বাক্য, “আপনার মেয়ে যদি কোনদিন মেট্রিক পাশ করে তাহলে আমি শাড়ি-চুড়ি পরে রাস্তায় হাঁটব...”



সেই কথাগুলো মিথিলার কিশোরী মনে খুব আঘাত করেছিল। কিন্তু নিজের অজান্তেই এই অপমানের বানী তার প্রেরণার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। এক বছর লস দিয়ে সে মেট্রিকের গণ্ডি পেরোয়। এরপর বয়সের সাথে সাথে তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটতে থাকে। আরও শ্রেয়তর রেজাল্ট করে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত বিখ্যাত এক মহিলা কলেজ হতে একাউনটিং এ অনার্স-মাস্টার্স করেছে। এরপর আইসিএবি থেকে চার্টার্ড একাউনটেন্সি কমপ্লিট করেছে ব্রিলিয়াণ্ট রেজাল্টের সাথে। চার্টার্ড একাউনটেণ্ট হওয়ার পর দেশের বেশ কয়েকটি সিএ ফার্ম তার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে, এমন কি পার্টনারশিপ পর্যন্ত অফার করেছে। কিন্তু মিথিলা সেদিকে আর এগোয়নি। বিয়ের পিড়িতে বসে গৃহিণী সেজেছে। এখন অবশ্য সে আর তার দুই ফ্রেন্ড মিলে একটি ফার্ম চালাচ্ছে, কিন্তু মিথিলা সেখানে সময় দেয় কম। তাকে এ ব্যাপারে কিছু বললে সে বলবে, “আমি সব করেছি নিজেকে প্রমাণ করার জন্য, নিজের কাছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার জন্য, অন্য কিছু পাওয়ার জন্য নয়। আমার সব সার্টিফিকেট আমার কাছে আর আটদশটা কাগজ ছাড়া কিছু নয়। তুমি বুঝবেনা রাফেক, তুমি বুঝবেনা...!”



রাফেক বিছানা হতে উঠে দাঁড়ালো, তারপর ঘর হতে ব্যালকনির দিকে পা বাড়াল। ছেলেকে গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে মাথার চুল নেড়ে দিল। মিথিলা নিজের এই অর্জন পেয়েছে তার অভিভাবক তার পাশে ছিল বলে, রাফেক নিজের অন্যায় আচরণের জন্য মনে মনে লজ্জিত হল। খুব ক্ষীণ কণ্ঠে রাফিনের গলার আওয়াজ শুনতে পেল, “বাবা আমি আর ম্যাথে ফেল করবো না...”

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৫

মামুন রশিদ বলেছেন: অনুপ্রেরণার গল্প ভালো লেগেছে ।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই। গল্পগুলো সত্য ঘটনা বলে তেমন জোরালো হয়ত হয়না, কিন্তু আমি আমার জীবনে খুব কাছ থেকে দেখা মানুষগুলো থেকে প্রচণ্ড ইন্সপায়ার্ড।

সবসময় সাথে পেয়ে কৃতজ্ঞ।

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৬

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: সিরিজটা বারবার পড়ার মতো । যখনই হতাশ হবো, এই সিরিজে ঢুঁ মেরে যাবো ।

শুভেচ্ছা জানবেন । :) :)

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ আদনান শাহ্‌িরয়ার ভাই।

ব্লগে আমি এসেছিলাম লেখালেখির অভ্যাসটা ধরে রাখার আশায়, আর তা তখনই হয় যখন লেখাটি কেউ পড়ে দেখে। কারণ প্রতি সৃষ্টিকর্মই চায় তার মূল্যায়ন হোক; তা সে পজেটিভ হোক আর নেগেটিভই হোক না কেন? আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ছোট করবো না, আমি জানি অন্তত একজন আছে যে আমার প্রতিটি লেখা পড়ে দেখবেন। আগামীতে উৎসাহের পাশাপাশি সমালোচনাও পাবো আশা করি।

ভালবাসা নিবেন, ভালো থাকবেন।

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৯

শায়মা বলেছেন: রাফিনের জন্য শুভকামনা ভাইয়া!

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:১০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ শায়মা আপুনিটাকে।


অনেকদিন পর আমার ব্লগে পেলাম সামুর এই লক্ষ্মী আপুনিটাকে।:D

৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬

উড়াল পঙ্খী সজল বলেছেন: আসলে ভালো লাগলো

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ উড়াল পঙ্খী সজল পুরানো লেখাগুলো সময় দিয়ে পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.