নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
গত দুইদিনে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে রেলযোগে ভ্রমণে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবা আমার কাছে মনে হয়েছে একঝাঁক উর্দি পরিহিত বেতনভুক্ত হকারের সার্বক্ষণিক উৎপাত আর তার সাথে পুরো পথজুড়ে কড়া ইউরিনের গন্ধ'র সাথে নানান পচা দ্রব্যের উৎকট গন্ধের মেলা। আর তার সাথে জীবন বাজী নিয়ে চলাচল, সেই গল্প শেষে বলছি।
ফেরার যাত্রাটা ছিলো নাটোর থেকে, সন্ধ্যা ছয়টার পরপর ট্রেন ছাড়লো নাটোর থেকে, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। ট্রেন ছাড়ার মিনিট পনের পর থেকে শুরু হলো তাদের স্টাফ নামক হকারদের দৌড়াদৌড়ি, পুরোটা পথ প্রায় সাড়ে চারঘন্টার মত এদের এই হকারি চলতেই লাগলো। শুধু শেষের একঘন্টা রাত এগারোটার পর কিছুটা কমে এল তাদের কার্যক্রম। রেলওয়ের সেই বস্তাপচা মেন্যু নিয়ে প্রায় ডজনখানেক স্টাফ প্রতি দুই তিন মিনিট পরপর যাচ্ছে আসছে, আমার সিট ছিল মাঝখানের করিডোর এর পাশে। প্রতিবার প্রায় কানের কাছ দিয়ে তাদের স্টিলের ট্রে যাচ্ছিলো, আসছিলো। একই লোক প্রতি পনের মিনিটে একবার বুঝি আপ-ডাউন করছিলো। প্রতি দু'তিন মিনিটে তাদের কেউ না কেউ ক্রস করছিলো। প্রতিবার সকল যাত্রীকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছিলো কিছু লাগবে কিনা? আর সবচাইতে বড় কথা হল, আমি প্রতিবাদ করায় বার দুয়েক আমার সাথে বেশ কিছু উত্তপ্ত বার্তালাপ হয়েছে। তাদের কথা "আপনার কি সমস্যা?"!!! ক্যান ইউ বিলিভ! আমি টাকা দিয়ে যাত্রা করছি, ঘন্টা ছয়েকের ভ্রমনের শ'দুয়েকের বেশীবার আমার শরীর ঘেঁষে অভদ্র, অশিক্ষিতের মত তারা চলাচল করবে, আর বলবে "আমার কি সমস্যা?"। রেলওয়ের এই উর্দু পরিহিত হকারদের দেখে মনে হল, রেলওয়ে চলছেই এই খাদ্যপণ্য বিক্রির টাকায়। না না, শুধু খাদ্যপণ্য কেন? পানীয় রয়েছে এই তালিকায়, এনার্জি ডিংক্স - তাও বেশ কয়েক কোম্পানীর। ৫০ লিটারের বালতি কাঁধে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো তারা। দুঃখের বিষয় পুরো ছয় ঘন্টার এই যাত্রা পথে আমাদের বগীর একশত যাত্রীর মধ্যে দুজন হয়তো কিছু কিনেছে তাদের কাছ থেকে... আহারে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, কালকে কি পুরোই লসে চলল? কারন, খাবার তো তেমন বিক্রি হলো না
আর পুরো রেলপথ জুড়ে রেলস্টেশন থেকে শুরু করে রেললাইন, রেলের ভেতরে ইউরিন আর হাজারো দুর্গন্ধে সয়লাব। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে পুরো রেলপথ জুড়ে বুঝি যাত্রীদের প্রস্রাব-পায়খানা ফেলতে ফেলতে চলে রেলগুলো; হাস্যকর শোনালেও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে এদের পয়ঃনিস্কাশন সিস্টেম নিয়ে।
সবশেষে বলি গতকাল রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। রাত নয়টার আশে পাশে, সিরাজগঞ্জ পার হয় নাই তখনো, হুট করে ট্রেন থেমে গেল। অনেকটা সময় বসে থাকলো, এরপর শুনি আমাদের বগীর আগের বগীতে একটা বছর বাইশের ছেলে টয়লেটে মরে পরে আছে। আবার কেউ কেউ বললো সিরিয়াস অসুস্থ। আমাদের বগী হতে কয়েকজন দেখে এসে জানালো, "ছেলেটা বাথরুমের ভেতরে অসুস্থ হয়ে পড়লে দরজায় শব্দ করে, আশেপাশে থাকা সবাই দেখে প্রায় মৃত অবস্থায় ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে সেখানে। এরপর প্রায় আধঘন্টা পরে ট্রেনে স্পীকার এ ঘোষণা হচ্ছে ট্রেনে কোন ডাক্তার আছে কি না। আশেপাশে থাকা অনেকেই জানালো কাউকে ছেলেটিকে ফার্স্ট এইড দিতে দেখা যায় নাই। বরং পুলিশ কেস বলে কাউকে ধরতে বারণ করা হচ্ছিলো। এর কিছুক্ষণ পর একজন এসে জানালো ছেলেটি মারা গেছে। আমাদের দেশের প্রতিটি ট্রেন কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে পরিবহন করে; সেখানে একজন ইমার্জেন্সি ডাক্তার রাখা কি খুব অসম্ভব ব্যাপার। যে কেউই এভাবে অসুস্থ হতে পারে। পরবর্তী স্টেশনে এসে এম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নিতে নিতে রোগী মারা যাবে। অথচ অল্প একটু ফার্স্ট এইড পেলেই অনেক সময় রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। আমি জানি না, রেল আইনে প্রতিটি রেলে ডাক্তার রাখার কথা বলা আছে কি না? যদি থাকে তাহলে