নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
রন্তুর কালো আকাশ - পর্ব ১-৫ (একটি ধারাবাহিক উপন্যাস)
"রন্তু'র কালো আকাশ" সব পর্ব
প্রশ্নগুলো দেখে রন্তুর খুব হাসি পাচ্ছে, আজ থেকে স্কুল ফাইনাল শুরু হয়েছে। পরীক্ষা দিতে রন্তুর খুব ভালো লাগে, প্রিপারেশন যেমনই থাকুক না কেন, পরীক্ষা দেয়া তার কাছে একটা মজার খেলা। যে খেলায় হার-জিত আছে, পাশ করলে জিতে গেল আর ফেল হলে হার। আর প্রিপারেশন ছাড়া পরীক্ষায়তো আরও বেশী মজা। কিন্তু রন্তুর খুব ভালোই প্রিপারেশন আছে, নানু আর মা’য়ের যন্ত্রণায় ভালো প্রিপারেশন না নিয়ে উপায় আছে? সারাক্ষণ শুধু পড় আর পড়। রন্তু ঘণ্টাখানেক পড়লেই যেখানে তার সব পড়া হয়ে যায়, সেখানে মা-নানু তাকে রোজ ঘড়ি ধরে রাতের বেলা ঘণ্টা তিনেক বইয়ের সামনে জোর করে বসিয়ে রাখে। রন্তু আর কি করবে? ভালো ছেলের মত বইয়ের সামনে বসে থেকে ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়, যেমনটা রোজ টিফিন টাইমে স্কুল মাঠের ছাতিম গাছটার নীচে বসে ভাবনার জগতে হারায়।
আজ গনিত পরীক্ষা, প্রথমদিনই গনিত। অন্যান্যবার প্রথমে বাংলা-ইংরেজি হয়ে পরে গনিত পরীক্ষা হয়, এবার উল্টো নিয়ম, প্রথম দিনই গনিত। এতে অবশ্য রন্তুর কোন সমস্যাই হচ্ছে না, গনিত তার খুবই প্রিয় বিষয়। তার বইয়ের যে কোন অংক সে চোখের পলকে করে ফেলতে পারে। কিন্তু মা কখনোই একথা বিশ্বাস যায় না, জোর করে নিয়মিত রন্তুকে অংক করায়। উফ কি যে বিরক্তিকর... কিছু অংকতো দেখেই উত্তর বলে দিতে পারে সে আজকাল, মুখস্ত হয়ে গেছে। যদিও মুখস্ত করা রন্তুর পছন্দ নয়, কিন্তু একেতো সহজ সহজ অংক, তার উপর বারে বারে করা। রন্তুর ছোট মামা রন্তুকে ক্লাস থ্রি আর ফোর এর গনিত বই এনে দিয়েছে, লুকিয়ে লুকিয়ে ঐ বইগুলোর ম্যাথ করে অবসর সময়ে রন্তু। সেইগুলোও প্রায় সব করে ফেলেছে। এটা খুবই গোপন খবর, রন্তু আর ছোট মামা ছাড়া আর কেউ এই খবর জানে না। ছোট মামা রন্তুকে কথা দিয়েছে রন্তু যদি ছোট মামাকে দাবা খেলায় কখনো হারাতে পারে, তাহলে তাকে ক্লাস ফাইভের গনিত বইও এনে দিবে। আর তাইতো সে সময় সুযোগ পেলেই ছোট মামার রুমে চলে যায়, যদি একটু দাবা খেলা যায়। যদিও বা খেলার সুযোগ হয়, সে প্রতিবারই হারে, তাও মাত্র তিন চালে বেশীরভাগ সময়।
রন্তু অতি দ্রুত অংক করে যাচ্ছে, সবকটা প্রশ্নই অনেকবার করে তার করা আছে। এই প্রশ্নের প্রতিটি অংকই তার করতে মন চাচ্ছে, কিন্তু অপশন রয়েছে, যে কোন ৫টি বা ১০টি এমন করে দেয়া। ইচ্ছা থাকলেও সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে না। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই তার সব উত্তর করা শেষ হয়ে গেছে। খুব বিরক্তিকর লাগা সত্ত্বেও একবার রিভিশন দিয়ে নিল। প্রতি এক্সামের আগের রাতে মা বার বার কিছু কমন কথা কানের সামনে ঘ্যানর ঘ্যানর করবে - প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে লিখবে, সব উত্তর ঠিক করে লিখবে, হাতের লেখা যেন খারাপ না হয়, সব লেখা শেষ হলে কমপক্ষে তিনবার রিভিশন দিয়ে দেখবে কোন ভুল আছে কি না... । উফ! একবার রিভিশন দিতেই হাই উঠে রন্তুর, আর তিনবার!!!
