নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা মানুষের কথায় কিই বা আসে যায়

বোকা মানুষ বলতে চায়

আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১

বোকা মানুষ বলতে চায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ্যা সুসাইড নোট (ছোটগল্প)

১২ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৪৫





গত এক সপ্তাহ গোঁফ-দাড়ি না কামানোয় এখন গলার নীচে কেমন বিঁধছে। শুয়ে শুয়ে কোথায় একটু শান্তিতে সব ঠিকমত গুছিয়ে নেব তা নয়, অস্বস্তি নিয়ে তাই অগোছালো চিন্তার ডালি নিয়েই লিখতে বসলাম। না একোন প্রেমপত্র নয়, এটা একটা সুসাইড নোট। জী হ্যাঁ, আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমি সুসাইড করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমি চাইনা এই সুসাইডের পর খুব বেশী ঝামেলা হোক, আমি শুধু চাই রিনি জানুক আমি তাকে কতটা ভালোবাসি, সরি কিছুক্ষণপর ভালোবাসতাম হয়ে যাবে। আমি কোন ঝামেলা যেন কাউকে না পোহাতে হয় তার সব আয়োজন করে রেকেছি। বাড়ীওয়ালা আঙ্কেলের গর্জন কাঠের দামী দরজা যেন না ভাঙতে হয় সে ব্যাবস্থা পর্যন্ত করে রেখেছি, দুদিন আগে এক কাঠমিস্ত্রি ধরে এনে দরজার ছিটকানি লুজ করে রেখেছি। একটু জোরে ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে।



রিনি’র সাথে আমার পরিচয় ইউনিভার্সিটি লাইফে, আমরা একই সাথে একই ক্লাসে ভর্তি হই। একেবারে শুরুর দিকেই দুজনের পরিচয়। এরপর দীর্ঘ ছয়টা বছর আমরা একসাথে কাটিয়েছি। বন্ধুত্তের সীমা পেরিয়ে কখন ভালোবাসার নদীতে পাল উড়িয়েছি দুজনে’র কেউই কিন্তু জানি না। সব ঠিকই চলছিল, মাস্টার্স শেষ করার পর যত বিপত্তি। রিনির বাবা-মা একজন বিসিএস ক্যাডার, তাও আবার ফরেন অ্যাফেয়ার্স এ জব করে পাত্র ঠিক করলেন। ছেলে উচ্চ-শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত ফ্যামিলি, উচ্চবিত্ততো বটেই। একেবারে সিনেমাটিক গল্প তাই না। কিন্তু সিনেমার গল্পগুলো কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবন থেকেই নেয়া হয়। হয়ত কয়েকটি গল্পকে একত্র করে সিনেমাটিক করা হয়। কিন্তু গল্পগুলোতো আর মিথ্যা নয়।



যাই হোক, আমার বিশ্বাস ছিল রিনি আমার ফিলিংস বুঝবে। কোথায় কি? সে এক বিকেলে আমার সাথে নিউমার্কেটে দেখা করল। এটা সেটা কেনা কাটা, দইফুচকা-লাচ্ছি খাওয়া, হাবিজাবি কত কথা। সব শেষে একেবারে সিনেমার মত স্টাইলে আমাকে বুঝাতে শুরু করল। আমি হাসি হাসি মুখ করে সব শুনলাম, ফান করলাম, এমনভাব করলাম যেন এ কিছুই না। এরপর তার সাথে উঠেপরে লাগলাম তার বিয়ের আয়োজনের প্ল্যানিং, কেনাকাটা আরও কত কাজে। রিনি বারবার বলতে লাগল ‘ইউ আর মাই বেস্ট ফ্রেন্ড ফর এভার...’ আর আমি মনে মনে হাসলাম। হৃদয়ের কান্নাগুলোকে হাসিতে কনভার্ট করলাম বললেই ভালো শোনায়।



