নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃআত্নজা(The Daughter)-২

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৪



আত্মজা-১

কামালের বউ মনোয়ারা স্বামির এইরকম আচরণ,মনোভাব দেখে একদিন বলে বসে-‘সব তো আল্লাহর ইচ্ছা,তুমি মন খারাপ করে থাকো কেন সারক্ষণ?আর,সন্তান যেমনি হোক,আমাদের ই তো’



কামালকে চুপ করে থাকতে দেখে মনে সাহস পায় মনোয়ারা। বলে যায়- ‘দেখো। বড় আপার সন্তান নেই।ওনার কত কষ্ট! আমাদের তো আল্লাহ দুইটা মেয়ে দিয়েছে।কি বল,ঠিক না?’-বলে স্বামির চেহারার দিকে তাকায়।



আসলে একটা কথা বলতে এসেছে কামালকে।তার ধারণা আবার একবার সন্তান নিয়ে দেখা যায়,স্বামির কষ্ট সে সহ্য করতে পারছে না। কথা টা নানাভাবে ঘুরিয়ে বলার চেষ্টা।রগচটা লোক,সাবধানে বলা দরকার।



যা ভেবেছিল তাই হোল,কথা শেষ হবার পর অশ্রাব্য ভাষায় একটা গালি দিয়ে কামাল উঠে বাইরে চলে গেল।



ঘটনা ঘটেছিল সেদিন,কামাল কাজ থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এল।দুপুরের ভাত খাবার জন্য হাতমুখ ধুয়ে বসল খাবার টেবিলে। ছোট মেয়েটিকে মনোয়ারা দুধ দিয়ে মাখিয়ে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিল।ছোটটির নাম ইতি।ইতি এবার নার্সারি তে ভর্তি হল।



ভাত খেতে খেতে হঠাৎ মুখ তুলল কামাল-‘ইয়ে কই? ইরা...ওকে দেখছি না’



মনোয়ারা মেয়ের মুখে ভাত গুজে দিয়ে স্বামির দিকে তাকালো-‘ও তো একটু খেলতে গেছে’



ভাত মুখে নিয়ে চোখ বড় করে বউয়ের দিকে চাইল কামাল।



মনোয়ারার গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসল-‘চলে আসবে,চলে আসবে...একটু পরে।নীচতলায় ঐশীদের বাসায়’



সাথে সাথে ভাত খাওয়া ফেলে উঠে গেল কামাল।হাত টা কোনরকম ধুয়ে দরজা খুলে বের হয়ে গেল।



মনোয়ারা ছুটে গেলেন হাতে ভাতমাখা অবস্থায়।



ইরা কে একরকম টেনে হিচড়ে ঘরে নিয়ে ঢুকলো কামাল।কপালের রগ ফুলে দপদপ করছে,দাঁতমুখ শক্ত।ভিতরের ঘরে চলে গেল।



মনোয়ারা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ছোটমেয়ের কাঁধে হাত রেখে।



এরপর যা ঘটল মানুষের রাগের চরম বহিঃপ্রকাশ। রুমের ভিতরে নিয়ে মেয়েকে এলোপাথারি চড়-থাপ্পড়।মনোয়ারা বাইরে থেকে শুনছিল।এক একটা চড়ের আওয়াজে তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠল।কামাল সর্বশক্তি দিয়ে মারছে।চড়ের আওয়াজ একটু বন্ধ হল।



কিছুক্ষণ পর আবার।একটু থেমে দম নিয়ে আবারো চড়-থাপ্পড়। মনোয়ারা দিশেহারা হয়ে গেলেন।ইতির মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল।মায়ের দিকে চাইল সে।মা ইতির মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।



প্রায় মিনিট দশেক এরকম চলল।

কান পেতে আছে মনোয়ারা।স্বামিকে বাধা দেবার সাহস নেই। শুধু মনে মনে দোয়া পড়ছে মেয়েটি যেন বেশি ব্যথা না পায়।



অনেকক্ষণ কোন আওয়াজ নেই।



হঠাৎ দুদ্দাড় করে বেরিয়ে আসল কামাল।যে হাত দিয়ে মেরেছিল সেই হাত ধরে আছে অন্য হাত দিয়ে।মারার সময় নিজেরও লেগেছে সামান্য।



তারপর একটা শার্ট গায়ে দিয়ে বের হয়ে গেল কামাল।

ফিরল একেবারে রাতে।না খেয়েই শুয়ে পড়ল।



-ইরার জ্বর-মনোয়ারা বলল।

-কত?