রন্তু হাত ঘড়িটা দেখলো, দুই ঘণ্টা শেষ হতে মিনিট পাঁচেক তখনও বাকী। এই ঘড়িটা গত এক্সামে মা কিনে দিয়েছে, কালো রঙ্গের লেদার বেল্টের ঘড়ি, রন্তুর একটুও পছন্দ হয় নাই ঘড়িটা। আগের ঘড়িটা রন্তুর খুব পছন্দের ছিল, গত জন্মদিনে বাবা তাকে ঘড়িটা গিফট করেছিল। বাবা তখন সবেমাত্র তার সাথে মাসে দুয়েকবার করে স্কুল গেটে দেখা করতে আসা শুরু করেছে। জন্মদিনের দুইদিন আগে বাবা ঘড়িটা নিয়ে এলো। তাকে যখন বলল, “এটা তোমার জন্মদিনের গিফট” রন্তু অবাক হয়ে বলেছিল, “আমার জন্মদিনতো আজ নয়, আগামী পরশু...”। বাবা বলেছিল, “পরশু যদি তুমি না আসো স্কুলে, অথবা আমিই যদি না আসতে পারি...”। ঘড়িটা দেখে মা কিছুই বলল না, কিন্তু নানু মুখ গোমড়া করে রেখেছিল। তার কয়েকমাস পরই মা এই ঘড়িটা কিনে দেয়, আর বাবার দেয়া ঘড়িটা কোথায় যেন রেখে দিল। মা’কে কয়েকবার সেই ঘড়ির কথা জিজ্ঞাসা করেছে রুন্তু, মা বলে, “আছে আমার কাছে, নতুন ঘড়িতে কি সমস্যা?”
দ্বিতীয় ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দ হতেই রন্তু সীট ছেড়ে উঠে খাতা হাতে ম্যাডামের দিকে এগিয়ে গেল খাতা জমা দিতে। ম্যাডাম খাতা জমা নিয়ে খুলে চেক করলেন সব উত্তর করেছে কি না? দেখে সন্তুষ্ট হলে পরে তাকে ক্লাসরুম ছেড়ে বের হতে পারমিশন দিলেন। রন্তু তার সীট হতে পেন্সিল-কলম-জ্যামিতি বক্স সব নিয়ে বাইরে বের হয়ে এল। জ্যামিতি বক্সটা একটু বড়, তাই পকেটে ঢুকে না। বাকী জিনিশগুলো পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে জ্যামিতি বক্স হাতে স্কুল গেটের দিকে এগিয়ে গেল। রন্তু যখন ক্লাস হতে বের হচ্ছিল, সবাই কেমন অবাক আর ঈর্ষা নিয়ে তাকে দেখছিল। তার ক্লাসের সবাই জানে সে ম্যাথে খুব ভালো, তাই অনেকেই তাকে খুব হিংসেও করে।
পুরো স্কুল মাঠ ফাঁকা, পরীক্ষার দিনে এমনিতেও মাঠে কেউ খেলে না, দৌড়োয় না, সবাই এই কদিন খুব সিরিয়াস হয়ে যায়। রন্তুর খুব ইচ্ছে করছিলো পুরো মাঠ জুড়ে খুব জোরে দৌড়োয়, কিন্তু সেই ইচ্ছাকে দমন করে সে গেটের দিকে এগিয়ে গেল। এক ঘণ্টা আগে বাড়ী ফেরা, যদি ছোট মামা বাসায় থাকেতো তার সাথে এই সময়টা দাবা খেলা যাবে। রন্তু খুশীতে একা একাই হেসে উঠলো। স্কুলের মেইন গেট দিয়ে রাস্তায় বের হতেই রন্তু অবাক হয়ে দেখলো তার বাবা, জাভেদ, গেটের উল্টো দিকের রাস্তায় একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাবাকে দেখে রুন্তু একটা মিষ্টি হাসি দিল যা সে সচরাচর করে না, আজ পরীক্ষা ভালো দিয়ে মনটা খুব উৎফুল্ল। বাবার কাছে যেতেই রন্তু দেখলো বাবাকে কেমন যেন বুড়ো বুড়ো দেখাচ্ছে। কয়েকদিনের