নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
আগের পর্বঃ
যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)
ট্রেনে উঠে আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে গেলাম। যেহেতু আমাদের টিকেট করা আটজনের, দুজন ট্যুর ক্যান্সেল করলেও আমরা টিকেট ক্যান্সেল করতে পারি নাই; তাই ভাবলাম আরামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আয়েশ করে যাওয়া যাবে। কিন্তু কোথায় কি? টিটি যখন টিকেট চেকিং এ এলো; সে জানিয়ে দিলো প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চেকইন না করলে সেই টিকেট বাতিল হয়ে যায় এবং সেই আসনটি অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা যাত্রীদের মাঝে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্টন করা হয়। আমি কিছুক্ষণ তার সাথে বাকবিতন্ডতা করলাম; ভদ্রলোক যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে আমাকে বুঝালো ব্যাপারটা। তার একটি যুক্তিতে আমি চুপ হয়ে গেলাম; সে বলল, মনে করো কোন কারনে এই ট্রেন এক্সিডেন্ট করলো (আল্লাহ্ না করুক) এবং এই বগির সবাই মারা গেল। তখন তোমার অনুপস্থিত দুজন প্যাসেঞ্জারের হিসেব কিন্তু আমাকেই দিতে হবে। তার এই যুক্তির সাথে ট্রেনের কামড়ায় থাকা অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ঘোরাঘুরি দেখে মেনে নিলাম।
আর এখানেই হলো একটা বিশাল ভুল। আমাদের এই কথাবার্তা যখন চলছিল; ঠিক তখন দুটি বছর বিশ-বাইশের ছেলে এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল; আমাদের এবং টিটিকে অনুরোধ করে আমাদের ছেড়ে দেয়া সিট দুটি তারা দখল নিল। এরপরের কাহিনী আর কি? সারারাত তাদের দল বেঁধে তাস খেলা আর হৈহুল্লোড়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যাই হোক, সবকিছু গুছিয়ে যখন ভাবছিলাম ঘুমাবো, চোখ বুজে ছিলাম, হঠাৎ কারো হাতের ঝাঁকুনিতে চোখ মেলে দেখি হিজড়ার দল এই চলন্ত ট্রেনে! স্বপ্ন দেখছি নাকি? যাই হোক, পুরো কামড়ার সকলে নাকি আমার গেস্ট, তাই আমাকে ৫০০ রুপী দিতে হবে! নানান বাকবিতন্ডতার পর ৫০ রুপী দিয়ে বিদায় করতে হয়েছিল তাদের। হিজড়াদের এই উৎপাত আসলেই অসহ্য। ঢাকা শহরের বাসে উঠে এদের আগ্রাসী আচরণ মেনে নেয়া যায় না। মানবিকতার দোহাই দিয়ে হয়তো তারা কিছু সাহায্য চাইতে পারে, কিন্তু তাদের আচরণ দেখে মনে হয় এটা তাদের অধিকার। আর সবচাইতে বিশ্রী ব্যাপার হল, এরা গায়ে হাত দিয়ে কথা বলবে…
এসি কামরার টিকেট না মেলায়, আমাদের দলের একমাত্র দম্পতি, পঞ্চাশের এপাশ ওপাশের স্বামী-স্ত্রী; উনাদের খুব কষ্ট করতে হয়েছিল। বেচারারা সারারাত বসে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিন এর তাপমাত্রাও একটু বেশী ছিল, কেমন একটা ভ্যাপসা গরম। আমি ভারতে ট্রেন জার্নিতে থ্রিটিয়ার কম্পার্টমেন্টে যে পাশে জানালার ধারে উপর নীচ মিলে দুজন থাকার জায়গা, সেখানটার উপরের অংশ বেছে নেই। এই যাত্রায় আমি পড়লাম আরো বিপাকে। ভ্যাপসা গরমে সারারাত এপাশ ওপাশ করে কাটিয়ে দিলাম। তবে আমাদের ঐ দম্পতি যুগলের মত নির্ঘুম রাত কাটাই নাই। দীর্ঘ জার্নির ক্লান্তিতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ি। সকালের আলো ফোঁটার পরপরই হকারদের হাঁকডাক এ ঘুম ভেঙ্গে গেল, ঘড়িতে সময় দেখে নিলাম, সকাল সাড়ে ছয়টার একটু বেশী বাজে। কোনমতে একটু ফ্রেশ হয়ে এসে ফের উপরে উঠে গেলাম, কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে অপেক্ষায় রইলাম, চাওয়ালাদের, এককাপ চা হলে মন্দ হতো না।