রিনির হলুদ, বিয়ে সব কয়টা অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখলাম। কিন্তু গত এক সপ্তাহ আমি নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে শুরু করলাম। আমার জীবনের ছয়টি বছরের কি কোন দাম নেই? আমার স্বপ্ন, আমার হৃদয়ের অনুভূতি কোন কিছুরই কি কোন মূল্য নেই? আমি আমার ভালোবাসার মূল্য আদায় করে ছাড়বো। আমি দেখতে চাই, আমার মৃত্যু রিনির মাঝে আমার ভালোবাসার মূল্য উপলব্ধি আনতে পারে কি না। আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি আমার লাশ জড়িয়ে ধরে রিমি অঝোরে কাঁদছে। সবাই ফিসফিস করছে, মেয়েটা কে? কেউ কেউ কানাকানি করছে, ‘এই মেয়েটার জন্যইতো ছেলেটা সুসাইড করল’। রিমির স্বামীকে মনে হচ্ছে অপরাধী। রিমির বাবা-মা এক কোনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে কি যেন ভাবছে... আহ ভাবতেই মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যাচ্ছে।



রিনির বিয়ে হয়েছে পনেরদিন হবে। তার সাথে আমার আগের মতই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় দিনই কথা হচ্ছে, ফেসবুক-স্কাইপে যোগাযোগ হচ্ছে। আমি রিনিকে বলেছি তার বিয়ে উপলক্ষে তাকে একটা গিফট দেব, কিন্তু কি গিফট তা সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছি। গতকাল তাকে ফোন করে বলেছি, ‘তোর গিফট রেডি, আজ রাতে একটু কষ্ট করে দশটার দিকে স্কাইপেতে বসবি প্লিজ। আর শোন, তোর গিফট তুই এসে নিয়ে যাবি, আমি কিন্তু দিয়ে আসতে পারব না’। রিনি আমার কথায় অবাক হল, আবার একটু মজাও পেল। সে আজ রাতে দশটায় স্কাইপেতে থাকবে, আমার হাতে এখনো ঘণ্টাখানেকের মত আছে।



আমি শেষবারের মত সব চেক করলাম। ওয়েবক্যাম ফিট করে কয়েকবার ট্রায়াল দিলাম, দরজা বন্ধ করে জোরে কয়েকবার ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। হ্যাঁ যেমন চেয়েছিলাম, ঠিক তেমনি হয়েছে। এবার বসলাম আমার কেমিক্যাল এর কৌটো নিয়ে। যা যা দরকার, গত কয়েকদিন ধরে অনেক ঘুরে ঘুরে সব সংগ্রহ করেছি। দুইবার এক্সপেরিমেন্টাল মিক্সচার তৈরি করে বাসার বিড়ালটা আর কাঁটাবন থেকে কিনে আনা খরগোশ এর উপর পরীক্ষা করে দেখেছি। একেবারে পারফেক্ট, উইদিন ফাইভ মিনিট, কম্ম সারা।



আচ্ছা মনে মনে একটা ট্রায়াল দেয়া যাক। আমি স্কাইপেতে রিনির সাথে কথা বলছি।



‘হায় অনিন্দ, কেমন আছো? তোমাকে খুব ফ্রেশ লাগছে’



‘তাই নাকি রিনি? আসলে আজ খুব বিশেষ দিনতো তাই হয়ত এত ফ্রেশ লাগছে...’



‘বিশেষ দিন? তাহলে শেভ করো নাই কেন? তোমাকে অবশ্য এমন খোঁচা খোঁচা দাড়িতেই বেশী মানায়...’



‘হুম... কিন্তু মানিয়ে কি লাভ? তুমিতো আর দেখার জন্য আমার রইলে না...’



‘অনিন্দ! তুমি কিন্তু প্রমিজ করেছিলে এইসব কথাবার্তা আর বলবে না...’



‘সরি, ভুলে গেছিলাম। আসলে আজ আমার বিশেষ দিনতো, তাই’



‘কি বিশেষ দিন, বিশেষ দিন শুরু করলে? আজতো তোমার কোন বিশেষ দিন না, জন্মদিনতো এপ্রিল মাসে। তাহলে...’



‘তাহল... ধরে নাও আজ আমার মৃত্যুদিন...’



‘উফ অনিন্দ... এইসব আজেবাজে কথা বলার জন্য আমাকে এই রাতে স্কাইপেতে আসতে বলেছো...’



‘তাহলে কি কথা শুনতে চাও প্রিয়তমা মোর? হা হা হা’



‘আচ্ছা শোন, আমি রাখি অনিন্দ। জাবিদ ওয়েট করছে, ডিনার করে শুতে যাবে, কাল ওর পিএম অফিসে সকালে একটা মিটিং আছে...’