না কামানো দাড়ি আর চোখের নীচের কালি, এই দুইয়ে মিলে জাভেদকে সত্যি সত্যি অনেক বুড়ো দেখাচ্ছিল। কেমন ঠাণ্ডা লেগে বসে যাওয়া কণ্ঠে জাভেদ ছেলের পরীক্ষার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে করতে হাটতে লাগলো। অন্যান্য দিনের মত আজ খাবার হোটেলে না নিয়ে গিয়ে, উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলো।
‘রন্তু চল শিশু পার্ক থেকে ঘুরে আসি, যাবে?’
‘হু...’
‘বাসায় মা-নানু বকবে নাতো?’
‘উঁহু...’
‘তা হলে চল যাওয়া যাক...’
একটা রিকশা ডেকে বাবা-ছেলে রিকশায় উঠে বসলো। রন্তুর খুব কান্না পাচ্ছে, বাবার সাথে এই প্রথম কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে, কি যে আনন্দ হচ্ছে! আনন্দে কেন কান্না পায়? রন্তু জানে না। রিকশা নিউমার্কেট পেরুনোর সময় জাভেদ ছেলেকে নিয়ে নেমে পড়লো। ছেলেকে কোন একটা কিছু কিনে দিবে, কে জানে আর কখনো যদি দেখা না হয় ছেলের সাথে। রন্তু অবাক হল মাঝ পথে মার্কেটে কেন? বাবার মেজাজ-মর্জি বোঝা দায়। রন্তু খুশী মনে বাবার হাত ধরে হাটতে লাগলো। জাভেদের মনে হল রন্তু যেন কোন বলিষ্ঠ এক পুরুষালী হাত দিয়ে তার বাঁ হাতের কবজিটা ধরে রেখেছে। নীরবে যেন বলছে এ বন্ধন কভু ছিন্ন হবার নয়... কিন্তু জাভেদ জানে, জীবনের সব বন্ধন মিছে... সব মিছে মায়া...।
=====================
'রন্তু'র কালো আকাশ' প্রথমে একটি এক পর্বের ছোট গল্প আকারে লিখেছিলাম। কিন্তু 'রন্তু' আমার খুব প্রিয় একটি চরিত্র বিধায় আমি সিদ্ধান্ত নিই ২৫ পর্বের একটি ধারাবাহিক আকারে উপন্যাস লিখবো (যদিও জানি সে যোগ্যতা আমার নেই, তারপরও অপচেষ্টা আরকি)। সেই থেকে এই লেখা। তবে প্রতিটি পর্ব আমি এমনভাবে লেখার চেষ্টা করছি যেন একেকটা পর্বই একটা ছোট গল্প হিসেবে পাঠক পড়তে পারে। আজ লিখলাম পর্ব-৬। এখন থেকে চেষ্টা থাকবে প্রতি এক-দুইদিন বিরতি দিয়ে এই ধারাবাহিক উপন্যাসটা এগিয়ে নিয়ে যেতে। একজন পাঠক হিসেবে আপনাদের পাশে পাবো এই আশা রাখি। রন্তু আমার খুব প্রিয় একটা চরিত্র, আর তাই আমি এই উপন্যাস শেষ করবোই, আর তা সম্ভবত ২৫ পর্বে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আবু শাকিল। আগের পর্বগুলো পড়ে দেখতে পারেন, তাহলে কিছু কিছু ঘটনা আরও ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।
সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।
২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৬
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: এই পর্ব ভালো লেগেছে , তবে পর্ব গুলোর মাঝের ফারাক টা বেশী দিনের হয়ে যাচ্ছেনা ?