ট্রেন এর শিডিউল সময় অনুযায়ী সকাল আটটার মধ্যে নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন পৌঁছে যাওয়ার কথা। তাই পরিকল্পনা ছিল, ট্রেন থেকে নেমে নাস্তা করার। কিছুক্ষণ পর আবার আরেকদল হিজড়া এসে উপস্থিত! হায় খোদা, এই ট্যুরে কি যন্ত্রনার শেষ হবে না? এবারে হিজড়ার দলকে বললাম, গতকাল রাতেই তো টাকা দিলাম তোমাদেরই লোককে। “ঐটা দিছো কলকাতার ওদের, আমরা শিলিগুড়ির। জলদি টাকা দাও…”!!! কোনমতে বিশ রুপী দিয়ে এদের বিদায় করলাম। ঝাড়ি দিয়ে বললাম, সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করবে না, প্লিজ যা দিলাম নিয়ে বিদায় হও। স্বভাবসুলভভাবে অকথ্য গালাগালি করতে করতে দলটি এগিয়ে গেল।
আটটা নাগাদ আমরা এসে পৌঁছলাম নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন এ। যে প্লাটফর্ম এ এসে ট্রেনটি ভিড়েছিল, সেখান থেকে মূল গেইট দিয়ে বের হতে পোহাতে হল হ্যাপা। একটা ফুটওভার ব্রীজ ডিঙ্গিয়ে অপর পাশের প্ল্যাটফর্ম এ পৌঁছে বের হলাম মূল গেইট দিয়ে; আমার সেই হাতল ছেড়া ব্যাগখানি পিঠে না ঝুলাতে পেরে মাথায় করে কুলিদের মত হাঁটা দিলাম। আমার দলের সবাই আমাকে ক্ষেপাতে লাগলো, ‘এই কুলি, এই…’ বলে। যার ব্যাথা সেই বুঝে। আসলে ট্যুর এ বের হলে নিজের ব্যাগ এবং অন্যান্য সকল জিনিষপত্র নিজেরই সামলানো উচিত। কেরালা ভ্রমণে মুন্নারে যে হোটেল এ ছিলাম, তা ছিল পাহাড়ের ঢালে; মূল রাস্তা হতে নীচের দিকে আরও পাঁচতলা আর উপরে আরও দুই তলা। তো আমাদের রুম ছিল সেবার নীচের দিকে তৃতীয় তলায়। চেক আউটের দিন, আমার ট্রলি লাগেজটি হোটেলের বয় উপরে আনার সময় সাইডে থাকা কাপড়ের একটা হাতল ধরে নিয়ে আসছিলো; কিভাবে কি করেছলো খোদাই মালুম; সেটা ছিড়ে লাগেজ সিঁড়ি দিয়ে গড়াতে গড়াতে নীচের ফ্লোরে। লাগেজের পুরোই দফারফা করে দিয়েছিলো।
থাক আমার ব্যাগের গল্প, আমরা রেল ষ্টেশন থেকে বের হতে দেখি আমার এজেন্ট গাড়ী নিয়ে হাজির; সাথে ফুল, আমাদের বরণ করে নেয়ার জন্য। কিন্তু তা ফুলের তোড়া নয়, গাঁদা ফুলের মালা!!! আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। যাই হোক, এই সাত সকালে সে শুধু ড্রাইভার দিয়ে গাড়ী পাঠিয়ে দিলেও পারতো; নিজের ঘুম নষ্ট করে ফুল নিয়ে এসে আমাদের বরণ করে নিচ্ছে… তাকে খুশী করতে সবাই গাঁদা ফুলের মালা পড়ে তার সাথে গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে একটা গ্রুপ ছবিও তুলে নিলাম। এবার টাটা সুমো গাড়ীর উপরে ব্যাগপত্তর উঠিয়ে বাঁধা হলে পরে আমরা গাড়ীতে চেপে নিউ জলপাইগুড়ি রেল ষ্টেশন চত্বর ত্যাগ করে শিলিগুড়ির পথ ধরে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এ সকালের নাস্তা সেরে নিলাম।
এরপর গাড়ী চলতে লাগলো মিরিক এর পথে। অনেকটা সময় পরে সমতলের পথে ছেড়ে ধীরে ধীরে পাহাড়ি পথের শুরু হলে ঠান্ডা বাতাস আমাদের দেহমন ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। দীর্ঘ ত্রিশ ঘন্টার যাত্রা শেষে ক্লান্ত শরীরে যেন সেই হিমেল হাওয়া জাদুর ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছিল; আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। চললাম আমাদের প্রথম গন্তব্য মিরিক এর উদ্দেশ্যে।
ভ্রমণকালঃ জুলাই ২০১৬
এই ভ্রমণ সিরিজের আগের পর্বগুলোঃ
উদ্ভট যাত্রার আগের গল্প (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০১)
যাত্রা হল শুরু; রক্ষে করো গুরু (দার্জিলিং এ বর্ষাযাপন - পর্ব ০২)
এক পোস্টে ভারত ভ্রমণের সকল পোস্টঃ বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণ এর গল্পকথা