-থার্মোমিটার তো নেই। দুই এর মত হবে মনে হচ্ছে।

শোয়ার মধ্যে ওপাশ ফিরতে ফিরতে বলল- ঠিক হয়ে যাবে।ওষুধ দিছ?

-হ্যাঁ-বলে মনোয়ারা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।



অস্ফুট বিরক্তির শব্দ করল কামাল।শব্দ শুনে মনোয়ারা চুপ হয়ে গেল।

মনোয়ারা ঘুমিয়ে গেল।কামালের দুই চোখ তখনো খোলা। চারদিকে স্তব্ধ নীরবতা। রাত কম হয়নি।বিছানা থেকে উঠে বসল কামাল।গরম পড়েছে,কপালের ঘাম মুছে উঠল বিছানা থেকে। আস্তে আস্তে শব্দ না করে রুম থেকে বের হল।



টেবিলে রাখা গ্লাসে জগ থেকে পানি ঢালল।তারপর, ঢকঢক করে শেষ করল পুরোটা।অনেক তৃষ্ণা ছিল।



নিজের রুমে ফিরে আসার সময় পাশের রুমটিতে উঁকি মারল।

অন্ধকারে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। পর্দা সরিয়ে একমন তাকিয়ে রইল।



ইতি আর ইরা এক খাটে ঘুমাচ্ছে।পা টিপে টিপে শব্দ না করে বিছানার কাছে গেল কামাল।দুজনেই ঘুম।



একটা হাত কপালে রাখল ইরার।জ্বর আছে। হাত সরিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল।দেখল।তারপর,নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ঘুম কিন্তু আসল না।



####



মতিঝিল থেকে সকাল সকাল বাসায় ফিরল।শেয়ারের খোঁজখবর নিয়ে ইদানীং ভীষণ ব্যস্ত।এই দেশে শেয়ার ব্যবসায় উন্নতি হয় না কে বলে?কপাল আর বুদ্ধি থাকলে হয়।



আজ খুব খুশি মনে বাসায় ফিরল কামাল।সাথে এক কেজি রসমালাই।ছোট মেয়েটি পছন্দ করে।



বাসায় ঢুকেই ইতি কে ডাকতে লাগল।ওদের স্কুল বন্ধ।গরমের আর পরীক্ষা পরবর্তী ছুটি চলছে।



রসমালাই দেখে খুব খুশি ইতি।বোন কেও ডেকে আনল।



মনোয়ারা স্বামির জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত বানিয়ে আনলেন।চিনি হয়েছে কিনা ভালোমত দেখে নিলেন।



‘ফ্যান টা আরো বাড়াও দেখি।এত গরমে কি থাকা যায়!’-বলে কামাল পেপার নিয়ে বাতাস দিতে থাকে নিজের গায়ে।



‘বাড়ানো আছে।শরবত টা খেয়ে নাও,ভালো লাগবে’-বলে মনোয়ারা স্বামির পাশের সোফায় বসল।কিছু কথা বলবে। স্বামিকে পর্যবেক্ষণ করছে।



‘তোমাকে একটা কথা বলব’-মনোয়ারা খুব নরম করে বলল কামালকে।



শরবত টা অর্ধেক খেয়েছে কামাল।মনোয়ারার দিকে চাইল সে,গ্রীষ্মের এই তপ্ত দুপুরে আটপৌরে মনোয়ারাকে হঠাৎ তার খুব দূরের কেউ মনে হতে থাকে,মনে হতে থাকে কে এ?মনোয়ারার গলার নিচে জমে থাকা ঘাম কামালের শরীরে উত্তেজনা তৈরি করে দ্রুত।কতদিন যেন দেখেনি একে।দেখা হয়নি ভালো করে।মনোয়ারার কথা সে শুনবে,আরো কাছ থেকে।