আমি তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম রন্তু আর তার কালো আকাশ দুটিকেই !
তিন কিংবা চারদিনের বিরতিতে দেয়ার চিন্তা করতে পারেন !
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:২৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় অভি। এখন থেকে দুই বাঁ তিন দিনের বেশী গ্যাপ হবে না আশা করি। আপনি বোধহয় পর্ব - ৫ মিস করেছেন, কারণ এক সাথে পর্ব ১-৫ দিয়ে পোস্ট করেছি। Click This Link
আমায় ভুলে গেলে তাও মেনে নিবো, কিন্তু অভি রন্তুকে ভুলে গেলে চলবে না। হাজার হলেও অভি "রন্তু'র কালো আকাশ" এর প্রথম রেজিস্টার্ড সাথী।
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:২৫
জাফরুল মবীন বলেছেন: এ পর্বও ভাল লেগেছে।আচ্ছা ভাই পর্বের শুরুতে অাগের পর্বের গুরুত্বপূর্ণ একটা সারাংশ যোগ করে দেওয়া যায় কিনা?কিছুটা হিন্টস্ থাকলে পুরোনো পর্বটা মনে পড়ে যাবে সহজেই;তখন ধারাবাহিকভাবে পড়ার মজাটাও বেশ ভালভাবে পাওয়া যাবে বলে মনে হয়।আমি সাতিহ্যমূর্খ মানুষ,ভুল বলে থাকলে আবার মাইন্ড করিয়েন না প্লিজ
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: মবীন ভাই, পর্ব - ৪ পর্যন্ত আগের পর্বের লাস্ট প্যারা দিয়ে শুরু করেছি। আর পর্ব - ৫ এ একসাথে পর্ব ১-৫ ছিল, তাই দরকার পড়ে নাই। কিন্তু এই পর্বে তা করতে ভুলে গেছি। সারাংশ'র পরামর্শ মনে ধরছে। আগামী পর্বগুলো থেকে দিয়ে দিব।
অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা পরামর্শ দেয়ার জন্য।
অফটপিকঃ আমি সাতিহ্যমূর্খ মানুষ,ভুল বলে থাকলে আবার মাইন্ড করিয়েন না প্লিজ এই ধরনের কথাবার্তা বললে কিন্তু খেলুম না।
৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৪
আরজু মুন জারিন বলেছেন: এই পর্ব টা পড়া শূরু করলাম।ভাল লাগছে।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আপা আপনি রাগান্বিত কেন? আমিতো দ্বিধায় পড়ে গেলাম... আগের পর্বগুলোও পড়ে ফেলেন, আশা করি ভালো লাগবে।
৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৫
নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: সময় নিয়ে সবগুলো পর্ব পড়বো । উপন্যাসের নামটা দেখেই উৎসাহিত হলাম। ভাল থাকা হোক।
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপা। পাঠক হিসেবে আপনাকে পেয়ে গল্পটা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণায় আরও একটু রসদ পেলাম।
পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৫
আবু শাকিল বলেছেন: এই পর্ব টা পড়া হল । ভাল লেগেছে।
আশা করছি বাকি গুলো বাকি গুলো পড়ব ।