২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:৩৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: রাস্তা তো সবে শুরু হলো আপু, রাস্তা আরও অনেক বাকী রয়েছে।
কমেন্টটা লিখতে গিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর, "বহুদূর যেতে হবে, পথের অনেক রয়েছে বাকী" গানটার কথা মনে পড়ে গেল। কমেন্ট করেই শুনে নেই।
ভালো থাকা হোক সবসময়।
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:২৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: গল্প জমে উঠেছে। সাথেই আছি।
২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫০
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: হা হা হা ভালই বলেছেন। দেখা যাক কাহিনী কতটুকু জমে। ধন্যবাদ জলদস্যু ভাই।
৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৩৮
নীল-দর্পণ বলেছেন: নিচ থেকে ৩নং ছবিটা দেখে মন কেমন করল! ভ্রমন ব্লগ সমসময় ই ভালো লাগে।
২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আসলে বর্ষায় পাহাড়ে ভ্রমণ কিছুটা ঝুঁকি আর প্যারাময় হলেও তার রূপ অপূর্ব; যার সাক্ষী আপনার উল্লেখিত ছবিটা।
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন সবসময়।
৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:০৯
কালাচাঁদ আজিজ বলেছেন:
ভ্রমণ আমার খুবই পছন্দের।
আপনার লেখার বর্ননা বেশ ভাল।
২৩ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ আজিজ ভাই। বোকা মানুষের ব্লগ্র স্বাগতম।
৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১০:৪৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আহা হিজড়াদের বিড়ম্বনায় পড়তে হলে ওদেশে গিয়েও।
বর্ণনা ঝকঝকে একেবারে ছবির মত।
রাস্তা দেখে মন জুড়ালো।
দারুন পোস্টে+++++
২৩ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:১৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল ভাই। সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা।
৬| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: এবছর যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
২৪ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: দেখি, আপনি দার্জিলিং বেড়াতে যাওয়ার আগেই একটা "কম খরচে ঘোরাঘুরি" সিরিজে দার্জিলিং নিয়ে লেখা যায় কি না।
৭| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:১৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ভাই আপনেরে বাস্যা কিছু বলে না
২৪ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: না বাই, বাস্যা কিছু বলে না; বলতে বলতে "থাক গায়ি"... টাইপ অবস্থা আরকি।
৮| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৭
মেহরাব রনি বলেছেন: এতো স্লো লিখে আমাদের মানসিক অত্যাচার না করলেও পারতেন।
ব্যাগের জন্য সমবেদনা। কিস্তির অপেক্ষায় থাকলাম।
ভালও টুর মেট এর অভাবে কত কত প্লান বাস্তব রুপ দিতে পারছি না।
২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৫৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আহারে ভ্রাতা, কি আর করবেন। এক কাজ করেন, আগের বোকা মানুষের ভারত ভ্রমণের গল্পকথা সিরিজ এর লেখাগুলো পড়ে ফেলেন। এই ফাঁকে কয়েক পর্ব এখানে পোস্ট করার সময়ও পেয়ে যাবো।
অনেক ধন্যবাদ। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০২
শায়মা বলেছেন: দার্জিলিং এর রাস্তা তো মন জুড়ালো।