শরবত পুরো শেষ না করেই সে মনোয়ারাকে কাছে টানে।

বাসায় মেয়েরা রয়েছে।এই মুহুর্তে এসব সম্ভব নয়।তবু,মনোয়ারা স্বামিকে বাধা দেয় না।এই সুযোগে সে কথাটি কামালকে বলবে।



মনোয়ারার চিন্তা ছিল কথাশুনে কামাল লঙ্কাকান্ড বাধাবে,হইচই করবে।

সেটা হোল না। ইতি-ইরা অনেকদিন বায়না ধরেছিল নানুর বাড়িতে বেড়াতে যাবে।আজকে একটু কৌশল অবলম্বন করে স্বামির অনুমতি

আদায় করে নিল।



রাতে পোলাউ করব?-কামালের দিকে চেয়ে বল।

কামাল খোশমেজাজে আছে।বিছানায় শুয়ে নিজের পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে-‘কর।কবুতরের মাংশ দিয়ে খাবো।বিকেলে বাজারে যাবো।ইতি কই?ওকে এদিকে পাঠাও’



এলোমেলো শাড়ীর আঁচল ঠিক করে মনোয়ারা কাজে চলে গেল।



ইতি একটা খাতা নিয়ে বাবার কাছে এসে দাঁড়াল।



‘কি কর বাবা?’-বলে মেয়েকে কাছে টানে।হাত দিয়ে মেয়ের চুলে ইলিবিলি কাটে।

‘রঙ করি’-বলে বাবাকে খাতা দেখায়।

‘কি আঁক,বাবা’

ইতি উৎসুক হয়ে বাবাকে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখায় কত কিছু আঁকতে পারে সে।ঘুড়ি,বাংলাদেশের পতাকা,আরো কত কি।



‘তোমার আপু কই?’

‘সাজে’

‘তুমি সাজো না?’-বলে ইতির থুতনিতে নাড়া দেয়-‘বাবা! নানুর বাড়ি যাবা?’

ইতি মাথা নাড়ে।যাবে।

‘ঠিক আছে।চল,তোমাকে চুল কাটিয়ে আনি,চুল বড় হয়েছে তোমার,বাবার সাথে চল।আসার সময় মিমি কিনে দিব ’-বলে কামাল মেয়েকে কোলে নিয়ে বিছানা থেকে উঠল।

ইতি এখনো নিজ হাতে খেতে পারেনা।মা খাইয়ে দেয়।আজকে বাবার হাতে খাচ্ছে।কামালের মন ফূর্তিতে থাকলে মেয়েদের আদর করে,দেখতে ভালো লাগে মনোয়ারার।

ইতি কে খাইয়ে খেতে বসল কামাল।

প্লেটে পোলাউ নিয়ে চোখ গেল বড়মেয়ে ইরার দিকে।মেয়েটা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।

‘ওকে আরো দুই টুকরা মাংস দাও’

সাথে সাথে মাথা নাড়ল ইরা।লাগবে না ওর।

তারপর কামাল নিজেই মাংসের প্লেট থেকে উঠিয়ে দিল।লজ্জায় এতটুকু হয়ে গেল ইরা।বাবা কখনো তাকে এত ভাল করে বলেনি কিছু,অন্তত তার মনে পড়ে না।(চলবে)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৭

বাড্ডা ঢাকা বলেছেন: দারুন ভালো লাগা গল্প।

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৬

আমি সৈকত বলছি বলেছেন: শেষ করে দিলেন?????

খুব ভালো লাগলো।

আরো পড়তে ইচ্ছে করছিলো।

শেষে চলবে শব্দটা খুজে না পেয়ে হতাশ হলাম।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৯

হাতপা বলেছেন: চলবে :)

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৯

আমি সৈকত বলছি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ


পিছে লেগেছি অনুসরনের মাধ্যমে।

আমি কিন্তু ঠোট কাটা লোক।

ভালো না লাগলেই মাইনাস (-)
ভালো লাগলে (+) দিতেও কার্পন্য করবো না।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৫

হাতপা বলেছেন: এমন ক্রিটিক-ই তো দরকার ,সাথে থাকুন

৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৫

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভালো লাগলো । চলুক....

৫| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:২৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: পিতার সেই চিরচেনা রূপ।। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম থাকলেও।। ভাল লাগা গল্পে।।

৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২২

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

গল্পটা জমে উঠছে। চলুক..... :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.