‘যাবে? আর পাঁচ মিনিট? প্লিজ...’



‘আচ্ছা পাঁচ মিনিট, এর বেশী নয়। কই? কি যেন দেখাবে আজ বলেছিলে, আমার গিফট...’



‘হ্যাঁ ঠিক পাঁচ মিনিট, এর বেশী লাগবে না। দেখতো এই লিকুইডটা, চিনতে পারো কি না। পারবে না, এটা আমার গত একসপ্তাহের কষ্টের ফসল।‘



‘কি এটা? কিসের কষ্টের ফসল? আমি তোমার কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না...’



‘বুঝবে, জাস্ট দুই মিনিটে বুঝবে। এটা সায়ানাইডের একটা জটিল যৌগ, যা একটি প্রাণীদেহ প্রাণহীন করতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিবে...’



‘এই অনিন্দ এসবের মানে কি? কি আবোলতাবোল বকছো...’



'কেন আমি আমার ভালোবাসার মৃত্যু সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি, আজ তুমি একটু কষ্ট করে তোমার একসময়ের ভালোবাসার মানুষটির মৃত্যু দেখতে পারবে ্না?'



এর বেশী আর সময় দেয়া যাবেনা, আমি পুরো বোতলটা ঢেলে দেব আমার গলায়। রিনির প্রতিক্রিয়া হয়ত পুরোটা দেখতে পারবো না, হয়ত পারবো। যেহেতু আমি আগে মারা যাইনি, তাই জানি না মারা গেলে এই জগতের ঘটনা দেখা যাবে কি না। গেলে ভালো হয়, রিনি আমার মৃত্যুতে কি প্রতিক্রিয়া করে তা দেখতে চাই...

কম্পিউটার স্ক্রিনে স্কাইপের ইনকামিং কল শো করছে... রিনি কল করেছে... আমি গেলাম... আমার এই সুসাইডের জন্য কেউ দায়ী নয়। দায়ী আমার আবেগী হৃদয়ের প্রচণ্ড ভালোবাসার অনুভূতিগুলো...



জানালা দিয়ে দক্ষিনা বাতাস আসছে, সারাদেহ জুড়িয়ে যাচ্ছে, আহ। ওমা, আজ কি পূর্ণিমা নাকি, আকাশ একথালা চাঁদ উঠেছে। বড় ইচ্ছা ছিল, কোন এক পূর্ণিমা রাতে রিনিকে নিয়ে হাতে হাত রেখে খোলা ছাদে সারারাত গল্প করে কাটিয়ে দেব....

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭

তোমোদাচি বলেছেন: নোট টা ভাল হয়েছে;
তবে সামু'র পোষ্ট টা কখন লিখলেন সেটা তো বললেন না!! ;)

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০৬

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সামুর পোস্টটা লিখলাম সায়ানাইডের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে.... ;)

২| ১২ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বেশ লাগল।

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ প্রোফেসর সাহেব।

৩| ১২ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩৬

বৃতি বলেছেন: ভাল লাগলো :)

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৪

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইল।

৪| ১২ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:১৪

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
সুইসাইড নোট ভালো লেগেছে।

রিনির প্রতিক্রিয়া জানতে ইচ্ছে হয়েছিলো....

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৬

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ মাঈনউদ্দিন মইনুল ভাই।

রিনির ফোন নাম্বার আপনাকে ইনবক্স করে দিব?? ;)

=p~ =p~ =p~

৫| ১২ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:১০

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো।

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ, অনেকদিন পর আপনাকে পেলাম আমার ব্লগে...। :)

৬| ১২ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:০৯

মামুন রশিদ বলেছেন: একটু সিনেমাটিক, কিন্তু গল্প ভালো লাগছে ।

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:১৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: একটু না ভাই, পুরাই সিনেমাটিক।

আপনার ভালো লাগছে, জেনে খুশী হলাম।

৭| ১২ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৩১

তোজি বলেছেন: উফ্ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । মনেই ছিল না সায়ানাইট গিলে লিখেছেন কিভাবে !!!! দারুন লিখেছেন

১৪ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২১

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: হা হা হা। সায়ানাইডে ভেজাল ছিল, ফরমালিন মিশ্রিত। =p~ =p~ =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.