গতকাল কোন ডাক্তার ছিলো না কেন? আর যদি আইনে ডাক্তারের কথা না থাকে, তাহলে তো আরো ভয়াবহ বিপদ! যাত্রী প্রতি দশ টাকা অতিরিক্ত রাখলে যে পরিমাণ টাকা হবে তা দিয়ে অনায়াসে একটা ডাক্তারের ব্যবস্থ করা যেতে পারে। কালকের যাত্রার পরে রেল জার্নি সম্পর্কে আমাকে তিনবার ভাবতে হবে। কিন্তু খবর ছড়িয়েছে ছেলেটিকে মৃত পাওয়া গেছে এবং তার পকেট থেকে আরবি বই ও ভারতীয় টাকা পাওয়া গিয়েছে। অথচ আমার পাশে থাকা অনেক যাত্রী ঐ বগীতে গিয়ে ছেলেটিকে জীবিত অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে টয়লেটের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে এসেছে। ধরে নিলাম, সবাই মিথ্যা কথা বলেছে অথবা না জেনে বলেছে। তাহলে রেলের অফিসিয়াল স্পিকারে যে ডাক্তারের খোঁজ এবং সহযোগীতা চেয়ে ঘোষনা হল প্রায় অনেকটা সময় জুড়ে তা কেন ছিলো? পুরো রেলের কর্মচারী এবং উক্ত বগীর দুই পাশের বগীর সকল যাত্রী জানে ঘটনাটি অথচ নিউজের ধরন দেখে মনে হচ্ছে যেন ছেলেট জংগী টাইপের কিছু। সেরকম কিছু হলেও কিন্তু চিন্তা বা ভয় কমে যাবে না; বরং বেড়ে যাবে।
গতকাল মারা যাওয়া ছেলেটির খবরের লিংকঃ ঢাকাগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস টেনের "ছ" বগিতে আনুমানিক ২০-২২ বছরের একটি ছেলের মৃতদেহ
লাস্ট আপডেট মৃত ছেলেটির পরিচয় পাওয়া গেছে, তাহলে ভারতীয় মুদ্রা আর আরবি বই এর সম্পর্ক কি হইলো? সেই পোস্টে আরও জানা গেল কিছুদিন আগেই নাকি "পঞ্চগড় এক্সপ্রেস" এ একই রকম ঘটনা ঘটেছিলো। তাই সবাই সাবধানে যাতায়াত করি।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আহারে! মাইনসের কষ্ট ফিল করায় ধন্যবাদ আপনাকে। চিল ব্রো...
অনটপিকঃ চারটি যোগাযোগ পথের একমাত্র রেলপথই সবচাইতে নিরাপদ, সাশ্রয়ী এবং দ্রুততার বিচারে সব জায়গাতেই সবার প্রথম পছন্দের পরিবহণ। কিন্তু একমাত্রা রেলপথই বেসরকারীকরণ সম্ভব না, অথবা সম্ভব হলেও অনেক হ্যাপার ব্যাপার। অথচ এই সেক্টরই সবচেয়ে লসে চলে...!!!
রেলের সেবার মান খুবই জঘন্য, নাটোর রেল স্টেশনে প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগার ছাড়া অন্য কোথাও টয়লেট বা ওয়াশরুম দেখতে পেলাম না। এটা কিভাবে সম্ভব? একটা রেলস্টেশনে কমন টয়লেট এর ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই, অথচ নাটোর জেলা সদরে রেল স্টেশনটি অবস্থিত। আসলে রেল "বড়লোক্স"দের জন্য না, তাই হয়তো এই অবস্থা।
ভালো কথা, আপনি কি বড়লোক্স?
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:১৪
অপ্সরা বলেছেন: কি কষ্টকর একটা খবর!
ট্রেইনে অবশ্যই একজন ডাক্তার থাকা উচিৎ।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ঘটনা শোনার পর থেকে পুরোটা যাত্রাপথে আমরা এই কথাটি নিয়েই আলোচনায় মত্ত ছিলাম। যে কেউ যে কোন সময় ট্রেনে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এতোগুলো মানুষের জন্য অতি অবশ্যই একজন ডাক্তার থাকা দরকার। ছিলো। কিন্তু তা না থাকলেও অফিসিয়াল হকার ছিলো ডজনখানেক।
৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রতিমাসে ই হয়। তবে রাতের ট্রেনে উৎপাত একটু কম।
কেমন অস্বস্তিকর একটা পরিস্থিতি বলেন ! কোন বাবা মায়ের কোল খালি হলো কে জানে।
সময়ের দাবী ট্রেনে একজন ডাক্তার রাখা।
০১ লা অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:৪০
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাদের গা সওয়া হয়ে যায় হয়তো। আর হ্যাঁ, আগের দিন রাতে যাওয়ার সময় অফিশিয়াল হকারদের তেমন দেখা পাই নাই, কারণ ট্রেন ছেড়েছেই রাত বারোটায়। আগে ট্রেনে উঠলেই চা খাওয়ার ইচ্ছে হতো, চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহির পাণে তাকিয়ে থেকে কানে হেড ফোন গুঁজে দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার মজাই আলাদা... দেখি সামনে ভারতে গেলে এই শখের কাজটি আবার করার সুযোগ মেলে কি না।
আমার মনে হয় ট্রেনে চলাচলকারী সবার পক্ষ থেকে জোরালো আওয়াজ উঠা উচিত, "প্রতি ট্রেনে একজন ডাক্তার চাই" বলে।
ধন্যবাদ আপা, পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪২
নাহল তরকারি বলেছেন: আহারে। মাইন্সের কত কষ্ট। এর জন্য আমি ট্রেনের যাত্রা আমি পছন্দ করি না।